নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মোশতাকের হাতে যে শেখ মুজিব মারা পড়তে পারেন, তা মুজিব জীবদ্দশায়ই বলে গিয়েছিলেন!

০১ লা আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪

শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন হত্যা করা হলো ? তাকে তো প্রয়োজনে মতাচ্যুতও করা যেত। কিন্তু তাকে হত্যাই করা হয়েছে। ‘রেডিও বাংলাদেশ’ থেকে এ হত্যার যে ঘোষণা পড়েছেন মেজর ডালিম, তা আগে রেকর্ড করা হয়। কিন্তু সারা জাতি তো আর তখন এ নিয়ে ভাবনায় নেই যে, এটা রেকর্ডকৃত, নাকি সরাসরি। শেখ মুজিবের রক্তে পা দিয়ে মতায় বসলেন খোন্দকার মোশ্তাক। রক্তে দাঁড়ানো কিংবা বসা, ওই একই কথা, পথটা পিচ্ছিল হবেই। যদিও বলা হলো তাকে মতায় বসানো হয়েছে, কিন্তু এ নাটক জাতির বুঝতে বেশি দেরি হলো না।
১৯৭৫ সালে আমার বয়স খুব কম হলেও এ বিষয়ে একটি বিষয় এখনো মনে রয়েছে। আমরা তখন গ্রামে ছিলাম। আব্বা চাকুরি থেকে ছুটিতে বাড়ি এসেছেন। মায়ের নেশা ছিলো রেডিও-র গান ও খবর শোনার। একটি থ্রি-ব্যান্ড রেডিও আমাদের ছিলো। সকাল বেলা মা রেডিও-তে মেজর ডালিমের ঘোষনা শুনে চিৎকার করে আব্বাকে বললেন, শেখ মুজিবকে মেরে ফেলা হয়েছে। আব্বা মাকে দিলেন এক ধমক। বললেন, কী বলছো...মাথা ঠিক আছে তোমার ? মা এবার আব্বাকেই রেডিওটা ধরিয়ে দিলেন। ঘোষণা শুনে তো এবার আব্বাও নির্বাক। অবশ্য তখন কোনো কারফিউ দেয়া হয়েছিল কি না তা আমি জানি না। নতুন প্রেসিডেন্ট খোন্দকার মোশ্তাক আহাম্মদের বাড়ি কুমিল্লায়, এমন একটি সংবাদে আমাদের এলাকার কাউকে কাউকে সুখবোধও করতে দেখলাম। এর কারণ আমি জানি না। আমার এক জ্যাঠা ছিলেন, পেশায় হোমিও ডাক্তার। বৃটিশ আমলে তিনি কলকাতায়ও ছিলেন। তিনি তাৎনিক যা মন্তব্য করলেন, বড় হয়ে তার অর্থ যা বুঝেছি, তা হলো অনেকটা এ রকম: আমেরিকা মোশতাকদের দিয়ে শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত ও রাশিয়ার (সোভিয়েত ইউনিয়ন) প্রতিও প্রতিশোধ নিয়ে নিলো। মজার বিষয় হলো, তখন আমি এতই ছোট যে, এই মুজিব যে কোন মুজিব, এটাই আমি ভালো করে বুঝতে পারছিলাম না। একদিন আমাদের এক আত্মীয়, যার নামও ছিলো মুজিব, তিনি আসছিলেন আমাদের বাড়ির দিকে। আমি দৌড়ে গিয়ে মাকে বললাম, মা মুজিব তো মরেননি। তিনি আমাদের বাড়ির দিকে আসছেন। মা হেসে বললেন, এই মুজিব সেই মুজিব নয়। সেই মুজিব ছিলেন বাংলাদেশের ‘রাজা’। কিন্তু ছোটবেলার কথা যা মনে আছে, আমাদের এলাকার অনেকের ঘরেই খন্দকার মোশতাকের ছবি শোভা পেতে শুরু করলো। ‘খন্দকার মোশতাক কুমিল্লায় জন্মেছেন, দাউদকান্দিতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। তিনি জেনুইন আওয়ামীলীগার। মেধাবী রাষ্ট্রনায়ক।’ এমন কথাও প্রচুর শুনেছি তখন অনেকের মুখেই। এমনকি অনেকের নবজাতক ছেলে সন্তানের নামও ‘খন্দকার মোশতাক ও মেজর ডালিমে’র নামে রাখা শুরু হলো এবং সেই সন্তানেরা এখনো বেঁচে আছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর এ রকম নাম রাখা লোকদের কেউ কেউ পরবর্তীতে আবার তাদের সন্তানের নাম পরিবর্তনও করেছেন, এমনও নজির রয়েছে। কিন্তু সাবেরুল জ্যাঠা যেটি বলছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন হত্যা করা হলো ? তাকে তো প্রয়োজনে মতাচ্যুতও করা যেত। কিন্তু তাকে কোনো পন্থায় মতাচ্যুত করা হলে তিনি আবার মতায় চলে আসতেই পারেন। খন্দকার মোশতাক বরং দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই যদি মুজিবকে সরিয়ে দিতে পারতেন, তাহলে মুজিবের এমন নায়ক হওয়ার সুযোগ ছিলো না। কিন্তু মুজিবের ব্যক্তিত্বের কাছেও ঘেঁষতে পারতেন না শেখ মুজিব। সুতরাং হত্যা ছাড়া আর উপায়ই বা কী! ১৯৯০ সালের দিকে আমার এক মামা আমাকে বললেন, ‘শেখ মুজিবের নেতৃত্ব মোশতাক কখনোই ভিতর থেকে মানতে পারেননি। তাছাড়া শেষে তাদের দুজনের মধ্যে মতপার্থক্যও যথেষ্ট বেড়ে গিয়েছিল। আর এ জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পর খন্দকার মোশতাককে সরকার কিংবা পার্টিতে যথাযথ স্থান দিয়ে সম্মানিত করা হলেও তাতে তার চাহিদা কিছুই পূরণ হয়নি। তার চাওয়া ছিল রাষ্ট্র মতা লাভ। শেষে তিনি ওদিকেই গিয়েছিলেন। তাই শেখ মুজিবের রক্তে পা দিয়ে মতায় বসলেন খোন্দকার মোশ্তাক। রক্তে দাঁড়ানো কিংবা বসা, ওই একই কথা, পথটা পিচ্ছিল হবেই। তার মতাটি স্থায়ী হতে পারলো না। কিন্তু এরই মধ্যে বাংলাদেশ যা হারাবার, তা হারিয়ে ফেলেছে। আর যদিও বলা হলো তাকে মতায় বসানো হয়েছে, কিন্তু এ নাটক জাতির বুঝতে বেশি দেরি হলো না। মোশতাকের বিশ্বাসঘাতকতায় যে শেখ মুজিব মারা পড়তে পারেন, তা শেখ মুজিবও জীবদ্দশায় বলে গিয়েছিলেন।’ ১০ আগষ্ট ১৯৯৬, কুমিল্লা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


মুজিব আপনার নামও বলেছিল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.