নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

নগর কুমিল্লার পুকুরগুলো হারিয়ে যাচ্ছে

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩২


ব্যাংক ও ট্যাংকের শহর কুমিল্লা। কিন্তু মাত্র দু’দশকের ব্যবধানে হারিয়ে গেছে কুমিল্লা শহরের প্রায় অর্ধশত পুকুর। কুমিল্লা মহানগরে এখনও শতাধিক পুকুর, দিঘি ও জলধারা রয়েছে। ভূমি খেকোদের অশুভ দৃষ্টি, সরকারি কর্মকর্তাদের লালসার কারণে কুমিল্লা মহানগর ক্রমেই পুকুর শূণ্য হয়ে পড়ছে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে কুমিল্লায় পুকুর ভরাট শুরু হয়। সে ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ১৯৮৫ থেকে এ পর্যন্ত কুমিল্লা শহরে প্রায় একশোর মত পুকুর, দিঘি ও জলধারা ভরাট করা হয়েছে।
ভরাটকৃত উল্লেখযোগ্য পুকুরগুলো হচ্ছে ঠাকুরপাড়া মদিনা মসজিদ সংলগ্ন পুকুর, মোগলটুলির লালা দিঘি, ছোটরা রেজিষ্ট্রি অফিসের পেছনের দিঘি,
ফরিদা বিদ্যায়তনের পূর্বপার্শ্বের দুটি পুকুর, দিগাম্বরী তলার মসজিদ সংলগ্ন পুকুর, ঠাকুরপাড়া জোরপুকুর, রেসকোর্স কবরস্থানের ভিতরের পুকুর, পার্কের ভিতরের ব্যাঙ সাগর এবং এখন সিটি কর্পোরেশনের ভিতরের গাড়ি পার্কিং করা হয় যেখানে, সেখানকার পুকুর, লাকসাম রোড সংলগ্ন ঠাকুরপাড়ার দুটি পুকুর, রাম ঠাকুরের আশ্রমের পাশের পুকুরসহ অসংখ্য পুকুর, দ্বিতীয় মুরাদপুরের জানুমিয়া মসজিদ রোডের পুকুর, চর্থার ড্রাইভার সমিতি সংলগ্ন পুকুরসহ অসংখ্য পুকুর। এখন কুমিল্লা মহানগরে যত পুকুর, দিঘি, জলাশয় রয়েছে, এর মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধিন, সরকারি এবং সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন। অধিকাংশ পুকুরই এখন মজা ও পরিত্যক্ত, ময়লা আবর্জনা কচুরিপনায় ভরপুর। মশা-মাছি আর পোকামাকড়ের আবাসস্থল। অবহেলা আর পরিচর্যার অভাবে পুকুরগুলি শ্রী হারাচ্ছে। এই পরিত্যক্ত অবস্থাতেই শুরু হয় ভরাট প্রক্রিয়া।
যেহেতু বেশিরভাগ পুকুরই ব্যক্তি মালিকানাধিন, সেহেতু এসব পুকুর খালি ফেলে না রেখে এগুলো ভরাট করে বাড়িঘর তৈরি করে ভাড়া দিলে কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে বেশি লাভবান হওয়া যায়। পরিবেশ, প্রতিবেশ কিংবা প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিষয়ে তাদের ভাববার সুযোগ কম। তাই প্রতিবেশী, প্রশাসন , সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, যাকে যেভাবে ম্যানেজ করা যায়, সেখানে ম্যানেজ করে এগিয়ে চলছে পুকুর ভরাট করার এ প্রতিযোগিতা। প্রতিবছর গড়ে কুমিল্লা শহরে ৭/৮ টি পুকুর ভরাট হয়ে চলেছে।
এদিকে মোগলটুলির নাজির পুকুরটি ইদানিং ময়লা আর্বজনায় পরিপূর্ণ । এটাকে সংস্কার করার কথা কেউ ভাবছেন না। হয়ত আর কয়েক বছর পর এটাও ভরাট হয়ে যাবে। শুধু শহরের প্রাণকেন্দ্র নয়, ভরাট হচ্ছে মহানগর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে । কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নতুন ওয়ার্ড ২১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত অনেক পুকুর ভরাটের প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ উপজেলার একুশ থেকে সাতাশ নম্বর ওয়ার্ডে যে সকল পুকুুর ভরাটের প্রক্রিয়া চলছে, তা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, কোনো অবস্থাতেই কোনো পুকুর কিংবা জলাশয় ভরাট করা যাবে না। সরকারের বিধি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ভূমিখেকোরা ওসব মান্য করেন না। শহরের পরিধি ডিঙিয়ে এখন নতুন ওয়ার্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পুকুরগুলোর উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে ভূমিখেকোদের। তারা মসজিদের পুকুরগুলোও গ্রাস করতে দ্বিধাবোধ করছে না। এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানালে সংঘবদ্ধ ভূমিখেকোরা তেড়ে আসে গ্রামবাসীদের উপর। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের আওতায় অনেক পুকুর ভরাট হয়ে যাবে অচিরেই। আর ওসব পুকুরের উপর গড়ে উঠবে নগর সভ্যতার পাথরের দালান কোঠা।
পুরাতন গোমতি নদীর অবস্থান ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে । এ নদীর দু’ তীরে দখল চলছে সমান তালে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কেউ কেউ সরাসরিও দখলে নামেন । ভূমিদস্যুদের কেউ কেউ প্রথমে ভূমিহীন অসহায়দের থাকার ব্যবস্থা করার নাম করে ঘর তৈরি করে দেয়। পরে তাদেরকে নামেমাত্র কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে দখল করে নেয় সেই ঘরবাড়ি। কুমিল্লার পরিবেশ সচেতন নাগরিকগণ মনে করেন কুমিল্লায় বিদ্যমান পুকুরগুলি রক্ষনাবেক্ষণ করা গেলে দেশের অন্য যে কোন জেলা শহর থেকে বেশী সুন্দর, পরিবেশ বান্ধব ও চিত্ত বিনোদনের শহরে পরিণত করা সম্ভব।
পরিবেশবিদদের মতে কোন শহরের পরিবেশ বসবাসের জন্য উপযোগী হতে হলে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ জায়গা ফাঁকা থাকা বাঞ্ছনিয়। পুকুর রক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সচেতন হবার সময় এখনই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.