নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মন তার যাযাবর পাখি

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১০

পর্ব-৪
হাশেমের কাছে দিনভর নন্দিনীর কোনো খবর নেই । পাখির নেশায় বউয়ের কথাও যেন ভুলে বসে আছে। কী খাবে-কোথা থেকে আনবে খাবার...। মেয়েটার রাগও মারাত্মক। ভয়ও পায় তাকে হাশেম। বেশি চাপ দিলে পাখির জন্য ঘরে রাখা বিষও মুখে দিয়ে দিতে পারে। তাই সহজে তর্কে যায়না সে নন্দিনীর সাথে। কিন্তু অভাবে নন্দিনী ইদানিং পাগল হয়ে উঠেছে। তারপরও তার নিজের জীবনে হাশেম ভিন্ন দ্বিতীয় কোনো পুরুষের কথা কল্পনা করে না সে। কিন্তু হাশেমের এখন কী অবস্থা ! যখন সে বাজারে দর্জির কাজ করতো, তখন তো নন্দিনী ভেবেছিল হাশেম সংসারী হবে। কিন্তু সংসারী পুরুষ কেউ এমন তার নিজের জানা কাজ ফেলে পাখির পেছনে ঘুরে ? চট করে ধর্ম ত্যাগ করে নিজের জীবনের জন্য এ কী সিদ্ধান্ত নিল নন্দিনী! এখন আর তার হিসাব মেলাতেই পারছে না। নন্দিনী ভেবেছিল এক-দুইটি সন্তান নিয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেবে হাশেমের সংসারে। কিন্তু সে নিজেই যেখানে খেতে-পরতে পায় না, সেখানে এক-দুইটি সন্তানের জন্ম দেওয়াই সংসার পোক্ত করার শেষ কথা নয়। এই সংসার যে টিকবে, তার তো কোনো লক্ষণই দেখছে না নন্দিনী।
হাশেমের মাথা থেকে ক্রমে ক্রমে বন্দুকের স্বপ্ন মুছে যায়। আপাতত এক-দুইটি জাল দরকার। জাল ছাড়া পাখি ধরা যাবে না। জাল লাগবেই। এমন যখন ভাবছিল হাশেম, ঠিক তখনই তার চোখে সুখের স্বপ্নের রোদ ঝিলিক দিল। তার বিষ মাখানো পুঁটি মাছগুলো চড়ায় বসে গিলছে কয়েকটি বুনোহাঁস। চুপ মেরে লুকিয়ে থাকল হাশেম। তারপর আরও হাঁস আসতে লাগলো। কিন্তু বিষ মাখানো অত মাছ তো নেই চড়ায়। কী করবে ! অপেক্ষা করা ছাড়া তার আর কিছুই করার নেই। আহারে বন্দুক ! বন্দুকের এত দাম ! ইস যারা বন্দুক বানায়, তারা কতো মগজওয়ালা পুরুষ। কারণ বন্দুক তো সে বানাতে পারে না। ওদিকে মাত্র দুইটি বুনো রাজহাঁস হাশেমের সবগুলো মাছ খেয়ে নিল। অন্য হাঁস বা পাখিদের ওরা কাছেই ঘেঁষতে দিলো না। হাশেমের দুশ্চিন্তা বাড়ল।
এত বড় বুনোহাঁস তো পুঁটিমাছে মাখানো বিষে মারা পড়বে না। মরলেও কয়েকঘন্টা পরে কোন দূরে গিয়ে মরবে, তা সে বলতে পারে না। তাতে তার কোনো লাভও হবে না। হতাশ হয়ে বসে থাকলো সে। জাল থাকলে দুই-তিনটা পাখিকে আটকানোর অনেক সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু জাল তো নেই।
ওই দূরে আমনের মাঠ। তারপর হাশেমের বাড়ি। ওখানে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে নন্দিনী। আর সে এই ডিঙডিঙা বিলের মাঝখানের চড়ায় বসে অপেক্ষা করছে পাখি ধরার। চারদিকে রক্তনীল শাপলাগুলো কার জন্য অপেক্ষা করে আছে, তা সে জানে না। এই চড়ায় একদা সাপেরও উপদ্রব ছিল। এখনও রয়েছে, তবে ততটা নেই। হঠাৎ একটি গুইসাপ সাঁতার কেটে উঠলো চড়ায়। সব পাখি হঠাৎ উড়ে গেল। কিন্তু উড়তে গিয়ে মাথা ঘুরিয়ে জলে পড়ে গেল বড় দুইটি বুনো রাজহাঁস। জলে পড়েও মাথা ঘুরাতে লাগলো। শুধু যেন চরকির মতো ঘুরছে। ছটফট বেড়ে গেল ওদের। মুহূর্তকাল দেরি না করে হাশেম ঝাঁপ দিল জলে। খুব বেশি বেগ পেতে হলো না তাকে। দশ-পনের মিনিট সাঁতার কেটেই খপখপ করে ধরে ফেললো দুই-দুইটি রাজহাঁস-বুনো রাজেশ্বরী। এতক্ষণে নন্দিনীর কথা মনে পড়লো তার, যেখানে সে বসে আছে হাশেমের জন্য।
বুনো রাজহাঁস দুইটি মোট পাঁচশো টাকায় বিক্রি করে প্রথমে একটি জাল কিনে ফেললো হাশেম এবং দেড়শো টাকায় নন্দিনীর জন্য গোলাপী একটি শাড়ি। অন্যের দোকানে দর্জির কাজ করতো যখন, তারপর থেকে সে আর একসঙ্গে এত টাকা দেখেনি।
জাল কেনার পর আর হাশেমকে কে পায় ? তার বুদ্ধি আর জালের ফাঁদে কতো বালিহাঁস যে ধরা পড়লো, তার হিসেব নেই। তালগাছের কিংবা মরা আমগাছের কোটর থেকেও পাখি ধরে নিয়ে আসে সে। সারাদিন বিলঝিল ডোবানালায় ঘুরতে ঘুরতে যে তার পায়েও ঘা হয়ে গিয়েছিল, সেটা তার মনে নেই। একদিন, যখন সে দেখছিল নিবিড় হয়ে পাখির সঙ্গম, ঠিক তখনই অল্পের জন্য সে সর্পদংশন থেকে ভাগ্যের জোরে বেঁচে যায়। তারপরও পাখি ধরার নেশা যায় না তার। পাখির বাসা থেকে অনেক মেয়ে পাখিকে ধরে এ পর্যন্ত বাজারে বিক্রি করেছে। একবারও ভাবেনি সঙ্গিনীকে হারিয়ে সঙ্গী পাখিটির দিনরাত কতো কষ্টে কাটবে। একবারও ভাবেনি, তার স্ত্রী নন্দিনী না থাকলে তার জীবনটাও কিভাবে গড়া হবে। সকাল হলেই শুরু হয় তার চিংড়ী-পুঁটিমাছসহ বিভিন্ন ফড়িং ধরার কাজ। ওগুলো ধরার কাজ শেষ হলেই সে বিষের বোতল ও জাল সঙ্গে নিয়ে ডিঙডিঙা বিলের মাঝখানে চলে যাবে। যেতে যেতে উঠবে গিয়ে চড়াটায়। অন্য চড়ায় কবরস্থান আছে। কিন্তু সে যে চড়াটায় গিয়ে উঠে, ওখানে কোনো কবর নেই। আছে কয়েকটি গাছ। চড়ার পাশে কলমী ঝোঁপ। ওখানেই প্রায় স্থায়ী আস্থানা গড়ে হাশেম। নন্দিনী তাকে প্রতি রাতেই পাখি ধরতে বারণ করে। কিন্তু কে শোনে কার কথা ? বালিহাঁসের এত ছোট ডিম সিদ্ধ করে খেয়ে পেট ভরে তোমার ? এই প্রশ্ন অনেকবার হাশেমকে করেছে নন্দিনী। কিন্তু এ কথায় কান দেয় না হাশেম। কার কাছে যেন সে শুনেছে, বালিহাঁসের ডিম খেলে পুরুষের যৌন ক্ষমতার মারাত্মক বৃদ্ধি ঘটে। সুতরাং তাকে আর এ পথ থেকে ফেরাবে কে ? কিন্তু সেদিনের ঘটনায় নন্দিনী অনেক চোখের জল ফেলেছে। হাশেম জাল দিয়ে বালিহাঁসের অনেকগুলো অল্প উড়ন্ত ছানা ধরে এনেছে। ওদের মা পাখিটি পালিয়ে বেঁচেছে। মায়ের জন্য এ ছানাগুলোর কান্নার শব্দ শুনে নন্দিনী তার চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। এমনকি রাতের বেলা যখন মনে হয়েছে তার এতগুলো ছানা হারিয়ে আজ মা পাখিটার কী অবস্থা এখন, তখনও সে কেঁদেছে। কিন্তু হাশেমের কাছে এসব আবেগ বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়। তাই সে বালিহাঁসের ছানাগুলো বাজারে বিক্রি করে দারুণ সুখ অনুভব করেছে।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.