নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিনলিপি: জীবনানন্দ দাশের গোলাপ বাগানকে ভালোবাসতেন বাবা

৩০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ২:৪৬



২০ অক্টোবর ২০০৩, কুমিল্লা।
==================
বাবার আলোকচিত্র: জসীম অসীম: 1998
একদিন আমার আর বাবার মধ্যে কথা হচ্ছিলো দেবিকারাণীর অভিনয় নিয়ে। সেই কথা পরে গিয়ে থেমেছিলো মানুষের মৃত্যুচিন্তার বিষয়ে।
সনাতন ধর্মের কেউ কেউ মরে গেলে চলে যান রামঠাকুরের পদতলে। তখন মানুষ ঈশ্বরের কাছে তার আত্মার শান্তি কামনা করেন। এসবে একদা বিশ্বাস ছিলো না আমার।
একদিন এসব কথা আমি কুমিল্লার চকবাজার পার হয়ে সাহাপাড়ার ‘সপ্তবর্ণা’ বাসার কাউসার ভাইয়ের বাসায় বসেই বলছিলাম। সেদিন ছিলো পহেলা বৈশাখ। সহসা রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মর্মান্তিক খবর এলো। আর আমরা ঠিক তখনই আবার বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে আলাপে তুমুল মেতে উঠলাম।
কথা বলতে বলতে তারপর আবার চলে এলাম আমার বাবার কোনো কোনো বিষয়ে। বাবা একদিন আমাকে পিরামিডের একটি গল্প বলছিলেন। ঠিক আমি তখন বাবাকে বললাম, আলেকজান্দ্রিয়ার কিছু গল্প। বাবা সবকিছুর উপসংহারে ধর্মকে টেনে আনতেন। আমি বলতাম, আপনার ব্যাখ্যাগুলো জন রাসকিন কিংবা লিও টলস্টয়ের মতো। বাবা জন রাসকিন কিংবা টি এস এলিয়ট পড়েননি কখনো।
এমনকি পড়েননি বৃটিশ ভারতের ভার্ণাকুলার লিটারেচার সোসাইটির ইতিহাস। তাই অনেক সময় বাবাকে আমি আরও আরও বই পড়ার পরামর্শ দিতাম। বাবাতো হাসতেন। আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারিনি তখন। এখন আমি বুঝি, জনসমক্ষে বাবা তার অর্জিত জ্ঞান প্রদর্শন করতেন না।
শৈশবে বাবা যখন যক্ষায় আক্রান্ত হন, তার সঙ্গে কতোবার যে গিয়েছিলাম কুমিল্লা শহরের রামঘাটে! ডা. হেদায়েত উল্লাহর চেম্বারে। হেদায়েত উল্লাহ বাবাকে বারবার ধূমপান ছেড়ে দিতে বলতেন। তখন আমি সেই স্কুলে পড়ি মাত্র। বাবা ধূমপান ছাড়তে পেরেছিলেন।

শৈশবে আমার বাবারও ইচ্ছে ছিলো সেনাবাহিনীর চাকুরিতে আমি পারদর্শি হই। আমারও তেমন নেশা ছিল। কিন্তু পরে আমার লেখক হওয়ার ভীষণতর ইচ্ছে জেগে উঠলো। পরে বাবা আমার লেখার নেশা ঠিকই বুঝতে পারেন। তাই তিনি রীতিমত আতঙ্কে পড়ে গেলেন।

আর মা? যিনি আমাকে মদনমোহন তর্কালংকারের কবিতা সুর করে পড়াতেন, তার কথা আমি আর বলতে চাই না এখন।

আমার ঢাকার বন্ধু আবিদের বাসায় কতোবার যে আলাপ হয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার বিষয়ে। সেই ম্যান্ডেলার বিষয়ে বাবাকে পড়তে দিতাম। বিভিন্ন লেখাই পড়তে দিতাম। এমনকি নকশাল আন্দোলনের চারু মজুমদার বিষয়ক গ্রন্থও। বাবা তখন চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত মানুষ। একদিন আমি বাবাকে বললাম, আপনি যে অভিনেত্রী দেবিকারাণীর কথা বলতেন, জানতে পারলাম তিনি ছিলেন আমাদের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতনি। বাবাও অবাক হলেন শুনে।
শীর্ষেন্দুর কতো লেখা যে বাবা নিমগ্ন হয়ে পড়েছেন। শৈশবে হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনের গল্প পড়ে পড়ে শোনাতাম বাবাকে। শাহরিয়ার কবিরের ‘একাত্তরের যীশু’ পড়ে বাবাকে চোখের জল ফেলতে দেখেছিলাম। আর সেই বাবার জন্য আজ আমার নিজেরও চোখের জল ঝরে পড়ে।
আমার বাবা কোনো বিখ্যাত মানুষ ছিলেন না। কিন্তু আমি বাবার জীবনের নানা অ্যাডভেঞ্চারের গল্প জানি। যেসবের প্রতিফলন আমার জীবনেও ঘটেছে। এমনকি আল মাহমুদের গল্পের অনেক বিবরণেও আমি বাবার ঘ্রাণ পাই।
আজকাল আমার প্রায়ই মনে হয়, আমি হয়তো কখনো বা আলেকজান্ডার পুশকিনের লেখাতেও আমার বাবার দেখা পাবো। যেমন বাবার মৃত্যুর এতোদিন পরেও বাবার দেখা পেলাম কুমিল্লার কোনো কোনো স্থানে বাস করা নিগৃহীত হরিজন পরিবারের কয়েকজন বয়স্ক মানুষের চোখের জলেও। তাঁদের কাউকে কাউকে বাবা তার পেনশনের টাকায় যৎসামান্য চিকিৎসা করারও সুযোগ দিয়েছিলেন।

বাবার মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে আরও জানলাম, কবি জীবনানন্দ দাশের বাড়ির গোলাপ বাগানকেও অসম্ভব ভালোবাসতেন আমার বাবা।
==================
কম্পোজ: সাদিয়া অসীম পলি।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৩:০৬

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



প্রথমে ধন্যবাদ জানাই এমন একজন বাবাকে আমাদের মাঝে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য; আপনি খুব লাকি এমন জ্ঞানী ও পরোপকারী বাবার সন্তান হতে পেরছেন বলে। আপনার লেখক হওয়ার পেছেন উনার অবদানও অবশ্যই আছে; আছে প্রেরণা। উনার জন্য অনেক আশীর্বাদ রইলো।

৩০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৩:২৬

জসীম অসীম বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ বিষয়টি পাঠে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য। পুরো লেখাটিই আপনি অতি অল্প সময়ে মন দিয়ে পাঠ করেছেন। বাবা যে জ্ঞানী ও পরোপকারী ছিলেন, তা আমি তখনকার দিনলিপিতে বলেছি বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু আপনি লেখার মূল বিন্দুই খুঁজে বের করেছেন। ভালো থাকুন। আপনারও সুস্থতা কামনা করছি। অশেষ কৃতজ্ঞতা আমার সাধারণ পোষ্টে আপনার অসাধারণ সময় ব্যয় করে মতামত প্রদানের জন্য। শুভ কামনা নিরন্তর।

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার বাবা জানাই শ্রদ্ধা।

আল মাহমুদের লেখা আমার খুব ভালো লাগে।
বিশেষ করে তার কবিতা গুলো।

৩০ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪

জসীম অসীম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ রাজীব ভাই। আমার বাবা এই পৃথিবী থেকে চিরপ্রস্থান করলেন ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সালে। সে সময়ের এসব দিনলিপিতে দেখলাম এলোমেলো অনেক আবেগই ছড়ানো। মাঝে মাঝে ইদানিং ওই লেখাই প্রকাশ করছি। সময় ইদানিং খুব ব্যস্ততায় কাটছে। নির্বাচিত লেখা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে একটু যত্নশীল হতে পারিনি আজও। তবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আর আল মাহমুদের কবিতা আমারও খুব প্রিয়। বিশেষ করে তাঁর 'জলবেশ্যা' গল্পটি আমাকে ভীষণতর মুগ্ধ করেছে বারবার। তাঁর শব্দের বাকপ্রতিমা আমার পাঠের নেশায় এক ধরনের উন্মাদনা সৃষ্টি করে। সুস্থ থাকুন। সঙ্গে থাকুন। নিরন্তর মঙ্গল কামনা করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.