নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: ভগ্নিপতি যখন নিজেরও পতি হয়

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৫:৫১


রচনা: অক্টোবর ২০১৫, কলাবাগ হাউজিং, ধর্মপুর, কুমিল্লা।
==================================
মান্নানের শ্যালিকা মান্নানের জন্য রীতিমত উন্মাদ।
মান্নানের স্ত্রী মনি এক লক্ষ্মী বউ। কিন্তু মান্নান সাধু পুরুষ নন। এমন ভালো বউ পাওয়ার পরও তার মন পড়ে থাকে প্রায়ই শ্যালিকা রাণীর কাছেই।
মনি পছন্দ করে রবীন্দ্র সংগীত। রাণীর প্রথম পছন্দ হিন্দী গান। রাণীর বান্ধবী ‘ঝিলমিল’ রাণীর এ উন্মাদ অবস্থার কথা তার মনি আপুকে বলে দিয়েছে। মনি আপু বলেছেন, আমার বোনকে আমি কিছুই বলবো না। বারণও করবো না। তবে তার শেষ অবস্থা হবে ওই লোভী কৃষকের মতো, যে অনেক সোনার ডিমের আশায় সেই দুর্লভ হাঁসটিকে জবাই করে দিয়েছিল।
আবদুল মান্নান ‘প্রতিমা দেবী মহিলা কলেজে’র অধ্যক্ষ। বেসরকারি কলেজ। আর রাণী মায়াবিনী সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
মনি বাংলা সাহিত্যে অনার্স কমপ্লিট করলেও মাস্টার্স শেষ করেননি। এখন এক কন্যা সন্তানের জননী এবং গৃহবধূ।
মান্নানের সঙ্গে তার শ্যালিকার একটি মিল রয়েছে। মান্নানও ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যেরই ছাত্র। ফলে ইংরেজিসহ বিদেশি অনেক সাহিত্যই পড়া রয়েছে তার।
সেদিন তিনি তার শ্যালিকা রাণীকে কাউন্ট লিও নিকোলায়েভিচ তলস্তয়ের ‘ আন্না কারেনিনা’ গিফট করেছেন।
এই রুশ উপন্যাস পড়ে তো রাণীর মাথাই খারাপ। রাণী ঘুরে ঘুরেই প্রিন্স স্তেপান আর্কাদিচ অবলোনস্কি বা স্তিভা এবং আন্না সম্পর্কে তার দুলাভাই আবদুল মান্নানকে অনেক প্রশ্ন করে।
টিভি- তে আফগান যুদ্ধের একটি খবর দেখছিলেন মনি। যুদ্ধ নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার বক্তব্য দেখাচ্ছিল খবরে। কিন্তু ড্রয়িংরুমে দুলাভাই আর শ্যালিকার এই রুশ সাহিত্যের মশগুল আড্ডা থেকে নিজেকে সরাতে টিভি দেখা বন্ধ করেই রান্নাঘরে চলে গেলেন মনি।
রাতে বিছানায় শুয়ে মনি তার স্বামীকে বললেন, আব্বা মারা গেলেন অনেক বছর। আম্মাও মারা গেলেন চার মাস হলো। রাণী আর কতোদিন আমাদের বাসায় থাকবে! যদি আমাদের একটা ভাই থাকতো কিংবা আমাদের পড়াতে এবং বাঁচাতে গিয়ে আম্মা শহরের বাড়িটা বিক্রি না করতে বাধ্য হতেন, তাহলে একটা কথা ছিলো। এই মেয়ের এখন দায়িত্ব নেবে কে?
মনির মুখে সহসা এমন কথা শুনে অনেকটা অবাকই হলেন মান্নান। বললেন, বাপ-মা মরা মেয়েটাকে তুমি তাড়িয়ে দিতে চাও? নাকি তুমি আমাকে কোনো কারণে বিশ্বাস করতে পারছো না? তার লেখাপড়াটা তো আগে শেষ করা দরকার।
মনি বললেন, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন নয়। আমি ভাবছি রাণীর ভবিষ্যৎ কী হবে। তাছাড়া আমিও পড়লাম সাহিত্য নিয়ে, সেও আবার পড়ছে এখন সাহিত্যই। অবশ্য ইংরেজি সাহিত্য। কিন্তু এতে ভবিষ্যৎ কী হবে!
মান্নান বললেন, আমিও তো ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। একটি কলেজের অধ্যক্ষ তো হয়েছি। তাছাড়া আমার নিজের জীবনের কাছে চাওয়াও বেশি ছিলো না।
মনি বললেন, তোমার তো রেজাল্ট খুব ভালো ছিলো। আবার হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আমি পড়লাম একটি কলেজে। তাও লেখাপড়া শেষ করলাম না। রাণীও এখন ওই কলেজেই পড়ছে। আমি বলি কী, রাণী নৌবাহিনীতে চলে যাক। ওর যা সুঠাম স্বাস্থ্য, আমাদের রবিউল মামা নৌবাহিনীর অফিসার। তিনি বলেছেন, অফিসার ক্যাডেট ব্যাচে রাণী যেন অ্যাপ্লিকেশন করে। মামা জানেন, রাণী এসএস সি ও ইন্টারমিডিয়েটে পিওর সাইন্সে ছিলো।
মান্নান গম্ভীর স্বরে বললেন, বোন যেহেতু তোমার, সিদ্ধান্তও তোমার। মান্নানের এ কথায় মর্মাহত হোন মনি।
বলেন, আমার বোন মানে? তুমি তো তার একমাত্র গার্ডিয়ান। তুমিই বলো সাহিত্য পড়ে কী করবে সে? একটা পরিবারের সবাই আমরা সাহিত্যের ছাত্রছাত্রী। কিন্তু জীবনে বাঁচতে টাকাপয়সাও তো চাই। তাকে বারবার বলেছিলাম, ম্যাথমেটিক্স কিংবা কেমেস্ট্রিতে ভর্তি হতে। সে গিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ইংরেজি সাহিত্যেই ভর্তি হলো। তুমিও বললে, ইংরেজি পড়লে জীবনের সার্থকতা উপলব্ধি করবে সে। আব্বার সারাজীবনের ইচ্ছে ছিলো আমাদের দুই বোনকে ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু আমি বরাবরই লেখাপড়ায় দুর্বল ছিলাম। কিন্তু রাণী পদার্থ, রসায়ন, প্রাণিবিজ্ঞান ও গণিতসহ ইন্টারমিডিয়েট জিপিএ- ৫ পেল। যে কারণেই হোক বুঝলাম তোর মেডিক্যালে পড়া হলো না। তাই বলে ইংরেজি সাহিত্য কেন পড়বি? শুরুতেই আমি এর বিরোধীতা করেছিলাম।
মান্নান বললেন, আমি তো রাণীকে বেসরকারী একটি মেডিক্যাল কলেজে পড়াতেই চেয়েছিলাম। বারণ করলে তো তুমি। মনি বললেন, শহরে তোমার একটি বাড়ি থাকলে না হয় কথা ছিলো। একদিকে আমরা ভাড়া থাকি, অন্যদিকে আমি আবার হাউজওয়াইফ। আমরা সবাই মিলে তো রাণীর জন্য প্রাণ উৎসর্গ করতে পারি না। বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে পড়ার এতো খরচ কোথা থেকে আসবে?
সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে বসে মনি তার ছোটবোন রাণীকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অফিসার ক্যাডেট ব্যাচে অ্যাপ্লিকেশন করার কথা বললে বাসার শান্তির পরিবেশটা এই প্রথম উত্তাল হয়ে উঠে। রাণী মনিকে বলে, তোর যদি ইচ্ছে করে, তুই গিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বাড়ি করে বসবাস কর। আমাকে সমুদ্রে পাঠাবি না। সমুদ্রের প্রবাল চিরকালই তোর পছন্দের জিনিস। নিজের পছন্দ আমার জীবনে চাপিয়ে দেওয়ার কল্পনাও করিস না। তোর হিন্দু বন্ধু নিশিকান্ত একবার ঠিকই বলেছিলো যে তুই নিজের সিদ্ধান্ত অন্যের জীবনে চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে থাকিস। আজ আবার আমি ওই কথাটার প্রমাণ পেলাম।
মনি বললেন, কথাটা ঠিক নয়। আমি চাই তোর জীবনটা হোক একেবারেই ব্যতিক্রম। উদাহরণযোগ্য। ইংরেজি সাহিত্য পড়ে তোর হবে এক সাদামাটা জীবন। এই সাদামাটা জীবনে আমি সুখি এবং অভ্যস্থ। কিন্তু তোর সুঠাম স্বাস্থ্য- রূপ- দুর্জয় মনোবল কিংবা সাহসের জন্য আমার মনে হয় নৌবাহিনীতে তুই ভীষণ ভালো করবি। কারণ আমি কোনোকালেই তোর মতো ভালো ছাত্রী ছিলাম না। রাণী এ কথায় আরও ক্ষেপে গিয়ে তার দুলাভাই মান্নানকে বললো, দুলাভাই আপনি আজ থেকে আমাকে আপনার বন্ধু নজরুলের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। বেলারুশের মিনস্কে। আমি এই দেশেই থাকবো না। মনি আপু আমার চেহারা দেখাটাও সহ্য করতে পারছে না। আব্বা ছিলেন কলেজের শিক্ষক। তিনি বেঁচে থাকলে তার কোনো মেয়েকেই সমুদ্রে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করতেন না।
মনিও রাণী দুইবোনের তর্কযুদ্ধের পর রাণী যে বাসা থেকে বের হয়ে যায়, সন্ধ্যায় এমনকি রাতেও আর বাসায় ফেরে না। বাসা থেকে যাওয়ার পর পরই মোবাইলও বন্ধ করে রাখে। রাত দশটার পর মান্নান ফেসবুকে পান তার এই শ্যালিকাকে। কিন্তু রাণী ফেসবুকে মান্নানের কোনো প্রশ্নেরই জবাব দেয় না। শুধুমাত্র এইটুকুই জানায় যে, সে তার এক বান্ধবীর বাসায় রয়েছে। কয়েকদিন পর কলেজের হোস্টেলে উঠতে চেষ্টা করছে। মনি- মান্নানের বাসায় আর সে থাকবে না। শ্যালিকার সংস্পর্শ হারিয়ে দুলাভাই মান্নানেরও মন যেন ভালো নেই। তাই পরদিন থেকে তিনি বিভিন্নভাবে রাণীর প্রতি নজর রাখতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনো খোঁজ পেলেন না। কেন না রাণী তার মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। দুপুরে মোবাইলে কোনো প্রকার যোগাযোগ না করেই রাণী এলো মান্নানের কলেজে। এসেই কিছু টাকা চাইলো এবং বললো তার কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে একটি ফোন দিতে যেন রাণীর কলেজ-হোস্টেলে রাণীর জন্য একটি সিটের ব্যবস্থা করে।
দুলাভাই মান্নান তার শ্যালিকাকে বাসায় ফেরানোর অনেক চেষ্টা করেন। রাণী আর ফিরতে রাজি হয় না। শুধু বলে, আমি আমার বান্ধবী মিতালির বাসায় থাকছি। আপু যেন এ কথাটি না জানে। মান্নান বলেন, আমি তোমার বোনকে এ কথা না জানিয়ে ফাঁকি দিতে পারবো না। রাণী বলে, তাহলে আপনার সঙ্গেও আমার আর কোনো যোগাযোগ থাকবে না এবং আপনার কোনো সহযোগিতাও আমি আর নেবো না। মিতালি শহরের এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। রাণীর খুব ভালো বান্ধবী। রাণীর বাবার সঙ্গেও মিতালির বাবার পরিচয় ছিলো। তার বাবা অবশ্য উচ্চপদস্থ একজন সরকারি কর্মকর্তা। একমাত্র ভাই ডাক্তারী পড়ে ঢাকায়। ওরা অবশ্য কুমিল্লাতেই সেটেল্ড। কিছুদিন আগে এক ফরেনার ব্রাহ্মণ পাত্রের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল মিতালির জন্য। কিন্তু তার বাবা লেখাপড়া শেষ হওয়ার আগে তার বিয়ের বিষয়ে সম্মত নন।
এদিকে রাণী বাসার না ফেরায় দু’দিন ধরে রাতের বেলা অনেক কাঁদলেন মনি। সকালে ঘুম থেকে ওঠে টেলিভিশনে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের অনুষ্ঠান দেখছিলেন মান্নান। মনি তার হাত ধরে কেঁদে বললেন, যেখান থেকে পারো, আমার বোনকে খুঁজে বের করে আনো।
মান্নান বললেন, কোথায় খোঁজ করবো আমি? সময় কোথায়? আজ আবার কলেজে যাওয়ার আগেই আমাকে ওয়ারিদ টেলিকমের অফিসে একটু কাজে যেতে হবে। মনি বললেন, আজ তুমি সব কাজ বাদ দিয়ে রাণীর খোঁজ নাও। দুইদিন ধরে সে বাসায় ফিরলো না। খোঁজ পেলে বলবে আমি আর কোনোদিনও তাকে চাকরির কথা বলবো না।
কলেজে যাওয়ার আগেই মান্নান মিতালিদের বাসায় গেল। রাণী তার দুলাভাইকে দেখেই প্রথমে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কি আমার থাকার ঠিকানা আপুকে বলে দিয়েছেন? মান্নান বলেন, এতোটা বোকা হইনি। এতো বোকা লোক কি সংসার করতে পারে?
রাণী বলে, ভালো করেছেন। বললে আবার আপু এখানে এসে অঘটন ঘটাতো। তার যখন তখন কান্নাকাটি আমার একদম ভালো লাগে না। মান্নান বলেন, কিন্তু আমার ছোট্ট মেয়ে রাজেশ্বরী, তার কী অপরাধ? তাছাড়া তোমার বোনও এখন আবার ডিমঅলা মাছ। তার কথাও ভাবতে হবে তোমাকে।
রাণী বলে, দুলাভাই আপনি এখন চা- খেয়ে কলেজে চলে যান। আজ আমি আপুর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলবো। কিন্তু বাসায় যাবো না। রাজেশ্বরীকে না দেখে তো খুবই খারাপ লাগছে। কিন্তু আপুর পেটের সন্তানের জিম্মাদারি তো আপনার উপরই বেশি নির্ভরশীল। আপনি তো আবার...।
মান্নান বলেন, তোমার এখন বাসায় ফেরা দরকার। মনি তো তোমার প্রতি কোনো অন্যায় করেনি।
রাণী বলে, বাসায় ফিরলেও আমি কখনো হোস্টেলে থাকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবো না।
মান্নান বলেন, আমাদের অপরাধটা কোথায়?
রাণী মান্নানের মুখের কাছে ঝুঁকে গিয়ে বললো, আপনি এখন চা খেয়ে কলেজে চলে যান। সন্ধ্যায় আপনি আমার সঙ্গে দেখা করবেন এশিয়া ক্যাফেতে। আমি যাবো মিতালিকে সঙ্গে নিয়ে। একা একা বসে কথা বলাটা খারাপ দেখাবে। মিতালি ব্ল্যাক কফি পছন্দ করে। বাকি তা খাওয়াবেন, যা আপনার পছন্দ। আপনি মোটর সাইকেলে চড়ে আসবেন না। রিকশায় আসবেন। সাইকেল-আর মোটর সাইকেল আমার কাছে একই রকম লাগে। সন্ধ্যায় এশিয়া ক্যাফেতে বসে রাণীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মান্নানের মনে অতীত এসে ভিড় করে। জীবনানন্দ দাশের ‘একদিন জলসিঁড়ি নদীটির পারে’র কথা অনেকদিন তেমন করে মনে পড়েনি তার। বৈচিত্র্যে ভরা ঝরণাধারায় এখনো যেন পুরোপুরি যৌবনবতী হয়নি তার জীবন- তটিনী। হঠাৎই মান্নান আবেগাপ্লুত হন। রাণীর একটি হাত ধরে বলেন, রাণী সমুদ্র দেখতে যাবে? পতেঙ্গায়? ওখানে আমার এক বন্ধু আছে একটি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। সমুদ্র দেখলে তোমার মন খুব ভালো হয়ে যাবে।...। মান্নানের কথা শেষ না হতেই মিতালি ফিরে আসে এশিয়া ক্যাফের ওয়াশরুম থেকে। তিনতলার এ ক্যাফের একপাশে একটি কদমবৃক্ষ কাঁচের ভিতর দিয়ে দেখতে চমৎকার লাগে।
রাণী বলে, আমি সমুদ্রকে ভয় করি। এই সমুদ্র নিয়েই তো আপুর সঙ্গে ঝগড়া হয়ে গেল। অথচ আপনার হওয়ার দরকার ছিলো নৌবাহিনীর অফিসার।
মান্নান হেসে বলেন, হঠাৎ কেন নৌবাহিনী আর সমুদ্রের প্রতি ক্ষেপে গেলে রাণী?
রাণী বলে, আমি সাঁতার জানি না। শিখতেও চাইনি কোনোদিন। আমার শরীরে তো নতুন করে এখন কোনো এয়ার ব্লাডারও সৃষ্টি হয়নি যে আপু আমাকে সমুদ্রে পাঠানোর পরিকল্পনা করলো। আর এটা কি পরিকল্পনা নাকি ষড়যন্ত্র? আমি কি তার পাকা ধানে মই দিয়েছি?
মান্নান বলেন, আমার মনে হয় তোমার আপু এমন কিছু ভেবে কথাগুলো বলেনি। তাহলে কি বোনের জন্য আবার এভাবে কাঁদতে পারে? মহড়াকালে যে অনেক যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়, যুদ্ধজাহাজ ডুবে যায়, সে কথা তোমার আপু বলবে কী করে?
রাণী বলে, ঠিক আছে আমার মামা নৌবাহিনীর অফিসার। কিন্তু আমাদের বংশের কোনো নারী কোনোদিনও নেভি-তে চাকরি করেনি। অথচ আপু আমার জন্য এমনই চিন্তা করেছে। এ হলো পানিতে ডুবিয়ে মারার এই যুগের অত্যাধুনিক পরিকল্পনা। ঠান্ডা মাথায় খুন। আরে যে মেয়ে সাহিত্যের ছাত্রী, সমুদ্রকে ভয় পায়, সাঁতার জানে না, তাকে পাঠাবে নৌবাহিনীর চাকরিতে!
অনেকক্ষণ ধরে কথা শুনছিলো মিতালি। এবারে একটু মুখ খুললো। বললো, রাণী এখন কিন্তু দিন বদল হয়েছে। তা না হলে সংবাদপত্রে, টেলিভিশনে, পুলিশে বা মিলিটারীতে এতো নারী নেয়? আমার মনে হয়, ওই ভেবেই আপু কথাটা বলেছে। এতকিছু ভেবে বলেনি।
রাণী হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়। বলে, মিতালি তুই আপুর পক্ষ নিয়ে কথা বললে আমি তোর বাসা ছেড়ে এখনই চলে যাবো। আমি করি সমুদ্রকে ভয়। আর আপু করে আমাকে ভয়। আমিই তার সমুদ্র। আর দুলাভাই? তিনি মনে করেন তার সমুদ্র মনি আপু। তাই তিনি বউকে মারাত্মক ভয় করেন। আসলে ভয় রয়েছে সবারই অন্তরে। হঠাৎ মিতালি উঠে দাঁড়ায়। রাণীকে বলে, চল রাণী, বাসায় চল। দেরি হলে আবার বাবা বকবে। তাছাড়া যাওয়ার পথে জিলা স্কুল রোড থেকে মিল্টনের ‘এ্যারিও প্যাজিটিকা’ কিনে নিতে হবে। আরেকদিন কোনো দোকানেই পাইনি।
রাণী বলে, মিতালি তুই একটু নিচে গিয়ে দাঁড়া। আমি আর দশ মিনিট দুলাভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে আসি। মিতালি নিচে চলে গেলে রাণী বলে, দুলাভাই, যদি সুযোগ হয় ফরাসী চিত্রশিল্পীদের কিছু কাজ দেখবেন। ইন্টারনেটে গগ্যাঁ-র কিছু ছবি দেখবেন। সাহস বাড়বে। মিনমিন করা পুরুষ আমি দেখতেই পারি না। আমি হলাম তেঁতুল কাঠ। ঝাঁজও মারাত্মক। তাই আমি বাসা ছেড়ে চলে এসেছি। আমাদের কলেজের বাংলা বিভাগের রুচিরা তার দুলাভাইকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। কিন্তু আমি কি সে রকম মেয়ে? আপু তো আমাকে রীতিমত সন্দেহ শুরু করেছে। বাসায় আমি আর থাকি কী করে?
মান্নান বলেন, আমার কিন্তু রাণী তেমন মনে হয় না। তোমার বোন আসলে তোমার মঙ্গল কামনা করতে গিয়ে অনেক সময় অতিরিক্ত ভাবনা ভাবে। দেখলে না, তিন মাস আগে তোমার বিয়ে প্রায় ঠিকই করে ফেললো দিনাজপুরের চিরিরবন্দর শাখার জনতা ব্যাংকের এক অফিসারের সঙ্গে। তোমার মামাও রাজি হয়ে গেলেন। বাধা দিলাম আমি।
রাণী বললো, আপনি বাধা দিয়েছেন আপনার স্বার্থে। আমার স্বার্থে নয়। মান্নান বললেন, সেটা কী রকম? রাণী বলে, আপনি নিজেকে সাধু বলে দাবী করবেন না। আপন বোনের সঙ্গে সংসার না করলে আপনার সাধুগিরি যে কতো ঠুনকো, তা আমি প্রমাণ করে দিতাম। আমার বোন ঘরকুনো স্বভাবের। কিন্তু আমি অন্যরকম। আপনার মতো দশ পুরুষকে নাকে দড়ি দিয়ে টানার সাহস রাখি।
মান্নান বললেন, তোমার এ মতামত আমি মানতে পারলাম না রাণী। আমার কলেজে তোমার মতো হাজারো ছাত্রী রয়েছে।
রাণী বলে, কিন্তু আমি আপনার ছাত্রী নই। মান্নান বলেন, তাই বলে কি আমি কখনো অন্যায় কিছু করেছি?
রাণী বলে, দিঘিওয়ালি সম্মতিই দিলো না। আপনি কোথায় সাঁতার কাটবেন?
মান্নান বলেন, আমি কি কখনো সে রকম আচরণ করেছি?
রাণী বলে, সেদিন আপনি
আমাকে ঘুমন্ত থাকা অবস্থায় ঠোঁটে চুমো দিয়েছেন।
মান্নান বলেন, আমি তোমাকে দেবী মনে করে এটা করেছি। পাপদৃষ্টিতে করিনি।
রাণী বলে, পাপ দৃষ্টিতেই করেছেন। দানবের দৃষ্টিতে করেছেন। আপনি আমাকে ভোগ করেছেন। সম্ভোগ করেছেন। উপভোগ করেননি। আপনি আমাকে নষ্ট করে বুকের কষ্ট শতগুণ বাড়িয়েছেন। আমি আপনাকে ঘৃণা করি।
ততক্ষণে নিচে থেকে মিতালি আবার এশিয়া ক্যাফেতে উঠে আসে।
বলে, রাণী প্লিজ এক্ষুণি চল। বাবা আজ খুব বকবে।
রাণী বলে, প্লিজ মিতা আর পাঁচ মিনিট একটু সহ্য কর। এক্ষুণি আসছি।
এমন সময় মান্নান রাণীর আরেকটু কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন, রাণী তোমার প্রশ্রয়েই আমি এতটা এগিয়ে এসেছি। সব দোষ তাই আমার নয়। তুমি এ পর্যন্ত প্রায় দশবার আমার নাকে তোমার স্তন ঘষে দিয়েছো। তুমি ভাব দেখিয়েছো তোমার অলক্ষ্যেই এটা হয়েছে। কিন্তু আমি জানি প্রতিবারই তুমি এসব ইচ্ছে করেই করেছো। তোমার বোন আমার স্ত্রী না হলে তক্ষুণি আমি তোমাকে ছিঁড়ে দেখতাম। রাণী বলে, দেখলেন আপনি কতো খারাপভাবে ভাবতে পারেন? অথচ আমি আপনার সঙ্গে শুয়ে থাকতে পারবো কোনো পাপচিন্তা ছাড়াই। আমি জানি, কোরআন শরীফে মৃত পশুর গোশত এবং আপন ভগ্নিপতির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হারাম করা হয়েছে।
মান্নান বললেন, এসব জেনেও তুমি আমার সামনে একটা ওড়না জড়িয়ে দিব্যি পোশাক বদল করে ফেলো।
রাণী বলে, আমি তো সবকিছুকেই সহজ করে নেই। পাপদৃষ্টি আমার মাথায় নেই।
মান্নান বলেন, সহজ করে নিলে মনি তোমাকে নৌবাহিনীর ক্যাডেট ব্যাচে অ্যাপ্লিকেশনের কথা বলাটা সহজ করে নিলে না কেন?
রাণী বলে, যদি আপনিও চান আমি সমুদ্রে ডুবে মরি, তাহলে আমি এক্ষুণি অ্যাপ্লিকেশনের সিদ্ধান্ত নেবো। পরে কিন্তু ফেরাতে পারবেন না আর।
মান্নান হেসে বলেন, আমি আমার আদরের একমাত্র শ্যালিকাকে নিশ্চয়ই ডুবে মরতে দিতে পারি না। ততক্ষণে মিতালি আবার এসে রাণীকে ফেরার তাড়া দেয়।
মিতালি আর রাণী বাসায় ফেরার পর এবার যেন মান্নানের বিবেক জাগ্রত হয়। নিজের স্ত্রী মনির কাছে অনেক কথাই লুকানো শিখেছেন তিনি। বিশেষ করে আপন শ্যালিকার সঙ্গের সর্ম্পকটিকে তিনি যে পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন, তা যে শুভকর নয়, তা জেনেও ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছেন।
তার স্ত্রী মনি সহসা অসুস্থ হলেও নামাজের বিষয়ে কোনো ওজর তুলেন না। সেক্ষেত্রে তারা শ্যালিকা আর দুলাভাইয়ের ফাঁকিবাজির শেষ নেই। দোকান থেকে একটি কোম্পানীর ২৫ মিলি লিটারের ঝাঁঝালো পানীয় কিনে দোকানের সামনেই গিলতে থাকেন আবদুল মান্নান। এশিয়া ক্যাফে-তেও এতক্ষণ অনেক পানীয় পান করেছেন। তবু যেন তৃষ্ণা মিটছে না তার। তারপর এক প্যাকেট কয়েল কিনে ছুটলেন বাসার দিকে।
বাসায় ফিরতেই মনি মান্নানকে বললেন, রাণী কোথায়? আজও কেন আসলো না সে? মান্নান বলেন, তুমি তাকে সমুদ্রে পাঠানোর পরিকল্পনা করবে, সে থাকবে তোমার বাসায়? মনি বলেন, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, সেই দেশের একজন বাসিন্দা হয়ে নিজের বোনকে নৌবাহিনীতে যেতে বলে অপরাধ কিছু করিনি।
মান্নান বলেন, রাণী তো সমুদ্রকে ভয় করে।
মনি বলেন, আর আমি ভয় করি তোমাকে। কারণ সমুদ্র জয়ের নেশা তো তোমার রয়েছে। আমাকে কিভাবে জয় করেছো, সেটাও মাথায় রয়েছে।
মান্নান এবারে একটি সিগ্রেট ধরান। তারপর বলেন, তুমি রাণীর প্রথম প্রেমটা ভেঙে দিয়েছিলে। কেন? মনি বলেন, কারণ তখন তার প্রেমের বয়স হয়নি। নবম শ্রেণিতে পড়তো। এখন তার এভারেস্ট বিজয়ের বয়স। সে তো স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়ও বিজয়ী হয়ে পুরস্কার নিয়ে ফিরতো। ইদানিং সে সব ছেড়ে মোবাইলে ব্যস্ত বেশি। মান্নান বলেন, এটা তো দোষের কিছু নয়।
মনি বলেন, তার বিয়েশাদীর কথাও আমাদের ভাবতে হবে। আব্বা- আম্মা বেঁচে থাকলে না হয় লেখাপড়া শেষ হলে এসব ভাবতাম। মান্নান বলেন, এখন রাণীর বিয়ের কথা ভাবার তো কারণ নেই। টাকা পয়সা লাগবে না? আমি তো আজ পর্যন্ত তোমার তোমার দেনমোহরই সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে পারলাম না।
মনি বলেন, হঠাৎ কেন দেনমোহরের প্রসঙ্গ আসলো। আমি তো কতোবার বলেছি ওটা আমি পেয়েছি ধরে নিয়েছি। পরিশোধের আর প্রয়োজন নেই।
মান্নান বলেন, কিন্তু আমি একজন সচেতন লোক হয়ে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে এটা পরিশোধ করবো না? ধর্মে তো এটা ফরয।
মিতালি রাণীকে বলে, তোর দুলাভাইয়ের সঙ্গে তোর এত মাখামাখি আমার ঠিক ভালো লাগেনি।
রাণী বলে, দুলাভাই আমাকে ভালোবাসেন।
মিতালি বলে, আর তুই?
রাণী বলে, আমি এর উত্তর জানি না। আমি তাকে দিয়ে আমার বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতেও চাই। ব্যাঙ্কে দুলাভাই আমার নামে একটি অ্যাকাউন্ট করে দিয়েছেন। টাকা জমাও রাখেন। আমি তুলে তুলে খরচ করি। অ্যাকাউন্ট খালি হলে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। আমার অনেক খরচের দোষ রয়েছে। দুলাভাই আমার জন্য ইদানিং তার ছাত্রছাত্রীদের ওপর নাকি সামান্য চাঁদাবাজিও শুরু করেছেন। এক সংসারের ভিতর তিনি দুই সংসার লালন করছেন। কেন, আমি তা জানি না।
মিতালি বলে, তোর দুলাভাই একজন শিক্ষিত লম্পট। তিনি তোর শরীরের পাগল।
রাণী বলে, শরীর তো মনি আপুর কাছেও রয়েছে।
মিতালি বলে, তার এটা অসুখ। তোকে ভোগ করে আবার আমার দিকে কিংবা কলেজের কোনো ছাত্রীর দিকেও চোখ দিতে পারেন। রাণী বলে, তিনি এমন পুরুষই নন। তার বন্ধু নুরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি নাকি ছাত্রজীবনে প্রেমপ্রীতি ছেড়ে শুধু লেখাপড়াতেই মনোযোগী ছিলেন। নুরুল ইসলাম ভাইয়া এখন ঢাকার শাহবাগ এলাকার পরিবাগে ব্যবসা করেন। রাতে বিছানায় শুয়ে মনি তার স্বামীকে বললেন, রাণী কোথায় আছে, তুমি তা নিশ্চিত জানো। আগামীকাল যেভাবেই হোক বাসায় নিয়ে আসো। দেখো আমাদের বাসাটি কখনো এমন থমথমে ছিলো না। সব সময় সে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতো। আর এখন? কাজের মহিলা ঝন্টুর মা পর্যন্ত বলেছে আজ, রাণী ছাড়া পুরো বাসাটিই আমাদের ফাঁকা।
মান্নান বলেন, ঝন্টুর মাকে কয়েকদিন আমাদের বাসায় থাকতে বলো। তোমার স্বাস্থ্যটাও তো এখন খুব একটা ভালো না। যে কোনো সময় আবার হাসপাতালে যেতে হবে।
মনি বলেন, ঝন্টুর মা দূরে থাকে। স্বামী-সন্তান নিয়ে কোনো এক টিনের ছাপড়া ঘরে। থাকতে পারবে না। আমি শুধু আমার বোনের কথা ভেবে তাজ্জব হয়ে গেলাম। আমার এখন বাচ্চা হবে। আর তুই আমার সঙ্গে সামান্য কারণেই রেগে বাসা ছাড়লি?
মান্নান বলেন, আমি দ্রুতই তাকে বাসায় ফেরানোর সকল চেষ্টা করবো। তুমি এখন সব দুশ্চিন্তা ছাড়ো। হ
ঠাৎ মনি তার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে নিরবে কাঁদতে থাকেন। তারপর বলেন, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে কিংবা দু’জনের একজন যৌন অনাচার করলে নাকি তাদের সন্তান প্রতিবন্ধী হয়।
মান্নান বলেন, তুমি শিক্ষিত হয়েও কুসংস্কারে বিশ্বাস করো। তাছাড়া আমরা কেউ তো এমন অনাচারে নেই।
মনি বলেন, রাজেশ্বরী যখন পেটে ছিলো, প্রতি মুহূর্তে আমার সঙ্গে সাড়া দিতো। কিন্তু আমার এবারের সন্তান আজ কয়েকদিন তেমন সাড়াই দিচ্ছে না।
মনি আবারও কাঁদতে থাকেন। মান্নান বলেন, তুমি কান্না বন্ধ করো। ওসব তোমার মনের ভুল।
মনি বলেন, আমার ছোট বোন পছন্দ করে কার্বনেটেড ড্রিংকস। আর আমি সাদা পানি। আর তুমি সাদা পানি, ফলের রস, কোমল পানীয় ... এমনকি উন্নত মদও একইসঙ্গে পছন্দ করো। তোমাকে তাই বুঝতে পারি না আমি।
মান্নান আর এ কথার উত্তর না দিয়ে চুপ করে ঘুমোতে চেষ্টা করেন। পরদিন সহসা মনি-র স্বাস্থ্য খুব খারাপ হয়ে যায়। খবর পাঠানো হয় রাণীকে। রাণী মিতালির মামাতো বোন ভারতীকে নিয়ে খুব দ্রুতই বাসায় উপস্থিত হয়। মিতালি তখন বাসায়ও ছিলো না। দুইজন নার্সসহ অ্যাম্বুলেন্স আসে বাসার সামনেই। রাণী, ভারতী আর ঝন্টুর মাকে বাসায় রেখে তার দুলাভাইয়ের সঙ্গে মনিকে নিয়ে শহরের একটি নামীদামী ক্লিনিকে যায়। ততক্ষণে মোবাইলে যোগাযোগ করে মিতালিও হাসপাতালে উপস্থিত হয়। মিতালি রাণীকে বলে, তোর বোনকে এভাবে রেখে তুই বাসা ছাড়তে পারলি?
রাণী বলে, যুদ্ধে-প্রেমে কিংবা রাগে মানুষ যা করে, তা দিয়ে তাকে বিচার করা ঠিক নয়। তখন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না।
মিতালি বলে, এখন যদি তোর বোন মরে যায়, তুই সবচেয়ে বেশি খুশি হবি। কারণ আমি তোর ভিতরটা পাঠ করে ফেলেছি। মিতালির এ কথায় রাণী ক্ষুব্ধ হয়। কিন্তু কোনো জবাব দেয় না।
এদিকে মান্নানকে ডাক্তার কিছু ওষুধের তালিকা দিলেন। ওষুধ কেনার পর মনিকে ওটি-তে পাঠানো হলো। ওটি ইনচার্জ রাণীকে বললেন, আপনারা ঘাবড়ে গিয়েছেন কেন? ভয়ের তো কিছু নেই। আরও কিছু টাকা তুলতে মিতালিকে একটি চেক দিয়ে ব্যাঙ্কে পাঠালেন মান্নান। ফেরার পথে মিতালির রিকশা তাৎক্ষনিকভাবে আটকে কিছু দুর্বৃত্ত তার মোবাইল ও টাকার ব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে যায়। একজন পুলিশ তাড়া করেও ছিনতাইকারীদের ধরতে পারেনি। সন্ধ্যার দিকে মিতালি আর ভারতী নিজেদের বাসায় ফিরে। টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার পর মিতালি প্রায় নির্বাক হয়ে যায়। সবাই আরও বেশি নির্বাক হয় মনি-র মৃত সন্তান প্রসবের ঘটনায়।
রান্না করতে বাসায় চলে আসে রাণী। ঝন্টুর মা মনি-র পছন্দের সব রান্নাই করে দেয়। ক্লিনিকে মনির কাছে সময় দেয় রাজেশ্বরী আর মান্নানের এক ফুপু রাশিদা বেগম। রাত দশটার দিকে খাবার নিতে বাসায় আসেন মান্নান। তার মন খুবই খারাপ। তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে রাণী। বলে, দুলাভাই সব দুর্ঘটনার জন্য দায়ি একমাত্র আমিই।
মান্নান বলেন, দায়ি কেউ নয়, এসব আমার কপালের লিখন অথবা আমি নিজেই দায়ি। কারণ আমিই তো এই সংসার-গাড়ির ইঞ্জিন। গলদ ছিলো ইঞ্জিনেই।
রাণী বলে, গাড়িতে কি চাকার ভূমিকা নেই?
মান্নান বলে, চাকা যদি তোমার বোন হয়, তাহলে চাকার হাওয়া হলে তুমি। তোমার বোন চাকার হাওয়া বের করতেই তো ঘটলো দুর্ঘটনা। ডিসেম্বরের কড়া শীত। বাসার সব দরজা-জানালা বন্ধ। গরম-ঠান্ডা জল মিশিয়ে গোসল করতে বাথরুমে ঢুকেন মান্নান। রাণী বলে, ছোট বালতিটা দিন। মান্নান বালতি এগিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে শেভ করতে নিজের মুখে শেভিং ক্রীম মাখেন। দরজায় আবার নক করে রাণী।
কী আবার দরকার? বলেই দরজা খুলেন মান্নান। এবার রাণী নিজেই ভিতর থেকে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর ... ... ...
। মান্নানও যেন এমন কোনো ঘটনার আশায়ই ওঁৎ পেতেই ছিলেন।
মনির জীবনের এমন আর্তির রাতটায় দুলাভাই মান্নান আর শ্যালিকা রাণীর ফুর্তি যেন শত শতগুণ বেড়ে যায়। ঝন্টুর মা ততক্ষণে পৌঁছে যায় নিজ বাসায়। তারপর স্ত্রী মনি আর ফুপু রাশিদার জন্য খাবার নিয়ে হাসপাতালে যান মান্নান। গিয়ে মনির হাতে হাত রাখেন।
মনি চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেন, আমার জীবনের আজকের ঘূর্ণিঝড়টা বঁড়শির মতো করে সারাজীবন বুকে গেঁথে থাকবে। মান্নান মনির হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলেন, সব ভুলে যাও মনি। শক্ত করো নিজেকে।
মনি বলেন, আজ আমার এমন দুঃখের দিনে তুমি কিভাবে শরীরে সুগন্ধী স্প্রে করলে?
মান্নান বলেন, ধুলাবালিতে-ঘামে কালিতে সারাদিন কি কম ধকল গেল?
মনি বলেন, আমি ক্লিনটনের লিউইনস্কি মনিকা নই, যে তোমাকে বিচারের মুখোমুখি নেবো। কিন্তু আমি লজ্জায় আর কষ্টে মরে যাই। চোখের জলে ভেজানো এমন দিনে তুমি শরীরে কিভাবে সুগন্ধী মাখাতে পারো।
ততক্ষণে ক্লিনিকের বাথরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে মান্নানের ফুপু আসেন সবাইকে খাবার খাওয়াতে।
রাত একটু বাড়লে মনি তার স্বামী মান্নানকে বলেন, তুমি বরং বাসায় চলে যাও। ফুপু আছেন। না ঘুমিয়ে কষ্ট করার কী দরকার?
মান্নান বলেন, তোমার কি মাথা খারাপ তোমাকে ফেলে বাসায় যাবো আমি!
মনি বলেন, রাণী বাসায় একা। ভয় পাবে।
মান্নান বলেন, ও কি দুধের কচি খুকি নাকি! তাছাড়া সে তো সমুদ্রকে ভয় করে। আমাদের বাসাটি নিশ্চয়ই বঙ্গোপসাগর নয়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:৫৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
অনুচ্ছেদ ভাগ করা দরকার। তাহলে পড়তে আরাম লাগবে।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩

জসীম অসীম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। অনুচ্ছেদ ভাগ করা দরকার, এটা আমাকে আগেও আপনারা অনেকেই বারবার বলেছেন। দুর্ভাগ্য আমার যে, এত ব্যস্ততায় হুড়মুড়িয়ে একটা লেখা পোস্ট দিয়ে চলে যাই। অনলাইনেও অনেক সময় থাকি না। আগামী পোস্টগুলোতে এসব বিষয় বিশেষভাবে স্মরণে রাখবো। অনেক কৃতজ্ঞতা।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: প্যারা প্যারা করে লিখুন।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৭

জসীম অসীম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। অনুচ্ছেদ ভাগ করা দরকার, এটা আমাকে আগেও বলেছেন। তারপরও দায়িত্বশীল হতে পারিনি। সচেষ্ট থাকবো এবার। সুস্থ থাকুন: এই কামনা করছি।

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:১২

প্রথমকথা বলেছেন: খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি, ভাল হয়েছে তবে অনুচ্ছেদে ভাগ করলে আরো ভাল লাগতো।

৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৬:১৮

জসীম অসীম বলেছেন: আগামীতে এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই লেখা পোস্ট দেবো। পরামর্শের জন্য অনেক ধন্যবাদ। অশেষ কৃতজ্ঞতা। নিরন্তর শুভ কামনা।

৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:১৭

তুতুন বলেছেন: গল্প যতই ভালো হোক;এমন ঢালাই লেখা পড়া কষ্টকর।

৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৬:২৮

জসীম অসীম বলেছেন: যথার্থই বলেছেন। আগামীতে এসব বিষয় অবশ্যই মাথায় রেখে লেখা পোস্ট দেবো। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.