নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: একাত্তরের প্রেতাত্মা

৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:২৪



অলংকরণ: জসীম অসীম।

ইকবাল খান তাঁর কুকুরের পেছনে হাজার হাজার টাকা খরচ করেন কিন্তু কখনোই ভিক্ষুককেও পারতপক্ষে একটি টাকা দেন না। তারই এক কৃষক আত্মীয় সেদিন অনাহারে-হতাশায় আত্মহত্যা করেছেন। এ নিয়ে ভাবারও সময় নেই ইকবাল খানের। বরং তিনি সেদিন সারাদিনই মানুষের সঙ্গে একটি নিখোঁজ বিমানের গল্প বলে বলে কাটিয়েছেন। ঢাকার বনানীতে সর্বশেষ যে অ্যাপার্টমেন্টটি কিনেছেন, এ গল্পের রেশও এখনও তাঁর মুখ থেকে যায়নি। অর্থ খরচ করে কিছু পদকও লাভ করেছেন। তার যে কৃষক আত্মীয়টি আত্মহত্যা করেছেন, তিনি ইকবাল খানের কাছে একটি শ্যালো মেশিনের টাকার জন্য প্রায় দশবার ঢাকায় এসেছিলেন। দেননি ইকবাল খান। পোষা কুকুরকে খাবার খাওয়াতে খাওয়াতে সেই দুর্ভাগা কৃষক মোমেন মিয়াকে বলেছেন, একবার তোকে ঘর বানাতে টিনের টাকা দিয়েছিলাম। মনে আছে? তোর সেই ঘর গেলো পুড়ে। এবার তোকে শ্যালো মেশিনের টাকা দেই, কয়েকদিন পর মেশিন নিয়ে যাবে চোরে। মোমেন মিয়া বলেছেন, আগুনে এতো দ্রুত পুড়লো ঘর, লোকে নেভানোরও সময় পেলো না। আর গ্রামে তো ফায়ার সার্ভিসও নেই যে, খবর পেয়ে চলে আসবে। আমি তো শুনেছি শহরের লোক ইন্সুরেন্সের টাকা পেতে কখনো কখনো নিজের বাসা বা দোকানে নাকি নিজেই আগুন লাগিয়ে দেয়। আমরা সারা বছরই করি লোকসানের কারবার। গত বছর আমার আলুচাষ তিনবারই বৃষ্টিতে নষ্ট হলো।
এসব কথা কখনোই কানে যায়নি ইকবাল খানের। তাঁর মেয়ের সন্তান হওয়ার পর মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু মাত্র ২৫ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করে তখন সেই ৫ রুমের ১২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনে দিতে পারেননি। সেই সময়টায় ইকবাল খান কোনো চেষ্টাতেই টাকাটা মেলাতে পারেননি। আজও তিনি সেই দিনের পরম দুঃখে ভীষণই ভেসে যান। কতো শোচনীয় দশায় না তখন তাঁর দিন কেটেছে। তাই আজকাল কুকুরের পেছনেও হাজার টাকা খরচ করেন। কিন্তু বিনা স্বার্থে কোনো মানুষের পেছনে একটি টাকাও আর খরচ করেন না। মেয়ে পূরবীর জীবনের অনেক না পাওয়ার কথা মনে পড়ে তাঁর। তাই চুক্তি ছাড়া বা বিনা দলিলে আর কাউকে টাকা ধার দেন না।
তাঁর এল পি গ্যাসের ব্যবসাও এখন রমরমা। একটি ব্যবসায়িক কোম্পানী তাকে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব করেছে। ইকবাল খান আগ্রহ দেখাননি। বলেছেন, ওই ব্যবসায় লাভ খুঁজে পাওয়া সম্ভব হলেও ওই শিল্পটি আমাকে কোনোভাবেই আকর্ষণ করে না। অথচ এই লোকটিকেই আবার কোনো এক কারণে আকর্ষণ করে নিষিদ্ধ একটি জঙ্গি সংগঠন। শুধুমাত্র তাদের জন্য সময়ে সময়ে অকাতরে খরচ করতে কুন্ঠা নেই ইকবাল খানের। চলাফেরায় অত্যাধুনিক একটি ভাবমূর্তি থাকলেও মনের ভিতরে তার আদিম অনেক বিষয়ই জাগ্রত।
ইকোপার্কে বিনিয়োগের লভ্যাংশের পঞ্চাশ ভাগ তাই নিষিদ্ধ ঘোষিত সেই জঙ্গি সংগঠনকে দিয়ে দেন। পোষা কুকুর এবং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তার ভালোবাসার অর্ধেক অংশ। বাকি অর্ধেক তার স্ত্রী। গুলশান থেকে কেনা কুকুরটির সঙ্গে তার দ্বিতীয় মেয়ের এক ধরনের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলেও এলাকার কয়েক যুবক-যুবতীর কাছে অভিযোগ রয়েছে।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের জন্য ইকবাল খানের দরদ ঠিক কী কারণে, তার তল এখনো অনেকে খুঁজে পাননি। জঙ্গি সংগঠনকে অর্থ প্রদানের কথা তার স্ত্রী জানলেও এ বিষয়ে তার মুখে কুলুপ।
ইকবাল খান যে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীর এক কন্যাকে বিয়ে করেছেন, তা এখনো অসংখ্য লোকের কাছে অজানা। ইকবাল খানের আমেরিকা প্রবাসী ভাই খায়রুল কবীর ওখানকার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সঙ্গে জড়িত। ইকবাল খানের স্ত্রীর পক্ষে ওকালতিতেও বেশ অগ্রসর খায়রুল। এই খায়রুলও এখন বেশ টাকা-পয়সা করেছেন। বাড়ি করেছেন মতিঝিলে। তারই ভাই ইকবাল খানের স্ত্রী রোমানা খান ভাবীর ভীষণই অনুরক্ত খায়রুল। একদা তাকে এই রোমানা ভাবীর পিতা খন্দকার য়ূসুফ খালেদ সাহেবই আমেরিকা পাঠাতে বেশ ভূমিকা রেখেছিলেন। আর সেই য়ূসুফ খালেদকে এখন কেউ যুদ্ধাপরাধী বললে ছেড়ে দেবে খায়রুল?
খন্দকার য়ূসুফ খালেদ সাহেবেরই কন্যা রোমানা খানও বিষে বিষক্ষয় কর্মে বেশ পারদর্শি। তাই হরতালের সমর্থনে ছোড়া জঙ্গি বোমায় রোমানা খানের প্রসাধনীর ঘ্রাণ মেলে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসীন রোগীর শরীরে ইকবাল খানের প্রিয় কাবাবের ঘ্রাণ উড়ে। মানুষের আর্তনাদে তাই কখনোই ইকবাল খানের চোখের জল ঝরে না।
যে পাজেরো গাড়িতে করে এখন ঢাকা শহর ঘুরে বেড়ান ইকবাল খান, তার চেয়েও অধিক দামে কেনা হয়েছে তারই স্ত্রী রোমানা খানের বিভিন্ন স্বর্ণালংকারগুলো। অথচ এই রোমানা খানের দাদাই ছিলেন একদা যমুনা নদীর এক নৌকার মাঝি। এমনকি কোনো এক ঝড়ের রাতে রোমানার দাদা আবদুস সোবহান যমুনা নদীতে নিখোঁজও হয়েছিলেন। এক মাস খোঁজ করেও তার লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সময় এখন যমুনা নদীর মাঝি আবদুস সোবহানের নাতিন রোমানাদের অনেক উঁচুতে নিয়ে এসেছে। এমনকি সেই আবদুস সোবহানের ছেলে খন্দকার য়ূসূফ খালেদও একাত্তরের আগেও যমুনার চর থেকে চরে নৌকা চালিয়েছেন। কিন্তু উনিশশ একাত্তর সাল তার জীবনে এসেছিলো আর্শীবাদ হয়ে। যুদ্ধের সময় নিজের এলাকা ছেড়ে পাকিস্তানী সেনাদের সঙ্গে কুড়িগ্রাম যেতে হয়েছিলো তাকে। ওখানে কে চেনে আর য়ূসুফকে? কতো বাড়িতে যে য়ূসুফ নিজের হাতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। পুরো বর্ষাকালজুড়ে নিজের নৌকা নিয়ে পাকিস্তানী সেনাদের প্লাবিত এলাকাগুলোতে পৌঁছে দিয়েছেন য়ূসুফ। আর সেই য়ূসুফই আবার যুদ্ধের পর পরই চলে এসেছেন ঢাকায়।
তারপর ঢাকার অদূরে এক কাঠা জায়গা কিনে বসবাস শুরু করেন। সেই সময়টাতেই তার দ্বিতীয় কন্যা ফারিয়ার জন্ম হয়। আর তখনও সৌদি আরবের এক ইঞ্চি মাটিতেও বাংলাদেশের কোনো জাতীয় পতাকা উড়েনি। ওই সময়টাতেই হজ পালন করতে ইচ্ছুক লোকদের অনুসন্ধান শুরু করলেন য়ূসুফ। বললেন, সৌদি আরব খুব গরমের দেশ। আমাদের দেশের অনেক হাজীই হজ করতে গিয়ে শুধুমাত্র গরমেই ওখানে মারা যান। কিভাবে সহজে হজ করা যাবে, তা জানতে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ওখানে আমাদের লোকজন আছে। আমরা সর্বোচ্চ সেবায় হজযাত্রীদের পাঠিয়ে থাকি। তখন মক্কা-জেদ্দা ইত্যাদি জায়গা সম্পর্কেও বিবরণ দিতে থাকেন য়ূসুফ। বলেন, মসজিদুল হারামে কাবা শরীফে তাওয়াফ করতে গিয়ে ভিড়ের চাপে অনেক হাজীই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। সুতরাং আগে থেকে সব বিষয়ে ধারণা নিয়ে যাওয়াই ভালো। এ বিষয়ে আমি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে পারবো। হজযাত্রা, সৌদি আরবে সেবা দেওয়া এবং বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত আমাদের দায়িত্ব শেষ হবে না। তখনই রাতারাতি পয়সা আসতে থাকে খন্দকার য়ূসুফ খালেদের হাতে। য়ূসুফের এ ব্যবসার উদ্যোক্তা নাসের-জাহেদী তখন তাকে বলেছিলেন, য়ূসুফ টাকা কামানোর সুযোগ সব সময় হয় না। যেমন একাত্তর সাল তোমাকে সুযোগ করে দিয়েছিলো। তখন যদি তুমি পাকিস্তানী সেনাদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার নিয়ে না জমাতে, যুদ্ধের পরে আর অন্য কিছুর মূল্য থাকতো না। কারণ যুদ্ধের পর পাকিস্তানী টাকাও বাজেয়াপ্ত করা হলো। যুদ্ধের বাজারে অবাক করা কম দামে জমি কিনেও অনেকে ধরা খেয়েছে।
এ এক আশ্চর্যজনক সত্য যে, খন্দকার য়ূসুফ খালেদ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধী ছিলো, এই ঢাকা শহরে আজ আর এর কোনো প্রমাণই নেই। এমনকি তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো মামলাও নেই। আর তার সেই সময়ে সংঘটিত অপরাধও আজ অবধি কেউ শনাক্ত করতে পারেনি। তাহলে আর তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবে কে? কুড়িগ্রামের এক পাড়াগায়ে পাকিস্তানী সেনাদের হামলার কথা মনে পড়ে য়ূসুফের। শারদীয় দুর্গোৎসবের সব প্রস্তুতিই তখন শেষ। নামেমাত্র পুজো হচ্ছে এক বাড়িতে। য়ূসুফ সেনাসহ নৌকা নিয়ে গেলো সেই বাড়িতে। মন্ডপে প্রতিমার সাজ ছিলো। হঠাৎ বাড়িটি ফাঁকা হয়ে গেলো। কোনোভাবে সেনা আসার খবরটি আগেই রটে গিয়েছিলো। পাকিরা যখন সুন্দরী যুবতীদের খোঁজ করছিলো, সে সময়ে য়ূসুফ এবং তাঁর দেশীয় আরেক সহকর্মী আজিমুল্লাহ বকাউল তন্নতন্ন করে স্বর্ণালংকারের ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রীর খোঁজ করেছিলো। অবশেষে পেয়েও গিয়েছিল অনেক স্বর্ণালংকার। শেষে পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তার হাতে সেসব স্বর্ণালংকার তুলে দেন য়ূসুফ এবং বকাউল। এর থেকেই কিছু অলংকার তাদের বকশিশ দেন কর্মকর্তাটি। সেই য়ূসুফ এখন আজ এত বছর পর ঢাকা শহরের উঁচুতলার মানুষ। আর তারই বড় কন্যার জামাতা এখন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের চিন্তাধারী ইকবাল মোহাম্মদ খান।
এই ইকবাল খানই একসময় ছিলেন একজন পাট ব্যবসায়ী। অল্প পুঁজি থেকে যখন ব্যবসার অবস্থা একটু ভালো হলো, ঠিক তখনই তার পাটের গুদামে আগুন লাগে। তারপর ব্যবসা ছেড়ে ইকবাল যোগ দেন এক ডাকাতদলে। তবে অল্পের জন্য বারবারই বেঁচে যান পুলিশের হাত থেকে। একবার ইকবালদের ডাকাত দল চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জামগাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করে। তারপর আটকে পড়া পাঁচটি বাসে হানা দেয় ওরা। মহিলাদের স্বর্ণালংকারসহ বিস্তর টাকাপয়সা লুটে নেয়। তারপর এমন অনেক ঘটনার সঙ্গে জড়িত আন্তজেলা ডাকাতদলের সদস্য ইকবাইল্যা ডাকাত তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিতে প্রকাশ্য ডাকাতি ছেড়ে দেয়ার অসম্ভব ঘটনা সম্ভব করে তুলে। শুরু করে কিছু বৈধ ব্যবসাও। ধীরে ধীরে এখন তিনি ঢাকা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইকবাল মোহাম্মদ খান। এই ইকবাল খানরা একদা যেভাবে গাছ কেটে রেখে মহাসড়ক অবরোধ করে ডাকাতি করতেন, আজ তার এবং তাদের মতো ব্যক্তিদের অর্থ সহায়তা পেয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলো রক্তস্নাত এই দেশে হরতাল ডেকে গাছ কেটে রেখে সড়ক মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন তান্ডব চালায়। আর ওসব জঙ্গি সংগঠনগুলোর কর্মীরা প্রায়ই বিভিন্ন মন্দিরে চুরি করে। রাতের অন্ধকারে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরের তালা ভেঙ্গে লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এমনকি চুরি শেষে ফেরার পথে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটায়। পরে এ নিয়ে মন্দিরের সভাপতি বা অন্য সদস্যরা সংশ্লিষ্ট পুলিশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার শরণাপন্ন হন। পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা করুণা করে হলেও একবার ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির পরিদর্শন করেন।
ইকবাল খানের অনুরক্ত ফখরুলও একটি জঙ্গি সংগঠনের একনিষ্ঠ কর্মী। ফখরুল গত দুই মাস ধরে খরচ করছে একটি মন্দির থেকে লুট করা দানবাক্সের টাকা। ওই টাকার শরীরের কোথাও মন্দিরের বা প্রতিমার অথবা দেবদেবীর নাম লেখা ছিলো না। তাই এসব খরচ করতে তার কোনো সমস্যাই হয়নি। কিন্তু সমস্যা হলো তখন, যখন সে একটি মন্দিরের গোডাউন থেকে চুরি করা অ্যালুমিনিয়ামের পাতিল, স্টিলের প্লেট ও পিতলের মালামাল মুহাম্মদ আলীর সহযোগিতায় আলতা বাজারে বিক্রি করতে গেলো। ওই আলতা বাজারের কালীমন্দিরের সদস্য শংকর ওই বিক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক অনুভব করে। তাই সে দোকান থেকে বের হয়ে এসে বিষয়টি তার বন্ধু চিত্তকে জানায়। চিত্ত সরাসরি চলে যায় পুলিশের কাছে। কিন্তু পুলিশের গন্ধ পেয়ে ফখরুল ততোক্ষণে মালামালসহ আলতা বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়।
কিছুদিন আগে ওই ফখরুলকেই এক ঘোরতর বিপদ থেকে রক্ষা করতে ইকবাল খান ঢাকার পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্যের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। এখন আবার সমূহ বিপদ ফখরুলকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
ইকবাল খানের স্ত্রী রোমানা প্রায়ই পার্লারে ফেসিয়াল করতে যান। ইদানিং তিনি পার্লারে যান হাইড্রোক্সি ফেসিয়াল করতে। একই সঙ্গে তার দ্বিতীয় মেয়ে ফারিয়াও যান। উভয়েরই ইদানিং একই সঙ্গে ব্রণের সমস্যা দেখা দিয়েছে। রোমানার এ বয়সে ব্রণের উৎপাতের কথা ছিলো না। কিন্তু প্রকৃতির খেয়াল কে ধরতে পারে? উপযুক্ত ডায়েটের মাধ্যমে শরীরকে এখনও রোমানা খাপছাড়া তরবারিরূপেই ইকবাল খানের সামনে হাজির করে। তার এ সৌন্দর্য দেখে সেদিন সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখার এক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা তার চেয়ার থেকে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যান। আরেকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কারেন্সী অফিসার (জিএম) রাস্তায় হোঁচট খেয়ে ডাস্টবিনের ময়লায় নিমজ্জিত হন। ইকবাল খানের পাজেরো দিয়ে পোস্তগোলা থেকে ফেরার সময় পুরো পোস্তগোলা দাঁড়িয়ে থাকে রোমানা খানকে এক নজর দেখবে বলে। কিছুদিন আগে বারডেম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন রোমানা খান। রোগীরা তখন অধিকমাত্রায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে থাকে। অথচ এই রোমানা খানই যখন নাগরিক নাট্যাঙ্গন প্রযোজিত লাকী ইনাম নির্দেশিত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে প্রাগৈতিহাসিক নাটক দেখতে যান, তখন মঞ্চে আগুন লেগে যায়। রোমানা খানের সৌন্দর্যে নয়, তার ভিতরের আদিম মূর্তির হিংস্র ছায়ায়। কারণ তার শরীরে প্রবাহিত খন্দকার য়ূসুফ খালেদের একাত্তরের মানবতাবিরোধী রক্ত।
রাজউক পূর্বাচল ৩০ নং সেক্টর সংলগ্ন ১০ কাঠার প্লট এককালীন মূল্যে কয়েকদিন আগে কিনেছেন ইকবাল খান। আজ জমির রেজিষ্ট্রেশন শেষে পাজেরোতে করে ফিরতে ফিরতে রোমানা খানের সঙ্গে ইনোসেন্স অব মুসলিম ছবিটি নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি।
ইকবাল খান যখন ইকবাইল্যা রাজাকার বা ইকবাইল্যা ডাকাত ছিলেন, তখনই তিনি যে কোনো সময় মারা যেতে পারতেন। এমনটাই মনে করেন ইকবাল খান। তাঁর বর্তমান জীবনটাই একটি পুরষ্কারস্বরূপ। তাই এখনও যে কোনো সময়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়েও তিনি কাজের সিদ্ধান্ত নেন। ঢাকার কোটি মানুষের মধ্যে যেমন বাংলাদেশের সেরা খুনিরা দিব্যি লুকিয়ে থাকতে পারে এবং পুলিশের হাতেও ধরা খায় না, তেমনিভাবে ইকবাইল্যা রাজাকারও ইকবাল খানের ভিতরও নিপুণভাবেই সব সময় লুকিয়ে থাকেন। সেটা ইকবাল খান টের পেলেও সাধারণ মানুষ কখনোই তেমন টের পান না। মহড়াকালে অনেক যুদ্ধবিমানই তো বিধ্বস্ত হয়ে যায়। কিন্তু ইকবাইল্যা ডাকাত বা তারও আগের ইকবাইল্যা রাজাকার মহড়া উর্ত্তীণ হয়েই আজ সমাজের অভিজাত একজন ইকবাল খানে রূপান্তরিত হয়েছেন। তিনি ভাবেন না এই ভূ-খন্ডের এতো বড় বড় জমিদারগণও আজ শ্মশানান্তরিত বা কবরান্তরিত হয়েছেন। ভাবেন না, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা বা রংপুরের হিন্দুবধের সাক্ষ্য দিয়ে দিতে পারে চট্টগ্রামের চন্দনাইশের শঙ্খ নদ।
অথচ এটাও সত্য যে, সমাজে প্রবীণ ব্যক্তি এখনও অনেকে সেই ইকবাইল্যা রাজাকার বা ইকবাইল্যা ডাকাতের খোঁজ করেন। কিন্তু তাঁরা তাঁকে আর কোথাও খুঁজে পান না! তারা মনে করেন তাঁকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে কেউ কেউ মনে করেন ইকবাইল্যা নামের সেই কালো বিড়ালের বা ভূতের খোঁজে তাঁরা আমের আচারে কর্পোরেট কোম্পানীর ব্যবহৃত বর্তমান বাজারের খাঁটি সরিষার তৈলের কাছে গিয়েও দেখতে পারেন। কারণ ভূতেরা বা কালো বিড়ালেরা যুগে যুগেই এমন রূপান্তরিত হয়ে খাঁটি সরিষার তৈলে পরিণত হয়েছেন। রাজনীতি রপ্ত করে রক্ত খেয়ে খেয়ে তারা ফরমালিন থেকে রূপান্তরিত হয়ে বৃক্ষের ফলফলাদি, কখনো বা মৎস্য বা অন্যান্য ইকবাল খান নামীয় মহীরুহে পরিণত হয়েছেন। এই ডিজিটাল ইকবাল খানগণ এখন জামায়াতে ইসলামকেও আওয়ামী ইসলাম এ রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত এবং ন্যস্ত। তাই কারাগারে বন্দী জামায়াতের অনেক আসামির জামিন পেতে সহযোগিতা করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অনেক নেতাও। তাই বর্তমানের এই আওয়ামী ইসলামের অন্যতম নেতা ইকবাল খান আজকাল সারা শরীরে খাঁটি সরিষার তৈল মেখে সভা-সেমিনারে যান এবং আমাদের সমাজে ইউনেসকো এবং ইউনিসেফের অবদান বিষয়েও কথা বলেন। এই অলরাউন্ডার ইকবাল খান দারুণভাবেই লুকিয়ে রাখেন ইকবাইল্যা রাজাকারকে অথবা ইকবাইল্যা ডাকাতকে। কিন্তু তবু ইকবাইল্যা রাজাকার বিভিন্ন জনের কথাবার্তায় বেঁচে থাকে অথবা একাত্তরে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের মুখেই উঠে আসে ইকবাইল্যা রাজাকারের নানা তান্ডবের বর্ণনা। তারপর একদিন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি সেমিনারে যেতে এক প্রকার যেন বাধ্যই হন ইকবাল খান। মনটাও তাঁর সেদিন সেই অনুষ্ঠানে যেতে কোনোভাবেই সায় দিচ্ছিলো না। অবশেষে বিভিন্ন সাংগঠনিক ছেলেমেয়েদের অনুরোধে যেতেই হলো তাকে। কী আচানক ঘটনা: সবাই লক্ষ্য করলো সেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সেমিনারেই কার শরীর থেকে যেন অথবা মাথার চুল থেকে বাজারের খাঁটি সরিষার তৈলের তীব্র গন্ধ আসতে লাগলো। কে মেখেছে শরীরে এমন সরিষার তৈল? সেমিনারে এমন প্রশ্ন বারবারই উত্থাপিত হলো। আর আরও আচানক ঘটনা: সেই সেমিনারেই একাত্তরের বাংলাদেশের দুঃসাহসী মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে চললো কুখ্যাত ইকবাইল্যা রাজাকার ও তার সহচর আলবদর মোসলেমের কুকীর্তির নানা বিবরণও। এমনকি ইকবাইল্যার শ্বশুর খন্দকার য়ূসুফ খালেদের কুকীর্তি বিষয়েও সেমিনারের অনেক বক্তা নানা কথা বললেন। অবশেষে এই -দেশ- গ্যালারিতে আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যান ইকবাল খান। মূলত অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণাই ইকবাল খানকে এমন অসুস্থ করে দেয়। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে ব্যবসার কাজে আরও অধিক মনোযোগী হন ইকবাল। অথচ এমন অধিক মনোযোগী হয়েও গাজীপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রাইভার ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ২০০৭-২০০৮-২০০৯ সালের পোশাক তৈরি ও সরবরাহের একটি কাজ নানা চেষ্টা করেও হাতে পাননি ইকবাল খান। এতে তার মন খুবই খারাপ হয়ে যায়। তাই তাঁর ব্যবসায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি জরুরি সভায় বসেন। বলেন, এমন মারাত্মক ভুল আর কিছুতেই করা যাবে না। সামনেই রমজান মাস। অন্যদিকে আমি একজন চিনি আমদানিকারকও। রমজানে সরকার চিনির দাম কেজি প্রতি নির্ধারন করবে ৬৪/৬৫ টাকা। কিন্তু আশার কথা হলো কাঁচামাল সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণের কারণ দেখিয়ে এখনও বন্ধ রয়েছে দেশের চারটি চিনিকল। আশা করি ৫ হাজার টন চিনি আমদানি করলে গড়ে ৭০ টাকা করে দেশের বাজারে বিক্রি করতে পারবো। রমজানে দেশের চিনির মজুত ও চাহিদার তথ্যও আমার কাছে রয়েছে। কয়েকটি চিনিকল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। আশা করি রমজানকে টার্গেট করে চিনির ব্যবসায় আমাদের ভালোই লাভ হবে। ...
ব্যবসায়িক সভা শেষ হতেই তাঁর পছন্দের জঙ্গি সংগঠনের এক নেতা শরিফুল আসেন ইকবাল খানের সঙ্গে দেখা করতে। ইকবাল খান ইসলামের কল্যাণে ব্যয় হওয়া তাঁর অর্থের উদাহরণ দেন। জঙ্গি নেতা শরিফুল বলেন, আরও অর্থ চাই। এতো অল্প অর্থে বিপ্লব অসম্ভব। পাকিস্তানের বিলুচিস্তানে যখন ছিলাম, তখন দেখেছি সৌদি আরব থেকেও সরাসরি অর্থ আসতো। আসতো কুয়েত থেকেও। বাংলাদেশে তারা খুব একটা অর্থ দিতে চায় না। আপনারাও যদি উদার না হন, আন্দোলন চাঙ্গা করা যাবে না। পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করানোর কাজেও অনেক অর্থই খরচ হয়ে যায়। তাই নিয়ম করেই চাঁদার পরিমাণ আপনাদের বাড়াতে হবে।
শরিফুলের এমন কথায় খুব রাগ হয় ইকবাল খানের। তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, এতো প্রশ্ন করে আন্দোলন চালানো যাবে না। আন্দোলন করতে বিশ্বাস আরও মজবুত করতে হবে। মিডিয়ার পেছনেও অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়। নিজস্ব মিডিয়া নেই বলেই তো কোনো কোনো মিডিয়া আমাদের সন্ত্রাসী মনে করে। তাছাড়া ইসলামি আন্দোলনের নামে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে যে চাঁদা তোলা হয়, তার সবটাই তহবিলে জমা পড়ে। কিন্তু দেখবে দেশের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন বা অন্যান্য সংগঠন চাঁদা তুললে বেশির ভাগই তহবিলে জমা পড়ে না। সুতরাং আমাদের নিজেদের প্রতি নিজেদের বিশ্বাস রাখতে হবে।...।
এদিকে কয়েকদিন পর আবারো -দেশ- গ্যালারিতে আয়োজিত আরেক সেমিনারে বিশেষ অতিথি হন ইকবাল খান। -বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে মার্কিন সাংবাদিক লিয়ার লেভিনের অবদান- শীর্ষক ওই সেমিনারে দর্শক সারিতে ছিলেন এক বৃদ্ধা। তার নাম বীথি রাণী পাল। তিনি ইকবাল খানকে প্রকৃতই চিনতে পারলেন। সহসা আবেগাপ্লুত কন্ঠে তিনি চিৎকার করে বললেন, এই অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ইকবাল খান উনিশশো একাত্তরের ইকবাইল্যা রাজাকার। আমি তাকে ঠিকই চিনেছি। ওই ইকবাইল্যা রাজাকারেরও নাকের ডগায় এমন বড় বড় জোড়া তিল ছিলো। এই ইকবাল খানেরও নাকের ডগায় জোড়া তিল। বয়স বাড়লেও চেহারা তেমন বদলায়নি। আপনারা কুড়িগ্রামে যান, ইকবাইল্যা রাজাকারের কথা বলার মতো এবং তাকে চেনার মতো লোকজন এখনও বেঁচে আছেন। আপনারা ওখানে গেলে য়ূসুফ রাজাকারের কথাও শুনবেন। ঘটনাচক্রে ওরাই এখন হয়েছে আবার জামাই-শ্বশুর। বীথি রাণী পাল ততক্ষণে কাঁদতে কাঁদতে একাত্তরের বাংলাদেশ ও তাঁর নিজের জীবনের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়কে স্মরণ করলেন। তারপর বললেন, আমি শুনেছি তাঁর শ্বশুর য়ূসুফ আরও বড় রাজাকার ছিলো। আগে থেকে অনেক খবর জেনেই আজ আমি এই অনুষ্ঠানে নিজেই উপস্থিত হয়েছিলাম। ঠিক এটুকু বলার সঙ্গে সঙ্গেই টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান ও পত্রিকার ফটো সাংবাদিকগণ দ্রুত লয়ে বীথি রাণী পালের বিভিন্ন ছবি তুলতে লাগলেন। অথচ এরই ফাঁকে মঞ্চ ছেড়ে দৌড়ে পালালেন ইকবাল খান ওরফে ইকবাইল্যা রাজাকার। সাংবাদিকগণ তাঁর পিছু নিতেই নিজের পাজেরোতে চড়ে বসলো ইকবাইল্যা রাজাকার। পরদিন সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যমের শিরোনাম হলো দেশ ছেড়ে পালালো একাত্তরের প্রেতাত্মা ইকবাইল্যা রাজাকারের নানামুখি খবর।

রচনা:
ডিসেম্বর: 2015
কুমিল্লা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: এযুগে কিছু ইকব্যাইলার মতো রাজাকার আছে।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫২

জসীম অসীম বলেছেন: রাজাকার আর আগের অবস্থায় নেই। সে তাঁর পথ চলার বা বাণিজ্যের এবং রাজনীতির ধরন পাল্টিয়েছে। এমনকি কিছু কিছু রাজাকার যেমন মুক্তিযোদ্ধা শিবিরেরও ছায়ায় বসবাস করে। ভালো থাকুন। শুভ কামনা নিরন্তর।

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৮

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: অনেক বড় লেখা, তবুও ধৈর্য ধরে পড়লাম।
আপনার অনুভূতিটুকু বুঝতে চেষ্টা করলাম।
দেশে এরকম হাজারো ইকবাইল্যা রাজাকার আজ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সেজে বসে বসে খুবলে খুবলে খাচ্ছে দেশটাকে।
ধন্যবাদ।।

৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৫

জসীম অসীম বলেছেন: লেখাটি আমার বউ কম্পোজ করেছে। সে বললো, লেখা দীর্ঘ, ক্লান্তিকর এবং শিল্পমানও ক্ষুন্ন হয়েছে। সে আমার গল্পের প্রথম পাঠক। আপনি যে এত কষ্ট করে এই দীর্ঘ লেখা পাঠ করেছেন, তার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা। আর অনুভব আসলে উপস্থাপন করতে পারিনি, যেমনটি করতে চেয়েছিলাম। পরামর্শ দেবেন। শুভ কামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.