নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

জামাল উদ্দিন দামাল এর ‘সেলুলয়েডের লাল কবিতা’ গ্রন্থ থেকে

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৬


‘পথের পাচালী’ চলচ্চিত্র বিষয়ে একবার একজন বলছিলেন, Never I’ll forget this film...’.
...’.
সেই ‘চলচ্চিত্র’ এখন পড়ানো হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিয়েও আজকাল চলচ্চিত্র নির্মাণে অনেকে নেমে পড়েছেন। বিষয়টা এতই সহজ নয়। তাদের কোনো ব্যবহারিক কিংবা তাত্ত্বিক শিক্ষা থাকে না বলেই আরও এত জটিলতা সৃষ্টি করে যায়।
কিন্তু একসময় কুমিল্লা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে মাঠে নেমেছিলেন জসীম অসীম। কিন্তু যেহেতু তিনি গণ্যমান্য নামধারী চতুর কিংবা বাণিজ্যিক লোকদের দালালি করেন না, তাই কুমিল্লার ঐতিহ্য নিয়ে ওই অবাণিজ্যিক বিষয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণে তিনি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিংবা জেলা পরিষদ অথবা জেলা প্রশাসনে অনুদান চেয়েও কোনোভাবেই পাননি। তাই মাঝপথেই থেমে যায় তার ওই ব্যক্তিগত উদ্যোগে নেয়া এ চলচ্চিত্র-প্রকল্প। একসময় তার সিনেমাটোগ্রাফির কনসেপ্টই স্টিল ফটোগ্রাফির কনসেপ্টে রূপান্তরিত হয়। তার আলোকচিত্রগুলোই [1992-2004] এ সাক্ষ্য দেয়।
আজকাল কুমিল্লা শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখছি ডিজিটাল স্টিল ক্যামেরার শাটার টিপতে পারলেই ‘প্রেস ফটোগ্রাফার’ও হয়ে যায়। বিষয়টা এতই ছেলেখেলা নয়।
1997 সালে প্রকাশিত আমার রচিত ‘প্রসঙ্গ :চলচ্চিত্র’ শীর্ষক গ্রন্থে প্রচ্ছদ তৈরী হয়েছিলো জসীম অসীম-এর ‘গোমতি নদীর এপার-ওপার’ সিরিজের একটি শৈল্পিক ফটোগ্রাফ দিয়ে। সেই গ্রন্থেই তার ‘গোমতি নদীর এপার ওপার’ সিরিজের কিছু সংখ্যক ফটোগ্রাফসহ তারই ফটোগ্রাফি বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ ‘প্রসঙ্গ: ফটোগ্রাফি’ গ্রন্থের একটি বিজ্ঞাপন বের হয়েছিল। দুঃখজনক বিষয়, তার একটি পারিবারিক দুর্ঘটনায় সেই প্রবন্ধের পান্ডুলিপিটিও হারিয়ে যায়। এছাড়াও মননশীল চলচ্চিত্র বিষয়ে রয়েছে তার অনেক লেখা, যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বিচ্ছিন্নভাবে ছাপা হয়েছে।
জসীম অসীম প্রথমে 1987 সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। চলচ্চিত্র সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন খোকন তাকে চলচ্চিত্রে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে না পেরে 1992 সাল থেকে ফ্রি-ল্যান্স স্টিল প্রেস ফটোগ্রাফি শুরু করেন। ঢাকায়। পরে একসময় কুমিল্লার পত্রিকা দৈনিক ‘শিরোনাম’-এ তিনি ‘রিপোর্টার কাম ফটোগ্রাফার’ পদে চাকুরিও করেছেন। কিন্তু তার মাথায় বরাবরই ছিলো ফিল্ম নির্মাণের ইচ্ছে। 1994 সাল থেকে আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্র ম্যাগাজিন ও কুমিল্লার পত্রিকাগুলোতে চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখালেখি শুরু করি। 1997 সালে বের হয় আমার প্রথম চলচ্চিত্র বিষয়ক গ্রন্থ ‘প্রসঙ্গ:চলচ্চিত্র’। তখনও এই কুমিল্লা শহরে কেউ ফিল্ম নিয়ে লেখালেখি করছিল না। একমাত্র আমিই ছিলাম এ ব্যতিক্রম বিষয়ের লেখক।
বিকল্প ফিল্ম নিয়ে 1992 সাল থেকে জসীম অসীম ও তার ঢাকার বামপন্থী বন্ধু আবিদ হোসেনরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-তে নিয়মিত পাঠচক্র করতেন। আবিদ হোসেন প্রতিষ্ঠিত ‘স্বকল্প ধারা’র আয়োজনেই এ পাঠচক্র চলতো। আর ছিলো তাদের ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স ও আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিবলে অংশগ্রহণ। তাদের সংস্পর্শেই আমি এ বিষয়ে লেখালেখি শুরু করি। জসীম অসীমের মূলত সিনেমাটোগ্রাফির দিকেই মূল নেশা ছিলো। কিন্তু সুযোগ ছিলো না বলেই স্টিল ফটোগ্রাফি বা স্থির আলোকচিত্রের দিকে তার নেশা এসে স্থির হয়। আর সেই সূত্রে তিনি তখন বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন কুমিল্লা জেলা শাখার নির্বাহী সদস্য হন এবং ‘2002 সালে এসোসিয়েশনের কুমিল্লা শাখা আয়োজিত 3 দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী’তেও অংশগ্রহণ করেন। তখন তিনি ‘প্রদর্শনী সম্মাননা’ও লাভ করেছিলেন। মহান স্বাধীনতা দিবস-2004 উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি কুমিল্লা একটি সরকারি কর্মসূচি হিসেবে ‘গোমতি নদীর এপার ওপার’ শীর্ষক জসীম অসীমের 3 দিনব্যাপী প্রথম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন তৎকালীন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক তারিক-উল ইসলাম। একজন ফ্রি-ল্যান্স প্রেস ফটোগ্রাফার হিসেবে একসময় জসীম অসীমের ছবি ডেইলি অবজারভার, ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও দৈনিক সংবাদসহ ঢাকার অনেক জাতীয় দৈনিকেও ছাপা হয়েছে। 1999 সালের মাঝামাঝি সময়ে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের এতবারপুরে গোমতি নদীর বাঁধ ভেঙ্গে জেলার প্রায় ৬টি উপজেলা প্লাবিত হয়। ওই সময়ে তার তোলা বন্যা ও গোমতি নদীভাঙ্গনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছবি কুমিল্লার দৈনিক ‘রূপসী বাংলা’ ও সাপ্তাহিক ‘আমোদ’সহ জাতীয় অনেক বাংলা-ইংরেজি দৈনিক সংবাদপত্রে ছাপা হয়। এসব সংবাদ-চিত্রেও তার চলচ্চিত্রস্পর্শ অনুভব করা যায়।
ছবি আঁকার নেশাও তার রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সংকলনের প্রচ্ছদচিত্রও এঁকেছেন। আবার পত্রিকায়ও কিছু ছাপা হয়েছে। চলচ্চিত্র বুঝতে কিংবা নির্মাণে চিত্রকলার জ্ঞান খুবই অপরিহার্য। তবে বিভিন্ন সময়ে কুমিল্লার পত্রিকাগুলোর মালিকদের সঙ্গে তার মতান্তরের কারণে তিনি প্রায়ই পত্রিকার চাকুরি ছেড়ে দিয়ে তার আলোকচিত্র চর্চাও অব্যাহত রাখেননি। পত্রিকার, পৃষ্ঠপোষক কিংবা মালিকপক্ষের সঙ্গে তার কোনোদিনও বনিবনা হয়নি। 2004 সালে জসীম অসীম ‘কুমিল্লার কাগজ’ পত্রিকায় ‘বার্তা সম্পাদক’ হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু 2005 সালেই ছেড়ে দেন সেই চাকুরি। 2006 সালে দৈনিক ‘কুমিল্লা বার্তা’ পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে যোগ দেন। কিন্তু সেই বছরের শেষদিকে আবারও সেই চাকুরিও ছেড়ে দেন। 2006 সালের শেষদিকে তিনি ‘বাংলা ভিশন’ টেলিভিশনের প্রোগ্রাম বাংলাদেশ ট্রাভেল গাইড ‘দেশের পথে’র পরিচালক হাসান ইমাম চৌধুরী টিংকু-র সাথেও কিছুদিন কাজ করেন। 2006 সালের 18 ডিসেম্বর তারিখে সেই অনুষ্ঠান থেকেই তার একটি সাক্ষাৎকার ‘বাংলাভিশন’ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়।
2006 সালের শেষদিক থেকে জসীম অসীম কুমিল্লা জেলার ইতিহাসভিত্তিক তথ্যচিত্র ‘কমলাঙ্ক’ নির্মাণ ও উপস্থাপনায় জড়িত হন। শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লা প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ জেলা হিসেবে এ উপমহাদেশে সুপরিচিত। জনশ্রুতি আছে, ‘কমলাঙ্ক’ নাম থেকেই ‘কুমিল্লা’ নামের উৎপত্তি। 1948 সালের 23 ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে কুমিল্লার রাজনৈতিক নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির সাথে বাংলাকেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দানের দাবি জানান। সমবায় আন্দোলনের স্রষ্টা হিসেবে খ্যাত ড. আখতার হামিদ খানের ‘পল্লী উন্নয়ন একাডেমি’-জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লা জেলার গৌরবগাথা কুমিল্লাকে করেছে সমৃদ্ধ। একসময় ব্যাঙ্ক এবং ট্যাঙ্কের শহর নামেও পরিচিত ছিল এই কুমিল্লা শহর। কুমিল্লার খাদি শিল্প আজও স্বকীয়তা বজায় রেখেছে। কুমিল্লার গোমতি নদী-ধর্মসাগর দিঘি-ঐতিহাসিক সুজা বাদশা মসজিদ-শিক্ষা ও সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শালবন বিহার-ইটাখোলা মুড়া-রূপবান মুড়া-ইপিজেড-ভিক্টোরিয়া কলেজ-জগন্নাথ মন্দির-বাখরাবাদ গ্যাস-ময়নামতি রানীর বাংলো-কুমিল্লার ধর্মসাগর দিঘি সংলগ্ন রানীর কুঠি-লাকসাম নবাব ফয়জুননেসার বাড়ি ও তার শিক্ষা-সাহিত্যে-জনসেবায় অবদান, শচীনদেব বর্মণের বাড়ি-চন্ডীমুড়া মন্দির-লালমাই ময়নামতি পাহাড়, আনন্দবিহার-আনন্দদিঘি,ভোজবিহার, কুমিল্লা সেনানিবাস-ওয়ার সিমেট্রি, বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন...ইত্যাদি বিষয়ে এ ‘কমলাঙ্ক’ তথ্যচিত্রে রয়েছে ভিস্যুয়্যাল নান্দনিক ফিচার। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ প্রকল্পের আওতায় মাত্র এক ঘন্টার তথ্যচিত্র নির্মাণ কাজ শেষ হলেও অর্থাভাবে থেমে যায় বাকি অনেক অনেক ঘন্টার তথ্যচিত্র নির্মাণ কাজ। এমনকি অনেক অনেক ঘন্টার ভিডিও ফুটেজ অর্থাভাবে সম্পাদনার অভাবে ঢাকার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থার কাছে আটক থেকে নষ্ট হয় কিংবা একসময় হাতছাড়াই হয়ে যায় তার। এ সময়ের মধ্যে তিনি একাধিক অডিও রেকর্ডিং স্টুডিও-তেও কিছু কাজ করেন।
এসব কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি আবার পত্রিকার চাকুরিও করেছেন। সর্বশেষ তিনি প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগের মুখপত্র ৬ জেলায় প্রচারিত দৈনিক ‘ডাক প্রতিদিন’ পত্রিকায় চাকুরি নেন। কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত ঢাকা থেকে মুদ্রিত ব্রডশিট এ কাগজটি তখন কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-চাঁদপুর-নোয়াখালী-ফেনী-লক্ষীপুর জেলার মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হতো। পত্রিকাটির ‘বার্তা সম্পাদক’ হিসেবে যোগদান করে 2014 সালের জুন মাসে এবং পত্রিকার মালিক পক্ষের সঙ্গে মতান্তর-পথান্তরের কারণে আবার চাকুরি ছেড়ে দেন 2015 সালের জানুয়ারি মাসেই। 2008 সাল থেকে জসীম অসীম কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ উল্লাহ প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক ‘নিরীক্ষণ’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ পত্রিকায়ও ‘জার্নালিজম অ্যান্ড কাউন্টার জার্নালিজম’ বিষয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করেছেন তিনি। ফলে তার অবস্থা ক্রমাগত আরও খারাপ হয়ে যায়। এমনকি তিনি কুমিল্লার সাংবাদিক-সম্পাদক-প্রেসক্লাব-এম.পি-মন্ত্রী-মেয়র-ডিসি-এস.পি-পুলিশ বিভাগ-এনজিও-র্যাব...এমনকি নিজের বিরুদ্ধেও কলম চালাতে থাকেন। আর এসব লেখা তাঁর প্রচলিত ‘রিপোর্ট’ ফর্মেও ছিল না, ছিল ‘ব্যক্তিগত দিনলিপি’ ফর্মে। ফলে বিভিন্ন সময়ে ঝড়ের মুখোমুখি হন তিনি।
সাংবাদিকদের সংগঠনে যাবেন না, প্রেসক্লাবে যাবেন না, মন্ত্রী -মেয়র-এমপি-ডিসি-র নিউজ ছাপাবেন না। স্থানীয় পত্রিকায় র্যাব কিংবা সরকারবিরোধী নিউজ ছেপে দেবেন...এগুলো প্রচলিত কোনো পন্থা হতে পারে না। বিকল্প পন্থা, যা তিনি বিকল্প চলচ্চিত্র চর্চা থেকেই দুই যুগ আগে পেয়েছেন। সাংবাদিকতার পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে তিনি বিভিন্ন সময়ে ‘কুমিল্লা বার্ড-এডাব-রাড্ডা বার্নেন-পি আই বি-বিসিডিজেসি-ক্যাম্প ও নিউজ নেটওয়ার্কসহ আরও অন্যান্য প্রশিক্ষণ সংস্থা আয়োজিত প্রিন্ট-অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেও তার মনে বরাবরই সুপ্ত ছিল চলচ্চিত্র-চর্চা। পৃথিবীর সকল শিল্প-চলচ্চিত্র তিনি অনেক আগেই দেখে ফেলেছেন। 1991-1993 সাল পর্যন্ত সময়ে জসীম অসীম ঢাকায় থিয়েটার করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি-তে প্রেক্ষাপট থিয়েটারে ও পরে দুর্বার নাট্যচক্রে প্রায় দুই বছর কাজ করেন। 148 মিটফোর্ড রোডের ‘দুর্বার নাট্যচক্রে’র প্রতিদিন রিহার্সাল হতো তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকাতেই। দুর্বার-এর নাট্যকর্মী হিসেবেই তিনি প্রথম ঢাকার বেইলী রোডের ‘গাইড হাউস-মহিলা সমিতি’ মঞ্চে পারফর্ম করেন।
এ সময়ে তিনি আবার দেশের নামকরা অভিনেতা-অভিনেত্রী ও নাট্যকর্মীদের দ্বারা পরিচালিত থিয়েটার বিষয়ক অনেক কর্মশালায়ও অংশগ্রহণ করেন। অবশ্য তারও আগে 1991 সালে 361 ডিআইটি রোড পূর্ব রামপুরা ঢাকায় অবস্থিত ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্রডকাস্টিং আর্ট’ থেকে ‘অভিনয়’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সে সময়েই, 1992 সালের অক্টোবর মাসে তখনকার দেশের একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’ (বিটিভি)-এ নাট্যশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য ঢাকার রামপুরা টেলিভিশন ভবনে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তারপর তিনি নিজেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি এলাকায় গড়ে তুলেন থিয়েটার স্কুলের সিলেবাসভিত্তিক নাট্য সংগঠন ‘পেরিস্কোপ নাট্য অধ্যয়ন চক্র’। পরে সেটি ফিল্ম অধ্যয়ন চক্রে রূপান্তরিত হয় এবং তারই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লাতেও 2004 সালে গঠন করেন চলচ্চিত্র সংগঠন ‘দি সিনেমা’। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূলতায় ও কখনো কখনো ষড়যন্ত্রের কারণেও তিনি সরলরৈখিকভাবে তার চর্চা ধরে রাখতে পারেননি। মুক্ত চলচ্চিত্র চর্চা কিংবা বিকল্প চলচ্চিত্র পাঠের ফলাফলে যেহেতু তিনি বারবারই প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছেন, সুতরাং তার জন্য বিভিন্ন অর্থদাতা গোষ্ঠির আনুকূল্যপ্রাপ্তিও ছিলো অধিকাংশ সময়েই অসম্ভব।
2004 সালের সেপ্টেম্বরে কুমিল্লা টাউনহলে (বীর চন্দ্র নগর মিলনায়তন) ‘বন্যা: নদীমাতৃক রাক্ষস’ শীর্ষক তিনদিনব্যাপী তার তৃতীয় একক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)-এর তখনকার পরিচালক (প্রশাসন) এম খায়রুল কবীর। সেসব লগ্নে তার প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনোভাবের জন্য প্রদর্শনী করাকালে পুলিশ প্রশাসন তার কিছু ছবিও নামিয়ে নেয়, যেসব ছবি পত্রিকাতেও কখনো ছাপানো যায়নি । অবশেষে তখনকার কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারকে সব ছবি দেখিয়েই প্রদর্শনী করার অনুমতি মেলে।
চলচ্চিত্র বুঝতে হলে কবিতা বুঝতেই হবে। এর কোনো বিকল্পই নেই। জসীম অসীম কবিতায় রাজ্যেও অনাগত নন। 1998-1999 সালে তিনি নিজের লেখা ‘বাংলা কবিতা’ দিয়ে তিনটি কবিতার সংকলন বের করেন। [১] চাঁদের জ্যোৎস্না খসে গেছে [২] স্বপ্নের মালা গাঁথার স্বপ্ন [৩] তুমি এখন আকাশবাসী। তবে তাঁর সব কবিতাই মূলত আজ অবধি অপ্রকাশিতই রয়েছে। গল্প-উপন্যাসও তার রয়েছে অনেক, যদিও অর্থাভাবে তা ছাপা হয়নি। এই বাণিজ্যের যুগে প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনোভাবাপন্ন লোকের পেছনে অর্থ বিনিয়োগ কে করবে! সুস্থ চলচ্চিত্রের যেমন আর্থিক অনুদান পাওয়া বিরল ঘটনা, ব্যক্তি হিসেবে তার অবস্থাও তেমনি। অথচ ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ কিংবা বুঝতে হলে যত বিষয়ে দক্ষতা দরকার, তার সব বিষয়েই তিনি এক প্রকার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তারপরও তার জন্য প্রতিনিয়তই প্রতিকূলতা বিরাজমান।
জসীম অসীম বর্তমানে একজন মুক্ত পেশার মানুষ। তার এক অর্থে কোন ‘উপাধি’ই নেই, স্থায়ীভাবে কোনো পত্রিকায় কিংবা টেলিভিশনে চাকুরি করলে যেটা থাকা সম্ভব ছিল। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা-স্নাতক [সম্মান- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়] হওয়ার পরও তার অবমূল্যায়ন অনেক। তার প্রসঙ্গে দৈনিক ‘কুমিল্লার কাগজ’ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয় একবার বলেন, “জসীম অসীম কুমিল্লার কাগজে অনেকদিন ‘বার্তা সম্পাদক’ ছিলেন। তিনি তখন দিনরাত খেয়ে-না খেয়ে কুমিল্লার কাগজে শ্রম-মেধা খরচ করেছেন। অনেক রাত অসীমকে সব কাজ দিয়ে আমরা সবাই চলে গেছি। সে সময়ে নিজের পত্রিকার মতো মনে করে ‘কুমিল্লার কাগজ’কে তিনি পাঠের উপযোগী করে তুলেছিলেন। অসংখ্য খবর লিখেছেন। তার লেখার কারণে অনেকদিন পর কুমিল্লার মানুষ তখন গুণী ব্যক্তিত্ব প্রফেসর লায়লা নূরের খবর জানতে পেরেছিলেন। এই খবর পড়তে গিয়ে পাঠক মূলত কুমিল্লার কাগজই পড়েছেন।” [সম্পাদকের জবানবন্দি: পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিশেষ সংখ্যা 2009: আবুল কাশেম হৃদয়: দৈনিক কুমিল্লার কাগজ: কুমিল্লা] কুমিল্লার কাগজ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয় তার প্রতি সদয় হয়েই এমন স্বীকৃতির কথা লিখেছেন। অথচ তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি শ্রম তিনি কুমিল্লার আরও পত্রিকার জন্য বছর বছর দিয়েছেন। কিন্তু স্বীকৃতি দূরে থাক, উল্টো তিনি ‘অস্থির’ বলেই তার নামে বদনাম রটিয়েছেন। সময় একদিন নিশ্চয়ই প্রকৃত সত্য তুলে ধরবে। তার যদি যোগ্যতাই না থাকে, তাহলে কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতকোত্তর নীতিশ সাহা তার ‘শিরোনাম’ পত্রিকা দৈনিক করার প্রতিযোগিতার লগ্নে জসীম অসীমকেই নিয়োগ দিলেন। কুমিল্লায় কি তখন আর কোনো দক্ষ সাংবাদিক ছিলেন না?
আসলে জীবনের প্রথমদিকে ডান রাজনীতি এবং পরে বাম রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তিনি মূলত আজও কোনো সামাজিক-রাজনৈতিক অব্যবস্থার সাথে আপোষ করেননি। তার জীবনযাপন, তার সমবয়সী অন্য অনেকজনের জীবনের চেয়ে নি:সন্দেহে ব্যতিক্রম। তাছাড়া এখন কুমিল্লায় একশ্রেণির অসৎ –অযোগ্য লোক গণমাধ্যমের মালিক অথবা কর্মী পরিচয় দিচ্ছেন। সাংবাদিক নামধারী এসব অগা-মগা-বগাদের কোনো প্রকারেরই লেখাপড়া নেই। টাকা দিয়ে ‘সাংবাদিক পরিচয়পত্র’ কেনা এসব টাউটের কাছ থেকে তিনি আর কী ই বা মূল্যায়ন পাবেন। আমার বিবেচনায় জসীম অসীম একজন সুস্থ ফিল্ম-পাগল মানুষ। পৃথিবীর সেরা ছবিগুলো দেখা এবং এসব বিষয়ে পাঠ ও লেখালেখি করা তার নিয়মিত একটি কাজ। পৃথিবীর প্রায় সব চলচ্চিত্র নিয়েই তিনি অনর্গল বলতে পারেন। আর এসব তার ফিল্ম বিষয়ে পাঠেরই ফলাফল।
জসীম অসীম বলেন, জীবনে চলচ্চিত্র দেখা শুরু হয় বাণিজ্যিক ছবি দিয়েই। ফখরুল হাসান বৈরাগীর ‘রাজিয়া সুলতানা’ মুক্তি পেয়েছিল 1984 সালে। সে বছরই দেখেছিলাম এ ছবি কুমিল্লার ‘দীপিকা’ সিনেমা হলে। সিনেমাহলে এটাই আমার দেখা প্রথম ছবি। ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’ মুক্তি পেয়েছিল 1984 সালেই। ইবনে মিজানের এ রঙিন ছবি দেখে আমি তখন অভিভূত হই যেহেতু শিশু ছিলাম। পরে বুঝেছি, এসব ছবিতে তেমন কমিটমেন্ট ছিল না। সবই ছিল বাণিজ্যিক ধারার ছবি। তবে ছবি দেখে ছবির পুরো কাহিনী, পরিচালকের নাম, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম, কোন হলে দেখেছি-কবে দেখেছি, সেই তারিখ এবং টিকেটের ক্লাসভিত্তিক টাকার পরিমান ডায়েরীতে লিখে রাখতাম।
রহমানের ‘দরশন’ পাকিস্তান আমলের ছবি। 1967 সালে মুক্তি পেয়েছিল। এ ছবির গান কখনোই ভোলার নয়। 1985 সালে শক্তি সামন্ত ও সৈয়দ হাসান ইমামের ‘অন্যায় অবিচার’ ছবি মুক্তি পায়। সেই ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তীর অভিনয় দেখে মনে হয়েছিল তারা আসলে অভিনয়ের জন্যই জন্মেছেন।
সে সময়টায় আসলে বাণিজ্যিক ধারার ছবিগুলোতেও একটা কমিটমেন্ট ছিল। আবুল খায়ের বুলবুলের ‘শাহীকানুন’-নূর হোসেন বলাইয়ের ‘ইন্সপেক্টর’ কামাল আহমেদের ‘আওয়ারা’ আজিজুর রহমানের ‘রঙিন রূপবান’-শামসুদ্দীন টগরের ‘নকল শাহজাদা’ ইবনে মিজানের ‘রাজকুমারী’ শহিদুল আমিনের ‘রামের সুমতি’ মতিউর রহমানের ‘সাথী’ কামাল আহমেদের ‘মা ও ছেলে’-রাজ্জাক-শাবানা অভিনীত ‘মহানগর’-মাসুদ পারভেজের ‘এপার-ওপার’-‘দস্যু বনহুর’ দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘সালতানাৎ’ অশোক ঘোষের ‘হিম্মতওয়ালী’ ইবনে মিজানের ‘পুনর্মিলন’ গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘শাস্তি’ আজিমের ‘গাদ্দার’ দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘নাগরানী’-এ.জে মিন্টুর ‘চ্যালেঞ্জ’ রূপ সনাতনের ‘দয়াল মুর্শিদ’ মমতাজ আলীর ‘রক্তাক্ত বাংলা’ সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ চাষী নজরুলের ‘ওরা এগারজন’ জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ মিতার ‘নীল আকাশের নীচে’-ইত্যাদি ছবিগুলো আমি শৈশবেই দেখে ফেলি। তবে এসব ছবির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না অর্থ অপহরণ। ওসব ছবি না দেখলে বুঝতে পারা যাবে না বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অনেক প্রতিভাবান কুশলীদের কাজ।
মিতার ‘নীল আকাশের নীচে’ প্রথম মুক্তি পায় 1969 সালে। এ ছবিটি আমার মায়ের ভালো লাগা একটি ছবি। আমার বাবা-মা যখন পাকিস্তান আমলে ঢাকায় ছিলেন, তখনই তারা এ ছবি দেখেছিলেন। আমার জন্মেরও আগে। দীর্ঘ 25বছর পর এ ছবি আবার দেখে মা বলেছিলেন, হায় কখন যে বুড়ো হয়ে গেলাম। খান আতার ‘জোয়ার ভাটা’ প্রথম মুক্তি পায় 1969 সালে। আমার বাবার ভালো লাগা ছবি এটি। আমি দেখি 1987 সালে।
এছাড়াও গাফ্ফার খানের ‘প্রেমনগর’-মাসুদ পারভেজের ‘নাগপূর্ণিমা’-এমএ মালেকের ‘শাহী চোর’-খান আতার ‘আরশীনগর’-এফ কবীরের ‘আবে হায়াৎ’ এফ কবীর চৌধুরীর ‘সওদাগর’ দেওয়ান নজরুলের ‘ওস্তাদ সাগরেদ’ শেখ নজরুল ইসলামের ‘এতিম’ আবদুস সামাদের ‘সূর্য সংগ্রাম’ ছবিগুলোর কথা এখনো মাথায় ভাসে। জীবনে কতো হলে যে এসব ছবি দেখার জন্য গিয়েছি, আর কতো সময় খরচ করেছি, হিসেব করা যাবে না। ছুটির ঘন্টা-ছবি অবশ্য হিন্দিটা দেখেছি আগে। বাংলা ছবিটা দেখার সুযোগ হয়েছে পরে।
‘অবিচার’ ছবি দেখতে চলে গিয়েছিলাম কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জে। হলের নাম ছিল ‘পূর্ণিমা’। বোম্বের মিঠুন চক্রবর্তীর বিপরীতে বাংলাদেশের রোজিনার অভিনয় সত্যি সত্যি মনে রাখার মতো। সোহেলরানা-অঞ্জু-ইলিয়াস কাঞ্চন-রানী-দিলারা-প্রবীরমিত্র-রাজ-রাজিব-দারাশিকো অভিনীত ‘শাহী খান্দান’ ছবিটি দেখি কোম্পানীগঞ্জের ‘লাকী’ সিনেমা হলে। এ ছবিতে শরীরের অশ্লীল উপস্থাপনা দেখে দীর্ঘদিন মনের দুঃখে হলমুখো হইনি আর। আলমগীর-শাবানা অভিনীত ‘শশী-পুন্নু’ ছবিটি দেখি কুমিল্লা শহরের ‘মধুমতি’ সিনেমাহলে। 1986 সালে। তবে এসব ছিলো 1990 সালের আগের ঘটনা।
1992 সাল থেকেই আমি মূলত পৃথিবীর সেরা চলচ্চিত্রকারদের নান্দনিক ও পলিটিক্যালি কমিটেড ফিল্মগুলো দেখতে থাকি।
চলচ্চিত্রের ইতিহাসে লাল অক্ষরে লেখা রয়েছে ফরাসী দুই ভাইয়ের নাম। অগুস্ত লুমিয়ের এবং লুই লুমিয়ের। 1895 সালের 28 নভেম্বর এ দুই ভাই প্যারিসে আর্কল্যাম্প প্রজেক্টর দিয়ে নিজেদের তৈরি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন। আমরা দুই ভাইও 1990-এর দশকের প্রথম থেকেই ভীষণভাবেই চলচ্চিত্রভাবনায় জড়িয়ে পড়েছিলাম। কিছু দুর্ভাগ্য, কিছু চক্রান্ত এবং অর্থাভাবে বারবার আমরা পিছিয়ে পড়ি।
জসীম অসীম একসময় অনেক চিত্রনাট্যও রচনা করেন। তার পাখি বিষয়ক অনেক গল্পের চিত্রনাট্য। তার কাছেই প্রথম পড়তে পাই মার্কিন চলচ্চিত্রকার ডেভিড ওয়ার্ক লিউলিন গ্রিফিথ বিষয়ে। গ্রিফিথ চলচ্চিত্রকে একটি শিল্পভাষা হিসেবে অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছিলেন। 1915 সালে তিনি আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে তৈরি করেন ‘দি বার্থ অব নেশন’। তারপর পড়লাম সের্গেই মিখাইলোভিচ আইজেনস্টাইনের 1925 সালে নির্মিত ‘ব্যাটলশিপ পটেমকিন’ নিয়ে। এ ছবিটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ছবি। তারপর বার্গম্যান এবং অন্যান্য সেরা চলচ্চিত্রকারদের নিয়ে। সত্যজিতের ছবি বিষয়ে জসীম অসীম একবার তার এক লেখায় বলেন, ‘ছবি দেখছিলাম ‘পথের পাঁচালী’। বিভূতির লেখায় সত্যজিৎ রায়ের ছবি। ভাবতে পারিনি, মানুষও কিভাবে শিল্প সৃষ্টি করে নিজেই এক ঈশ্বর হয়ে উঠেন। মূল উপন্যাস ছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কতোবার যে পড়েছি এ উপন্যাস। অমর ছবি নির্মাণ করেছেন সত্যজিৎ রায়। ছবি দেখেছি তার প্রায় সবগুলোই।
সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নষ্টনীড়’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত। গল্পটি আমাদের সাহিত্যের ক্লাশে পাঠ্য ছিল। সে এক বেপরোয়া প্রেমের নান্দনিক গল্প। সত্যজিতের বিকল্প আর হবে না ভারতে। তিনি আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্রে সব দেখা সম্ভব। এক জীবনে যত জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়, চলচ্চিত্রে তত জায়গা দেখা সম্ভব। এক জীবনে যত যুগে যাওয়া সম্ভব নয়, চলচ্চিত্রে তত যুগে যাওয়া সম্ভব। সুতরাং বলা যায়, জীবনের সন্ধানে চলচ্চিত্র দেখার বিকল্পই নেই। তবে তা চলচ্চিত্র নামের অপদার্থ চলমান বাণিজ্যিক নারীদেহনির্ভর চিত্র যেন না হয়। শিল্পমান বিবর্জিত চলমানচিত্র কখনোই চলচ্চিত্র হতে পারেনা। তাই সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক কুমার ঘটক , মৃণাল সেন, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, উজ্জ্বল চক্রবর্তী, অপর্না সেন, অশোক বিশ্বনাথন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, অনিরুদ্ধ ধর, শেখ নিয়ামত আলী, মসিউদ্দিন শাখের, কবির আনোয়ার, আমজাদ হোসেন, আতাউর রহমান, চাষী নজরুল ইসলামসহ যারা বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন, তাদের ধারার বাইরের বাণিজ্যিক ও ভ্রষ্ট চলচ্চিত্রগুলো পরিত্যাগ করাই উচিত । সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’, 1980 সালে নির্মিত মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র ‘আকালের সন্ধানে’ ও ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ অনেক ছবির গল্প ও নির্মাণকৌশল তিনি জীবনেও ভুলবেন না বলে জানান। ‘আকালের সন্ধানে’ ছবিতে দেখানো হয়েছিল একটি চলচ্চিত্র কলাকুশলীদলের একটি গ্রামে গিয়ে 1943 সালের দুর্ভিক্ষের উপর একটি চলচ্চিত্র তৈরির কাহিনী। কিভাবে 1943-এর দুর্ভিক্ষের কাল্পনিক কাহিনী মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সেই গ্রামের সাধারণ মানুষদের সাথে, সেটাই ছিল এই চলচ্চিত্রের সারমর্ম। সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ এবং মৃণাল সেনের ‘আকালের সন্ধানে’ দুভিক্ষ নিয়ে ছবি।
জসীম অসীমের কাছেই জীবনের প্রথম দিকে আমি নিয়েছিলাম চলচ্চিত্রের প্রথম পাঠ। তখন আমাদের প্রায় প্রতিদিনকার পাঠের বিষয় ছিলো পুদোভকিনের ‘মাদার’, ‘ইন্ড অব সেন্ট পিটার্সবার্গ’, আইজেনষ্টাইনের ‘অক্টোবর’, চার্লি চ্যাপলিনের ‘গোল্ডরাশ’, মৃনাল সেনের ‘ইন্টারভিউ-কলকাতা-71 ও পদাতিক ট্রিলজি’ কিংবা সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু ট্রিলজি’ ফিল্মগুলো বিষয়ে। ‘পথের পাচালী’র ইন্দির ঠাকুরনের মুখের গঠনে, বচনে, বসনে, তাঁর গল্প বলার ঢঙ্গে, গ্রামীণ পথপরিক্রমায় সত্যজিৎ কী নিখুঁত কাজ করেছেন এসব নিয়ে আমাদের বাসায় তখন একদিন আলাপ না হলে আমাদের পেটের ভাত হজম হতো না। কুমিল্লা শহরের অনেক শিল্প-বোদ্ধা তখন আমাদের বাসার সেসব আড্ডায় শরিক হতেন। আর সৎ শিল্পকে জনপ্রিয় করা যেমন কঠিন কাজ, তেমনি আমাদের সেসব আড্ডা কিংবা চর্চাও পায়নি যথাযথ মূল্যায়ন।
তখন আমার মনিকা আক্তার কনিকা আপা নিয়মিত গল্প-প্রবন্ধ লিখতেন কুমিল্লার বিভিন্ন পত্রিকায় এবং ছোটভাই গিয়াস উদ্দিন পিয়াস আঁকতো জলরঙে অসংখ্য ছবি। পিয়াস ছবি আঁকায় তখন অনেক পুরস্কারও পেয়েছিল। কিন্তু এখন যুগটা চলে গেছে স্টার প্রথা আর বাণিজ্যের দিকে, যাকে আমরা শুরু থেকেই ঘৃনা করতাম। কুমিল্লায় যেদিন থেকে ডিজিটাল ফটোগ্রাফির নামে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেধাহীন বাণিজ্যিক প্রেস ফটোগ্রাফির শুরু হলো, জসীম অসীম তখন থেকেই ছেড়ে দিলেন তার সিনেমাটোগ্রাফির কনসেপ্ট থেকে পাওয়া স্টিল আর্ট অ্যান্ড প্রেস ফটোগ্রাফির চর্চাও। সম্মানে আঘাতে এলেই তিনি যেমন বারবার ছেড়ে দিয়েছেন তাঁর পত্রিকার চাকুরিও। সময় নিশ্চয়ই আসবে একদিন, যেদিন প্রমাণ হবে, কমপক্ষে এটা প্রমাণ হবে যে, জসীম অসীম কী মানের একজন ফিল্ম-বোদ্ধাও ছিলেন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট গুলো যেন কেমন পড়ে আরাম পাওয়া যায় না।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫১

জসীম অসীম বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। লেখায় যে আমি অসংলগ্ন, এ বাস্তবতা নতুন নয়। চেষ্টা করবো সুখপাঠ্য লেখা লিখতে...কোনোদিন। সুন্দর ও স্পষ্ট মতামতের জন্য অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.