নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলো আমরা পাখিদের কাছ থেকে ইউক্লিডের নতুন পাঠ নেই জীবনানন্দের পাঠ নেই নিউটনের আপেল গাছটি থেকে।

জসীম অসীম

লেখা হলো কেতকীফুল। ভালোবাসি তাই।

জসীম অসীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিনলিপি: একই লোকের দুই বিপরীত মেরুর দুই গ্রন্থ

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১০


17 সেপ্টেম্বর, 1994
404 মীরহাজিরবাগ, ঢাকা।

ঐতিহাসিক বস্তুবাদ অনেকবার পড়েও তেমন সহজভাবে বুঝিনি। অথচ এ তত্ত্ব না বুঝে মার্কসবাদ সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারা অসম্ভব। আমার পরিবারের লোকের কাছে রাজনীতিই অপছন্দের। আর এখন আমি যে বামপন্থায় আস্থাবান, তা আমার পরিবার সমর্থন করবে না। ছিদ্দিক মামা যদি জানেন মার্কসবাদ আমার প্রতিদিনকার পাঠ্য বিষয়, অজ্ঞান হয়ে যাবেন। কারণ তিনি আমাকে ভীষণ স্নেহ করেন এবং বামপন্থী রাজনীতিকে খুবই ঘৃণা করেন। আমার বন্ধু আবিদ বলেছে, না জেনে, না বুঝে যেন রাজনীতি না করি। তাই আমি এখন কোনো ছাত্র-সংগঠন করার চেয়ে এ বিষয়ে পাঠই বেশি করছি।
আমার বড় ভাই আলী আশ্রাফ প্রেম করে আমাদের পরিবারেরর কারো সমর্থন পায়নি। আব্বার কথা হলো, মানুষের অর্থনৈতিক পার্থক্যের চেয়ে সাংস্কৃতিক পার্থক্য অনেক বড়। তাই তাদের শহরে বাড়ি থাকা আর আমাদের বাড়ি না থাকাটা এক্ষেত্রে আমলযোগ্য নয়।
তাই বড় ভাই যে মেয়েটিকে ভালোবাসলেন, সে পরিবারের বিষয়ে আব্বার বিন্দুমাত্র উদারতা দেখছি না আমরা। তা ছাড়া আব্বার ধরনটাই কঠোর। কষে একটা ধমক দিলে প্রেম-টেম সব উড়ে যাওয়ার অবস্থা হয় সবার। অথচ মা কিন্তু অনেক উদার।
আমার বড় দুলাভাই রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ঢাকায় সরকারি চাকুরি করেন। তিনিও বড় ভাইয়ের প্রেম কিংবা বিয়ে বিষয়ে খুবই উদার। কিন্তু আব্বার কাছে ঘেঁষতে সকলেই অনেক হিসাব কষে। তাছাড়া আমাদের টাকারও অনেক অভাব। এই যে আমাকে লিপু-লিমার বাবা থাকার জন্য নিচতলায় একটি রুম দিলেন, আমি আজ অবধি একটি তালা-চাবিও কিনতে পারিনি। লিপুদের কলঘরের মোটরের তালা-চাবি এনে এখনো ব্যবহার করছি। তাই চোরের ভয়ে লিপুর বাবা খুব বড় একটি তালা এখন কলঘরে ব্যবহার করেন। ওই তালাটি দেখলেই আমার ভীষণ হাসি পায়। কারণ এতো বড় তালা দেখলে চোরের উৎসাহ নিশ্চয়ই কমে যাবে।
এই মীরহাজিরবাগে সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ না থাকাটা এখন প্রতিদিনকার নিয়ম। লোডশেডিং। তখন আমি এবং লিপু ও লিমা ছাদে বসে আড্ডা মারি। অন্যদিকে তখন আড্ডা দেয় লিপুর বাবা-মা ও ছোটবোন তমা। ছাদে লিপুদের চমৎকার একটি বাগান রয়েছে। তবে লিপু একটা ফাঁকিবাজ ছেলে। একবার লোডশেডিংয়ের ছুটি, তারপর নামাজের ছুটি, খাওয়ার ছুটি। ছুটির জন্য সে আকুল হয়ে থাকে। অথচ তার বোন লিমা কিন্তু এমন নয়।
সমস্যা হলো ইদানিং বিদ্যুৎ থাকে না কয়েকঘন্টা করে। এদিকে লিমার পরীক্ষার রেজাল্টও হয়েছে খারাপ। তাই তার বাবা সফিউল্লাহর কথায় প্রায়ই তাকে একা নিয়েই এই গরমে মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়ায় বসিয়ে রাখতে হয়। লিমা পড়ে শেরে বাংলা কলেজে। আমি তাকে বলি, তোমার চেয়ে খারাপ ছাত্রী তোমার কলেজে কি আর আছে? এ কথা বললেই হলো, ফোস ফোস করে কতক্ষণ পড়বে। তারপর বলবে, স্যার পেটে ক্ষিদা লাগছে। এবার খেতে হবে। পড়তে পড়তে পেটে কিছু আর নাই। আর ফাঁকিবাজ লিপু তখন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ায়। নামাজের কতো দোহাই যে সে দিতে পারে। ভাগ্য ভালো, আমি নামাজে যাই না। না হয় হাতেনাতে তার ফাঁকিবাজি ধরতে পারতাম। অবশ্য সে খুব মেধাবী। ক্ষেপিয়ে দিলে অতি অল্প সময়েই পড়া দিতে পারে।
আর তাদের বাবা-মা’ও সপ্তাহে ২/৩ বার মার্কেটিংয়ে যাবে। নিউমার্কেট...অমুক মার্কেট...তমুক মার্কেট...আহারে কোটিপতি। চারতলা বাড়ির মালিক। অথচ আমি ব্যস্ত থাকি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, কীটস, ব্রাউনিং, এলিয়ট, সত্যজিৎ, জয়নুল, পিকাসো, যামিনী রায়, আলাউদ্দিন খাঁ...এমন সব ব্যক্তিদের নিয়ে। আজকাল হয়েছে আরেক সমস্যা, আমার আলাদা পড়ার সময় খুব একটা হয়ই না। তাই লিপু-লিমাকে পড়ানোর সময়েই ‘ভাষাতত্ত্ব’ নিয়ে পড়তে বসি। কিন্তু আমাকে পড়তে দেখলেই লিমা চিৎকার করে বলে, স্যার আমাদের পড়ানোর সময়ে আপনি পড়লে আমাদের কখন পড়াবেন? আমি বলি, আমি কি সেকেন্ডে সেকেন্ডে পড়াবো নাকি? যেখানে আটকাবে, সেখানে আমার সাহায্য নেবে। অথচ শাহানাকে পড়ানোর সময়ে শাহানা কোনোদিনও আমাকে পড়তে বারণ করতো না। ভাষাতত্ত্বে আমি ভীষণই দুর্বল। ড. রফিকুল ইসলামের ‘ভাষাতত্ত্ব’ গ্রন্থটিও আমার পাঠ্য। এ বইয়ের ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব, দ্বিরুক্তি এবং ...অনেক ‘শাউয়ার চ্যাপ্টার’ আমার মাথায় ঢুকে না। আমিও দেখবো একদিন এ গ্রন্থ আমার কতোটা অবোধ্য হতে পারে। অথচ ড. রফিকুল ইসলামের ‘কাজী নজরুল ইসলাম: জীবন ও কবিতা’ শীর্ষক গ্রন্থটি কতো চমৎকার লেগেছে আমার। দুইটি গ্রন্থই আমার পাঠ্য। হায়! এ যেন একই লোকের দুই বিপরীত মেরুর দুই গ্রন্থ।

অলংকরণ: জসীম অসীম।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করা মানুষগুলো সত্যিই ভালো মানুষ হন। মৃত্যুর পরও হৃদয়ে বেঁচে থাকেন বহুদিন।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০৯

জসীম অসীম বলেছেন: রাজীব ভাই, এত কঠিন করে বললেন এবার, বোধগম্য হওয়াও অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। দর্শনের অত্যাধুনিক প্রয়োগ যেন। আমরা কি হিটলারকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি? তাহলে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করা মানুষগুলো কিভাবে ভালো মানুষ হন? মৃত্যুর পরে হয়তো তাদের নাম স্মরণে আনা হয়, কিন্তু তারা কি সত্যিই বহুদিন হৃদয়ে বেঁচে থাকেন? আপনার কাছে জানতে চাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.