নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৩০ বছর চাকরি করেছি; অবসর নিয়েছি কর্নেল পদবীতে ২০০৬ সালে। এরপর এযাবৎ প্রিন্সিপাল হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে; এখন অর্কিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা-তে। ‘স্কুল সাইকোলোজি’ নিয়েও কাজ করছি।

আশরাফ আল দীন

কবি, শিক্ষাবিদ ও প্যারেন্টিং এক্সপার্ট

আশরাফ আল দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব

৩০ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০৮

অন্য এক বিশ্বযুদ্ধ।
হঠাৎ করেই অন্য এক প্রকার বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে কোন প্রকার ট্যাঙ্ক-বন্দুক-উড়োজাহাজের ব্যবহার ছাড়াই, এবং হঠাৎ করেই দু’টি শব্দ সারা বিশ্বের মতো আমাদের সমাজেও চাউর হয়ে গেল রাতারাতি। এর একটি #লকডাউন, আর অন্যটি #সোশাল ডিসটেন্সিং বা #সমাজিক দূরত্ব। #কোভিড-১৯ নামে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া #করোনাভাইরাসের এক নতুন সংস্করনের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে ইদানিং। এর প্রেক্ষিতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে #লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে; কোথাও এক মাস আর কোথাও একুশ দিনের জন্য এবং ন্যুনতম ১৪ দিন বা দুই সপ্তাহের জন্য। বাংলাদেশ সরকার "লক-ডাউন" ঘোষণা করে নি, বরং ২৬শে মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত (সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি ছুটি মিলিয়ে) মোট ১০ দিনের “বাধ্যতামুলক ছুটি” ঘোষণা করেছে। হাজার হাজার মানুষ ‘ছুটি কাটাতে’ গাদাগাদি করে ভীড়-ভাট্টার মধ্যে শহর ছেড়ে চলে গেছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। ১৪ বা ২১ দিন না দিয়ে ১০ দিন কেন? লকডাউন না দিয়ে ‘ছুটি’ কেন? এই সময়কাল (লকডাউন হিসেবে কার্যকর করার জন্য) আরো বাড়ানো হবে কি-না? লকডাউনের ফলে আয়হীন খেটে-খাওয়া মানুষের কথা ভেবে কোন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে কি-না? ধেয়ে আসা করোনা-যুদ্ধের বিপরীতে আমাদের প্রস্তুতি কতটুকু? এসব চোখা চোখা প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। সরকারেরও যদি জানা না থাকে, এখনই সময় ‘মনোরঞ্জনমুলক কথা’ না বলে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য কাজ করার। এখনই প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের।

কোভিড-১৯ এর জন্ম।
শুরুতেই একটি কথা জেনে নেওয়া আবশ্যক যে, 'কোভিড-১৯' এর ভাইরাস বাংলাদেশের কোথাও জন্ম নেয়নি। এটা ডেঙ্গু অথবা ম্যালেরিয়ার মতো আমার-আপনার ঘরে বা ঘরের আশেপাশে জন্ম নিচ্ছে না। এটা এসেছে বিদেশ থেকে এবং অত্যন্ত দ্রুত সংক্রমিত হয়ে প্রসারিত হচ্ছে মানুষের মধ্যে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অনেকগুলো সরকারের ব্যর্থতা হলো প্রথমেই তারা এই বিষয়টির গুরুত্ব ও ভয়াবহতা বুঝতে পারেনি এবং বিদেশ থেকে "সম্ভাব্য ভাইরাস বহনকারী লোকজন"কে নিজের দেশে ঢুকতে দিয়েছে। ফলে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্চ ২০২০ নাগাদ ২০২ টি দেশ/ এরিয়া/ টেরিটোরি-তে এই ভাইরাস স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ। আশঙ্কা করা হচ্ছে কোটি কোটি মানুষ এতে আক্রান্ত হবে!

যুদ্ধের কৌশল।
যুদ্ধের প্রথম কথা হচ্ছে আপনাকে শত্রুর ক্ষমতা সম্পর্কে, শত্রুর অবস্থান সম্পর্কে, এবং তার শক্তি সম্পর্কে জানতে হবে। এরপর নিজের শক্তিকে বৃদ্ধি করে প্রয়োজনীয় কৌশল অবলম্বন করে তার বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে হবে। এখানে অস্থিরচিত্ত বা #প্যানিকড হওয়ার কোন উপায় নেই। সুস্থিরভাবে বুঝে শুনে যুদ্ধে জয়লাভের জন্য এগোতে হবে। সঙ্গতভাবেই, অত্যন্ত কঠিন এ কাজ। তাই আমাদের দেশে অন্ততঃ এই ভাইরাস কার কার দেহে জায়গা করে নিয়েছে তা খুঁজে বের করা দরকার। এরপরে হবে প্রতিরোধের কাজ! আপাততঃ এই রোগের সংক্রমণ কমাতে হবে।

লকডাউন কেন?
বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি নিয়ে দেশের সব কাজকর্ম বন্ধ রেখে ‘লক-ডাউন’ ঘোষণা করলেই কি "কোভিট-১৯" ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যাবে? না। এই 'লকডাউনে'র সময় প্রত্যেক নাগরিককে কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে। তা না হলে এই 'লক ডাউন' ব্যর্থ হয়ে যাবে এবং তা হবে ভবিষ্যতের জন্য একটি মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টির কারণ। আমাদেরকে যা করতে হবে তা হলো, প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে কার কার শরীরে এই ভাইরাস আছে! তার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছেঃ #কোয়ারেন্টাইন বা নিজেকে অন্যদের থেকে পৃথক করে ফেলা। কারণ, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, এই ভাইরাস যদি কারো শরীরে সংক্রমিত হয় তাহলে ৫ থেকে ১৪ দিনের (কেউ বলেন ২৪ দিন) মধ্যে তার শরীরে এই রোগের লক্ষণ দেখা যাবে। তাই, যদি কেউ ১৪ দিন নিজেকে সম্পূর্ণভাবে অন্যদের থেকে মুক্ত রাখার পর দেখেন যে তার মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা দেয় নি তাহলে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেন যে তার মধ্যে এই ভাইরাস নেই। সেজন্যেই প্রশ্ন এসেছে অন্তত ১৪ দিন নিজেকে নিজে কোয়ারেন্টাইন (সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন) করে রাখার। তাছাড়াও, যদি তিনি দুর্ভাগ্যক্রমে ভাইরাস বহনকারী হোন তাহলে এই সময়কালের মধ্যে তিনি নিজের অজান্তে এই ভাইরাস দিয়ে অন্যকে সংক্রমিত করবেন না। এই কাজটা নিশ্চিত করার জন্যেই চাকরিজীবীদের ছুটি দিয়ে রাষ্ট্রের অধিকাংশ কর্মকান্ড বন্ধ রেখে #লকডাউন ঘোষণা করা হচ্ছে দেশে দেশে।

এ ব্যাপারে হেলাফেলা করার বা ব্যাপারটাকে হালকাভাবে নেওয়ার কোন উপায় নেই। কারণ, আমাদের সামনে রয়েছে ইতালির অভিজ্ঞতা। মাত্র ২ মাস আগে ইতালিতে দুই-একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। সে দেশের সরকার বিষয়টাকে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে গুরুত্ব না দেওয়াতে, এখন মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে এমন সমৃদ্ধ দেশটাও "এতগুলো লাশ কোথায় স্থান দেবো!" নিয়ে অস্থির হয়ে গেছে! একই ঘটনা যদি আগামী দুই মাস পর বাংলাদেশে ঘটে, আর আমাদের জাতির প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় "এতো লাশ দাফন করব কোথায়?" তাহলে আমরা সামাল দিতে পারব না! কারণ, ইতালির মতো অতটা ধনী এবং উন্নত দেশ আমরা নই। অস্থির বা প্যানিকড হওয়ার জন্য এসব কথা বলছি না; বলছি সাবধান হওয়ার জন্য, অন্তত মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য।

এইটুকু বলে রাখা দরকার যে, #কোয়ারেন্টাইন, #আইসোলেশন, এবং #সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং এই শব্দগুলোর আলাদা আলাদা ডাক্তারি ব্যাখ্যা আছে। কথাটাকে সহজ করার জন্য বলা যায়, আমাদের মূল কাজ হচ্ছেঃ নিজেকে মানুষের সংস্পর্শ থেকে আলাদা করে রাখা, যাতে করে আমার মধ্যে যদি ভাইরাস থেকে থাকে তাহলে তা যেন অন্যের কাছে সংক্রমিত না হয়, আর যদি না থাকে তাহলে যেন অন্যের নিকট থেকে তা আমার কাছে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ না পায়।

বাংলাদেশের অবস্থা।
বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, কোভিড-১৯র প্রাদুর্ভাবের পর গত তিন /চার মাসে বিদেশ থেকে অনেক বিদেশি ও বাংলাদেশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসেছে যাদের মধ্যে অনেকেই এই ভাইরাস বহন করছিল বলে প্রতীয়মান হয়। এই ক'দিনে তারা আরো অনেক লোকের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত করে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। ইতোমধ্যে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরো অনেককে চিহ্নিত করা গেছে আক্রান্ত রোগী হিসেবে। যদিও কেভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পরীক্ষার ও চিকিৎসার এবং সরকারিভাবে প্রকাশিত মৃতের ও আক্রান্তের সংখ্যা মারত্মকভাবে প্রশ্নবোধক! যা’ই হোক, যারা রোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ‘আইসোলেশন’ করে রাখতে হবে, এটা সমস্যা নয়! আসল সমস্যা হলো, বাকি জনগণের মধ্যে কারা কারা ভাইরাস বহন করছে এবং অতি শিগগিরই রোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে এই হিসাব কে দেবে? এটা কারো পক্ষেই দেয়া সম্ভব নয় বলেই প্রত্যেক মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে #সেল্ফকোয়ারেন্টাইন করে দেখতে হবে তিনি নিজে ভাইরাস আক্রান্ত কি-না। শুধুমাত্র এই কাজটা করার জন্যই আমাদের সরকারকেও "লক-ডাউন" ঘোষণা করতে হবে।

লকডাউনের সময় আমরা কি করবো?
লকডাউনকে সফল করার জন্য আমাদের প্রত্যেককে সেল্ফ-কোয়রেন্টাইন করতে হবে, তাতে যত কষ্টই হোক না কেন! এসময় আমাদেরকে কিছু শৃঙ্খলা কড়াকড়িভাবে মেনে চলতে হবেঃ
১. প্রত্যেকটি ঘরকে এমনভাবে আলাদা করে ফেলতে হবে যে ঘরের সদস্যরা কেউ বাইরে যাবে না এবং বাইরে থেকে কেউ ঘরের ভেতর আসবে না।
২. ঘরের সদস্যরাও প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলবে এবং গা ঘেঁষাঘেঁষি করবে না।
৩. একই ঘরের ভিতর যেহেতু অনেক সদস্য এবং কার শরীরে ভাইরাস আছে তা অন্যরা জানে না তাই ঘরে ব্যবহার্য জিনিসকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যেমনঃ দরজার নব, হ্যান্ডেল, রেলিং, অন্যান্য নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র এমনকি রিমোট, মোবাইল ফোন ইত্যাদিও।
৪. প্রত্যেকের জামাকাপড় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং ঘরের ভেতরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যাতে ভাইরাস ছাড়াও ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব না ঘটে।
৫. কোন বহিরাগত এলে তাকে ঘরের বাইরে নিরাপদ দূরত্বে রেখেই মৌখিকভাবে কাজ শেষ করতে হবে এবং বাকি কাজ ই-মেইল, মোবাইল ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে শেষ করতে হবে।
৬. কেউ কোন প্যাকেট বা কার্টুন দিতে এলে তা ঘরের বাইরে রেখে দিতে হবে, অন্তত ২৪ ঘন্টার জন্য, কারণ ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ওই ভাইরাস মৃত্যুবরণ করবে। যদি তা সম্ভব না হয়, প্যাকেটটিকে ঘরের কোণে রেখে দিতে হবে ২৪ ঘন্টার জন্য।
৭. যদি অনিবার্য কোন কারণে ঘরের কোন সদস্যকে বাইরে যেতে হয় তিনি বাইরে যাবেন হাতে গ্লভস, মুখে মাস্ক, ও মাথায় টুপি পরিধান করে। কোথাও খুব বেশি মেলামেশা না করে বা আড্ডা না দিয়ে যথাসম্ভব দ্রুত সময়ে কাজ শেষ করে, গণপরিবহন ব্যবহার না করে, সত্ত্বর ঘরে ফিরে আসবেন। দরজার বাইরে মাস্ক এবং গ্লাভস ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন। ঘরে প্রবেশ করেই জামা কাপড়গুলো ওয়াশিং মেশিন বা কাপড় ধোয়ার স্থানে রেখে দেবেন। নিজে ভালো করে গোসল করে নেবেন, তারপর পরিবারের অন্যদের সাথে মেলামেশা করবেন।

লকডাউনে মেন্টাল হেলথ।
পুরো পরিবার এইভাবে দীর্ঘদিন কর্মহীনতার মধ্যে থাকা খুব সহজ ব্যাপার নয়। এক্ষেত্রে, প্রতি পরিবারেরই মানসিক স্বাস্থ্য বা মেন্টাল হেলথ সম্পর্কে সচেতন ও যতœবান হতে হবে। তাই সময়টাকে গঠনমূলক প্রক্রিয়ায় পরিকল্পিতভাবে শৃংখলার সাথে কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। কাজটা খুব সহজ নয়! হঠাৎ করে নতুন অভ্যাস গড়ে তোলা যেমন কষ্টকর এব্যাপারটাও অনেকটা সেরকমই। অধিকাংশ সময় টিভি সিরিয়াল দেখে অথবা রুমের ভেতর একা একা সেলফোনে বা কম্পিউটারে খারাপ জিনিস দেখে সময় কাটানোর মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। তাই, পুরো পরিবারকে সমন্বিতভাবে সাচ্ছন্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরী করতে হবে। কঠোরতা নয়, কোমলতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে পরিবারের ছোট-বড় সবাই মিলে অর্থাবহ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। বিনোদন ও শিক্ষার মিশেল দিয়ে এই পরিবেশ গড়তে হবে। আমরা অসহায়ভাবে বিপদজনক অবস্থার মধ্যে আছি এবং সামনে আসছে পবিত্র রমজান মাস। এইসব দিককে বিবেচনায় রেখে, আল্লাহর প্রতি বিণীত থেকে, আমরা সময়কে গঠনমূলকভাবে ব্যবহার করতে পারি। আমাদের পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা প্রত্যেকেই অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ। এই সুযোগে পরবর্তী প্রজন্মগুলোর সাথে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতাকে শেয়ার করতে পারি, মনোরম গল্পের ও আলোচনার মাধ্যমে।

যদি রোগ দেখা দেয়!
দুর্ভাগ্যক্রমে যদি দুই এক জনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয় তাকে কঠোরভাবে 'আইসোলেশন'এ রাখতে হবে। একটি রুমে তাকে পৃথক করে রাখতে হবে এবং তার কাছে কেউ যাবে না। তাকে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে হবে এবং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, এই রোগে খুব কম সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রাম নিতে হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ফলমূল খাওয়া ছাড়াও নিয়মিত গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস ইত্যাদি করতে হবে। এই ভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকলেও নিয়ম মেনে বিশ্রাম করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্য থেকে বেশীর ভাগ মানুষ সঠিক যতœ পেলে সুস্থ হয়ে যান।

ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস।
উপরের নিয়মগুলো মেনে চলা খুব সহজ কাজ নয়। কিন্তু তা না করলে 'লকডাউন'- এর লক্ষ্য অর্জিত হবে না। মনে রাখতে হবেঃ একটি বেলুনের সব বাতাস বের করে দেয়ার জন্য একটি মাত্র ছিদ্রই যথেষ্ট। সুতরাং 'সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন' করতে হবে অত্যন্ত কঠোরতার সাথে, আমাদের নিজেদের এবং অন্যদের মঙ্গলের জন্য। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে প্রান্তিক মানুষগুলোর দৈনন্দিন খাবারের কথা, অসুস্থদের যতœ ও চিকিৎসার কথা আর করোনায় মৃতদের দাফন/ সৎকারের কথা। বিভিন্ন স্থানে যুবকেরা এবং কিছু সামাজিক সংগঠন এই কাজে এগিয়ে এসেছে। সামনের ভয়াবহ দিনগুলোতে এর প্রয়োজন হবে আরো বেশী। এই বিশাল কাজ সরকারের একার পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে, বাড়িয়ে দিতে হবে সাহায্যের হাত। এই শত্রুকে পরাজিত করতে হবে সাহসের সাথে, সমন্বিত কৌশলে; নিয়ম মেনে, নিয়ম ভেঙ্গে নয়।

বাস্তবতা হচ্ছেঃ এই জীবনঘাতি শত্রু সরকারি দল-বিরোধী দল চেনে না, স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বোঝে না! তাই, আমাদের প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের চেতনা নিয়ে এক জাতি হিসেবে বাংলাদেশের সর্বশক্তি নিয়োগ করে সম্ভব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা, এবং যত বেশী সম্ভব মানুষের জীবন রক্ষা করা। আল্লাহ আমাদের দেশ ও জাতিকে শুধু নয়, সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করুন। আমিন।

আশরাফ আল দীন।। শিক্ষাবিদ, কবি, গবেষক ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা।
মিরপুর, ঢাকা; ৩০/০৩/২০২০

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:১৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আল্লাহ সবাইকে সহী সালামতে রাখো।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০০

আশরাফ আল দীন বলেছেন: আমিন।

২| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: ডুবন্ত জাহাজের এক যাত্রীকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলেন ডুবুরি। যাত্রী যেতে নারাজ। তার কথা, অামার প্রভু ই বাঁচাবে অামায়।
কয়েক দফা চেষ্টা'র পর ডুবুরি হতাশ হয়ে চলে গেলো তার জান বাঁচাতে। একটু পর এক বিশাল ঢেউয়ে ডুবে গেলো জাহাজ।

মৃত্যুর পর প্রভুর সাথে দেখা সেই ভক্তের। অভিমান নিয়েই জানতে চাইলো, অাপনার ওপর নির্ভর করে জাহাজ ছেড়ে গেলাম না, অার অাপনিই বাঁচালেন না অামাকে?

স্মিতহাস্যে প্রভু বললেন, বৎস তোমাকে বাঁচানোর জন্য তিনবার দেবদূত পাঠিয়েছিলাম তুমি তো কথা শোন নি...

গল্প টা খুব প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে এখন।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৫

আশরাফ আল দীন বলেছেন: আল্লাহর রসুল (দঃ) বলেছেনঃ
“লাল উটটা বেঁধে রাখো, এবং আল্লাহর উপর ভরসা করো।”
এরচেয়ে উত্থম কথ্ আমি খুঁজে পাইনি।
কিন্তু অনেক শিক্ষিত (আলেম) লোকও এর ব্যবহারিক অর্থ বুঝতে পারে না।
আপনারা যারা বোঝেন, আল্লাহ বুঝার শক্তি দিয়েছেন, তাদেরকেই আগাতে হবে!

৩| ৩১ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১২:০২

ইমরান আশফাক বলেছেন: ভাল পরামর্শ, ধন্যবাদ। তবে যারা দিন আনে দিন দি খায় তাদের ব্যাপারে সরকার মহাশয় আগে থেকে কোন চিন্তা করেছিলেন কিনা সন্দেহ। দিনমজুরেরা তো বলে আমরা করোনায় না মরলেও না খেয়ে মরবো।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৮

আশরাফ আল দীন বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
দখলদার সরকার যে অযোগ্য তা’ও ঠিক।
এখন? আমাদেরকেই আগাতে হবে।
আগান।

৪| ৩১ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১২:১৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। সহজ সরল বাংলায় লিখেছেন আশা করি এটি পাঠ করে পাঠক লকডাউন কি এবং কেন সামাজিক দূরত্ব কি ভাবে বজায় রাখা যায় সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করবে।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০৯

আশরাফ আল দীন বলেছেন: ধন্যবাদ।
যারা পড়ে না বা বোঝে না তাদের কাছেও পৌঁছে দিতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.