নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইতিহাসের পাঠশালায়

আসিফ আযহার

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়।

আসিফ আযহার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের পাঠশালায়: পর্ব-২০ | ইতিহাসের নগরী জেরুজালেম

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৩


জেরুজালেম! সভ্যতার ইতিহাসে এক বিস্ময়কর নাম! সভ্যতার ইতিহাসকে জেরুজালেম যতটা নাড়া দিয়েছে আর কোনো শহর তা পারেনি। ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের হৃদয় জুড়ে ঝংকৃত হয় এই নাম- জেরুজালেম! হৃদয়ের ভালবাসায় সিক্ত জেরুজালেম। ইহুদি হৃদয় নিংড়ে এ শহরের জন্য ধ্বনিত হয় প্রার্থনার স্তোত্র ‘জেরুজালেমের শান্তির জন্য প্রার্থনা করো’। জেরুজালেম ইহুদিদের হৃদয়ে যেভাবে স্থান দখল করে আছে একইভাবে স্থান দখল করেছে খ্রিস্টানদের হৃদয়ে; এমনকি মুসলমানদের হৃদয়েও। জেরুজালেম হলো সেই শহর যাকে হাজার হাজার বছর ধরে ইহুদিরা নিজেদের প্রাণের নগরীর ভালোবাসায় সিক্ত করে রেখেছে। ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে তারা নিপীড়িতও হয়েছে তাদের আপন শহর জেরুজালেমেই। এমনকি খ্রিস্টানরাও একসময় নিপীড়িত হয়েছে তাদের ভালোবাসার এই শহরে। আর সর্বশেষ নিপীড়িত হয়েছে মুসলমানরা। তাই এই শহরের ইতিহাস যেমনই মধুর তেমনি বেদনার।

জেরুজালেম এক দুঃখের নগরী। এই শহরের প্রতিটি বালুকণায় লুকিয়ে আছে কত কান্না ও হাহাকারের ইতিহাস, কত স্বপ্ন ও ভালবাসার পরাজয়ের নির্মম ইতিহাস, কত নিষ্পাপ জীবনের নিষ্ঠুর সমাপ্তির করুণ ইতিহাস। জেরুজালেমের মতো আর কোনো শহর এতবেশি বার রক্তের বন্যায় ডুবে যায় নি, এতবেশি বার মানুষের রক্তাক্ত লাশে ঢাকা পড়ে নি, নারকীয় নৃশংসতার শিকার হয়ে এতবার ধূলায় মিশে যায়নি। বিপন্ন নারী ও শিশুদের আহাজারিতে আর কোনো শহরের বাতাস এতো ভারী হয়ে ওঠেনি। আর কোনো শহর এতবেশি বার অত্যাচারী ভিনদেশী সেনাদের নিষ্ঠুর তরবারির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়নি।

জেরুজালেমের হৃদয়ে লুকিয়ে আছে সমগ্র বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস। জেরুজালেমকে কেন্দ্রে রেখে ভিন্ন ভিন্ন সভ্যতা ও সাম্রাজ্যের ইতিহাসকে অনায়াসে ব্যাখ্যা করা যায়। ইতিহাসের প্রধান প্রধান ধারাগুলো আলাদা আলাদা পথে এগিয়ে এসে একাকার হয়ে যায় জেরুজালেমের প্রেক্ষাপটে। সভ্যতার প্রলম্বিত ও জটিল ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে এ নগরী টিকে আছে আজ অবধি। মানুষের অজস্র নিষ্ঠুরতা, জুলুম ও পৈশাচিকতার এক নজিরবিহীন সাক্ষী এই জেরুজালেম। আবার অন্যদিকে মানুষেরই অজস্র স্বপ্ন, ভালবাসা, দয়া-করুণা ও ক্ষমার ইতিহাসের সাক্ষী এই জেরুজালেম। তাই জেরুজালেম বুকে ধারণ করেছে সমগ্র মানব সভ্যতাকে। জেরুজালেমের ইতিহাসে খুঁজে পাই সমগ্র মানব সভ্যতার চিত্র। মানুষের সভ্যতাকে চিনতে হলে পড়তে হয় স্বপ্নের নগরী জেরুজালেমের স্মৃতির পুরনো পাতাগুলো। তাই জেরুজালেমই মানুষের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পাঠশালা।

জেরুজালেম এতো বেশি বৈদেশিক শক্তির পদানত হয়েছে যে পৃথিবীর আর কোনো শহরের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। এ শহরের পতন হয়েছে প্রাচীন যিবুসাইটসদের হাত থেকে ইহুদিদের রাজা দাউদের হাতে, ইহুদিদের হাত থেকে ক্যালদীয় সম্রাট নেবুচাদনেজারের হাতে, ক্যালদীয়দের হাত থেকে পারসীয় সম্রাট সাইরাসের হাতে, পারসীয়দের হাত থেকে মেসিডোনীয়দের হাতে, মেসিডোনীয়দের হাত থেকে রোমানদের হাতে। এক সময় রোমান শাসকদের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের ফলে জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠিত হয় খ্রিস্টান কর্তৃত্ব। রোমান-খ্রিস্টান কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে এক সময় জেরুজালেম পদানত হয় মুসলিম খলীফা উমরের সেনাবাহিনীর কাছে।

জেরুজালেমের বেদনাময় ইতিহাসের সাথে সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে আছে ইহুদিরা। তারপরে আছে খ্রিস্টানরা। তবে খ্রিস্টানদের বেদনাময় ইতিহাস ইহুদিদের মতো এতো দীর্ঘ নয়। কারণ খ্রিস্টানরা পরাজিত হয়েছিল মুসলমানদের হাতে, আর বিজয়ী মুসলমানরা জেরুজালেমের রক্তাক্ত গ্লানিময় ইতিহাসের আর পুনরাবৃত্তি ঘটায়নি। মুসলমানদের কথা বাদ দিলে জেরুজালেমের পুরনো ইতিহাসে এমন কোনো শক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায়না যারা নারকীয় নৃশংসতায় এ নগরীকে রক্তাক্ত করে নি, এ নগরীর বিজিতদের ওপর নিষ্ঠুর অত্যাচার চালায় নি এবং মানব জাতির বিবেকের বিপন্নতার ইতিহাসকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়নি। এমনকি পুরনো সভ্যতার বিবেক বলে যাকে ধরে নেওয়া হয় সেই মহান মানব যিসাসের অনুসারি খ্রিস্টানরাও এ কাজে কম যায়নি।

রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন খ্রিস্টধর্মকে গ্রহণ ও স্বীকৃতি প্রদানের পূর্বে জেরুজালেমের ইহুদি ও খ্রিস্টানরা রোমান প্যাগান শাসনকর্তাদের হাতে ভয়ানক নিষ্ঠুরভাবে নিপীড়িত হয়েছিল। ৩১৩ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট কনস্টানটাইন খ্রিস্টধর্মকে স্বীকৃতি প্রদানের পরে রোমান সাম্রাজ্যের খ্রিস্টানদের জীবনে স্বস্তি ফিরে এলেও ইহুদিরা ছিলো জীবনের নিরাপত্তা ও শান্তি থেকে বঞ্চিত। ৩৯৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট থিওডোসিয়াস খ্রিস্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করার পরে খ্রিস্টধর্ম আগ্রাসী রূপ ধারণ করে ঝাপিয়ে পড়ে ইহুদিদের ওপর। রোমান প্যাগান শাসকরা আগে যে কায়দায় ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালাতেন খ্রিস্টান যাজকরা রাজশক্তির মদদে সেই একই কায়দায় ধর্মের ফণা উচিয়ে ইহুদিদের তাড়িয়ে বেড়িয়েছেন ছোবল মারার জন্য। সে ইতিহাসে যাওয়ার আগে আমরা জেরুজালেমের আদি ইতিহাসের দিকে কিছুটা ফিরে তাকাই।

খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে রাজা দাউদের নেতৃত্বে ইহুদিরা কেনানীয় গোত্রের শাখা যিবুসাইটসদের হাতে থেকে জেরুজালেম দখল করেছিল। দাউদের পুত্র সোলায়মানের (সলোমন) সময় স্বাধীন ইহুদি রাজ্য সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল। সলোমনের মৃত্যুর পর ইহুদি জাতি দু’ভাগ হয়ে দুটি আলাদা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে- ইসরাইল ও জুডিয়া। এর পরবর্তীতে ৭২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মেসোপটেমিয়া থেকে আগত অ্যাসিরীয় সৈন্যরা ইসরাইলের রাজধানী সামারিয়া দখল করে নিলে ইতিহাস থেকে এই রাষ্ট্রটি চিরতরে হারিয়ে যায়; থেকে যায় জুডিয়া।

জুডিয়ার রাজধানী জেরুজালেম। সামারিয়া থেকে অ্যাসিরীয়রা ইহুদিদের যে দশটি গোত্রকে বন্দী করে নিয়ে যায় তারাই ইতিহাসে ইহুদিদের হারিয়ে যাওয়া দশটি গোত্র নামে পরিচিত।

দাউদ ও সোলায়মানের সময় থেকে শুরু করে জুডিয়া রাজ্য যতোদিন স্বাধীন ছিলো- সেটাই ছিলো ইহুদি জাতির সাড়ে তিন হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে সোনালী সময়। এই কয়েকশ বছরই তারা কমবেশী কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করতে পেরেছিল যদিও যুদ্ধ বিগ্রহ প্রায়ই লেগে থাকত। কিন্তু একসময় তাদের এই স্বাধীনতা চিরতরে শেকলবন্দী হয়ে পড়ার পালা এসে যায়। তারা ফিরে যায় আবার সেই মিসরের ফারাওদের হাতে যেভাবে একদা শেকলবন্দী হয়ে পড়েছিল সেই অবস্থায়; সেই যে শুরু তারপরে পেরিয়ে গেছে হাজার বছর। ইহুদিরা আর স্বাধীনতার দেখা পায়নি।

ইহুদিদের পরাধীনতা ও লাঞ্ছনার ইতিহাসে তাদের মিসর জীবনের বন্দীদশার কিংবদন্তিটি খুবই আলোচিত। সেখানে তারা ৪০০ বছর ফারাওদের ক্রীতদাস হয়ে কাটিয়েছে। সেসব কথা প্রায় সবারই জানা। এবার জানা যাক দাউদ ও সোলায়মান পরবর্তী সময়ে তাদের লাঞ্ছনা ও দুঃখের ইতিহাসের পর্বটি। আমরা দেখেছি এ পর্বটির সূচনা হয়েছিল অ্যাসিরীয়দের হাতে তাদের একাংশের পরাজয় ও বন্দী-ক্রীতদাসে পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে। তবুও জুডিয়ায় বসবাসকারী তাদের অন্যান্য গোত্রগুলোর কপালে কিছুটা স্বাধীনতা জুটেছিল। কিন্তু এ স্বাধীনতাও এক সময় শেকলবন্দী হয়ে পড়ে অ্যাসিরীয় পরবর্তী মেসোপটেমিয়ার নতুন শক্তি ক্যালদীয়দের হাতে।

ক্যালদীয়রা কিংবদন্তীতূল্য নৃশংসতায় জেরুজালেম ধ্বংস করেছিল। ইহুদিরা ক্যালদীয় সম্রাটের অনুগত প্রজা হিসেবে কর প্রদানের বিনিময়ে জুডিয়ায় বসবাসের অনুমতি পেয়েছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে মিসরীয় রাজার মদদে তারা ক্যালদীয় সম্রাটকে কর দিতে অস্বীকার করে। এ ঘটনা ভয়ানক ক্রুদ্ধ করে তোলে ক্যালদীয় সম্রাট নেবুচাদনেজারকে। নেবুচাদনেজার ছিলেন একজন অর্ধউম্মাদ নৃশংসতার অবতার। তাই জেরুজালেমের আকাশে তখন দেখা দেয় বিপদের ঘনঘটা।

৫৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জেরুজালেমকে ধূলায় মিশিয়ে দিতে এগিয়ে আসে নেবুচাদনেজারের সৈন্যরা। অকৃত্রিম নৃশংসতায় তারা ভেঙ্গে ফেলে সলোমনের ধর্মগৃহ; প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেয় দাউদের প্রাচীর। গণহত্যা কী হারে সংগঠিত হয়েছিল তা পাঠক কল্পনার চোখে দেখে নিলেই পারেন। যারা বেঁচে গিয়েছিল সেইসব নর-নারী ও শিশুদেরকে শেকলবন্ধী করে নিয়ে যাওয়া হলো ক্যালদীয় রাজধানী ব্যাবিলনিয়ায়। সেখানে তারা পরিণত হয় ভূমিদাসে। খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৮ সালে পারস্য সম্রাট সাইরাস দ্যা গ্রেট ক্যালদীয় সাম্রাজ্য দখল করে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর দয়ায় কিছু ইহুদি জেরুজালেমে ফিরতে শুরু করে। ততদিনে ইহুদি ধর্ম প্রাণহীন এক আচারসর্বস্ব ধর্মে পরিণত হয়েছে। ৪৯ বছর পরে জেরুজালেমে ফিরে এসে ইহুদিরা ক্যালদীয়দের হাতে ধ্বংসিত সলোমনের ধর্মগৃহ ও দাউদের প্রাচীর নির্মাণে হাত দেয়। আরেকটি ঐতিহাসিক কাজেও তখন তারা হাত লাগায়, সেটা হলো মুসার বাণী লিপিবদ্ধ করার কাজ।

মুসার মৃত্যুর প্রায় ৭৬৩ বছর পর লোক পরম্পরায় চলে আসা মুসার বাণীর সাথে ধর্মবেত্তাদের নিজেদের চালু করা বিধি-বিধানসমূহকেও যুক্ত করে শুরু হয় ওল্ড টেস্টামেন্ট রচনার কাজ। এ কাজের সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয় ৯৩ বছর পর- খ্রিস্টপূর্ব ৪৪৪ সালে; পারস্য সম্রাটের অনুমতি পেয়ে ব্যাবিলনের বাদবাকি সকল ইহুদিরা আচার্য ইষ্রার নেতৃত্বে জেরুজালেমে ফেরার পরে। বাইবেলে ইষ্রা ও নহিমিয়র পুস্তকে এসব ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। ৯৩ বছর ধরে ওল্ড টেস্টামেন্ট রচিত হওয়ার সময় ধর্মবেত্তারা নিজেরা যতো বিধান চালু করেন, আচার্য ইষ্রা এক ধাক্কায় তার চেয়ে শতগুণ এগিয়ে যান। বিশুদ্ধ ইহুদি জাতি গড়ার জন্য তিনি চালু করে বসলেন জাতিগত সংরক্ষণবাদ। তখন পারস্য সম্রাটের পৃষ্ঠপোষকতায় ইহুদি জাতির মাথায় চেপে বসেছে একটি প্রাণহীন ও আচারসর্বস্ব যাজকতন্ত্র। ইহুদি ধর্মাচার্য তখন পারস্য সম্রাটের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠতে পেরেছিলেন।

ফলে ইহুদি জাতির প্রতিনিধি হিসেবে তিনি সম্রাটের কাছে নিজের আসন পাকাপোক্ত করে ফেলতে সমর্থ হন। রাজশক্তির কাছে স্বীকৃত প্রতিনিধিত্ববলে তিনি ইহুদিদেরকে শাসন করার সমস্ত অধিকার নিয়ে জেরুজালেমে ফিরে আসেন। সেখান থেকে প্রয়োজনে তিনি পারস্যরাজের সাথে যোগাযোগ করে সাহায্য চাইতে পারতেন। এভাবে রাজশক্তির আশীর্বাদপুষ্ঠ ইহুদি ধর্মাচার্যের অধীনে ইহুদিদের মধ্যে একটি শক্তিশালী যাজকতন্ত্র গড়ে ওঠে।

ইহুদি ধর্মাচার্য তাঁর যাজকতন্ত্রের ক্ষমতার খুঁটি আরও মজবুত করার জন্য জন্ম দিলেন একটি মানবতাবিরোধী বিধান যার নাম হলো বিশুদ্ধ জাতিতত্ত্ব। এ তত্ত্ব অনুযায়ী ইহুদিরা হলো স্রষ্টার চোখে একমাত্র খাঁটি ও বিশুদ্ধ জাতি আর দুনিয়ার বাদবাকী সবাই হলো স্রষ্টার চোখে নিকৃষ্ট রক্তের জাতি। এই বিধান হলো সভ্যতার ইতিহাসে শাস্ত্রীয় ষড়যন্ত্রের অন্যতম ঘৃণ্য দলিল। এক অনন্য ও অকৃত্রিম নিষ্ঠুরতায় আচার্য ইষ্রা সামারিয়ার অন্য জাতির সাথে মিশে যাওয়া ইহুদিদের ওপর কার্যকর করেন তাঁর বিশুদ্ধ রক্তের জাতিতত্ত্ব।

কিন্তু তাঁর এই বিশুদ্ধ রক্তের জাতিতত্ত্ব ইহুদিদেরকে পরবর্তীতে পরাধীনতার হাত থেকে বাঁচাতে পারল না। ইহুদিদের বুকে পরাধীনতা আবারও চেপে বসল যখন অন্য মহাদেশ থেকে আসা মেসিডোনীয় সাম্রাজ্যের অধিপতি সম্রাট আলেকজান্ডার পারস্য সাম্রাজ্য দখল করে নিলেন। এ সময় তিনি পারসীয়দের হাত থেকে জেরুজালেমও দখল করে নেন। এটা খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ সালের ঘটনা। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর সেনাধ্যক্ষদের মাঝে সাম্রাজ্য ভাগাভাগি হয়ে যায়। এ ভাগাভাগিতে জুডিয়া ও জেরুজালেম পড়ে যায় সাম্রাজ্যের দুটি অংশের টানাটানির মধ্যে।

দুটি অংশের একটি হলো আলেকজান্ডারের অন্যতম সেনাপতি টলেমি কর্তৃক সূচিত মিসরীয় সামাজ্য। আলেকজান্দ্রিয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল টলেমি বংশের শাসনাধীন মিসরীয় সাম্রাজ্য। আর অন্যটি হলো আলেকজান্ডারের আরেক সেনাপতি সেলুকাস কর্তৃক সূচিত সেলুসিড সাম্রাজ্য। সিরিয়ার এন্টিয়ক নগরীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল সেলুসিড সাম্রাজ্য। এক শতাব্দীরও বেশী সময় ধরে এ দুটি সাম্রাজ্য ফিলিস্তিন অঞ্চলের কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধে লিপ্ত ছিলো। আলেকজান্ডারের মৃত্যু পরবর্তী পঁচিশ বছরে অন্তত সাত বার হাত বদল হয় ফিলিস্তিন অঞ্চলটি। অবশেষে এই দুঃসহ টানাপোড়েন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ১৯৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিসরের নাবালক সম্রাট পঞ্চম টলেমি জুডিয়াসহ ফিলিস্তিন অঞ্চলের কর্তৃত্ব সেলুসিডদের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

১৬৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সেলুসিড রাজা অ্যান্টিওসাস ইপিফানি (১৭৫-১৬৪) মিসর ও সাইপ্রাস দখলের উদ্দেশ্যে অভিযানে নামেন। সাইপ্রাসের উদ্দেশ্যে একটি নৌবহর পাঠিয়ে দিয়ে তিনি নিজে অগ্রসর হন মিসরের দিকে। কিন্তু সে সময়ের উদীয়মান পরাশক্তি রোমানদের অভাবিত হস্তক্ষেপে তাঁর এ অভিযান সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতায় পর্যবাসিত হয়। রোমানদের হুমকির মুখে তিনি মিসর বিজয়ের আশা বাদ দিয়ে আলেকজান্দ্রিয়ার উপকন্ঠ হতে দেশের উদ্দেশ্যে ফিরে আসতে রওনা হন। দেশের আর্থিক সংকটের সময়ে এ ব্যর্থ অভিযান তাকে আরও সংকটের মুখে ফেলে দেয়। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আসার পথে জেরুজালেমের ইহুদি ধর্মগৃহে রক্ষিত ধনরত্ন লুট করবেন। তিনি এই সময় ইহুদিদের ওপর একটি ঘটনায় ক্ষুদ্ধ ছিলেন।

তিনি যখন মিসর অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন তাঁর সেই অবর্তমানতার সুযোগে ইহুদিরা তাঁর মনোনীত প্রাধান ইহুদি ধর্মযাজক ম্যানিলাসকে অপসারণ করে ফেলে। ইপিফানি এটাকে বিদ্রোহ হিসেবে গণ্য করলেন এবং মিসর থেকে ফেরার পথে জেরুজালেম আক্রমণ করে ধনরত্ন লুটের পরিকল্পনা করলেন। ১৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইপিফানি জেরজালেম আক্রমণ করে ইহুদি ধর্মগৃহে সংরক্ষিত ধনরত্ন লুট করেন এবং সেই সাথে তাঁর অনুগত ইহুদি ধর্মযাজক ম্যানিলাসকে আবার প্রধান ধর্মযাজকের পদে বসান। কিন্তু এবারও ইহুদিরা তাকে মেনে নিলো না। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ইপিফানি। ইহুদি ধর্মগৃহকে তিনি গ্রিক দেবতা জিউসের মন্দিরে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁর আদেশে ধর্মগৃহে স্থাপিত হলো জিউসের মুর্তি। বেদীতে উৎসর্গ করা হলো শুকর। পুড়িয়ে ফেলা হয় সব ইহুদি ধর্মগ্রন্থ।

ইহুদিদের সকল প্রার্থনা ও ধর্মীয় উৎসব নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। হাজার হাজার ইহুদি নর-নারীকে ক্রীতদাস বানিয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। এ সময় সর্বত্র ইহুদি বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। ম্যাকাবিস পরিবারের নেতৃত্বে ইহুদিরা বিদ্রোহ চালিয়ে যেতে থেকে। ১৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত ইহুদিরা সেলুসিডদের অধীনে থাকে। এর পর থেকে রোমানদের অধিকারে আসার পূর্ব পর্যন্ত ইহুদিদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবন বারবার স্বাধীনতা ও পরাধীনতার দোলাচালে দোলছিল। ৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান সেনানায়ক পম্পেই সেলুসিড রাজ্য জয় করে সিরিয়ায় রোমান প্রদেশ প্রতিষ্টা করেন। এরপর পম্পেই নজর দেন জুডিয়ার দিকে। জুডিয়াকে রোমের অধীনস্ত দেশের পর্যায়ে নিয়ে আসতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। এর পরবর্তীতে রোমান শাসনের অধীনস্ত জেরুজালেমকে ঘিরেই সূচিত হয়েছিল ইতিহাসের নতুন আরেক দিগন্ত। এটা হলো খ্রিস্টধর্মের আবির্ভাব।

খ্রিস্টীয় ত্রিশ-এর দশকে শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য আশা ও আলোর বার্তা নিয়ে জেরুজালেমে আবির্ভূত হন হযরত যিসাস। কিন্তু ক্ষমতালোভী ইহুদি ধর্মাচার্য কাইয়াফা ও তাঁর অনুগত ইহুদি যাজকতন্ত্রের ষড়যন্ত্রে রোমান কর্তৃপক্ষ যিসাসের মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করতে বাধ্য হয়। এটা ছিলো রোমান সম্রাট টিবেরিয়াস সিজারের সময়ের ঘটনা। যিসাসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সফল হয়ে ইহুদি ধর্মযাজকরা নতুন ধর্মকে সাময়িকভাবে স্তব্ধ করে দিলেও পরবর্তীতে তা আবার বেশ জোরেশোরেই ফিরে এসেছিলো। যিসাসের অন্তর্ধানের কয়েক দশকের মধ্যেই ইহুদিরা নতুন করে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। ৬৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান শাসনের বিরুদ্ধে জুডিয়ায় ইহুদিরা বিদ্রোহ শুরু করে। এ বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে রোমান সম্রাট টিটাস অতীতের নেবুচাদনেজারের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটালেন। দানবীয় নৃশংসতায় তিনি জেরুজালেম অবরোধ ও ধ্বংস করেন।

৭০ খ্রিস্টাব্দে তার সৈন্যরা সলোমনের ধর্মগৃহ ধ্বংস করে এবং দাউদের প্রাচীর ধূলায় মিশিয়ে দেয়। প্রাচীরের একটি ক্ষুদ্র অংশ এখনো দাঁড়িয়ে আছে যা ডধরষরহম ডধষষ বা বিলাপ প্রাচীর নামে পরিচিত। টিটাসের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত জেরুজালেমের দশ লাখ ইহুদিদের অধিকাংশই হয় তাঁর সৈন্যদের তরবারির নিচে প্রাণ দেয় অথবা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে সম্রাট হাদ্রিয়ান জেরুজালেম নগরী পুণঃনির্মাণ করলেও বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ইহুদিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ইহুদিদের এই নির্বাসিত জীবনের অধ্যায়টি Diaspora নামে পরিচিত।

ইহুদিরা যখন রোমান রাজশক্তির কোপানলে পড়ে অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে সে সময়ে চোখের আড়ালে খ্রিস্টধর্ম বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছে। ইহুদিরা গ্রহণ না করলেও যিসাসের বিভিন্ন বাণী দিয়ে খ্রিস্টধর্মীরা তখন গরীব মানুষকে আকৃষ্ট করতে শুরু করেছে। খ্রিস্টধর্ম দরিদ্র রোমান বিশেষ করে দাস ও জেলেদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়। এতে খ্রিস্টধর্মীদের ওপরও রোমান শাসকদের অত্যাচার নেমে আসে। কিন্তু এটা খ্রিস্টধর্মকে নির্জীব করতে পারেনি। এক পর্যায়ে ক্ষয়িষ্ণু রোমান সাম্রাজ্যকে ঠিকিয়ে রাখতে রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন খ্রিস্টধর্মকে ঐতিহাসিক স্বীকৃতি প্রদান করে ফেলেন। এটা ৩১২ সালের ঘটনা।

স্বীকৃতি লাভের পর খ্রিস্টধর্মও লোভী ধর্মযাজকদের হস্তক্ষেপ মুক্ত থাকতে পারেনি। ৩৮০ সালে রোমান সম্রাট ১ম থিওডোসিয়াস খ্রিস্টধর্মকে রোমান সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রধর্মে পরিণত করেন। রাষ্ট্রধর্ম ঘোষিত হওয়ার পরে খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা হয়ে ওঠেন পরাক্রান্ত; তারা ধর্মকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার শুরু করেন। প্রথমদিকে এ ধর্ম ছিলো দাস ও দরিদ্রদের কাছে সুস্থ ও সুন্দর জীবনের প্রতীক। রাষ্ট্রধর্ম হওয়ার পর ধর্মের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ও সম্পত্তি লাভের সুযোগ এসে যায়। তাই ধর্মকে ব্যবহার করে এক শ্রেণীর যাজকরা ব্যাপক ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।

ধর্মীয় প্রতিপত্তি ও ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনেক ধর্মাচার্যই ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। খ্রিস্টধর্মী জনগণের মধ্যে অনেকেই ধর্মীয় বিদ্বেষের বিষাক্ত বীজ ছড়িয়ে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেষ্টা করেন। হত্যা ও ঘৃণা-বিদ্বেষের ধর্মীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে কুখ্যাত ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ার ধর্মাচার্য (প্যাট্রিয়ার্ক) সিরিল। ইহুদি গণহত্যার উস্কানিদাতা হিসেবে তিনি ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে আছেন। ৪১৫ সালে আলেকজান্দ্রিয়ার রাজপথ থেকে ধরে নিয়ে হাইপেশিয়াকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করেছিল এই সিরিলের অনুসারিরাই।

খ্রিস্টান ধর্মাচার্যদের ধর্ম-সন্ত্রাসের সবচেয়ে বেশী শিকার হয়েছিল নিরীহ ইহুদিরা। খ্রিস্টধর্মীয় সন্ত্রাস প্রথমেই চালু হয় ইহুদিদের ওপর দমন পীড়ন শুরুর মধ্য দিয়ে। এক সময় রোমক সৈন্যদের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত ইহুদি ও খ্রিস্টানরা নিজেদের মাঝে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতো। কিন্তু ক্ষমতায় যেয়ে অনেক খ্রিস্টধর্মাচার্য তাদের পূরনো দিনের দূঃখের সঙ্গীদের পুরোপুরি ভূলে গেলো। খ্রিস্টান ধর্মাচার্যরা ক্ষমতা বিস্তারের জন্য অনেক সময়েই অকারণে ইহুদি বিরোধী ধর্মীয় দাঙ্গা ছড়িয়ে দিতেন।

স্বীকৃতি লাভের পর একপর্যায়ে ধর্মীয় ক্ষমতার প্রশ্নে খ্রিস্টধর্মজগৎ পাঁচটি আলাদা ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এগুলোকে বলা হতো প্যাট্রিয়ার্কেট। প্যাট্রিয়ার্কেটের প্রধানকে বলা হতো প্যাট্রিয়ার্ক। পাঁচটি আলাদা প্যাট্রিয়ার্কেট পরিচালিত হতো পাঁচজন স্বাধীন প্যাট্রিয়ার্কের অধীনে। পাঁচটি প্যাট্রিয়ার্কেটের নাম হলো: রোম, বাইজান্টিয়াম, এন্টিয়ক, জেরুজালেম ও আলেকজান্দ্রিয়া। এর মধ্যে সর্বপ্রথম যে প্যাট্রিয়ার্কেট বিলুপ্তি লাভ করে তার নাম জেরুজালেম। কারণ- মুসলিম বিজয়। ৪৭৬ সালে জার্মান বর্বরদের হাতে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর বাইজান্টিয়াম নগরীকে কেন্দ্র করে যে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য টিকে ছিলো তা সবচেয়ে তীব্র আক্রমণের মুখোমুখি হয় উদীয়মান মুসলিম শক্তির কাছে।

জেরুজালেমের খ্রিস্টান প্যাট্রিয়ার্কেট ছিলো বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধীন। ৬৩৮ সালে মুসলমানরা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্গত পুরো সিরিয়া ও ফিলিস্তিন অঞ্চল দখল করতে সমর্থ হন। একই বছর খলীফা উমরের মুসলিম বাহিনী জেরুজালেম অবরোধ করলে খ্রিস্টান প্যাট্রিয়ার্ক সোফরোনিয়াস শর্ত দেন যে এই পবিত্র নগরী তিনি তুলে দেবেন সরাসরি মুসলিম খলীফার হাতে এবং তাঁরই সাথে তিনি নগরী সমর্পনের চুক্তি স্বাক্ষর করবেন; অন্যথায় নয়। তার শর্ত মেনে নিয়ে খলীফা সুদূর মদীনা থেকে এলেন।

কথিত আছে, মুসলিম খলীফাকে অভ্যর্থনা জানাতে জেরুজালেম নগরীর প্রবেশ দ্বারে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্যাট্রিয়ার্ক সোফরোনিয়াস। খলীফা উটের পীঠ থেকে নেমে তার সামনে দাঁড়ালে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন প্যাট্রিয়ার্ক সোফরোনিয়াস। কোনো জাঁকজমক নেই; আড়ম্বর নেই; একদমই একজন সাধারণ মানুষ। ইতিহাসবেত্তারা বলেছেন, পাশে দাঁড়ানো অনুচরকে তখন সোফরোনিয়াস গ্রিক ভাষায় বলেন- ‘পবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে নবি ড্যানিয়েল ঘৃণা শূণ্য হওয়ার যে উক্তি করেছিলেন, এই-ই তার সত্যি সত্যি প্রতিরূপ।’

অভ্যর্থনা পর্ব শেষে খলীফা প্যাট্রিয়ার্ক সোফরোনিয়াসের সঙ্গে শকটে চড়ে শহর প্রদক্ষিণে বেরুলেন। যখন তারা রিসারেকশন গির্জায় গেলেন তখন নামাজের সময় হয়ে গেলো। সোফরোনিয়াস তাঁকে সেখানেই নামাজ আদায়ের অনুরোধ করেন। কিন্তু তা না করে তিনি কনস্টানটাইনের গির্জার সিঁড়ির ওপরে নামাজ আদায় করেন। খলীফা মাথাপিছু সমান কর ধার্য করে সব গির্জা ও খ্রিস্টধর্মীয় স্থাপনা সোফরোনিয়াসের হাতে সমর্পন করলেন। শান্তিপূর্ণভাবে জেরুজালেমের শাসন বুঝে নেয়ার সময় খলিফা ওমর খ্রিস্টানদের সাথে যে কয়টি আপস রফা করেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিলো ‘জেরুজালেমে ইহুদিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি রাখা’। কিন্তু পরবর্তিতে ওমরের প্রচেষ্টায় ইহুদিদের ৭০টি পরিবার জেরুজালেমে বৈধভাবে বসবাস করার অধিকার পায়।

জেরুজালেমের খ্রিস্টান ও ইহুদিরা খলীফার সাথে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ভূসম্পত্তির মালিক হতে পারত। মুসলমানদের মতোই সরকারি চাকরির দ্বার তাদের জন্য ছিলো উন্মুক্ত। সর্বত্র খ্রিস্টানদের গির্জা ও মঠ ছিলো। খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের জেরুজালেমে ঢোকার অবাধ অধিকার ছিলো। পরবর্তী সময়ে উমাইয়া, আব্বাসীয় ও ফাতেমী রাজতন্ত্রের সময়েও জেরুজালেমের মুসলমানরা খ্রিস্টানদের সাথে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার জন্য যা যা করণীয় তার সবই করতেন। ক্ষমতাসীন মুসলমানদের সাথে শুধু খ্রিস্টানদের সহাবস্থানই নয়, বরং ইহুদি খ্রিস্টান ও ইহুদি মুসলমান সহাবস্থানও যথেষ্ট শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিলো।

এ সম্প্রীতিতে কিছুটা ফাটল ধরে যখন সেলজুকরা ফাতেমীদের হাত থেকে মিসরের ক্ষমতা দখল করে। জেরুজালেম দীর্ঘ সময় ধরে মিসরকেন্দ্রিক ফাতেমী রাজতন্ত্রী খিলাফতের অধীনে শান্তিতেই ছিলো। সেলজুকরা ফাতেমীদের হাত থেকে মিসরের ক্ষমতা দখল করে ১০৫৮ সালে। জেরুজালেম সেলজুকদের দখলে আসার পর খ্রিস্টানদের সাথে বড় ধরণের অসদাচরণের ঘটনা ঘটান জনৈক সেলজুক সুলতান।

১০৯৫ সালের দিকে সেলজুক সুলতানের নির্দেশে জেরুজালেমের খ্রিস্টধর্মাচার্যকে অপমান ও প্রথমে বন্দী করে পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়। জেরুজালেম থেকে মুসলিম আধিপত্য উচ্ছেদের জন্য এরকমই একটি ঘটনার অপেক্ষায় ছিলেন তৎকালীন পশ্চিম ইউরোপের খ্রিস্টান নরপতি ও ধর্মাচার্যরা। এ ঘটনায় তারা সেই কাঙ্খিত মহাসুযোগ পেয়ে গেলেন। তৎকালীন পশ্চিম ইউরোপের খ্রিস্টধর্মের সর্বোচ্চ কর্তা পোপ আরবান-২ খ্রিস্টধর্মের অহিংস নীতিকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে রক্তাক্ত ক্ষমতার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন।

ক্যাথলিক ইউরোপের রাজ-রাজড়াদের ওপর ধর্মের ছড়ি আরও বেশি ঘুরিয়ে নিজের ক্ষমতা যাতে আরও বেশি বাড়ানো যায় সেজন্য ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে সবাইকে সংগঠিত করে তিনি ঘোষণা করলেন ধর্মযুদ্ধ অর্থাৎ ক্রুসেড। পোপ ফ্রান্সের ক্লেরমন্টে কাউন্সিল ডেকে সবাইকে নিয়ে ক্রুসেডে অংশ নেয়ার শপথ করলেন। কার্যত এ শপথের পেছনে কোনো মহৎ উদ্দেশ্যের ছিটেফোঁটাও ছিলো না। এটা ছিলো ক্ষমতালোভী খ্রিস্টান যাজকতন্ত্র তথা পোপতন্ত্র ও রাজ-রাজড়াদের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য রক্তলালসার বহিঃপ্রকাশ। রক্ত লালসায় কাতর ধর্মের ধ্বজ্জাধারী ক্রুসেডাররা মানুষের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে দানবের বেশে!

১০৯৯ সালের ১৫ এপ্রিল। জেরুজালেমের ইতিহাসে এক দুঃখের দিন! চল্লিশ দিন অবরোধের পর এদিনে ক্রসেডাররা জেরুজালেম দখল করে। এরপরই রক্ততৃষ্ণায় কাতর ক্রুসেডাররা ঝাপিয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। রাস্তায় ও বাড়িতে যাকেই সামনে পেলো কেটে টুকরো টুকরো করলো। পরাজিতদের জন্য জেরুজালেমে কোনো আশ্রয় মিলল না। দূর্গ প্রাচীর থেকে লাফ দিয়ে মৃত্যুবরণ করে কেউ কেউ ক্রসেডারদের হাত থেকে বাঁচল!

অনেকে প্রাসাদ, বুরুজ ও সর্বোপরি মসজিদে ভিড় করলো। কিন্তু সেখানেও ক্রসেডারদের তরবারির কোপে তারা কচুকাটা হলো। উমরের মসজিদে সারাসিনরা কিছুক্ষণ পর্যন্ত আত্মরক্ষা করলো। কিন্তু ক্রুসেডারদের তরবারির কোপে সেখানে মৃত্যুর গোঙ্গানী ও আর্তনাদ ছাড়া আর কিছুই শোনা গেলো না। হায় উমর! হায় সোফরোনিয়াস! উমর ও সোফরোনিয়াস এই জেরুজালেম নগরীকে রক্তপাতমুক্ত রাখার জন্য অতীতে যে পবিত্র অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছিলেন সেই অঙ্গীকার তলিয়ে যায় নিরীহ মানুষের রক্তের বন্যায়। রেমন্ড দ্য এজিলেস নামক এক প্রত্যক্ষদর্শী মাত্র একবাক্যে ক্রুসেডারদের নৃশংসতার একটি চিত্র তুলে ধরেছেন এভাবে- ‘মসজিদের বারান্দায় রক্ত হাঁটু পরিমাণ হয়েছিল এবং ঘোড়ার লাগাম পর্যন্ত হয়েছিল’।

মুসলমানদের মতো ভাগ্যবরণ করতে হয় ইহুদিদেরকেও। যেহেতু তারা মুসলমানদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল সেজন্য তাদের ভয়াবহ মূল্য দিতে হয়। ক্রুসেডাররা নগরীতে প্রবেশ করে যখন নির্বিচারে হত্যায় মেতে ওঠে তখন অতীত রীতি অনুসরণে ইহুদি প্রবীণরা নগরীর সমস্ত ইহুদি নর-নারী, শিশু-বৃদ্ধ সবাইকে প্রধান সিনাগগে জড়ো হয়ে প্রার্থনায় নিমগ্ন হতে নির্দেশ দেন।

জীবন বাঁচাতে তাদের এই সিদ্ধান্ত ছিলো মারাত্মক ভুল। ধর্ম-উন্মাদ খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা সিনাগগের চারদিক ঘিরে ফেলে এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। একটি শিশুও যাতে ঘেরাওয়ের ফাঁক ফোঁকর গলিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে, সেদিকে ক্রুসেডাররা কড়া নজর রাখে। ফলে হাজার হাজার ইহুদি নর-নারী, শিশু-বৃদ্ধ জীবন্ত পুড়ে মারা যায়। ক্রুসেড নামক এই অপরাধের জন্য নয়শত বছর পরে ভ্যাটিকানের পোপ মুসলমান ও ইহুদিদের কাছে ক্ষমা চান।

জেরুজালেমে ক্রুসেডারদের এই অপরাধ তখন বাগদাদের লম্পট মুসলিম খলিফাকে মোটেও ভাবিত করেনি। সুরা পান ও নিজের হারেমের সুন্দরী নারীদের নিয়ে তিনি তখন পূর্ণ আরামের সাথে দিন যাপন করছিলেন। জেরুজালেমের কান্না লম্পট মুসলিম খলিফার কানে না পৌঁছালেও কুর্দি বীর সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর কানে ঠিকই পৌছাল। মুসলিম বীর সালাহউদ্দিনের হৃদয় জুড়ে ছিলো কেবলমাত্র জেরুজালেমের মুক্তির স্বপ্ন। তাই জেরুজালেম মুক্ত করার জ্ন্য তিনি বাগদাদের লম্পট খলিফার সাথে আপোস করে সংঘাত এড়িয়ে যাওয়ার নীতি গ্রহণ করেছিলেন।


চিত্র: জেরুজালেম নগরীর বর্তমান দৃশ্য

১১৮৭ সালের ২ জুলাই সালাহউদ্দিনের কাছে পরাজিত হয়ে ষাট হাজারের বেশী ক্রুসেডার জেরুজালেমের ভেতরে আশ্রয় নেয়। সালাহউদ্দিন তাদেরকে নগর প্রাচীরের কাছে ডেকে বলেন, যদি তারা নগর প্রাচীর থেকে বেরিয়ে চলে যায় তাহলে তিনি তাদেরকে তাঁর কোষাগারের একাংশ ও যতো জমি তারা চাষ করতে চায় তা তাদেরকে দান করবেন। কয়েকদিন অবরোধের পর তারা আত্মসমর্পন করলে সালাহউদ্দিন তার প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। কিন্তু সালাহউদ্দিনের এই বিজয় খ্রিস্টধর্মন্ধতার মূলে এমন প্রচন্ড ধাক্কা দেয়, যা তারা শত শত বছর পরেও ভুলতে পারেনি।

বিংশ শতকের প্রথমার্ধে খ্রিস্টধর্ম অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলো পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র ধারণ করে। পুঁজিবাদের বিষফোঁড়া হলো সাম্রাজ্যবাদ; যা পৃথিবীকে যুদ্ধ, ধ্বংস ও বিভীষিকা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। অতি মুনাফার লালসায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো পৃথিবীর যেখানে খুশী সেখানে ঝাপিয়ে পড়ে যেভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে পেরেছে, তা অতীতের কোনো শক্তিই এতো স্বল্প সময়ে পারেনি।

বিংশ শতকের প্রারম্ভে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্ষালে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন-ফ্রান্স নিজেদের মধ্যে গাঁটছাড়া বাঁধে তৎকালীন মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষয়িষ্ণু ওসমানীয় খিলাফত ভেঙ্গে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়ার আশায়। রাজতন্ত্রী মুসলিম খিলাফতের সর্বশেষ সংস্করণ হলো তুরস্কের ওসমানীয় খিলাফত। এই ওসমানীয় খিলাফত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৯১৮) ব্রিটিশ-ফরাসী সাম্রাজ্যবাদের কাছে পরাজিত হয় এবং জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ হারায়। সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর ১১৮৭ সালের জেরুজালেম দখলের ৭২৯ বছর পর ১৯১৬ সালে মুসলমানদের হাত থেকে জেরুজালেম দখল করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের ফসল হিসেবে তারা জেরুজালেম দখলে সক্ষম হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি ১৯১৬ সালে জেরুজালেম দখল অভিযানে ব্রিটিশ বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন জেনারেল অ্যালানবি। জেরুজালেমের গ্রান্ড মুফতির কাছ থেকে নগরী বুঝে নেওয়ার পর খালি পায়ে হেঁটে এই নগরীতে প্রবেশ করেই তিনি ঘোষণা দেন- ‘একমাত্র এখনই ক্রুসেডের সমাপ্তি ঘটল’। গাজায় ফিলিস্তিনি ও তুর্কি সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ও মিত্র বাহিনীর যে যুদ্ধ হয় তাকেও ব্রিটিশ পত্র-পত্রিকা ক্রুসেড নামে অভিহিত করে। দি টাইমস বলে ‘নয়া ক্রুসেড’; আরেকটি পত্রিকা বলে ‘অষ্টম ক্রুসেড’; অন্য আরেকটি পত্রিকা বলে ‘এই-ই হচ্ছে সর্বশেষ ক্রুসেড’।

ব্রিটেন ও ফ্রান্স এরপর বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত ওসমানীয় সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। ভাগাভাগিতে ফ্রান্স পায় সিরিয়া ও লেবানন। সিরিয়ার শক্তি খর্ব করার জন্য সাম্রাজ্যবাদীরা এর একটি অংশ কেটে সৃষ্টি করে লেবানন। প্যালেস্টাইনের অংশ কেটে সৃষ্টি করে জর্ডান। মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদী দখলদারিত্বকে স্থায়ী রাখার জন্য তারা অচিরেই ফিলিস্তিনের মাটিতে একটি উগ্র ইহুদিবাদী রাষ্ট্র স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। পরবর্তীতে এর নাম হয় ইসরাইল রাষ্ট্র।

সাম্রাজ্যবাদীদের কাছ থেকে স্বাধীন আবাসভূমির প্রতিশ্রুতি পেয়ে ইহুদিরা ভুলে গেলো অতীতে তাদের প্রতি ক্রুসেডার গোষ্ঠী ও খ্রিস্টান ইউরোপের আচরণের কথা। তারা সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে হাত মিলিয়ে তৎপর হয়ে উঠে নিরীহ ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে। তারা ভূলে গেলো একসময় খ্রিস্টান ইউরোপ নর্দমার কীট থেকেও হেয় ও ঘৃণ্য জীব হিসেবে তাদেরকে বিবেচনা করত। তাদের জন্য জমি ক্রয়ের অনুমতি মিলত না। চাকরি তাদের জন্য ছিলো নিষিদ্ধ।

গলায় মোজেসের নির্দেশনামা কিংবা অপমানকর হলুদ ব্যাজ ঝুলিয়ে রাখতে হতো। ঘোড়ার গাড়িতে চড়া ছিলো নিষিদ্ধ। এক শহর থেকে আরেক শহরে ঢুকতে দিতে হতো কর। এযবঃঃড় নামে নির্দিষ্ট বস্তি ছিলো তাদের ঠিকানা। যখন যেভাবে খুশি তাদেরকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হতো। রীতিমতো উৎসবের আমেজে ইহুদিদের ধরে ধরে গণবলী দেওয়া হতো। ঘরবড়ি মনের আনন্দে খ্রিস্টানরা জালিয়ে দিতো। সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে ভর্তি হয়ে যুদ্ধে মরতে হতো। রশিয়ার জাররা ছিলেন আরও এক কাঠি সরেস। জার সরকার সকল ইহুদি নারীর গলায় বেশ্যার চাকতি পরিয়ে দিলো।

১৮৮০ সালে জার আলেকজান্ডার-২ হত্যার দায় চাপিয়ে ইহুদিদের ওপর যে বিভৎস গণহত্যা চালানো হয় তা বুঝাতে ইংরেজি অভিধানে চড়মৎড়স নামে নতুন একটি শব্দ তৈরী হয়। যার অর্থ নির্বিচারে হত্যা ও লুন্ঠন। এসব বর্বরতায় বেদনাক্লিষ্ট ইহুদিরা নিজেদের জন্য স্বাধীন আবাসভূমির স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। সে আবাসভূমি কোথায় হবে তা নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব ছিলো। বেশিরভাগ ইহুদি মনে করত দক্ষিণ আমেরিকা বা কানাডায় এটা হবে। অনেকের পছন্দ ছিলো আর্জেন্টিনা।

কিন্তু ইতিহাসের নির্মম সত্য হলো ইহুদিরা তাদের স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করেছে সম্পূর্ণ নিরীহ ও নিরপরাধ একটি জাতির বুকের ওপর। সাম্রাজ্যবাদীদের প্রত্যক্ষ মদদে তারা ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ভূখন্ডে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়ায় পুরো মধ্যযুগজুড়ে খ্রিস্টান শাসকরা ইহুদিদের ওপর যে কায়দায় অত্যাচার করেছে, সেই একই কায়দায় এখন ইহুদিরা অত্যাচার করছে ফিলিস্তিনের নিরপরাধ মানুষদেরকে। ক্যালদীয়, পারসীয়, মেসিডোনীয়, রোমান ও খ্রিস্টধর্মীয় শাসকরা ইহুদিদেরকে যে নিষ্ঠুরতায় হত্যা করত সেই একই নিষ্ঠুরতায় এখন ইহুদিরা নির্মূল করছে করছে এমন এক জাতির মানুষকে যারা ক্যালদীয়, পারসিয়ান, মেসিডোনীয়, রোমান বা খ্রিস্টধর্মীদের কেউ নয়।

ফিলিস্তিন সংকটকে ঘিরে ইতোমধ্যে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথেষ্ট সংঘাতের ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। এই সংঘাতের সমাপ্তি নির্ভর করছে শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের প্রাপ্য স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার ওপর। আগামীর ইতিহাস সেটা অচিরেই প্রমাণ করতে চলেছে।

লেখক: আসিফ আযহার
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাবিপ্রবি
ই-মেইল: [email protected]
ওয়েবসাইট: http://www.asifajhar.wordpress.com
ফেসবুক: Asif Ajhar, যোগাযোগ: 01785 066 880

বি.দ্র: রকমারিসহ বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে লেখকের সবগুলো বই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে লেখকের নামে সার্চ দিলেই যথেষ্ট।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৯

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: আপনার লেখায় জায়নবাদ সৃষ্টির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কিছু পেলাম না!

২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: এরকম একটা পোষ্ট লিখতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়।

৩| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৫

বিপ্লব০০৭ বলেছেন: @রাজীব নূর, এগুলো ওনার আগের লেখা। সামুতে এসে স্রেফ কপি-পেস্ট মেরে চলে যান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.