নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইতিহাসের পাঠশালায়

আসিফ আযহার

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়।

আসিফ আযহার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের পাঠশালায়: পর্ব-২৩ | কতিপয় জার্মান গোত্রের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫২


১. এংলো-স্যাক্সনদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
--------------------------------------------
এঙ্গলরা জার্মানদের মধ্যে অন্যতম একটি জনগোষ্ঠী যারা ৫ম শতাব্দীতে মহাদেশীয় জার্মানি থেকে স্যাক্সন এবং জাটদেরকে সাথে নিয়ে ব্রিটেনে অভিবাসী হয়েছিল। এ ভূখণ্ড পরে ‘ইংলা-ল্ন্ড’ নামে পরিচিত হয়। পুরোনো ইংরেজিতে ‘ইংলা-ল্ন্ড’ মানে ‘এঙ্গলদের ভূমি’। ইংল্যান্ড নামটির উৎপত্তি হয় এভাবে। এঙ্গলরা নর্দাম্ব্রিয়া, ইস্ট এঙ্গলিয়া, মার্সিয়া প্রভৃতি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। ইংল্যান্ডের মানুষ এংলো-স্যাক্সন হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমান যুক্তরাজ্যে এখনও ইস্ট এঙ্গলিয়া নামে একটি অঞ্চল রয়েছে। এঙ্গলদের মূল মাতৃভূমি ছিল আধুনিক জার্মান বুন্ডেসল্যান্ডের দক্ষিণাংশের উপদ্বীপের মতো অঞ্চলটিতে।


চিত্র: প্রাচীন ব্রিটেনের কেল্টিক জীবনযাত্রা

গ্রেট বৃটেনে এঙ্গল, জাট, স্যাক্সন, ফ্রিজিয়ান এবং অন্যান্য জার্মানিক গোষ্ঠীর আগ্রাসনকে গ্রেট জার্মান মাইগ্রেশনের শেষ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। পঞ্চম শতাব্দীতে ব্রিটেনে জার্মান গোত্রগুলোর আগ্রাসন শরু হয়। ট্যাসিটাসের ‘জার্মেনিয়া’ গ্রন্থে এর বিবরণ পাওয়া যায়। জাটরা জাটল্যান্ড এবং রাইন নদীর নদীর মুখের কাছাকাছি এলাকা থেকে এসেছিলো বলে মনে করা হয়। সে সময়য় স্যাক্সনরা একটি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছিল, কিন্তু মূলত উত্তর জার্মানি থেকেই তারা ব্রিটেনে আক্রমণ পরিচালনা করত।

স্যাক্সনরা কেবল একটি উপজাতি গোষ্ঠিই ছিল না, বেশ কয়েকটি ছোট গোত্রের সাথে তাদের কনফেডারেশনও ছিল। তবে কোন গোষ্ঠীগুলি নিয়ে কনফেডারেশনটি গঠিত হয়েছিল তা প্রকৃতপক্ষে জানা যায় না। ফ্রিজিয়ানরা এসেছিলো বর্তমান নেদারল্যান্ড এবং জার্মানির ফ্রিজিয়ান উপকূল এলাকা থেকে। অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো যেমন ওয়ার্নি এবং সুইডেনের গীটরা ছোট পরিসরে ব্রিটেন আক্রমণ করেছিল। ব্রিটেনে এংলো-স্যাক্সন আক্রমণ শুরু হয় ৪৯৯ সালে।

রোমানরা ব্রিটেন থেকে চলে যাওয়ার পর সেখানকার ব্রাইটনরা পিক্ট ও স্কটদের আক্রমণে অতীষ্ঠ হয়ে পড়ে। ফলে একপর্যায়ে বিটিশ অধিপতি ভর্টিগার্ন বর্বরের তাড়ানোর জন্য জাটদের সাহায্য প্রার্থনা করেন। ৪৯৯ সালে হেঙ্গিস্ট ও হোরসার নেতৃত্বে একদল জাট থানেট দ্বীপে অবতরণ করে। তারা পিক্ট ও স্কটদেরকে বিতাড়িত করে, কিন্তু ভর্টিগার্নের কথা অমান্য করে কেন্ট প্রদেশ দখলের উদ্দেশ্যে ব্রিটেনেই অবস্থান করতে থাকে।


চিত্র: মধ্যযুগীয় ব্রিটেনের অ্যাংলো-স্যাক্সন জীবনযাত্রা

জাটদের পরে আসে স্যাক্সনরা। এরাই গড়ে তোলেছিল সাসেক্স, সারি ও ওয়েসেক্স রাজ্য। ব্রাইটনরা স্যাক্সন আক্রমণকারিদেরকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করে। ৫২০ সালে মাউন্ট বডনের যুদ্ধে ব্রাইটনরা স্যাক্সনদেরকে মারাত্মকভাবে পরাজিত করে এবং বিশ বছরের জন্য তাদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়। তবে ৫৭৭ সালে পশ্চিম-স্যাক্সন রাজা গওলিন ডিওরহামের যুদ্ধে ব্রাইটনদের বিরুদ্ধে এক লক্ষ্যণীয় বিজয় অর্জন করেন। এই বিজয়ের ফলে সেভেরেন উপত্যকা ইংরেজ স্যাক্সনদের অধীনে চলে যায় এবং এর ফলে কর্নওয়ালের ব্রাইটনদের সাথে ওয়েলসের ব্রাইটনদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সবার পরে ব্রিটেনে আসে এঙ্গলরা যারা তাদের নামে দেশটির নামকরণ করে। তারা দেশের উত্তর এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে নর্দাম্ব্রিয়া, পূর্ব এঙ্গলিয়া ও মার্সিয়া – এ তিনটি রাজ্য গড়ে তোলে। ৬১৩ সালে এঙ্গল রাজা এথেলফার্থ চেস্টারের যুদ্ধে ব্রাইটনদের বিরুদ্ধে একটি উল্লেখযোগ্য বিজয় অর্জন করেন। এর ফলে ওয়েলসের ব্রাইটনদের সাথে স্ট্র্যাথক্লাইডের ব্রাইটনদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।


চিত্র: প্রাচীন ব্রাইটন জীবনযাত্রা

ডিওরহাম এবং চেস্টারের যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল বয়ে আনে। এ দুটি যুদ্ধ ইংলিশদের (এংলো-স্যাক্সন) বিজয় সম্পূর্ণ হওয়ার আভাস দিচ্ছিল। এ দুই যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে ইংলিশরা ব্রাইটনদেরকে তিনটি অংশে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং এভাবে তাদের ভবিষ্যৎ ঐক্যবদ্ধ আক্রমণকে ন্যাসাৎ করে দেয়। পরবর্তীতে ব্রাইটনরা ব্যাপকভাবে পরাজিত হতে থাকে এবং পশ্চিমের পাহাড়ী অঞ্চলের দিকে পিছু হটতে থাকে। বেশিরভাগ ব্রাইটনরাই ইংলিশদের সাথে যুদ্ধে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। যারা বেঁচে রইল তারা ওয়েলসের পাহাড়ী অঞ্চলে পালিয়ে যায় এবং স্থানীয় লোকজনের সাথে মিশে যায়। তারা নিজেদেরকে ‘কমরেড’ নামে অভিহিত করত এবং তাদের নিজেদের ভাষায় তারা এখনও এই নামে পরিচিত।

২. আলেমান্নি গোষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
--------------------------------------------
আলেমান্নি গোষ্ঠী সম্পর্কে সবচেয়ে পুরনো তথ্য পাওয়া যায় ডিয়ো ক্যাসিয়াসের বিবরণীতে। ২১৩ সালে ডিয়ো ক্যাসিয়াস তাঁর বিবরণে এদের কথা উল্লেখ করেন। তারা মূলত চেত্তির দক্ষিণে প্রধান নদীর অববাহিকায় বাস করত। অ্যাসিনিউস কোয়াড্রেটাসের মতে, আলেমান্নিদের নাম (পুরুষ) ইঙ্গিত করে যে, তারা বিভিন্ন গোত্রের মিশ্র গোষ্ঠী ছিল। তবে ধারণা করা হয় যে, তাদের মধে প্রাচীন হার্মান্ডারি জাতির ব্যাপক মিশ্রণ ছিল।


চিত্র: প্রাচীন আলেমান্নিয়ার মানচিত্র

অন্যান্য গোষ্ঠী জুথুঙ্গি, বুসিনোবান্টাস, লেন্টিনসিস এবং সম্ভবত আরমালুসিরাও তাদের মধ্যে মিশে গিয়েছিল। চতুর্দশ শতাব্দীর পর থেকে আমরা সুয়েভিদের কথা শুনি। হার্মান্ডারিরা স্পষ্টতই সুয়েভিদের অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীকালে আলেমান্নি এবং সুয়েভি সমার্থক নামে পরিণত হয় যদিও একসময় কিছু সুয়েভি স্পেনে স্থানান্তরিত হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলো যা ষষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত ঠিকেছিল।

আলেমান্নিরা রোমান সাম্রাজ্যের সাথে নিরন্তর যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। তারা ২৬৮ সালে উত্তর ইতালিতে ব্যাপক অভিযান শুরু করে। এ সময় রোমানরা ভিসিগথদের ব্যাপক আক্রমণের চাপেও বিপর্যস্ত ছিল। গ্রীষ্মের প্রথমার্ধে, সম্রাট গ্যালিনাস আলেমান্নিদের ইতালি অভিযান প্রতিহত করেন কিন্তু এরপরেই তাকে আবার গথদের মোকাবিলা করতে হয়।


চিত্র: রাইন নদীর মানচিত্র

সেবছর সেপ্টেম্বর মাসে নাইসাসের যুদ্ধে রোমানদের জয়লাভের মধ্য দিয়ে গথিক অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। এরপর গ্যালিনাসের উত্তরাধিকারী দ্বিতীয় ক্লডিয়াস গথিকাস আলেমান্নিদের মোকাবেলা করার জন্য উত্তরে অগ্রসর হন। আলেমান্নিরা পো নদীর উত্তরে সমগ্র ইতালজুড়ে সংগঠিত ছিল। শান্তিপূর্ণভাবে এদেরকে প্রত্যাহারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ক্লডিয়াস নভেম্বর মাসে আলেমান্নিদের সাথে বেনাকাস লেকের যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। যুদ্ধে আলেমান্নিদের পরাজয় হয় এবং তাদেরকে জার্মানিতে ফেরত পাঠানো হয়। এর ফলে বহু বছর তারা আর রোমানদের আক্রমণ করেনি। রোমের বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বিখ্যাত যুদ্ধ ছিল স্ট্রসবার্গের যুদ্ধ যে যুদ্ধে তাদের রাজাকে বন্দি করা হয়েছিল।

৩৬৬ সালের ২ জানুয়ারি বিপুল সংখ্যাক আলেমান্নি হিমায়িত রাইন নদী অতিক্রম করে রোমান সাম্রাজ্যে আক্রমণ চালিয়েছিল। ৫ম শতাব্দীর প্রথমদিকে আলেমান্নিরা রাইন নদী পার হয়ে আলসাস এবং সুইজারল্যান্ডের একটি বৃহৎ অংশ দখল করে এবং সেখানে বসতি গড়ে তোলে। তাদের এই রাজ্য ৪৯৬ সাল পর্যন্ত ঠিকেছিল। ৪৯৬ সালে টলবিয়াকের যুদ্ধে ফ্রাংক অধিপতি প্রথম ক্লভিসের কাছে তারা পরাজিত হয়। এ সময় থেকে ফ্রাংকরা আংশিকভাবে ফ্রাংক রাজ্য গড়ে তোলে।

৩. বার্গান্ডিয়ান গোষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
--------------------------------------------
বার্গান্ডিয়ানরা একটি পূর্ব জার্মানিক গোষ্ঠী ছিল যারা সম্ভবত সুইডেনের বর্নহোম দ্বীপ থেকে এসেছিলো। সম্ভবত ভিস্টুলা উপত্যকায় বসবাসের পরে তারা পশ্চিমে অগ্রসর হয়ে রাইন উপত্যকায় পৌঁছায়। রাইনের বার্গান্ডিয়ানদের সাথে রোমান সরকারের ভালো সম্পর্ক ছিলো না। ৪৩৭ সালে এশিয়া থেকে আগত তাতার গোত্র হুনদের আক্রমণে রাইনের বার্গান্ডিয়ান রাজ্য ধ্বংস হয়। হুনরা রাইনের বার্গান্ডিয়ান রাজ্যের রাজধানী ওয়ার্ম ধ্বংস করে। এ সময় রোমান সেনানায়ক এটিয়াস বার্গান্ডিয়ান উদ্বাস্তুদেরকে লাগডানেনসিসের কাছে পূনর্বাসিত করেন যা এখন লিয়ন নামে পরিচিত।


চিত্র: রোমান সেনানায়ক এটিয়াস

তারা গলের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল যে এলাকা এখন উত্তর ইতালি, পশ্চিম সুইজারল্যান্ড এবং পূর্ব ফ্রান্সের অন্তর্গত। ৪৫১ সালে হুন নেতা আত্তিলার বিরুদ্ধে কেলনসের (কাতালোনিয়া) যুদ্ধে বার্গান্ডিয়ানরা অন্যান্য জার্মানদের নিয়ে গঠিত কনফেডারেশন ও এটিয়াসের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে। এ যুদ্ধে এটিলা পরাজিত হন। ৫৫৪ সালে বার্গান্ডিয়ানরা ফ্রাংকদের কাছে পরাজিত হয়। বার্গান্ডিয়ান রাজ্যকে মরোভিঞ্জিয়ান রাজ্যের অংশে পরিণত করা হয়।

বার্গান্ডিয়ানরা এবং পূর্ব জার্মান গোষ্ঠীগুলো রোমানদের ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়েছিল। ৪৫১ সালে কেলনসের যুদ্ধে বার্গান্ডিয়ানরা রোমান বীর এটিয়াস, ভিসিগথসহ অন্যান্য জার্মান গোত্রের পক্ষে এবং আত্তিলা ও হুনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। বার্গান্ডিয়ানরা বারবার সামরিক মৈত্রী চুক্তিতে জড়িয়েছে। ক্লভিসের অধীনে ফ্রাংকদের উত্থানের পর তারা ফ্রাংকদের মিত্র হিসেবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় যার ফলে তারা ৫০৭ সালে ভিসিগথদের পরাজিত করতে ক্লভিসকে সাহায্য করেছিল। বার্গান্ডিয়ান রাজ্য দুইবার ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছিল; দ্বিতীয়বার মারাত্মক ছিল।


চিত্র: মধ্যযুগের বারগান্ডিয়ান সৈন্য

৪৫১ সালে হুনদের হামলার পর বার্গান্ডিয়ানরা এটিয়াসের সাহায্যে কোনমতে পালাতে পেরেছিল। বেঁচে যাওয়া লোকেরা সুইজারল্যান্ডের লেক জেনেভার আশেপাশের এলাকায় পালিয়ে যায়। পরে বারংবার আক্রমণের মধ্য দিয়ে তারা রাইন নদী উপত্যকায় চলে যায় যেখানে তারা পূর্ব গল দখল করে। লিয়ন বার্গান্ডিয়ান রাজ্যের রাজধানী হয়ে ওঠে। তারা অঞ্চলটির নাম দেয় ‘বারগান্ডি’ যা এখনও বজায় আছে। ৫৫৪ সালে বার্গান্ডিয়ানরা তাদের প্রাক্তন মিত্র ফ্রাংকদের দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং তাদের রাজ্য হারায়।


চিত্র: বর্তমান ফ্রান্সের মানচিত্রে বারগান্ডির অবস্থান

জার্মান আইনের মধ্যে বার্গান্ডিয়ান রাজা গান্ডোবাডা কর্তৃক প্রণীত লেক্স গুন্ডোবাডা বা লেক্স বার্গান্ডিওনাম একটি বিখ্যাত উদাহরণ। এটি ছিল গান্ডোবাডা কর্তৃক প্রণীত সংবিধান বা আইনসমূহের একটি সংকলন। গান্ডোবাডা বার্গান্ডিয়ান রাজাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন। তাঁর শাসন শুরু হয় ৪৭৪ সালে এবং তাঁর মৃত্যু হয় ৫১৬ সালে। লেক্স গুন্ডোবাডা হলো বারগান্ডিয়ান প্রথাগত আইন এবং জার্মান সাধারণ আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। আধুনিক ফ্রান্সের অংশ ‘বারগান্ডি’ এখন বার্গান্ডিয়ানদের একমাত্র স্মৃতি বহন করছে।

৪. ভ্যান্ডাল গোষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
--------------------------------------------
ভ্যান্ডালরা ছিল একটি পূর্ব জার্মানিক গোষ্ঠী যারা শেষের দিকে রোমান সাম্রাজ্যে প্রবেশ করেছিল এবং উত্তর আফ্রিকায় কার্থেজ শহরকে কেন্দ্র করে একটি রাষ্ট্র তৈরি গড়ে তোলেছিল। ভ্যান্ডালরা সম্ভবত তাদের নাম দিয়েছিলো স্পেনের আন্দালুসিয়া (মূলত ভান্দালুসিয়া) প্রদেশের নামানুসারে যেখানে তারা উত্তর আফ্রিকার দিকে অগ্রসর হওয়ার আগে সাময়িকভাবে বসতি স্থাপন করেছিলো।

ভ্যান্ডালরা খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতকে সুইডেন থেকে পোল্যান্ডের দিকে অগ্রসর হয় এবং ১২০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে সেলেসায় বসতি স্থাপন করে বলে ধারণা করা হয়। ৯৮ সালে জার্মানির অডার এবং ভিস্টুলা নদীর মধ্যবর্তী স্থানে তাদের উপস্থিতির কথা ট্যাসিটাসসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের বিবরণীতে পাওয়া যায়।


চিত্র: ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকায় ভ্যান্ডাল মাইগ্রেশনের গতিপথ

ভ্যান্ডালদের আরও দুটি শাখা ছিল সিলিংগাই এবং হাসডিংগাইরা। সিলিংগাইরা ম্যাগনা জার্মেনিয়া এলাকায় বসবাস করত যা পরবর্তীতে সাইলেসিয়া নামে পরিচিত হয়। দ্বিতীয় শতাব্দীতে রাজা রাউস এবং রাপ্টুসের নেতৃত্বে হাসডিংগাইরা দক্ষিণে অগ্রসর হয় এবং নিম্ন দানিয়ুব অঞ্চলে রোমানদের উপর হামলা চালায়। পরবর্তীতে শান্তি স্থাপিত হলে তারা পশ্চিম ডেসিয়া, রোমানিয়া এবং রোমান হাঙ্গেরিতে বসতি স্থাপন করে।

৪০০ বা ৪০১ সালে সম্ভবত হুনদের আক্রমণের কারণে ভ্যান্ডালরা তাদের জার্মানিক ও সারমাতিয়ান মিত্রদেরসহ (যেমন সারমাতিয়ান অ্যালানরা এবং জার্মানিক স্যুয়েবীয়রা) ভ্যান্ডাল রাজা গডিজিসেলের নেতৃত্বে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। সিলিংগাইদের কিছু অংশ পরে তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল। গথদের মতো ভাণ্ডালরাও খ্রিষ্টধর্মের অন্যতম শাখা আরিয়ানবাদ গ্রহণ করেছিল। আরিয়ানবাদীরা বিশ্বাস করত যে ঈসা মসিহ পিতা ঈশ্বরের সমতুল্য ছিলেন না বরং ঈশ্বরের সরাসরি নীচে তাঁর অবস্থান ছিল। এই বিশ্বাস রোমান সাম্রাজ্যের প্রধান খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর বিরোধী ছিল। প্রধান খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর মতবাদ পরবর্তীতে ক্যাথলিক মতবাদ ও ইস্টার্ন অর্থডক্সি নামে পরিচিত হয়েছিল।


চিত্র: ভ্যান্ডাল নেতা জেনসেরিক

ভ্যান্ডালরা তেমন কোন বাধা ছাড়াই দানিয়ুবের সাথে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, কিন্তু যখন তারা রাইনের কাছে পৌঁছাল তখন তারা ফ্র্যাঙ্কদের প্রতিরোধের মুখোমুখী হয়। ফ্র্যাঙ্করা রোমানদের কাছ থেকে পাওয়া উত্তর গ্যালিয়া অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করত। ফ্র্যাঙ্কদের সাথে যুদ্ধে গডিজিসেল নিহত হন এবং ২০০০০ হাজার ভ্যান্ডাল যোদ্ধা মারা যায়। তবে এরপর তারা অ্যালানদের সাহায্যে ফ্র্যাঙ্কদের পরাজিত করে এবং ৪০১ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখে ভ্যান্ডালরা গ্যালিয়া আক্রমণের জন্য রাইন অতিক্রম করে।

গডিজিসেলের পুত্র গান্ডেরিকের নেতৃত্বে ভ্যান্ডালরা গ্যালিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে লুটপাট চালিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। ৪০৯ সালের অক্টোবরে তারা স্পেনের পিরেনিজ পর্বতমালা অতিক্রম করে। সেখানে তারা রোমানদের কাছ থেকে গ্যালিসিয়া এবং আন্দালুসিয়া দখল করে নেয়। অন্যদিকে পর্তুগাল এবং কার্টেজেনার চারপাশের অঞ্চল পেয়েছিল অ্যালানরা। এর পরবর্তীতে সুয়েবি এবং ভিসিগথরা ভ্যান্ডাল এবং অ্যালানদের জন্য কিছুটা কষ্ট সৃষ্টি করেছিল।


চিত্র: রোম নগরীতে ভ্যান্ডাল ধ্বংসযজ্ঞ

গান্ডেরিকের ভাই জেনসেরিক একটি ভ্যান্ডাল ফ্লিট নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ৪২৯ সালে রাজা হওয়ার পর জেনসেরিক জিব্রাল্টার প্রণালী অতিক্রম করে পূর্ব দিকে কার্থেজের দিকে অগ্রসর হন। ৪৩৫ সালে রোমানরা তাদেরকে উত্তর আফ্রিকার কিছু অঞ্চল দান করে। ৪৩৯ সালে কার্থেজ ভ্যান্ডালদের পদানত হয়। এরপর জেনসেরিক ভ্যান্ডাল ও অ্যালানদের জন্য একটি শক্তিশালী রাজ্য গড়ে তোলেন এবং সিসিলি, সার্ডিনিয়া, কর্সিকা ও বেলারিক দ্বীপপুঞ্জ দখল করেন।

৪৫৫ সালে ভান্ডালরা রোম নগরী দখল ও ধ্বংস করে। চৌদ্দদিনব্যাপী তারা শহরটিতে লুন্ঠন চালায় এবং লুন্ঠিত মালামাল ও বন্দী দাসদের নিয়ে দেশে ফিরে যায়। ৪৬৮ সালে তাদের বিরুদ্ধে পাঠানো একটি বিশাল বাইজেন্টাইন নৌবহর ধ্বংস করে। ৪৭৭ সালে হুনেরিক ভ্যান্ডালদের রাজা হন। ম্যানিকিয়ান ও ক্যাথলিকদের ওপর ধর্মীয় নির্যাতনের জন্য হুনেরিকের শাসন বিখ্যাত। গুন্তামুন্ড (৪৮৪-৪৯৬) ক্যাথলিকদের জন্য অভ্যন্তরীণ শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।

জেনসেরিকের মৃত্যুর পর থেকে ভ্যান্ডালদের শক্তি মূলত কমতে থাকে। গুন্তামুন্ড অস্ট্রোগথদের হাতে সিসিলির একটি বড় অংশ হারান এবং মূরদের কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখী হন। ভ্যান্ডাল রাজাদের মধ্যে সর্বাধিক ক্যাথলিক বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন হিলডেরিক (৫২৩-৫৩০)। তিনি যুদ্ধে খুবই আনাগ্রহী ছিলেন এবং যুদ্ধের দায়িত্ব তাঁর পরিবারের জনৈক সদস্য হুয়ামেরের কাছে অর্পণ করেন। হুয়ামের যখন মূরদের বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধে পরাজিত হন তখন রাজপরিবারের আরিয়ানপন্থীরা একটি বিদ্রোহ সংঘটিত করেন করে গিলিমারকে (৫৩০-৫৩৩) রাজা বানান। হিলডেরিক, হুয়ামের এবং তাদের আত্মীয়রা কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন।


চিত্র: পোপ লিও দ্য গ্রেট জেনসেরিকের কাছে রোম রক্ষার আবেদন করছেন

বাইজেন্টাইন সম্রাট ১ম জাস্টিনিয়ান ভ্যান্ডালদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। বেলিসারিয়াস এ কাজে নেতৃত্ব দেন। ভ্যান্ডাল নৌবাহিনীর বড় অংশটি সার্ডিনিয়াতে একটি বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত রয়েছে শুনে তিনি দ্রুত কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিউনিশিয়ার মাটিতে অবতরণ করেন। তারপর কার্থেজে অভিযান শুরু করেন। ৫৩৩ সালের গ্রীষ্মে রাজা গিলিমার কার্থেজ থেকে দশ মাইল দক্ষিণে অ্যাড ডেসিমিয়ামের যুদ্ধে বেলিসারিয়াসের মুখোমুখী হন। ভ্যান্ডালরা প্রথমে যুদ্ধে বিজয়ী হয়; কিন্তু যখন গিলিমারের ভাতিজা গিবামুন্ড ভূপতিত হন তখন ভ্যান্ডালরা মনোবল হারিয়ে ফেলে এবং পালাতে থাকে। বেলিসারিয়াস দ্রুত কার্থেজ দখল করে নেন।


চিত্র: শেষ যুগের খ্রিষ্টান রোমান সেনা

৫৩৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর তারিখে কার্থেজ থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে টিকামেরনের যুদ্ধে গিলিমার আবারও বেলিসারিয়াসের মুখোমুখী হন। ভ্যান্ডালরা আবারও ভাল যুদ্ধ করেছিল কিন্তু গিলিমারের ভাই তাজাজো নিহত হলে তারা আবারও ভেঙ্গে পড়ে। বেলিসারিয়াস এবার ভ্যান্ডাল রাজ্যের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর হিপ্পোর দিকে অগ্রসর হন এবং ৫৩৪ সালে গিলিমার রোমান বিজয়ীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এভাবেই ভ্যান্ডাল রাজ্যের সমাপ্তি ঘটে।

৫. অস্ট্রোগথ গোষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
--------------------------------------------
অস্ট্রোগথ বা ‘ইস্টার্ন গথ’রা ছিল একটি প্রভাবশালী জার্মান গোষ্ঠী যারা রোমান সাম্রাজ্যের শেষের দিকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করেছিল। অস্ট্রোগথরা ছিল ইউরোপের সবচেয়ে পূর্বে বসবাসকারি জার্মান গোষ্ঠী। কৃষ্ণসাগরের উত্তরে বর্তমান ইউক্রেনে ছিল তাদের অবস্থান। তাদেরও পূর্বে বর্তমান কাজাখস্তান ভূখন্ডে বসবাস করত হুন নামক তাতার গোষ্ঠী।

তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন উত্সগুলিতে গথদেরকে একটি একক জাতিগোষ্ঠী হিসেবে পাওয়া যায়। এরপর তারা দুটি জাতিগোষ্ঠী হিসেবে বিভক্ত হয়ে যায়: অস্ট্রোগথ এবং ভিসিগথ। উভয় গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক দেবতা ছিলেন টিওয়াজ (TYR) যিনি রোমানদের মারস দেবতার সমতুল্য ছিলেন।

এই তথাকথিত ‘বিভক্তি’ বা আরো পরিস্কার ভাষায় ‘পশ্চিমের উপজাতিদের রোমান ডেসিয়া প্রদেশে পুনর্বাসন’ ছিল, কৃষ্ণসাগরের পাশের এলাকায় বসবাসরত অস্ট্রোগথ জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি স্বাভাবিক ফলাফল। সেখানে এই অস্ট্রোগথরা একটি বিশাল এবং শক্তিশালী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। জেপিডরা ছিল তাদের ভ্যাসাল।


চিত্র: রোমের উপকণ্ঠে অস্ট্রোগথ যোদ্ধারা

৩৭০ এর কাছাকাছি সময়ে হুনদের উত্থানের ফলে অস্ট্রোগথরা তাদের অধীনতায় চলে যায় এবং সম্ভবত এই কারণেই ভিসিগথ নেতা ফ্রিটিজার্ন দানিয়ুব অঞ্চলে পুনর্বাসনের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। অস্ট্রোগথ নেতা ইরমানারিক ৩৭৮ সালে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে জানা যায়। পরবর্তী কয়েক দশক ধরে অস্ট্রোগথরা হুনদের সাথে বলকান অঞ্চলে বসবাস করে এবং ইউরোপের অন্য অনেকের মতো তারাও হুনদের ভ্যাসাল হয়ে যায়। ৪৫১ সালে কেলনসের যুদ্ধে তারা হুনদের ভ্যাসাল হিসেবে যুদ্ধ করে।


চিত্র: অস্ট্রোগথ নেতা থিওডোরিক দ্য গ্রেট

হুন নেতা আত্তিলার মৃত্যুর পর হুন সাম্রাজ্য থেকে তারা স্বাধীন হয়। তাদের রেকর্ডকৃত ইতিহাস তখন থেকে শুরু হয়। ৪৫৪ সালে সাবেক ভাসাল জেপিডদের সাথে একত্রিত হয়ে অস্ট্রোগথরা থিওদিমিরের নেতৃত্বে নিদাও যুদ্ধে আত্তিলার পুত্রদের শক্তি চূর্ণ করে। অস্ট্রোগথরা এরপর পান্নোনিয়াতে বসতি স্থাপন করে। ৫ম শতকের শেষার্ধের বড় অংশজুড়ে অস্ট্রোগথরা দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের সেই অংশ দখলে নেয় যা এক শতাব্দী আগে ভিসিগথরা নিয়েছিল।


চিত্র: ৫৪৬ সালে অস্ট্রোগথদের হাতে রোমের পতন

সমস্ত অস্ট্রোগথিক শাসকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক থিওডোরিক দ্য গ্রেটের জন্ম হয় নিদাও যুদ্ধের পরপর, প্রায় ৪৫৪ সালে, থিওদেমির অঞ্চলে। তাঁর জীবনের প্রথম অংশ তাঁর দূরবর্তী আত্মীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বী থিওডোরিক স্ট্রাবোর সাথে যুদ্ধ, বিরোধ এবং চক্রান্তের ঘটনায় ভরপুর। এই থিওডোরিক স্ট্রাবো ছিলেন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে বসতি স্থাপনকারি অস্ট্রোগথ শাখার সর্দার। থিওডোরিক দ্য গ্রেটের জীবনে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বন্ধু ও শত্রু - দুটিই হওয়ার অভিজ্ঞতা জুটেছিল।


চিত্র: অস্ট্রোগথ সৈন্য

তিনি প্যাট্রিসিয়ান এবং কনসাল হিসাবে রোমান উপাধী অর্জন করেছিলেন। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই তিনি অস্ট্রোগথদের জাতীয় রাজা ছিলেন। ৪৮৮ সালে তিনি বাইজেন্টাইন সম্রাট জেনোর সমর্থনপুষ্ঠ হয়ে ওডোয়েসারের হাত থেকে ইতালি পুনরুদ্ধারের জন্য যাত্রা করেন। ৪৯৩ সালে রাভেন্না অধিকৃত হয়; ওডোয়েসার থিওডোরিকের নিজের হাতে নিহত হন। ইতালি, সিসিলি, দালমাতিয়া এবং ইতালির উত্তরে অস্ট্রোগথিক শক্তি সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই যুদ্ধে অস্ট্রোগথ এবং ভিসিগথরা আবার একত্রিত হতে শুরু করে।


চিত্র: ৫৫২ সালে নিহত সর্বশেষ অস্ট্রোগথ রাজা টেইয়া

থিওডোরিকের ক্ষমতা যখন গলের একটি বড় অংশ এবং প্রায় সমগ্র স্পেনের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় তখন গথ জাতির উভয় শাখাকে খুব শীঘ্রই একসঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠভাবে আনা হয়। কারণ থিওডোরিকের অধীনস্ত ভিসিগথ অধ্যুষিত বিশাল অঞ্চলের জন্য তাকে একজন ভিসিগথ রাজা হয়ে উঠতে হয়েছিল। ৫২৬ সালে থিওডোরিকের মৃত্যুর পর অস্ট্রোগথ এবং ভিসিগথরা পুনরায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ষ্ষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান কর্তৃক উৎখাত হওয়ার সময় পর্যন্ত অস্ট্রোগথ রাজ্য বিদ্যমান ছিল। ১৮ বছরের কঠোর যুদ্ধ এবং ধ্বংসযজ্ঞের পর অস্ট্রোগথিক সৈন্যরা পরাজিত হয়েছিল। এরপর অস্ট্রোগথিক রাজ্য এবং মানুষের কথা ইতিহাস থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

৬. লম্বার্ড গোষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
--------------------------------------------
লম্বার্ডদের উৎপত্তি দক্ষিণ সুইডেনে। তারা একসময় তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। তারা চার শতাব্দী ধরে রোমান সাম্রাজ্যের একটি অংশে প্রবেশ করে যা তখনকার আরেকটি জার্মান এলাকা হয়ে উঠেছিল। এরা ৯৮ সালের দিকে রোমানদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। ইতিহাসবিদ ট্যাসিটাস তাঁর জার্মেনিয়া গ্রন্থে তাদের কথা উল্লেখ করেছেন।


চিত্র: লম্বার্ড সৈন্য

বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ানের সহযোগিতায় তারা প্রথমে পান্নোনিয়ায় (আধুনিক হাঙ্গেরি) বসতি স্থাপন করে। ৫৬৮ সালে তারা তাদের রাজা আলবিনের নেতৃত্বে ইতালি আক্রমণ করে, কিন্তু দেয়ালঘেরা কোন শহর জয় করতে ব্যর্থ হয়। আলবিন এবং তাঁর পরবর্তী উত্তরাধিকারীর মৃত্যুর পর ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লম্বার্ডরা তাদের রাজা নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয় এবং এবং এ সময় ডিউকরা বিভিন্ন অঞ্চল শাসন করেন।


চিত্র: সপ্তম শতকের একজন লম্বার্ড ডিউক

লম্বার্ডরা যখন ইতালিতে প্রবেশ করেছিল তখন তারা ছিল আংশিকভাবে পৌত্তলিক, আংশিকভাবে আরিয়ান খ্রিষ্টান। তাই রোমান ক্যাথলিক চার্চের সাথে তাদের সম্পর্ক খুব খারাপ ছিল। লম্বার্ডদের শেষ রাজা ছিলেন ডেসিডেরিয়াস। তিনি ৭৭৪ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। এরপর ফ্রাংক সম্রাট শার্লামেন লম্বার্ড রাজ্য জয় করেন; কেবল জয় করেই থামেননি, ‘লম্বার্ডদের রাজা’ শিরোনামও পান। এর আগে জার্মানির রাজ্যগুলো একে অপরকে পরাজিত করত কিন্তু কেউ অন্যের ‘রাজা’ উপাধীর অধিকারী ছিল না।

শার্লামেন পোপতন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র তৈরির জন্য লম্বার্ডদের রাজ্য জয় করেছিলেন। ইতালির বর্তমান লম্বার্ডি অঞ্চল লম্বার্ডদের উপস্থিতির একটি নিদর্শন। এ অঞ্চলে মিলান শহর রয়েছে। লম্বার্ডদের পৌরাণিক এবং আধা-পৌরাণিক প্রাথমিক ইতিহাস সম্পর্কে তথ্যগুলো বেশিরভাগই আমাদের কাছে এসেছে পল দ্য ডিকনের ‘লম্বার্ডদের ইতিহাস’ বই থেকে যা ৮ম শতাব্দীর শেষের দিকে লিখিত হয়েছিল।

লেখক: আসিফ আযহার
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাবিপ্রবি
ই-মেইল: [email protected]
ওয়েবসাইট: http://www.asifajhar.wordpress.com
ফেসবুক: Asif Ajhar, যোগাযোগ: 01785 066 880

বি.দ্র: রকমারিসহ বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে লেখকের সবগুলো বই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে লেখকের নামে সার্চ দিলেই যথেষ্ট।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: ইতিহাস!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.