নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদ্ভুত আঁধারের অন্তরালে

আসিফ করিম শিমুল

কিছু সময়, কিছু অনুভূতিইচ্ছা হলেও স্মৃতির পাতা থেকেমুছে ফেলা যায় না।

আসিফ করিম শিমুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি ফেইক আইডির ইতিহাস - গল্প

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭

আমার প্রাইমারি স্কুল জীবনে নির্ঝর নামের এক বন্ধু ছিল। আমাদের গ্রামে ওর মামা বাড়ি। মামা বাড়ি থেকেই প্রাইমারি পড়াটা শেষ করেছে। তারপর ও গ্রামের বাড়ি চলে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এস.এস.সি. পাশের পর একবার মাত্র বেড়াতে এসেছিল আমাদের গ্রামে মানে ওর মামা বাড়ি। সেই ওর সাথে শেষ দেখা।



আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সময় ওআই-ফাই আসে ঐ সময় শ্রদ্ধেয় সফিকুন্নবী সামাদী স্যার আমাদের একটা এসাইনমেন্ট দেন “পয়েন্ট অব ভিউ ইন এ নভেল” এই টপিকস এর উপর।



সেদিন রুমে বসে ওআই-ফাই ইন্টারনেট এ কম্পিউটার থেকে ডাটা সংগ্রহ করছি আর ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে চ্যাট করছি। হঠাত দেখি একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট – আমার সেই পুরাতন বন্ধু নির্ঝর আলম। অনেকদিন পর বন্ধুর সাক্ষাৎ পেয়ে এসাইনমেন্ট এর কথা ভুলে গেলাম। ওর সাথে চ্যাট করলাম প্রায় এক ঘণ্টা। তারপর ফোন নাম্বার নিয়ে সেদিনের মত ওকে বিদায় জানালাম।



ওআই-ফাই পাওয়ার পর থেকে ফেসবুক চ্যাটের নেশাটা বেড়ে উঠেছিল। মেয়ে আইডি খুঁজে খুঁজে রিকোয়েস্ট পাঠাতাম আর ভাব জমানোর চেষ্টা করতাম। ক্লাসমেট বাদে আমার বন্ধু তালিকায় যে ২০ জন মত মেয়ে ছিল সবাইকে আমি রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম। কোন অপরিচিত মেয়ে আমাকে কোনদিন রিকোয়েস্ট দেয় নি।



এরিমধ্যে নির্ঝরের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হওয়ার প্রায় ২ সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। যথারীতি পুরানো অভ্যাস মত রুমে বসে ফেসবুকিং করছি। হঠাত দেখি “মৌমিতা সেন” নামে একটা বারবি প্রোফাইল পিকচার দেয়া মেয়ে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। জীবনে প্রথম একটি অপরিচিত মেয়ের রিকোয়েস্ট পেলাম। আমি তখন খুবই কৌতূহলী। হয়ত নিজের অজান্তেই নেচে উঠেছিলাম।



কৌতূহল দমন করার জন্য ওকে মেসেজ করলাম, “ আপনি আমাকে চেনেন?”



ও উত্তর দিল, “ হ্যাঁ চিনি, এবং খুব ভালভাবেই চিনি।"



আমার কৌতূহল বেড়ে উঠলো। ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি কি চেনেন?”



ও একে একে আমার বাড়ি কোথায়, বাবার নাম কি, কোথায় থাকি, কি করি, কোন কোন স্কুল কলেজ থেকে পড়েছি এমনকি আমার মায়ের নামটিও সঠিক ভাবে বলে দিল। আমি তখন চিন্তায় পড়ে গেলাম কে এই মেয়ে? আমার নাড়ির খবর সব হুবহু জানে অথছ জীবনে এই নামের কোন মেয়ের সাথেই আমার পরিচয় হয় নি।



অতিরিক্ত কৌতূহল নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “আমি কি আপনাকে চিনি?”



ও তখন উত্তর দিল, “তুই চিনবি না তো কে চিনবে?” একেবারে সরাসরি আপনি থেকে তুই।



আমি বললাম, “কে আপনি? আর কোন সাহসে আমাকে আপনি থেকে তুই করে বলছেন? পরিচয় না দিয়ে মেজাজ খারাপ করাবেন না আমি কিন্তু আপনাকে ব্লক করব। আমি মৌমিতা নামে কাউকে চিনি না।”



ও উত্তর দিল, “আমি মৌমিতা না, নির্ঝর।”



আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। আমার ভাব জমানোর সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।



ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “দোস্ত তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু তুই একজন শিক্ষিত সচেতন মানুষ হয়ে ফেইক আইডি ব্যবহার করিস কেন?”



ও বলল, “ দোস্ত আমার ফেইক হওয়ার পেছনে অনেক বড় একটা ইতিহাস আছে। যে ইতিহাসটা এতদিন ধরে মনের গভিরে লুকিয়ে রেখেছিলাম আজ তোকে সব খুলে বলব।"



তারপর ওর সাথে প্রায় ২ ঘণ্টা চ্যাট করে নিম্নলিখিত ওর বাস্তব জীবন কাহিনী সম্পর্কে জানতে পারলাম।



ও বলা শুরু করল...



আমি যখন হাই স্কুলে পড়তাম তখন একটি হিন্দু মেয়ে আমাকে মনে প্রাণে ভালবেসে ফেলে। অথচ সে আমাকে কোন দিন বলেওনি, আমিও বুঝতে পারিনি। মেয়েটির বাড়ি ছিল আমাদের পাশের গ্রামেই।



আমরা এস.এস.সি. পরীক্ষা দিলাম একসাথে। একি ভ্যানে পরীক্ষা দিতে যেতাম। আমার অনেক ক্লোজ ছিল সে। হয়ত এই কারনেই তাকে কখনও গুরুত্ব দেইনি।



এস.এস.সি. তে আমার রেজাল্ট হল ৪.০৬ আর তার হল ৩.৮৮।



আমি গ্রামে থেকেই পড়তে লাগলাম। ওরা একটু ধনি হওয়াতে যশোরের একটি স্বনামধন্য কলেজে গিয়ে ভর্তি হল। নিয়মিত যোগাযোগ হত। আমি যদি ৫ মিনিট নিজে ফোন করতাম ও করত ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। তবে প্রেম ভালবাসার কথা হতনা কখনই। দুই জন ক্লোজ ফ্রেন্ড একজায়গায় হলে যেমন হয় আরকি।



ইন্টারমিডিয়েটও শেষ করলাম। আমার হল ৪.৮০ ওর হল ৪.৬০।



এরপর কোচিং এ ভর্তি হতে হবে এডমিশন এর জন্য। আমি যশোরে গিয়ে কোচিং এ ভর্তি হলাম আর ওর কাছাকাছি একটা মেসে উঠলাম।



দুর্ভাগ্যবশত ওর কোন এক রিলেটিভ ঝিনাইদহ ইউনিএইড কোচিং এ কাজ করত। সেই রিলেটিভ ওকে ঝিনাইদহ নিয়ে ফ্রী ভর্তি করিয়ে দিল।



আমি তখনও ওর প্রতি আসক্ত হইনি। তবে ও যেদিন যশোর ছেড়ে যাচ্ছে বলে ফোন দিয়ে জানালো, তখন বুকের মাঝে হঠাৎ করেই যেন কিসের একটা ধাক্কা খেলাম।



ওকে বাসে তুলে দিতে গেলাম। তখন ও আমাকে একটা ডাইরি, একটা কলম আর একটা শার্ট পিচ গিফট করে। এবং ঐ মানুষের মাঝেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। ঐ ঘটনায় আমি পুরটাই ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি।



আমার ক্লাস সেভেন থেকে লেখার হাত ছিল। যদিও সব লেখা অপরিণত। সেই সময় আমার পাঠক বলতে একজনই ছিল সে ঐ মৌমিতা।



রুমে এসে যখন ডাইরি খুললাম তখন একদিকে আনন্দ আর একদিকে কান্নার দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গেলাম। কোনটাই চেপে রাখতে পারছিলাম না।



ডাইরির ৩য় পেজে একটা সুন্দর গোলাপ আঁকানো ছিল। আর সুন্দর করে আমাকে যে ভালবাসে অনেক আগে থেকেই এক পেজে খুব অল্প ভাষায় লেখা ছিল। আর শেষে বলেছিল,”তুই কখনও লেখা ছাড়বি না। তোর লেখা কেউ না পড়লেও শুধু আমি পড়ব সারা জীবন।”



এখান থেকেই কাহিনী শেষ হতে পারত, কিন্তু হয়নি। আমরা দুজনেই তখন গভীরভাবে ভালবাসি একে অপরকে।



এর ফলে একসময় পড়ার প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলতে লাগলাম। নিজেদের ক্ষতি হচ্ছে ভেবে দুজন একসাথে প্রতিজ্ঞা করলাম এডমিশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা দৈনিক ২০ মিনিটের বেশি কথা বলব না।



তাই হল। ভালই চলছিল। কিন্তু বিধাতা বাধ সাধলেন।



মৌমিতার যে রিলেটিভের কথা বলছিলাম সে হয়ে উঠল আমাদের মেন ভিলেন। আমি জানতাম না ঐ ছেলেটার সাথেই কবে কবে মৌমিতার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল ওর পরিবার থেকে। আর সেই কারনেই ও মৌ কে আমার কাছ থেকে নিয়ে গিয়েছিল।



কোচিং ৩ মাস হওয়ার পর তখন আনুষ্ঠানিকভাবে ওদের বিয়ের দিন ঠিক হল ওর অমতে। আমি তখন কিছুই করতে পারলাম না। নির্বাক দর্শক হয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কোন ভুমিকা ছিল না। কেননা একদিকে বেকার, কাজ নেই, ছাত্র মানুষ, সমবয়সী তারপরও জাতিগত প্রবলেম তো আছেই।



মৌমিতা আমাকে জোর দিয়ে কিছু বলেনি। কারণ সেই সময় জোর দিতে গেলে কি পরিস্থিতি হতে পারে তা সে ভালকরেই জানত। শুধু বিয়ের আগের রাতে আমাকে বলেছিল ,“জীবনে মরনে আমি তোরই থাকব। তোর লেখা যতদিন থাকবে আমি তোর লেখার মাঝেই বেঁচে থাকব।”



কিন্তু ঐ সময় এই কথার মানে বুঝতে পারিনি। বুঝেছিলাম অনেক পরে।



বিয়ের সময় স্বভাবতই ওর পক্ষ থেকে এবং ওর বাবা মায়ের পক্ষ থেকে নিমন্ত্রণ পেলাম। গেট সাজানো থেকে শুরু করে ক্লোজ ফ্রেন্ড হিসেবে যা যা করা দরকার প্রায় সবই করলাম।

পরেরদিন ওকে যখন গাড়িতে তুলে দেব তখন ওর হাতে একটা শোপিচ গিফট করলাম।



শোপিচ টা এমন ছিল যে, ওখানে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে তাদের বাচ্চার হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। একটু দূরে আর একটি ছেলে মাথায় হাত দিয়ে বসে বসে কাদছে। মেয়েটি তার স্বামীর দিকে বা বাচ্চার দিকে না তাকিয়ে সেই ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে।



যাওয়ার সময় ও আমাকে আরও একটা কলম দেয়। বলে লেখা ছাড়বি না কখনও।



আমি ওকে তুলে দিয়ে কাদতে কাদতে বাড়ির পথে পা দিলাম।



বাড়িতে উদাস ভাবে বসে আছি আর কাদছি। সেই কান্নাটা আর থামাতে পারলাম না। একটু পরেই আঙ্কেলের ফোন এল, “নির্ঝর মৌ এক্সিডেন্ট করেছে।” আমি তখন হতভম্ব দিশেহারা। আমার হাতে সাইকেল ছিল, সাইকেলে চড়ার কথা ভুলে গেলাম। দৌড়ে চলে গেলাম ওদের বাড়ি।



বাড়িতে তখন অসংখ্য মানুষের ভিড়। চারিদিকে কান্নার রোল উঠেছে।



পরে জানতে পারলাম ও গাড়িতে চড়ে কিছুদুর যাওয়ার পর যখন মেন রাস্তায় ওঠে তখন বমি করবে বলে জানালা খুলে মাথা বের করে। আর ঠিক তখনই একটা ক্রছিং বাস এসে ওর মাথা থেতলে দেয়। আমার মৌমিতা স্পট ডেড।



কোচিং এর ঐ কয়দিন যে আমি কিভাবে কাটিয়েছি সেটা বলতে পারব না। আমার আর পাগলের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। এখন পর্যন্ত বেঁচে আছি শুধু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, আমার লেখার মাধ্যমে মৌমিতা কে বাচিয়ে রাখতে হবে। এজন্য আমার বিরহী মনের সকল ভাবনা চিন্তা স্ট্যাটাস হয়ে মৌমিতা আইডিতেই প্রকাশ পায়। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কখনও যদি লেখা প্রকাশ করার সুযোগ হয় মৌমিতা নামেই প্রকাশ করব। মৌমিতা নামের এই আইডি টি ভালবেসে তাকে উৎসর্গ করলাম।



লেখককে ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩৯

মামুন ইসলাম বলেছেন: লেখার কথা গুলো ভাল । শুভ কামনা থাকবে সবসময়ের জন্য ।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:১৮

আসিফ করিম শিমুল বলেছেন: কষ্ট করে আমার লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকেউ অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন সবসময়।

২| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:২০

নূর আল আমিন বলেছেন: অনেক হাৰ্ট টাচিং

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.