নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন শুদ্ধচারী হতে চাই।টুকটাক লিখি আর বিজ্ঞানের ভক্ত।তাই আমি মানুষের আবেগ ও অনুভূতি সম্পর্কিত পোস্ট দিতে বেশি পছন্দ করি।আমি বিশ্বাস করি কোন লেখাই দুনিয়া পরিবর্তন করতে পারে না যদি না আপনি সেটার মূলমন্ত্র ধরতে ও নিজের উপর এপ্লাই করতে না পারেন।

নিসঃঙ্গ গ্রহচারী

আপনার অন্তিম পরিণতি আপনার কাজ দ্বারাই নির্ধারিত হয়, তাই এমন কিছু করবেন না যার জন্য ভবিষ্যতে পস্তাতে হয়।আত্মঅনুশোচনা একজনকে ভেতর থেকে শেষ করে দেয়। আর দিনশেষে লোকের কাছে নয় নিজের কাছে ভাল থাকাটাই ফ্যাক্ট।

নিসঃঙ্গ গ্রহচারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার পথ [ কাজী নজরুল ইসলাম ]

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৫১

আমার কর্ণাধার আমি । আমার পথ দেখাবে আমার সত্য ।আমার যাত্রা শুরু করা আগে আমি সালাম জানাচ্ছি -নমস্কার করছি আমার সত্যকে ।।
যে পথ আমার সত্যের বিরোধী , সে পথ আর কোন পথই আমার বিপথ নয় । রাজভয়-লোকভয় কোন ভয়ই আমাকে বিপথে নিয়ে যাবে না ।
আমি যদি সত্যি করে আমার সত্যকে চিনে থাকে ,আমার অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকে ,তাহলে কোন ভয়ই আমার কিছু করতে পারবে না ।
যার ভিতরে ভয় , সেই বাইরে ভয় পায় । অতএব যে মিথ্যাকে চেনে , সে মিছামিছি তাকে ভয় ও করে না ।
যার মনে মিথ্যা সে-ই মিথ্যাকে ভয় করে ।
নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা আপনি এত বড় একটা জোর আসে যে , সে আপন সত্য ছাড়া আর কাউকে কুর্ণিশ করে না - অর্থাৎ তাকে কেউ ভয় দেখিয়ে পদানত রাখতে পারে না ।
এই যে নিজেকে চেনা , আপনার সত্যকে আপনার গুরু , পথপ্রদর্শক , কান্ডারি বলে জানা , এটা দম্ভ নয় , অহংকার নয় । এটা আত্নকে চেনার সহজ স্বীকারোক্তি । আর কেউ যদি এটাকে ভুল করে অহংকার বলে মনে করেন তবু এটা মন্দের ভাল - অর্থাৎ মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে অনেক বেশি ভাল ।
অনেক সময় খুব বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলা হয় । ওতে মানুষকে ক্রমেই ছোট করে ফেলে , মাথা নিচু করে আনে ।
ওরকম বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক অনেক ভাল ।।

অতএব এই অভিশাপ-রথের সারথির স্পষ্ট কথা বলাটাকে কেউ যেন অহংকার বা স্পর্ধা বলে ভুল না করেন ।
স্পষ্ট কথা বলায় একটা অবিনয় নিশ্চয় থাকে ; কিন্তু তাতে কষ্ট পাওয়াটা দুর্বলতা । নিজেকে চিনলে , নিজের সত্যকেই কর্ণাধার মনে জানলে নিজের শক্তির উপর অটুট বিশ্বাস আসে ।।
এই স্বাবলম্বন , এই নিজের উপর অটুট বিশ্বাস করাতেই শেখাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধীজি । কিন্তু আমরা তার কথা বুঝলাম না , ''আমি আছি '' এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম ''গান্ধীজি আছেন ' । এই পরালম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেললে । একেই বলে সবচেয়ে বড় দাসত্ব ।

অন্তরে যাদের এত গোলামির ভাব , তারা বাইরের গোলামি থেকে রেহাই পাবে কি করে ?
আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে ।
এই আত্ম নির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে , সে দিনই আমরা স্বাধীন হব , তার আগে কিছুতেই নয় ।
নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেই যদি দেশ উদ্ধার হয়ে যেত , তাহলে এইদেশ এতদিন পরাধীন থাকত না ।

আত্মকে চেনা , নিজের সত্যকে বড় মনে করার দম্ভ --আর যাই হওক ভন্ডামি নয় । এ-দম্ভ শির উচুঁ করে , পুরুষ করে , মনে একটা ''ডোন্ট কেয়ার '' ভাব আনে । আর যাদের এই তথাকথিত দম্ভ আছে , শুধু তারাই অসাধ্য সাধন করতে পারবে ।।

যার ভিত্তি পচে গেছে , তাকে একদম উপড়ে ফেলে নতুন করে ভিত্তি না গাঁথলে তার ওপর ইমারত যতবার খাড়া করা যাবে , ততবারই তা পড়ে যাবে । দেশের যারা শত্রু , দেশের যা কিছু মিথ্যা , ভন্ডামি , মেকি তা সব দূর করতে প্রয়োজন হবে আগুনের সম্মার্জনা ! আমার এমন কোন গুরু নেই , যার খাতিরে সে আগুন-সত্যকে অস্বীকার করে কারো মিথ্যা বা ভন্ডামিকে প্রশ্রয় দেব ।আমি সে দাসত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত । আমি কোন দিন কারো বাণীকে বেদ বাক্য বলে মেনে নিব না , যদি তার সত্যতা প্রাণে তার সাড়া না দেয় । না বুঝে বোঝার ভন্ডামি করে পাঁচ জনের শ্রদ্ধা আর প্রশংসা পাওয়ার লোভ আমি কোন দিনই করব না ।।


ভুলের মধ্যে দিয়ে গিয়েই তবে সত্যকে পাওয়া যায় । কোন ভুল করছি বা করেছি বুঝতে পারলেই আমি প্রাণ খুলে তা স্বীকার করে নেব । কিন্তু না বুঝেও নয় , ভয়েও নয় ।
ভুল করছি বা করেছি বুঝেও শুধু জেদের খাতিরে বা গোঁ বজায় রাখার জন্যে ভুলটা ধরে থাকব না । তাহলে আমার আগুন সেদিনই নিভে যাবে ।একমাত্র মিথ্যার জলই এই শিখাকে নিভাতে পারবে । তাছাড়া কেউ পারবে না ।

মানুষধর্মই বড় ধর্ম ।। হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করাই আমার এ পথের উদ্দেশ্য ।

মানুষে মানুষে যেখানে প্রাণের মিল , আদত সত্যের মিল , সেখানে ধর্মের বৈষম্য , কোন হিংসার বা দুশমনির ভাব আনে না ।

যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে , যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে , সে কখনো অন্যের ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না ।

দেশের পক্ষে যা কিছু মঙ্গলকর সত্য , শুধু তাই লক্ষ করে এই আগুনের ঝান্ডা দুলিয়ে পথে বের হলাম ।। [ সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত]

[সাহিত্য পাঠ _একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
হতে সংগৃহিত]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:০১

অগ্নি কল্লোল বলেছেন: দেহ কাঁপানো একটা প্রবন্ধ।।

২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:০৬

কানিজ রিনা বলেছেন: আপনার বিস্বাসের উপর যদি নিষ্ঠা থাকে।
স্বারপরতা না থাকে আপনার কাছের কেউ
ক্ষতি গ্রস্ত না হয়। তাহলেই আপনি জয়ই
হবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ আপনার সহায় হবে।
লালনের কথা সরব সাধন সিদ্ধ হয় তার
মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার।

৩| ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২৫

নিসঃঙ্গ গ্রহচারী বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.