![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্ল্যাক হোল, বাংলায় যাকে বলা হয় কৃষ্ণগহ্বর, এটি মহাবিশ্বের এমন এক রহস্যময় স্থান যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতটাই প্রবল যে আলো পর্যন্ত এর আকর্ষণ থেকে পালাতে পারে না। এটি মহাবিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং গবেষণার বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে একটি। আজকের ব্লগে ব্ল্যাক হোলের সৃষ্টি, গঠন, প্রকারভেদ এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞান ও কল্পকাহিনী নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করব।
ব্ল্যাক হোল কী?
ব্ল্যাক হোল এমন এক মহাকর্ষীয় বস্তু যা এতটাই ঘন এবং ভারী যে এর মাধ্যাকর্ষণ বল মহাবিশ্বের কোনো কিছু, এমনকি আলো পর্যন্ত, তার আকর্ষণ থেকে মুক্তি পেতে পারে না। ব্ল্যাক হোলের ভেতরে সময়, স্থান, এবং পদার্থের আচরণ সম্পূর্ণরূপে বদলে যায়। এটি এমন একটি এলাকা যেখানে মহাকাশ ও সময় (স্পেস-টাইম) বিকৃত হয়ে যায়।
ব্ল্যাক হোলের উৎপত্তি
ব্ল্যাক হোল প্রধানত বৃহৎ ভরযুক্ত নক্ষত্রের মৃত্যুর পর গঠিত হয়। এর পেছনে যে প্রধান ধাপগুলো রয়েছে, সেগুলো হলো:
নক্ষত্রের জন্ম ও জীবনচক্র:
একটি নক্ষত্রের জীবন শুরু হয় মহাজাগতিক ধূলিকণা ও গ্যাসের মেঘ (নেবুলা) থেকে। এটি জীবনের একটি বড় অংশ জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহার করে।
নক্ষত্রের মৃত্যু:
যখন নক্ষত্রের কেন্দ্রে থাকা হাইড্রোজেন ফুরিয়ে যায়, তখন এটি ধীরে ধীরে হিলিয়াম এবং অন্যান্য ভারী উপাদানে পরিণত হয়। বৃহৎ নক্ষত্রের ক্ষেত্রে এটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধ্বংস হয়।
কোরের সংকোচন:
বিস্ফোরণের পর নক্ষত্রের অবশিষ্টাংশ সংকুচিত হয়ে এক অতি ঘন বিন্দুতে পরিণত হয়, যা ব্ল্যাক হোল সৃষ্টি করে।
ব্ল্যাক হোলের গঠন
ব্ল্যাক হোলের গঠন তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত:
ইভেন্ট হরাইজন (Event Horizon):
এটি ব্ল্যাক হোলের বাইরের সীমানা। এখানে পৌঁছে গেলে কোনো বস্তুই আর বের হতে পারে না।
ফোটন স্ফিয়ার (Photon Sphere):
এটি এমন একটি এলাকা যেখানে আলো ব্ল্যাক হোলের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে।
সিঙ্গুলারিটি (Singularity):
ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রীয় বিন্দু, যেখানে ভর অসীম এবং স্থান-কাল সম্পূর্ণ বিকৃত।
ব্ল্যাক হোলের প্রকারভেদ
ব্ল্যাক হোলকে সাধারণত তাদের ভরের উপর ভিত্তি করে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়:
স্টেলার ব্ল্যাক হোল (Stellar Black Hole):
এটি নক্ষত্রের ধ্বংসের পর গঠিত হয় এবং এটির ভর সাধারণত সূর্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয়।
সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল (Supermassive Black Hole):
এই ধরনের ব্ল্যাক হোল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থান করে এবং এর ভর সূর্যের ভরের লক্ষ বা কোটি গুণ।
মিডিয়াম-ম্যাস ব্ল্যাক হোল (Intermediate-Mass Black Hole):
এটি মধ্যবর্তী ভরের ব্ল্যাক হোল, যার ভর কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার সূর্যের সমান।
মাইক্রো ব্ল্যাক হোল (Micro Black Hole):
তাত্ত্বিকভাবে ক্ষুদ্র ব্ল্যাক হোল, যা কণার মতো ছোট হতে পারে।
ব্ল্যাক হোলের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব
ব্ল্যাক হোল মহাকাশবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়। এর সাহায্যে মহাবিশ্বের গঠন, সময়-স্থান এবং মহাজাগতিক আইন সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া যায়।
টাইম ডাইলেশন:
ব্ল্যাক হোলের কাছে সময় ধীরে চলে। যদি কোনো বস্তু ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি যায়, তবে তার সময় অনেক ধীরগতিতে প্রবাহিত হবে।
স্পেস-টাইমের বিকৃতি:
ব্ল্যাক হোল মহাকাশ এবং সময়কে এমনভাবে বাঁকিয়ে দেয় যা সাধারণ জ্যামিতি থেকে ভিন্ন।
মহাবিশ্বের জন্ম ও মৃত্যু:
অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, ব্ল্যাক হোল মহাবিশ্বের জন্ম ও ভবিষ্যতের ধারণা দিতে পারে।
ইতিহাসের প্রথম ব্ল্যাক হোলের ছবি
২০১৯ সালে Event Horizon Telescope (EHT) প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক হোলের একটি ছবি তোলা হয়। এই ছবিটি M87 গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক হোলের, যা প্রায় ৫৩.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
ব্ল্যাক হোলের আশেপাশে জীবন কি সম্ভব?
ব্ল্যাক হোলের আশেপাশে থাকা বিপজ্জনক। তবে এটি থেকে দূরে থাকা গ্রহে জীবন সম্ভব হতে পারে। যেমনটি কল্পবিজ্ঞান সিনেমা ইন্টারস্টেলার (Interstellar)-এ দেখানো হয়েছে।
উপসংহার
ব্ল্যাক হোল মহাবিশ্বের এক অনন্য রহস্য। এটি আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল নিয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। একদিন হয়তো আমরা ব্ল্যাক হোলের সমস্ত রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হব।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৩
রাকু হাসান বলেছেন:
স্বাগতম ,হেপি ব্লগিং । আপনার লিখনি দিয়ে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হোক সেই কামনা করছি।