![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রাচীন মিশর পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী এবং রহস্যময় সভ্যতা। নীল নদের তীরে গড়ে ওঠা এই সভ্যতা তার স্থাপত্য, বিজ্ঞান, ধর্ম, ও রাজনীতিতে অসাধারণ অবদান রেখেছে। প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হওয়া এই সভ্যতার জীবনধারা, সংস্কৃতি, এবং অর্জনসমূহ আজও গবেষকদের বিমোহিত করে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক প্রভাব
প্রাচীন মিশরের সভ্যতা মূলত নীল নদের তীরে গড়ে উঠেছিল। নীল নদ ছিল মিশরীয়দের জীবনের মূল ভিত্তি। এর বার্ষিক বন্যা উর্বর জমি এনে দিত যা কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মিশরের সীমান্তে ছিল সাহারা মরুভূমি, যা একদিকে বাইরের শত্রুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিয়েছিল এবং অন্যদিকে প্রাকৃতিক সম্পদের এক অনন্য উৎস ছিল।
ইতিহাসের পর্বগুলি
প্রাচীন মিশরের ইতিহাস প্রধানত তিনটি পর্বে বিভক্ত:
প্রাচীন রাজ্য (২৬৮৬-২১৮১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ): এই সময়ে পিরামিড নির্মাণ শুরু হয়। গিজার বিখ্যাত পিরামিড এবং স্ফিংস এই যুগের স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন।
মধ্য রাজ্য (২০৫৫-১৬৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ): এই সময়ে মিশরের বাণিজ্য বৃদ্ধি পায় এবং সাহিত্যিক, ধর্মীয় এবং প্রশাসনিক পরিবর্তন ঘটে।
নতুন রাজ্য (১৫৫০-১০৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ): এটি ছিল মিশরের স্বর্ণযুগ। রামসেস II এবং তুতানখামেনের মতো বিখ্যাত ফারাওরা এই যুগে শাসন করতেন।
পিরামিড ও স্থাপত্য
প্রাচীন মিশরের পিরামিডগুলি সভ্যতার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। এগুলি ফারাওদের সমাধি হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল।
গিজার পিরামিড: খুফু, খাফ্রে, এবং মেনকাউরের পিরামিড তিনটি আলাদা সময়ে তৈরি হয়। এগুলি মিশরের স্থাপত্য দক্ষতার এক চূড়ান্ত উদাহরণ।
স্ফিংস: এটি একটি সিংহের দেহ এবং মানুষের মাথাযুক্ত বিশাল ভাস্কর্য, যা মিশরের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ধর্ম ও দেবতারা
প্রাচীন মিশরে ধর্ম ছিল জীবনের কেন্দ্রীয় বিষয়। মিশরীয়রা বহু দেবদেবীর পূজা করত।
রা: সূর্যের দেবতা এবং সর্বোচ্চ দেবতা।
ওসাইরিস: মৃতদের দেবতা এবং পুনর্জন্মের প্রতীক।
আইসিস: মাতৃত্ব, যাদু, এবং প্রকৃতির দেবী।
হোরাস: আকাশের দেবতা, যিনি ফারাওদের রক্ষক বলে বিবেচিত।
মৃত্যুর পরে জীবন বা "পরকাল" ছিল মিশরীয় ধর্মের মূল ধারণা। মমি করার প্রক্রিয়া এবং সমাধির সঙ্গে ধনসম্পত্তি রাখার প্রথা এই বিশ্বাস থেকেই উদ্ভূত।
লিপি ও সাহিত্য
মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপি তাদের ভাষার মূল মাধ্যম ছিল। এটি প্রতীক ও ছবি দিয়ে গঠিত।
রোশেটা স্টোন: এই লিপি পাঠোদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
মিশরীয় সাহিত্য ছিল ধর্মীয় এবং প্রশাসনিক, তবে এর মধ্যে প্রেম, নৈতিকতা, এবং সাহসিকতার গল্পও স্থান পেয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
মিশরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানব ইতিহাসে অনন্য।
চিকিৎসাবিজ্ঞান: প্রাচীন মিশরীয়রা চিকিৎসা পদ্ধতিতে অনেক অগ্রগামী ছিল। ওষুধ, সার্জারি, এবং মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সম্পর্কে তাদের গভীর জ্ঞান ছিল।
জ্যোতির্বিজ্ঞান: মিশরীয়রা নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল।
স্থাপত্য: পিরামিড এবং মন্দির নির্মাণে তারা জ্যামিতি ও প্রকৌশলের বিস্ময়কর ব্যবহার দেখিয়েছে।
রাজনীতি ও প্রশাসন
মিশরের রাজনীতি মূলত ফারাওদের চারপাশে আবর্তিত হতো। ফারাওরা ছিলেন ঈশ্বরের প্রতিভূ এবং তাদের কথাই আইন ছিল। মিশরে একটি কেন্দ্রীয় প্রশাসন ছিল, যা দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করত।
মিশরের পতন
প্রায় ৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমানরা মিশর দখল করে। ক্লিওপেট্রার মৃত্যু মিশরের স্বাধীনতার সমাপ্তি ঘটায়। তবে প্রাচীন মিশরের সংস্কৃতি ও জ্ঞান ইউরোপ এবং আরব দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
উপসংহার
প্রাচীন মিশর মানব ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। এর ধর্ম, বিজ্ঞান, এবং স্থাপত্য পরবর্তী সভ্যতাগুলোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। যদিও সময়ের সাথে সাথে এই সভ্যতা বিলীন হয়ে গেছে, তবে এর অবদান আমাদের ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
©somewhere in net ltd.