নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এ এস এম শিশির

স্বকৃত

এ এস এম শিশির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিজ্ঞান ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ও ভয়ঙ্কর পরীক্ষাগুলো

২৭ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪



বিজ্ঞান আমাদের সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। কিন্তু কিছু পরীক্ষা নৈতিকতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে, যা ইতিহাসে বিতর্কিত এবং ভয়ঙ্কর বলে পরিচিত। এই পরীক্ষাগুলো মানবতা, নৈতিকতা এবং বিজ্ঞানীদের দায়িত্ব নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। নিচে উল্লেখ করা হয়েছে ইতিহাসের কিছু কুখ্যাত বিজ্ঞান পরীক্ষার বিষয়ে।

১. স্ট্যানফোর্ড প্রিজন এক্সপেরিমেন্ট (১৯৭১)
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ফিলিপ জিম্বার্ডো পরিচালিত এই পরীক্ষাটি ছিল মানুষের আচরণের ওপর সামাজিক ভূমিকার প্রভাব নিয়ে।

পরীক্ষার বিবরণ:
২৪ জন স্বেচ্ছাসেবীকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়—কিছু অংশকে "কারারক্ষী" এবং বাকিদের "বন্দি" হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
পরীক্ষাটি কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি কারাগারে পরিচালিত হয়।
ফলাফল:
"কারারক্ষী" ভূমিকা পালনকারী অংশগ্রহণকারীরা ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করে এবং "বন্দিদের" প্রতি মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন চালায়।
মাত্র ৬ দিনের মাথায়, পরীক্ষাটি বন্ধ করতে বাধ্য হন গবেষকরা।
এই পরীক্ষা দেখায় যে ক্ষমতার হাতিয়ার মানুষকে কতটা নিষ্ঠুর করে তুলতে পারে।

২. মিলগ্রামের আনুগত্য পরীক্ষা (১৯৬১)
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী স্ট্যানলি মিলগ্রাম এই পরীক্ষা পরিচালনা করেন, যেখানে তিনি পরীক্ষা করেছিলেন কতটা আনুগত্য একজন ব্যক্তি কর্তৃপক্ষের প্রতি দেখাতে পারেন।

পরীক্ষার বিবরণ:
অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়েছিল তারা একজন শিক্ষার্থীকে বিদ্যুৎ শক দেবেন, যদি তিনি প্রশ্নের ভুল উত্তর দেন।
যদিও "শিক্ষার্থী" আসলে একজন অভিনেতা ছিলেন এবং শক বাস্তব ছিল না, তবে অংশগ্রহণকারীরা এটি জানতেন না।
ফলাফল:
অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় অংশ ৪৫০ ভোল্টের শক পর্যন্ত দিতে রাজি হয়, শুধুমাত্র কর্তৃপক্ষের নির্দেশে।
এই পরীক্ষা মানুষের মধ্যে "আজ্ঞাপালনের অন্ধত্ব" এবং নৈতিকতার সঙ্গে তার সংঘাতের ধারণা সামনে আনে।

৩. টাস্কিগি সিফিলিস স্টাডি (১৯৩২-১৯৭২)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই গবেষণা ছিল কুখ্যাত এবং অমানবিক। এটি মূলত আফ্রিকান-আমেরিকান পুরুষদের মধ্যে সিফিলিস রোগের প্রভাব নিয়ে পরিচালিত হয়েছিল।

পরীক্ষার বিবরণ:
গবেষণার অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়েছিল যে তারা বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছেন।
কিন্তু তাদের আসল চিকিৎসা দেওয়া হয়নি এবং তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে বরং পরীক্ষামূলক গবেষণা চালানো হয়।
ফলাফল:
৪০ বছর ধরে চলা এই গবেষণায় শত শত মানুষ মারা যায়।
এর ফলস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে "ন্যাশনাল রিসার্চ অ্যাক্ট" পাস হয়, যা মানব গবেষণার নৈতিক নিয়ম তৈরি করে।

৪. ইউনিট ৭৩১-এর নিষ্ঠুরতা (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ)
জাপানের সামরিক গবেষণা ইউনিট ৭৩১ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অমানবিক পরীক্ষার জন্য berখ্যাত।

পরীক্ষার বিবরণ:
এই ইউনিট মানুষের ওপর জীবাণু অস্ত্র এবং রাসায়নিক অস্ত্রের প্রভাব পরীক্ষা করেছিল।
বন্দিদের অঙ্গচ্ছেদ করা, জীবিত অবস্থায় অস্ত্রোপচার করা এবং বিভিন্ন রোগে সংক্রমিত করা হয়েছিল।
ফলাফল:
এই পরীক্ষা লাখো মানুষের মৃত্যু ঘটায়।
এটি যুদ্ধকালীন অপরাধের একটি চরম উদাহরণ।

৫. লিটল অ্যালবার্ট এক্সপেরিমেন্ট (১৯২০)
জন বি. ওয়াটসন এবং রোসালি রেয়নার পরিচালিত এই পরীক্ষা শিশুর ভয়ের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাজ করেছিল।

পরীক্ষার বিবরণ:
১১ মাস বয়সী শিশুর সামনে নিরীহ প্রাণী (যেমন সাদা ইঁদুর) আনা হয়।
শিশুটি যখন প্রাণীটির দিকে হাত বাড়াত, তখন একটি জোরালো শব্দ করে তাকে ভয় দেখানো হতো।
ফলাফল:
শিশুটি ইঁদুর, এমনকি সাদা রঙের অন্যান্য জিনিস দেখেও ভয় পেতে শুরু করে।
এই পরীক্ষা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ছিল এবং আজকের দিনেও এটি নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত।

উপসংহার
এই পরীক্ষাগুলো প্রমাণ করে যে বিজ্ঞানের নামে অনেক সময় নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করা হয়েছে। আজকের দিনে গবেষণার ক্ষেত্রে নৈতিক নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে। বিজ্ঞানের সাফল্য তখনই অর্থপূর্ণ হয়, যখন তা মানবতার কল্যাণে ব্যবহৃত হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.