নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এ এস এম শিশির

স্বকৃত

এ এস এম শিশির › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাস

২৭ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:২৯



প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাসকে সাধারণত তিনটি সময়পর্বে বিভক্ত করা হয়:

১. প্রাচীন যুগ (Bronze Age: খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০-১১০০)
এই সময়ে মিনোয়ান এবং মাইকেনীয় সভ্যতার বিকাশ ঘটে। মিনোয়ান সভ্যতা ক্রিট দ্বীপে গড়ে ওঠে, যা ইউরোপের প্রথম সভ্যতা হিসেবে পরিচিত। খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০-১১০০ সময়ে মাইকেনীয় সভ্যতা পেলোপোনেসাস অঞ্চলে গড়ে ওঠে।

মাইকেনীয় সভ্যতা ছিল সামরিক শক্তিশালী, এবং তারা ত্রয়ীর যুদ্ধে (Trojan War) অংশগ্রহণ করেছিল বলে হোমারের ইলিয়াড ও অডিসিতে উল্লেখ রয়েছে।

২. ডার্ক এজ এবং আর্লি ক্লাসিকাল যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ১১০০-৭০০)
মাইকেনীয় সভ্যতার পতনের পর গ্রিসে অন্ধকার যুগ নামে পরিচিত একটি সময় শুরু হয়। এই সময়ে সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি নিম্নমুখী হয়। তবে, ধীরে ধীরে গ্রিকরা শহর-রাষ্ট্র (পলিস) গড়ে তুলতে শুরু করে।

৩. ক্লাসিকাল যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ৫০০-৩২৩)
ক্লাসিকাল যুগ প্রাচীন গ্রিসের সোনালি যুগ হিসেবে পরিচিত। এ সময়ে অ্যাথেন্স এবং স্পার্টা শহর-রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে। অ্যাথেন্সে গণতন্ত্র বিকাশ লাভ করে এবং দর্শন, শিল্পকলা ও স্থাপত্যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়।

শহর-রাষ্ট্র (Polis) এবং রাজনীতি
প্রাচীন গ্রিসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ছোট ছোট শহর-রাষ্ট্র বা পলিস। প্রতিটি পলিস ছিল স্বাধীন এবং নিজেদের নিয়ম ও শাসনব্যবস্থা অনুসারে পরিচালিত। উল্লেখযোগ্য পলিসগুলোর মধ্যে ছিল:

অ্যাথেন্স:
অ্যাথেন্স ছিল প্রাচীন গ্রিসের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র। এখানে গণতন্ত্রের জন্ম হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে পেরিক্লিসের সময়ে অ্যাথেন্স তার সর্বোচ্চ উন্নতিতে পৌঁছে।

স্পার্টা:
স্পার্টা ছিল সামরিক শক্তির জন্য বিখ্যাত। এখানকার সমাজব্যবস্থা কঠোর এবং সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল বাধ্যতামূলক।

দেলফি ও অলিম্পিয়া:
দেলফি ছিল ধর্মীয় কেন্দ্র, যেখানে অ্যাপোলো মন্দির অবস্থিত। অলিম্পিয়ায় প্রথম অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৬ সালে।

প্রাচীন গ্রিসের দর্শন ও জ্ঞানচর্চা
প্রাচীন গ্রিসের দর্শন ও জ্ঞান আধুনিক বিজ্ঞান ও শিক্ষার ভিত্তি গড়ে তুলেছে। গ্রিসের তিনজন প্রধান দার্শনিক ছিলেন:

সক্রেটিস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৯-৩৯৯):
সক্রেটিসের শিক্ষা মূলত নৈতিকতা এবং জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে ছিল। তিনি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষাদান করতেন, যা "সক্রেটিক পদ্ধতি" নামে পরিচিত। তার বিখ্যাত উক্তি ছিল: “নিজেকে জানো”।

প্লেটো (খ্রিস্টপূর্ব ৪২৭-৩৪৭):
প্লেটো ছিলেন সক্রেটিসের শিষ্য। তিনি “রিপাবলিক” নামক বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন, যেখানে তিনি একটি আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা দেন। তিনি একাডেমি নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, যা প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

অ্যারিস্টটল (খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২):
অ্যারিস্টটল প্লেটোর ছাত্র এবং আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের শিক্ষক ছিলেন। তিনি জীববিজ্ঞান, রসায়ন, রাজনীতি, এবং পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

প্রাচীন গ্রিসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছিল একটি বড় বিষয়। উল্লেখযোগ্য কিছু আবিষ্কার এবং চিন্তাভাবনা হলো:

পিথাগোরাস: তিনি গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব (পিথাগোরাসের উপপাদ্য) উপস্থাপন করেন।
আর্কিমিডিস: তিনি পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে অসাধারণ অবদান রাখেন। তার আবিষ্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্কিমিডিসের স্ক্রু এবং উত্তোলন তত্ত্ব।
হিপোক্রেটিস: তাকে "চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক" বলা হয়। তিনি রোগের প্রাকৃতিক কারণ অনুসন্ধান করেন এবং চিকিৎসাবিদ্যার নিয়ম প্রণয়ন করেন।
প্রাচীন গ্রিসের শিল্প ও সংস্কৃতি
প্রাচীন গ্রিসের শিল্প, স্থাপত্য, এবং নাটক পৃথিবীর সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

স্থাপত্য:
গ্রিক স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য হলো স্তম্ভ ও সমতল ছাদ। পার্থেনন মন্দির গ্রিক স্থাপত্যের সেরা উদাহরণ।

নাটক:
গ্রিসে নাট্যকলার শুরু হয়েছিল ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে। এশকাইলাস, সফোক্লেস, এবং ইউরিপিডিস ছিলেন বিখ্যাত নাট্যকার।

চিত্রকলা ও ভাস্কর্য:
গ্রিকরা মানবদেহের সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করত। তাদের চিত্রকলায় দেবদেবী ও পৌরাণিক কাহিনিগুলোকে ফুটিয়ে তোলা হতো।

প্রাচীন গ্রিসের ধর্ম ও পৌরাণিক কাহিনি
প্রাচীন গ্রিসে ধর্ম ছিল বহু দেবদেবীর পূজার উপর ভিত্তি করে। গ্রিক দেবতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন:

জিউস: দেবতাদের রাজা।
হেরা: বিবাহ ও পরিবার রক্ষার দেবী।
এথেনা: জ্ঞান ও যুদ্ধকৌশলের দেবী।
অ্যাপোলো: সূর্য, সঙ্গীত, ও চিকিৎসার দেবতা।
গ্রিক পৌরাণিক কাহিনি ছিল শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। হোমারের ইলিয়াড ও অডিসি গ্রিক পৌরাণিক কাহিনির অন্যতম প্রধান উদাহরণ।

প্রাচীন গ্রিসের যুদ্ধ ও সামরিক শক্তি
প্রাচীন গ্রিসে বেশ কয়েকটি বিখ্যাত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

পার্সিয়ান যুদ্ধ:
গ্রিকরা পারস্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিল।
পেলোপোনেসিয়ান যুদ্ধ: অ্যাথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ, যা স্পার্টার বিজয়ে শেষ হয়।
আলেকজান্ডারের বিজয়যাত্রা: আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট প্রাচীন গ্রিসের সীমানা এশিয়া পর্যন্ত প্রসারিত করেন।

উপসংহার
প্রাচীন গ্রিস শুধু একটি সভ্যতা নয়, এটি মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গণতন্ত্র, দর্শন, বিজ্ঞান, এবং সংস্কৃতিতে এর অবদান আজও আধুনিক বিশ্বে প্রাসঙ্গিক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.