![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অ্যানথ্রোপোসিন যুগ: পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক এবং বাস্তুতন্ত্রে মানুষের প্রভাব
অ্যানথ্রোপোসিন শব্দটি প্রস্তাব করা হয়েছে এমন একটি নতুন ভূতাত্ত্বিক যুগ বর্ণনা করতে, যা মানুষের ক্রিয়াকলাপের কারণে পৃথিবীর ভূতত্ত্ব এবং বাস্তুতন্ত্রে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। রসায়নবিদ পল ক্রুটজেন এবং জীববিজ্ঞানী ইউজিন স্টোয়ারমার ২০০০-এর দশকের শুরুতে এই শব্দটি ব্যবহার করেন। এটি এমন একটি সময়কে চিহ্নিত করে, যখন মানুষ পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াগুলির উপর প্রধান প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠে।
অ্যানথ্রোপোসিন যুগের ব্যাখ্যা
পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক সময় স্কেল ঐতিহ্যগতভাবে হোলোসিনের মতো যুগ অন্তর্ভুক্ত করে, যা প্রায় ১১,৭০০ বছর আগে শেষ বরফ যুগের শেষে শুরু হয়েছিল। হোলোসিন স্থিতিশীল জলবায়ু পরিস্থিতির দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল, যা মানব সভ্যতাকে বিকাশে সহায়তা করেছিল। তবে, অনেক বিজ্ঞানী যুক্তি দেন যে, মানুষের কারণে অ্যানথ্রোপোসিন হোলোসিনকে ছাড়িয়ে গেছে।
অ্যানথ্রোপোসিনের শুরু নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচক প্রস্তাব করা হয়েছে:
শিল্প বিপ্লব (১৮ শতকের শেষ): জীবাশ্ম জ্বালানির বড় আকারে ব্যবহার বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ শুরু করে।
পরমাণু যুগ (২০ শতকের মাঝামাঝি): পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার ফলে পৃথিবীর স্তরগুলিতে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের উপস্থিতি স্পষ্ট হয়েছে।
গ্রেট অ্যাক্সিলারেশন (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর): জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সম্পদ ব্যবহার এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে দ্রুত বৃদ্ধি পৃথিবীর পরিবেশে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
মানুষের ভূতাত্ত্বিক এবং বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তন:
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, বন উজাড় এবং শিল্প কৃষিকাজের কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে। এটি বৈশ্বিক উষ্ণতা, বরফ গলে যাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং চরম আবহাওয়ার কারণ হয়েছে।
জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি:
অ্যানথ্রোপোসিনকে প্রায়শই ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি হিসাবে উল্লেখ করা হয়। প্রাকৃতিক পটভূমির তুলনায় প্রজাতি বিলুপ্তির হার ১০০ থেকে ১০০০ গুণ বেশি। বাসস্থান ধ্বংস, দূষণ এবং সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার এর মূল কারণ।
ভূমির ব্যবহার পরিবর্তন:
নগরায়ন, কৃষি এবং বন উজাড় পৃথিবীর পৃষ্ঠকে রূপান্তরিত করেছে। এই পরিবর্তনগুলি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেমন জলচক্র এবং মাটির গঠন ব্যাহত করেছে।
দূষণ:
মানুষ পরিবেশে সিনথেটিক রাসায়নিক, প্লাস্টিক এবং ভারী ধাতুর মতো দূষক উপাদান যুক্ত করেছে। মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন গভীর সমুদ্র এবং মানুষের রক্ত প্রবাহেও পাওয়া যাচ্ছে।
রসায়নিক চক্র পরিবর্তন:
শিল্প এবং কৃষি কার্যক্রম কার্বন, নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস চক্র ব্যাহত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সারের অতিরিক্ত ব্যবহার পুষ্টির দূষণ সৃষ্টি করেছে, যার ফলে সমুদ্রের ডেড জোন তৈরি হয়েছে।
অ্যানথ্রোপোসিন নিয়ে বিতর্ক
অ্যানথ্রোপোসিন শব্দটি নিয়ে অনেক বিজ্ঞানী একমত হলেও এটি একটি ভূতাত্ত্বিক যুগ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি।
ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্ব
অ্যানথ্রোপোসিন যুগ মানবজাতির জন্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ দুটোই বয়ে এনেছে। একদিকে, মানুষের প্রভাব পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র এবং সমাজের টিকে থাকার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে, আমাদের ভূতাত্ত্বিক প্রভাব স্বীকার করে ভবিষ্যতের জন্য দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
উপসংহার
অ্যানথ্রোপোসিন যুগ পৃথিবীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চিহ্নিত করেছে। এটি আমাদের ক্রিয়াকলাপের প্রভাব এবং পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করে।
©somewhere in net ltd.