![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ওয়ার্মহোল: মহাবিশ্বের এক রহস্যময় সেতু
ওয়ার্মহোল শব্দটি শুনলে প্রথমেই মনে হতে পারে এটি কোনো বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর অংশ। তবে বাস্তবে, এটি একটি তত্ত্ব, যা মহাবিশ্বের অজানা এক অধ্যায় সম্পর্কে আমাদের কৌতূহল বাড়ায়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ওয়ার্মহোল হচ্ছে মহাবিশ্বের এমন এক সংযোগস্থল যা স্থান এবং সময়ের ভিন্ন ভিন্ন বিন্দুকে সংযুক্ত করতে পারে। এটি মহাবিশ্বে দ্রুত ভ্রমণ এবং টাইম ট্র্যাভেলের (সময়ে ভ্রমণ) সম্ভাবনাকে বিজ্ঞানীদের মাঝে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। আসুন, এই ওয়ার্মহোল সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানি।
ওয়ার্মহোল কী?
ওয়ার্মহোল, যাকে আনুষ্ঠানিকভাবে "আইনস্টাইন-রোজেন ব্রিজ" বলা হয়, হচ্ছে স্থান-কালের মধ্যে একটি কাল্পনিক শর্টকাট। এটি এমন একটি তাত্ত্বিক পথ যা মহাবিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দ্রুত ভ্রমণের সম্ভাবনা তৈরি করে। আপনি যদি মহাকাশের এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে প্রচলিত উপায়ে ভ্রমণ করেন, তাহলে এতে কয়েকশ বা কয়েক হাজার বছর লেগে যেতে পারে। কিন্তু ওয়ার্মহোল যদি সত্যি বিদ্যমান থাকে, তাহলে এই দূরত্ব পাড়ি দেওয়া যাবে মুহূর্তেই।
ওয়ার্মহোল কীভাবে কাজ করে?
ওয়ার্মহোল ধারণাটি সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের (General Relativity) মাধ্যমে এসেছে। আইনস্টাইন ও রোজেন ১৯৩৫ সালে তাদের গবেষণায় দেখিয়েছিলেন যে মহাবিশ্বে স্থান-কাল (spacetime) বাঁকা হতে পারে এবং এই বাঁকাচোরা জায়গায় দুটি পয়েন্ট সংযুক্ত হতে পারে।
১. স্থান-কাল (Spacetime) এবং বাঁক:
স্থান এবং সময় একসাথে একটি "চাদরের" মতো গঠন করে, যাকে স্থান-কাল বলা হয়। যদি কোনো সুপারম্যাসিভ বস্তু, যেমন একটি ব্ল্যাকহোল, এই চাদরের উপর প্রচণ্ড ভর দিয়ে চাপ দেয়, তবে সেখানে এক ধরনের "চাপানো পথ" তৈরি হয়।
২. ব্ল্যাকহোল এবং হোয়াইটহোল:
ব্ল্যাকহোল হচ্ছে এমন একটি জায়গা যেখানে মহাকর্ষ শক্তি এতটাই প্রবল যে আলোক রশ্মি পর্যন্ত এর আকর্ষণ থেকে পালাতে পারে না। অন্যদিকে, তাত্ত্বিকভাবে হোয়াইটহোল হচ্ছে ব্ল্যাকহোলের বিপরীত, যা সবকিছুকে মহাবিশ্বে বের করে দেয়।
তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি ওয়ার্মহোল হচ্ছে ব্ল্যাকহোল এবং হোয়াইটহোলের মধ্যে সংযোগ, যা দুটি পৃথক স্থান-কালের অঞ্চলকে যুক্ত করতে পারে।
ওয়ার্মহোলের প্রকারভেদ
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের ওয়ার্মহোলের কথা বলেছেন। সেগুলো হলো:
১. ট্র্যাভার্সেবল ওয়ার্মহোল:
এটি এমন একটি ওয়ার্মহোল যা দিয়ে ভ্রমণ করা সম্ভব হতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ ধরনের ওয়ার্মহোল স্থিতিশীল হতে পারে এবং একটি সুরক্ষিত ভ্রমণের পথ হিসেবে কাজ করতে পারে।
২. নন-ট্র্যাভার্সেবল ওয়ার্মহোল:
এই ধরনের ওয়ার্মহোল ভ্রমণের জন্য অনুপযোগী। এটি খুব দ্রুত ভেঙে যায় এবং কোনো বস্তু বা আলোক কণার পক্ষে এটি পার হওয়া অসম্ভব।
৩. কৃত্রিম ওয়ার্মহোল:
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যতে কৃত্রিম ওয়ার্মহোল তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। তবে এটি এখনো তাত্ত্বিক পর্যায়ে রয়েছে।
ওয়ার্মহোল এবং টাইম ট্র্যাভেল
ওয়ার্মহোলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে সময় ভ্রমণের সম্ভাবনা। যদি ওয়ার্মহোলের এক প্রান্ত বর্তমান সময়ে থাকে এবং অন্য প্রান্ত অতীত বা ভবিষ্যতে অবস্থান করে, তাহলে এটি সময় ভ্রমণের একটি মাধ্যম হতে পারে। তবে এটি বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো একটি জটিল প্রশ্ন।
ওয়ার্মহোলের বাস্তব অস্তিত্ব
ওয়ার্মহোল এখনো শুধু একটি তাত্ত্বিক ধারণা। মহাবিশ্বে ওয়ার্মহোলের প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এটি আবিষ্কারের জন্য শক্তিশালী টেলিস্কোপ, উন্নত গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার প্রয়োজন।
ওয়ার্মহোলের চ্যালেঞ্জ
১. স্থিতিশীলতা:
ওয়ার্মহোলের পথ ধরে ভ্রমণ করতে হলে এটি স্থিতিশীল হতে হবে। কিন্তু তত্ত্ব অনুযায়ী, ওয়ার্মহোল খুব দ্রুত ভেঙে পড়ে।
২. এক্সোটিক ম্যাটার:
ওয়ার্মহোলকে স্থিতিশীল রাখতে এক্সোটিক ম্যাটার প্রয়োজন, যা প্রচণ্ড পরিমাণে ঋণাত্মক শক্তি (Negative Energy) ধারণ করে। কিন্তু এখনো এক্সোটিক ম্যাটার পাওয়া সম্ভব হয়নি।
৩. মহাকর্ষ শক্তি এবং রেডিয়েশন:
ওয়ার্মহোলের ভেতরের পরিবেশ খুবই চরম হতে পারে। এটি ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
বিজ্ঞান কল্পকাহিনী এবং ওয়ার্মহোল
ওয়ার্মহোলের ধারণাটি বহু জনপ্রিয় চলচ্চিত্র এবং বইয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:
ইন্টারস্টেলার (Interstellar):
এই চলচ্চিত্রে ওয়ার্মহোলের মাধ্যমে মহাকাশ ভ্রমণ দেখানো হয়েছে।
স্টার ট্রেক (Star Trek):
স্টার ট্রেক সিরিজেও ওয়ার্মহোল ভ্রমণের বিভিন্ন ধারণা তুলে ধরা হয়েছে।
শেষ কথা
ওয়ার্মহোল সম্পর্কে ধারণা আমাদের মহাবিশ্বের অজানা দিক সম্পর্কে চিন্তা করতে বাধ্য করে। এটি আমাদের শিখিয়েছে যে মহাবিশ্ব কতটা বিস্ময়কর এবং রহস্যে পূর্ণ। যদিও এটি এখনো তাত্ত্বিক পর্যায়ে রয়েছে, ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা হয়তো একদিন এটি আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন এবং এর মাধ্যমে আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
©somewhere in net ltd.