![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডার্ক ম্যাটার: মহাবিশ্বের অদৃশ্য উপাদান
মহাবিশ্বের বেশিরভাগ অংশ আমাদের চোখের সামনে অদৃশ্য। আমরা যে তারকা, গ্যালাক্সি, এবং অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু দেখতে পাই, সেগুলো মহাবিশ্বের মোট ভরের মাত্র ৫%। বাকি ৯৫% আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। এর মধ্যে ২৫% হলো ডার্ক ম্যাটার এবং ৭০% হলো ডার্ক এনার্জি। ডার্ক ম্যাটার এমন এক অদৃশ্য পদার্থ, যা মহাবিশ্বের গঠন, গতিবিদ্যা এবং বিবর্তনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডার্ক ম্যাটার কী?
ডার্ক ম্যাটার হলো এমন একধরনের পদার্থ, যা আলোর সঙ্গে কোনো মিথস্ক্রিয়া করে না এবং সরাসরি আমাদের চোখে দেখা যায় না। তবে এর মহাকর্ষীয় প্রভাবের মাধ্যমে এর অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়। এটি মহাবিশ্বের বড় বড় গ্যালাক্সি এবং অন্যান্য মহাজাগতিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডার্ক ম্যাটারের বৈশিষ্ট্য:
অদৃশ্য: এটি আলোর কোনো তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঙ্গেই মিথস্ক্রিয়া করে না।
মহাকর্ষীয় প্রভাব: এটি মহাবিশ্বের গ্যালাক্সি এবং ক্লাস্টারগুলোর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে।
বিরল মিথস্ক্রিয়া: ডার্ক ম্যাটার সাধারণ পদার্থের সঙ্গে খুবই দুর্বলভাবে মিথস্ক্রিয়া করে।
ডার্ক ম্যাটার কীভাবে আবিষ্কার হলো?
১. গ্যালাক্সির গতিবিদ্যা:
১৯৩০-এর দশকে সুইস জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রিটজ জ্যুইকি (Fritz Zwicky) প্রথম ডার্ক ম্যাটারের প্রমাণ আবিষ্কার করেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে গ্যালাক্সি ক্লাস্টারগুলো এত দ্রুত গতিতে ঘুরছে যে দৃশ্যমান পদার্থের মাধ্যাকর্ষণ তাদের একত্রে ধরে রাখতে পারার কথা নয়। তাই সেখানে কিছু "অদৃশ্য ভর" থাকা উচিত।
২. গ্যালাক্সি রোটেশন কার্ভ (Galaxy Rotation Curve):
১৯৭০-এর দশকে ভেরা রুবিন (Vera Rubin) এবং কেন্ট ফোর্ড (Kent Ford) আবিষ্কার করেন যে গ্যালাক্সিগুলোর বাহ্যিক অংশে তারাগুলোর গতি অভ্যন্তরের অংশের মতোই। কিন্তু দৃশ্যমান পদার্থের পরিমাণ এই গতিকে ব্যাখ্যা করতে পারছিল না।
৩. মহাবিশ্বের বৃহৎ গঠন:
মহাবিশ্বের গ্যালাক্সি এবং সুপারক্লাস্টারগুলোর গঠনে ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি অপরিহার্য।
ডার্ক ম্যাটারের ধরন
১. বায়োনিক ডার্ক ম্যাটার:
এটি সাধারণ পদার্থ, যেমন প্রোটন, নিউট্রন, এবং ইলেকট্রন দিয়ে তৈরি।
তবে মহাবিশ্বে বায়োনিক ডার্ক ম্যাটারের পরিমাণ খুব কম।
২. নন-বায়োনিক ডার্ক ম্যাটার:
এটি সাধারণ পদার্থ নয়।
এর দুটি সম্ভাব্য প্রকার:
কোল্ড ডার্ক ম্যাটার (Cold Dark Matter): ধীর গতিসম্পন্ন, যার গতি আলোর চেয়ে অনেক ধীর।
হট ডার্ক ম্যাটার (Hot Dark Matter): উচ্চ গতিসম্পন্ন, যা আলোর কাছাকাছি গতি নিয়ে চলে।
ডার্ক ম্যাটার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
১. গ্যালাক্সির গঠন:
ডার্ক ম্যাটার গ্যালাক্সি এবং ক্লাস্টারের গঠনে মূল ভূমিকা পালন করে। দৃশ্যমান পদার্থগুলো ডার্ক ম্যাটারের গ্রাভিটেশনাল ফিল্ডে আকৃষ্ট হয়ে একত্রিত হয়।
২. মহাবিশ্বের গতিবিদ্যা:
ডার্ক ম্যাটারের মাধ্যাকর্ষণ মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এবং গ্যালাক্সি ক্লাস্টারগুলোর গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. মহাবিশ্বের বৃহৎ স্কেল গঠন:
মহাবিশ্বের জটিল এবং বিস্তৃত গঠন, যেমন সুপারক্লাস্টার এবং ফিলামেন্ট, ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি ছাড়া ব্যাখ্যা করা অসম্ভব।
ডার্ক ম্যাটার কী দিয়ে তৈরি?
উইম্পস (WIMPs):
উইক ইন্টারঅ্যাকটিং ম্যাসিভ পার্টিকলস (Weakly Interacting Massive Particles) হলো ডার্ক ম্যাটারের একটি সম্ভাব্য প্রার্থী।
এগুলো সাধারণ পদার্থের সাথে খুবই দুর্বলভাবে মিথস্ক্রিয়া করে।
অ্যাক্সিয়ন (Axions):
এটি একটি হাইপোথেটিকাল পার্টিকল, যা ডার্ক ম্যাটারের একটি সম্ভাব্য উপাদান।
অ্যাক্সিয়ন খুবই হালকা এবং বিদ্যুতচৌম্বকীয় শক্তির সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে।
ম্যাসিভ কমপ্যাক্ট হালো অবজেক্টস (MACHOs):
ব্ল্যাক হোল, নিউট্রন তারকা এবং ব্রাউন ডোয়ার্ফগুলো ডার্ক ম্যাটারের কিছু অংশ হতে পারে।
ডার্ক ম্যাটার শনাক্ত করার চেষ্টা
১. সরাসরি শনাক্তকরণ:
বিশেষ ডিটেক্টর দিয়ে ডার্ক ম্যাটারের কণাগুলোর মাধ্যাকর্ষণ বা দুর্বল মিথস্ক্রিয়া শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
২. পরোক্ষ শনাক্তকরণ:
ডার্ক ম্যাটার কণাগুলোর ধ্বংস বা মিথস্ক্রিয়ার ফলে নিঃসৃত রশ্মি (যেমন গামা রে) পর্যবেক্ষণ করা হয়।
৩. কৃত্রিম কণার সংঘর্ষ:
সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (LHC)-এর মতো যন্ত্র দিয়ে ডার্ক ম্যাটারের কণা উৎপন্ন করার চেষ্টা করা হয়।
ডার্ক ম্যাটার নিয়ে চ্যালেঞ্জ
পরিচয়: ডার্ক ম্যাটারের প্রকৃত উপাদান এখনো অজানা।
সরাসরি প্রমাণ: এখনো পর্যন্ত সরাসরি ডার্ক ম্যাটারের কোনো কণা শনাক্ত করা যায়নি।
ডার্ক এনার্জির প্রভাব: ডার্ক এনার্জির উপস্থিতি ডার্ক ম্যাটারের গবেষণায় জটিলতা সৃষ্টি করে।
ডার্ক ম্যাটার এবং ভবিষ্যতের গবেষণা
ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের অন্যতম বড় রহস্য। বিজ্ঞানীরা এর প্রকৃতি এবং প্রভাব বুঝতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে নতুন প্রযুক্তি এবং টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই রহস্য উন্মোচন সম্ভব হতে পারে।
শেষ কথা
ডার্ক ম্যাটার আমাদের মহাবিশ্বের এক রহস্যময় অংশ, যা দৃশ্যমান পদার্থের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি না থাকলে মহাবিশ্বের গ্যালাক্সি, ক্লাস্টার, এবং বৃহৎ গঠন গড়ে উঠত না। ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে আরও জানার জন্য আমাদেরকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং কল্পনাশক্তির মিশ্রণ দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
©somewhere in net ltd.