নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আফগানি একটি প্রবাদ আছে, ‘কু-পুত্র পিতার মুখে আচিলের ন্যায়, যা রাখলে সৌন্দর্য নষ্ট হয় আবার কাটলে রক্তক্ষরণ হয়।’ অনুরূপ ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের মুখমণ্ডলে ছাত্রলীগ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই কুৎসিত আঁচিলের ভূমিকায়। এটা শুধু আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেই নয়, যারাই যখন ক্ষমতায় আসে তাদের ছাত্রসংগঠনগুলোর ভূমিকা প্রায় একই রকম দাঁড়ায়। তবে গত রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি আদায় বন্ধ এবং সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের উপর অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের মুখে নতুন কলঙ্ক তিলককে আরো স্পষ্ট করে তুলেছে। এর আগেও তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখলের নামে অন্য একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের ছাত্রদের উপর হামলা করে সেই ক্যাম্পাসকেও রণক্ষেত্রে পরিণত করে।
তবে নিকট অতীতে ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের কপালে সবচেয়ে বড় আঁচিলটি যুক্ত করেছে ২০১২ সালের ৯ই ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে বিশ্বজিৎ সাহা নামক এক যুবককে সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের চোখের সামনে গুলি করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করার মাধ্যমে। ঐ ঘটনায় সর্বশেষ আদালতের রায়ে ৮ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির দণ্ড প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এত বড় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের পরও ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতা-কর্মীগণ সামান্য ভ্র“ক্ষেপ করছে না, বরং দিন দিন আরো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। অপরদিকে রক্তক্ষরণের ভয়ে আওয়ামী লীগের উপর সারির নেতারা এ ব্যাপারে কার্যকর কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন না। যখনই কোন বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যায় তখন ঘটনার সাথে জড়িতরা ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত নয় বলে ঘোষণা দিয়ে তারা দায় সারার চেষ্টা করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত ঐ ঘটনার পর বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাসান মাহমুদ আরও একধাপ বেড়ে বলেছেন যে, ‘ছাত্রলীগ নিজেদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলে। এটা আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ-সংগঠন নয়, ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন। তাদের কর্মকাণ্ড তারাই দেখভাল করে।’ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও পুলিশের গুলিবর্ষণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে গত মঙ্গলবার সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আত্মরক্ষার অধিকার সবারই আছে। ছাত্রলীগের মিছিলে হামলা শুরু হলে মিছিল থেকে সেই হামলার প্রতিরোধ করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কয়েকজনের কাছে অস্ত্র দেখা গেছে, কিন্তু তারা সবাই তো আর ছাত্রলীগের নয়। যারা জড়িত ছিল তাদের কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
শুধু আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগই নয়, যারাই যখন ক্ষমতায় থাকে তখনই তাদের দলের ছাত্র সংগঠনগুলো প্রায়ই বিপক্ষদলের ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের উপর চড়াও হয়। দুঃখের বিষয় এই যে, যে ছাত্র-ছাত্রীরা পিতা-মাতার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ও দেশের সুনাগরিক হওয়ার নিমিত্তে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে লেখা-পড়া করতে আসে, কিন্তু ঘটনাক্রমে তারা বাংলাদেশের ঘুনে ধরা রাজনীতির সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে বাবা-মায়ের আশা আকাক্সক্ষার কবর দিয়ে অন্ধকার জগতে হারিয়ে যায়। তাদের হাতে খাতা-কলমের পরিবর্তে উঠে আসে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ ভয়ঙ্কর সব মারণাস্ত্র। তাদের চরিত্র আমূল পাল্টে যায়, চোখ মুখের অভিব্যক্তি হয়ে ওঠে হিংস্র। ক্ষমতার পালা বদলের পর তারা পূর্ববর্তীদেরকে হটাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর ক্যাম্পাসকে রূপান্তর করে রণক্ষেত্রে। আধিপত্য বিস্তারের এই লড়াইয়ে একদিকে তারা নিজেরাতো মরেই, সেই সাথে আন্দোলনে বলী দেয় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও। এভাবে দরিদ্র পিতা-মাতার কষ্টের রোজগারের বিনিময়ে ব্যয় মেটানো ছেলেটি লাশ হয়ে ঘরে ফেরে।
আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা যে এ ব্যাপারে সবই জানেন। সবকিছু জেনেও তারা এর প্রশ্রয় দেন, এদের দমনে কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেন না। কারণ এদেরকে ব্যবহার করেই রাজনীতিবিদগণ নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করেন, এদের প্রাণের বিনিময়েই ক্ষমতার সিঁড়িকে নিষ্কন্টক করে উপর তলায় উঠে যান। সুতরাং যতদিন রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন না আসবে ততদিন দুর্ভাগা এ দেশের ছাত্রদেরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েই চলবে। অথচ এক সময় এই ছাত্ররাই মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছিল, আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার প্রশ্নে শোষকের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে এদের অবদান ছিল সর্বাগ্রে। তাদের অনেকের নামই আজও আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। কিন্তু সে প্রজন্ম আর আজকের এ প্রজন্মের ব্যবধান আকাশ-পাতাল। বর্তমানের এরা রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি করে নেতাদের হুকুমে বিপক্ষ দলের রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং ভণ্ডুল করতে এরা অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারবাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার মত বৈষয়িক কাজে এরা অতিশয় পারঙ্গম। অনেকে আছে দীর্ঘদিন যাবত একই ক্লাসে অবস্থান করে দাপটের সাথে ক্যাম্পাসে রাজত্ব করে যায়, সেই সাথে খুন-খারাপী, মাদকদ্রব্য ব্যবহার, বিক্রি ও পাচারের সাথে জড়িত হয়। রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির খাতিরে সর্বশেষ তারা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হামলা করতেও দ্বিধাবোধ করে না। রাজনীতিবিদগণ প্রয়োজনে তাদেরকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করেন এবং আবার কোন বড় ধরনের অঘটন ঘটলে নিজেদের দলের লোক বলে অস্বীকারও করে বসেন। নামকাওয়াস্তে শাস্তিও কেউ কেউ পান। এভাবেই ছাত্ররা প্রতিটি প্রায় রাজনৈতিক দলের হাতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে উঠা-উঠি দুই বারের মত ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন ছাত্রলীগ ক্ষমতার দর্পে ইদানীং সাংঘাতিক বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকায় প্রশাসনও তাদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করে না, বরং ছাত্রলীগ ও পুলিশ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কাজ করে। সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষ ভিডিওচিত্রে এমনটাই দেখতে পেয়েছে।
কিন্তু আওয়ামী লীগের মত এমন একটি সু-গঠিত, প্রতিশ্র“তিশীল ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলকেও কেন এসব ছাত্র সংগঠনের প্রতি নমনীয় আচরণ করতে হয় তাই এখন রাজনীতি সচেতন সাধারণ মানুষের প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ কি পারে না ন্যায়ের দণ্ড হাতে নিয়ে ছাত্ররাজনীতির এ কালো অধ্যায়কে পরিশুদ্ধ করতে? ছাত্রলীগের ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের দায়কে কেন নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে আওয়ামী লীগকে কলঙ্কিত হতে হবে? গত ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের এখন কি উচিত নয় সকল প্রকার বিতর্ক এড়িয়ে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে নতুন কোন ইস্যু তুলে না দিয়ে আগামী পাঁচ বছরের শাসনকালকে নির্বিঘœ করা? হ্যাঁ, রেওয়াজে পরিণত হওয়া ছাত্র রাজনীতির উপর আওয়ামী লীগের ভরসা একতরফাভাবে উঠিয়ে নেওয়া কঠিন হতে পারে। রাজনীতি কিংবা দেশ গঠনে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে কলঙ্ক তিলক বা আঁচিল সমস্ত মুখটাকেই ঢেকে ফেলছে। উপায়ান্তর আওয়ামী লীগকে তাই এখনি এটাকে বিসর্জন দিতে হবে- যদিও তা কষ্টকর। তাই আওয়ামী লীগকে এমন কোন পদক্ষেপ নিতে হবে যেন তাদের এই কুৎসিত আঁচিলটাই সৌভাগ্য তিলকে পরিণত হয়।
প্রশ্ন হতে পারে কি সেই কৌশলী পদক্ষেপ? সে কৌশলী পদক্ষেপ একমাত্র হতে পারে আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে সম্পূর্ণ ন্যায়-নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত করে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে মেধাবী, প্রতিশ্র“তিশীল, উদ্যমী ও সৎ ছাত্রদের টেনে এনে তাদের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া। সেই সাথে তাদেরকে সততা, দেশপ্রেম এবং দেশ গড়ায় নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করার শপথে উজ্জীবিত করতে হবে। এতে করে মুখের আঁচিল কেটে ফেলার মত যন্ত্রনাদায়ক কাজটি না করেই, রক্তক্ষরণ না ঘটিয়েই নিজেদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে আওয়ামী লীগ। সেই সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ-সংগঠনগুলোও যাতে বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতে অনুরূপ কর্মকাণ্ডে না জড়াতে পারে তার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন থাকায় বড় দায়ভারটুকু আওয়ামী লীগের উপরেই বর্তায়।
আওয়ামী লীগ সেটা সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করতে পারলে জাতির আকাশে একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটবে। বিদ্যাপীঠগুলোতে ফিরে আসবে বিদ্যালাভের সুযোগ, ইতি ঘটবে মারামারি, ছুরি চালাচালির মত কলঙ্কজনক অধ্যায়ের। ভবিষ্যতে এদের মধ্য থেকেই উঠে আসা ন্যায়-নিষ্ঠ ও চরিত্রবান নেতা পাবে দেশ। এই মহাসুযোগটা এখন আওয়ামী লীগের হাতে। সুতরাং আওয়ামী লীগ কি অগ্রণী হয়ে এর সূচনা করতে করতে পারে না?
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২০
উড়োজাহাজ বলেছেন: গরুকে ভদ্র বানাতে হপে।
২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২৭
মদন বলেছেন: এরশাদ ডুবেছিলো ছাত্রসমাজ অতি যন্ত্রনায়।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০৯
উড়োজাহাজ বলেছেন: ছাত্রলীগকেও যদি এইভাবে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে তাই হবে।
৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২৯
nurul amin বলেছেন: তাহলে আ লীগ ভাল। ছাত্র লীগ থেকেই আলীগ হয়।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:১০
উড়োজাহাজ বলেছেন: কোনটা ভাল কোনটা মন্দ তাতো চোখেই দেখছেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০৮
পথহারা নাবিক বলেছেন: দুষ্টু গরুর থেকে শূন্য গোয়াল উত্তম!! কিন্তু গরু না থাকলে দুধ খাইপে কেমতে!!