নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘরকুনো ভবঘুরে। পথের প্রতি কি এক ভীষণ আকর্ষন অনুভব করি। অজানা অচেনা পথের ডাক শুনতে পাই। কিন্তু, সে ডাকে সাড়া দায়ে হয়না, দিতে পারিনা।

আতিক ইশরাক ইমন

প্রলাপ বক্তা

আতিক ইশরাক ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবে পাবো দেখা?

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪০

অনেক দিন পর রিপন ভাইকে দেখলাম। কত বছর? দশ? হয়তবা, এর মাঝখানে দেখলে মনে থাকতো অবশ্যই। কারন আমার মতো অন্তর্মুখি মানুষরা সবার সাথে মিশতে পারে না, খুব অল্প কয়েকজন মানুষকে ঘিরেই তাদের কমফোর্ট জোন থাকে। রিপন ভাই ছিল আমার কমফোর্ট জোনের অন্যতম সদস্য। হ্যাঁ, ছিল; এখন নেই। কারন দশ বছর আগেই মারা গেছে রিপন ভাই। সেই রিপন ভাইকেই আমি এতদিন পর স্বপ্নে দেখলাম। তার চেহারাট অনেকটাই ঝাপসা হয়ে এসেছিলো এতদিনে। কিন্তু সেদিন স্বপ্নে একদম পরিষ্কারই দেখলাম তাকে। আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয়টা কি জানেন? মিদুলকেও দেখলাম সেই স্বপ্নে। ওহ! বলা তো হয়নি মিদুল কে। সম্পর্কে ছোটো মামাতো ভাই আর সেই কমফোর্ট জোনের সবচেয়ে সক্রিয় সদস্য। একদম বন্ধুর মতোই ছিল। ছোটো বেলায় ওর সাথেই খেলতাম, কার্টুন দেখতাম, ওকে নিয়ে সাইকেল চালাতাম আরো কতো কি। কিন্তু মিদুলের ব্যাপারে বলতে গেলেও সেই অতীত কালই ব্যবহার করতে হয়। গত বছর মে মাসে মারা গেছে মিদুল। দশ বছর আগে ঐ একই মাসে প্রায় একই ভাবে মারা গেছিলো রিপন ভাই। এই দুইজনেরই দেখা পেলাম একি স্বপ্নে। তবে ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো রিপন ভাইকে দেখেছি মৃত হিসাবেই। মানে যখন তাকে দেখলাম তখন মনেহলো, আরে রিপন ভাই তো মারা গেছে অনেকদিন হলো। তারমানে সে এসেছে অশরিরী হিসাবে। আমাকে দেখে হেসে কি যেন বল্লো। ঠিক তখনি মিদুলের আবির্ভাব স্বপ্নে। তাকে দেখলাম জিবীত হিসাবে। বোল্লাম, "ঐ মিয়া দেখলা রিপন ভাই কে? কাওকে কিন্তু বলা যাবে না যে আমরা তারে দেখেছি। কেও বিশ্বাস করবে না।" মিদুল মাথা নাড়ালো, সেই মাথা নাড়ানোয় ঘুম ভেঙ্গে গেল। কি অদ্ভূত! ভাবতেই অবাক লাগে যে এই দুইজন মানুষ আর নেই।

জাইহোক, আমি সাধারণত স্বপ্ন দেখি না। কিংবা বলা জায় স্বপ্ন দেখার সময় পাই না। রাতের শেষভাগে ঘুমিয়ে সকালের প্রথম ভাগে উঠলে আর সময় পাওয়া যাবে কখন? তবে গত দুইদিন ক্লাস ছিলনা বলে পূর্ন ঘুম দেয়ার সময় পেয়েছি, এবং তার সদ্ব্যবহার করে দুইদিন স্বপ্নও দেখে ফেলেছি। বেশ অদ্ভূত স্বপ্ন। অবশ্য স্বপ্ন মানেই তো অদ্ভূত একটা বিষয়। আপনি চোখ বন্ধ করেই কতকিছু দেখতে পাচ্ছেন , কষ্ট করে চোখ খুলে রাখতে হচ্ছে না, অদ্ভূত না!

তা একটা স্বপ্নের ব্যাপারে তো বোল্লাম। আরেকটা দেখলাম তার পরদিন। ট্রেনে করে ঢাকায় আসছি। আমি, আব্বু, আর মামা। মামা আগেই ট্রেনে উঠে গেছে। এখনো কিছুটা সময় আছে বলে আমি আর আব্বু প্ল্যাটফর্ময়ে আছি। এমন সময় দেখি সেখানে বই বিক্রি হচ্ছে। আমি তো বই পড়িই, আব্বুও পড়ে। তাই অবশ্যই বই কিনতে হবে। কিন্তু বই নিয়ে দোকানি দামাদামি শুরুকরে দিল। বইয়ের দাম করতে করতে হুট করে দেখি ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। তখন বই টই ফেলে ট্রেনের পিছে ছুট। আমাদের মতো আরো বেশকিছু মানুষ ছিল। তারা সবাই মিলে চিল্লাচিল্লি, ঐ ট্রেন থামান। বাস্তবে ট্রেন তো আর বাস না যে বললেই থামিয়ে দিবে, কিন্তু এটা স্বপ্ন। স্বপ্নতে সবি সম্ভব। তাই ট্রেনের গতি একটু আস্তে হলো আর আমিও ছুটে জেয়ে লাফিয়ে উঠে পড়লাম। শেষ বগি ছিল ঐটা, কোনো দেয়াল বা ছাদ ছিল না সেটার। আমি সেটায় উঠে পেছন ফিরে দেখি আব্বু তখনো বেশ দূরে। খুব ধীরে ধীরে হেঁটে আসছে। আমার কিছুটা রাগ হলো, এতো আস্তে আসলে তো ট্রেন ধরতে পারবে না। এবং হলোও ঠিক তাই। ট্রেন গতি বাড়িয়ে দিলো। আব্বু প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়ালো। স্টেশনটা বেশ নির্জন স্থানে, আব্বু যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার পেছনে একটা বড় শিমুল গাছ, গাছে বেশ ফুল ও আছে। এখন বুঝলাম সময়টা সকাল, শিমুল গাছের পেছনে আকাশ লাল করে সূর্জ উঠছে। আব্বু প্ল্যাটফর্মের শেষপ্রান্তের শিমুল গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে ট্রেনের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের ভাষাটা এমন, জেন বলছে, "তোমার সাথে আমারো জাবার কথা ছিল, কিন্তু জেতে পারলাম না। বাকি পথটুকু তোমাকে সঙ্গ দিতে পারলাম না। নিজের ভ্রমন পথটুকু নিজেই পাড়ি দিও, তোমার ভ্রমনের সঙ্গি হতে পারলাম না।"
স্বপ্নটা এখানেই শেষ। তবে বাস্তবের সাথে এর চরম মিল। বাস্তবেও আব্বু আমার জীবনের চলার পথের সঙ্গি হতে পারবে না আর। বাকি পথটুকু একাই পাড়ি দিতে হবে। চার বছর আগেই আব্বু জীবনের ট্রেনটা মিস করেছে।

দুইটা স্বপ্ন, দুইটাই আমার খুব প্রিয় মানুষদের নিয়ে, যাদেরকে বাস্তব জীবনে কোনোভাবেই আর পাওয়া যাবে না। অন্তত স্বপ্নে হলেও কবে আবার তাদের দেখা পাবো?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.