নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘরকুনো ভবঘুরে। পথের প্রতি কি এক ভীষণ আকর্ষন অনুভব করি। অজানা অচেনা পথের ডাক শুনতে পাই। কিন্তু, সে ডাকে সাড়া দায়ে হয়না, দিতে পারিনা।

আতিক ইশরাক ইমন

প্রলাপ বক্তা

আতিক ইশরাক ইমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুতুলনাচের ইতিকথা........জীবনের কথা

২৫ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:২৫




সূর্যদেব এখন আমাদের দিকে চেয়ে যেভাবে কটাক্ষ করছেন, আমরা রোদে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছি, তেমনিভাবে আকাশের দেবতার হারু ঘোষের দিকে তাকিয়ে কটাক্ষ করার মধ্য দিয়েই "পুতুলনাচের ইতিকথা" উপন্যাসের শুরু। তবে আকাশের দেবতা শুধুমাত্র কটাক্ষই করেননি, বজ্রদৃষ্টি দিয়ে চেয়েছিলেন। তাইতো ঐ প্রকান্ড বটগাছের গুড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে কিছু বোঝার আগেই তার জীবনাবসান হয়, এবং শহর থেকে ফেরার সময় হারু ঘষকে সে অবস্থায় আবিষ্কার করে গ্রামের তরুন ডাক্তার শশী। গল্পের মূল কেন্দ্রবিন্দুতেই আছে শশী ডাক্তার। মহাজন ও সুদ ব্যবসায়ী গোপাল দাসের ছেলে এই শশী ডাক্তার। এছাড়া এই কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা শশীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আরো চরিত্র হলো হারুর পুত্রবধূ কুসুম, হারুর মেয়ে মতি, কুমুদ, বিন্দু, যাদব, সেনদিদি ও আরো অনেকেই।

শশী ডাক্তারী পাশ করে গ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে বলেই তার চরিত্র অতিমানবীয় বা অতিনায়কোচিত হবে এমনটি ভাবলে ভুল হবে। তারমধ্যে একিই সাথে খেয়ালি-ভাবুক সত্তা এবং পার্থিব ধনসম্পত্তির প্রতি আকৃষ্ট পুঁজিবাদী সত্তা মিলেমিশে আছে। সে যেমন মুক্তি চায়, তেমনিভাবে নিজের ভিজিটের ফিসটাও চেয়ে নেয়। তবে কোনোভাবেই তাকে অমানবিক বলার অবকাশ নেই, বরংচ পিতার একসময়য়ের অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্তই যেন সে করে। ওদিকে শশীর বন্ধু পরানের স্ত্রী কুসুম তার প্রতি আকৃষ্ট। যদিও শশী প্রথমে সেই আকর্ষনে আকৃষ্ট হয় না, কুসুমের অদ্ভূত পাগলামির পেছনে কি কারন থাকতে পারে তা যেন সে ভাবারো সময় পায় না। তবে একসময় ভাবে, খুব ভালোভাবেই ভাবে, কিন্তু ততক্ষনে কি আর ভেবে লাভ হয় কিছু? তাছাড়া পরানের বোন মতিও যেন নিজের অজান্তেই শশীকে নিজের কল্পনার জগতে ঠায় দিয়ে দেয়। তবে এর পেছনে কারন হতে পারে আর অন্য কোনো পুরুষ তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সাথে খাপ খায় না। তাইতো যখন শশীর বন্ধু কুমুদের দেখা সে পায় তখন নিমেষেই তার মনে শশীর বদলে কুমুদের জন্য চিরস্থায়ী জায়গা পাকপোক্ত হয়ে যায়। গল্পে ক্মুমুদেরও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কারন শশীর যেই ভাবুক সত্তা রয়েছে তা বলতেগেলে একপ্রকার কুমুদের একার তৈরী। এরা ছাড়াও আছে শশীর বোন বিন্দুর কথা। যে কিনা স্বামীর সাথেই এক অদ্ভূত জীবনের জালে জড়িয়ে গেছে। অন্যে সে জাল কেটে দিলেও বিন্দু নিজেই সেই জাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। এবং শশীর সাথে আরো জড়িয়ে আছে সেনদিদি আর অদ্ভূত ত্যাগী যাদবের কথা। বিশেষ করে যাদব একসময় শশীর জীবনে খুব বড়সড় দাগ কেটে জায়।

যাইহোক, মানিক বন্দ্যোপাধ্যাইয়ের সুখ্যাতি আছে গ্রামীন জীবনের কাহিনী দারুনভাবে বর্ণনা করার জন্য। "পুতুল নাচের ইতিকথা" উপন্যাসটাও গ্রামীন পটভূমিতেই লেখা। তবে এখানে গ্রামীন জীবনের চেয়ে মানব জীবনের বিভীন্ন টানাপোড়নটা মূখ্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শশীর মনের বলা না বলা অনেক কথা এবং তার করা না করা অনেক কাজের মাধ্যমে এ মানব জীবনের পুতুলখেলা এগিয়ে চলেছে। শশীর ভিন্ন এক জীবনের আকাঙ্ক্ষা, কুমুদের অবনতি দেখে তৃপ্তি পাওয়া, বা কুসুম ও তার মধ্যে তৈরী হওয়া সম্পর্কের জটিলতা, বিন্দুর অস্বাভাবিক জীবনেকে সহজ সরল করে তোলার চেষ্টা সবকিছু মিলে "পুতুল নাচের ইতিকথা" শুধুই একটি সামাজিক উপন্যাস না, বরংচ এর সীমানা পেরিয়ে এক মানব জীবনের দর্পন হয়ে উঠেছে। তবে শশী ছাড়াও কুমুদ ও মতি উপন্যাসের একটি অংশের মূখ্য চালিকা শক্তি হয়ে ওঠে। কুমুদ, সে পুরোপুরিভাবেই শশীর সম্পূর্ন বিপরীত। তারকাছে জীবন মানেই যেন এক দুরন্ত গতিশীল নদী। যেখানে স্থীরতা বলে কিছু নেই। সে শীল্পে, জীবনের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। ওদিকে মতি নিতান্তই গেঁয়ো এক মেয়ে। আর এই গেঁয়ো মেয়েকেই কুমুদ চায় নিজের মত করে গড়ে নিতে, স্ত্রী হিসাবে নয়, তার পথ চলার দূরন্ত সাথী হিসাবে। তারা কি পারবে একে অন্যের পার্থক্য ভুলে এক সঙ্গে পথ চলতে? নাকি ছিটকে পড়বে? এ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে লেখক আবার ফিরে আসেন গ্রামে। শেষ পর্যায়ে শশী আর তার পিতা গোপাল দাসের মধ্যকার দন্দ ফুটে ওঠে। এই সময়ে আমরা মহাজন, সুদের ব্যবসায়ী গোপাল দাসের ভিন্ন এক রূপ দেখতে পাই। যে অত্যাচারী মহাজন নয়, কেবল কেবল পুত্রের সান্নিধ্য চাওআ এক পিতা। এবং গল্পের পরিণতিতে তার একটি কাজের মধ্যদিয়েই আসে।

পরিণতির পর শেষ আসে। কিন্তু শশী কি যেতে পারে তার জীবনের লক্ষে? কুমুদ আর মতির ই বা কি হয়? তারা কি ভালোবাসতে পারে একে অন্যকে না ক্ষনিকের মোহো কেটেগেলেই কুমুদ ফেলে রেখে তার দুরন্ত পথে পাড়ি দেবে? আর কুসুম, কে কি দূরে থাকতে পারে না আবারো ফিরে আসে তাদের গাওদিয়ার গ্রামে? ওদিকে গোপাল দাস, বিন্দু এদের ভাগ্যেই বা কি থাকে? আর পুতুলনাচ, সেটা কি থেমে জায়? শুধুমাত্র শেষ প্রশ্নের উত্তরটা দিচ্ছি। না, পুতুলনাচ থেমে থাকে না, জীবনের পুতুলনাচ চলতেই থাকে। পুরোনো পুতুল ভেঙ্গে গেলে নতুন চকচকে পুতুল তার জায়গা নেয়, তবুও পুতুলনাচ চলতেই থাকে............... চলতেই থাকে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৭ রাত ৯:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:



পশ্চিম বংগের মানুষের মন বরারই ছোট ছিল, ওই সমাজে অন্যকে দাবিয়ে রাখা সামাজিক দায়িত্ব ছিল; আজকে বদলেছে কিনা কে জানে!

২৬ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৮

আতিক ইশরাক ইমন বলেছেন: পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে আমার নিজস্ব কোনো অভিজ্ঞতা নেই, এবং পুতুল নাচের ইতিকথায় বড় মন-ছোটো মন বিষয়ক কোনো ধারনাও পাইনি। সুতরাং এ বিষয়ে আমার বলারও কিছু নেই।

২| ২৬ শে মে, ২০১৭ রাত ১:৫১

সালমান মাহফুজ বলেছেন: সাধারণ মানুষের চিন্তা-ভাবনাও সাধারণ, আর গ্রামীণ হলে তো কথাই নেই ! এইরকমটাই আমরা ভাবি, বলি ; কিন্তু মানিক সেই ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করেছেন । গেঁয়ো মানুষগুলোর জটিল রহস্যময় মনোজগতকে আমাদের সামনে উন্মোচিত করে দেয়ার মাধ্যমে তিনি চোখে আঙুল দেখিয়েছেন প্রতিটা মানুষেই যেন এক একটা দুর্বোধ্য বই !

যাদব পণ্ডিতের আত্মহনন, শশীর পিছুটান, যাত্রাপালার হিরো কুমুদের হাত ধরে ছোট্ট মতির দুরন্ত স্বপ্ন সবকিছুই আমাদেরকে নাড়িয়ে দেয় ! ভাবায় ।

'পুতুল নাচের ইতিকথা' নিঃসন্দেহে এক অনবদ্য সৃষ্টি । সেই সৃষ্টির উপর আপনার আলোচনাধর্মী পোস্টটাও ভালো লেগেছে । পোস্ট পড়ে যেন সেই চরিত্রেগুলো আবার আমার স্মৃতিতে জীবন্ত হয়ে উঠেছে ।

২৬ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৪

আতিক ইশরাক ইমন বলেছেন: আসলেই বাংলা সাহিত্যের অমূল্য রত্ন এই "পুতুলনাচের ইতিকথা"। অল্প কথায় আপনিও যেভাবে উপন্যাসটা নিয়ে বললেন সেটা খুব ভালো লাগলো। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.