নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু না

অশুভ

নাথিং

অশুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ভ্রমণ সমগ্র: প্রথম বিদেশ ভ্রমণ-১

২৪ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:৩৯



যেকোনো ভ্রমণ কাহিনী পড়তে আমার ভীষণ ভালো লাগে। ভ্রমণ কাহিনী পড়ার সবচেয়ে মজার দিকটি হল কোনো একটা জায়গায় না গিয়েও আপনি পুরো জায়গাটা ঘুরে বেড়াতে পারেন। আর লেখক যদি ঠিকভাবে গুছিয়ে লেখেন তা হলে তো ষোলকলা পূর্ণ। হুমায়ুন আহমেদ স্যারের "হোটেল গ্রোভার ইন" বা "রাবণের দেশে আমি এবং আমরা" পড়ে মনে হয়েছে আমি নিজেই তার সাথে ঘুরছি। আমাদের সামুতেও এমন কিছু ব্লগার আছেন যাদের সাথে আপনি দেশে বা দেশের বাইরে যে কোনো যায়গাতে বিনা খরচে রাওন্ড ট্রিপ দিয়ে আসতে পারেন। তেমনই একজন ব্লগার হলেন শেরজা তপনরাশিয়ার প্রবাস জীবন নিয়ে উনার কয়েকটি সিরিজ আছে। তিনি এখন ব্লগে নিয়মিত নন। ভ্রমণ কাহিনী লেখার পেছনে তিনি একটি বড় অনুপ্রেরণা। যদিও এটিই আমার ভ্রমণ বিষয়ক প্রথম লেখা।

অনেক দিন থেকেই লিখব লিখব করে লেখা হয়ে উঠে না। প্রায় দুবছর আগে লেখাটা শুরু করেছিলাম। জানি না লেখাটা আদৌ শেষ করতে পারব কি না। বা শেষ করলেও কত বছরে শেষ হবে। আমার লেখার পাঠক খুব কম। কিন্তু একজন স্পেশাল পাঠক আছেন, যে আমার সব লেখাই পড়ে। মাঝে মাঝে আমার গল্পের চরিত্রকে হিংষাও করে। অনেক বড় ভূমিকা হয়ে গেল। আমার লেখা গুলি এভাবেই এলোমেলো হয়ে যায়। চিন্তা করি একভাবে লিখতে কিন্তু হয়ে যায় আরেক রকম। আবার লেখার সমাপ্তিটাও মাঝে মাঝে অন্যরকম হয়ে যায়। যাই হোক শুরু করি। ভূল ত্রুটি মার্জনীয়। :)

সালটা, ২০১০। স্নাতক পাশ করে একটা মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে জয়েন করেছি। কিছুদিন চাকরী করার পরে শুনলাম অফিসের কর্মকর্তাদেরকে অফিস থেকেই বিভিন্ন দেশে বিজিনেস ট্যুরে পাঠায়। এটা দেখে মনের ভিতরে একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করি। অজপাড়াগায়ে বড় হওয়া আমি কখনই বিদেশে যাই নি। প্লেন তো দূরের কথা, ট্রেনেই উঠেছি হাতে গোনা দু একবার। আমাদের বাড়ির আশেপাশে কোনো রেললাইন নেই। মটর গাড়ীই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। এই দিকটি বাংলাদেশে বরাবরই অবহেলার শিকার। ব্রিটিশদের পরে নতুন রেললাইন হয়েছে খুব কমই। অথচ বাংলাদেশের মত অতি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ট্রেনই হতে পারত যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।

সে যাকগে। যাদের পাসপোর্ট নেই তাদের দ্রুত পাসপোর্ট করতে অফিস থেকে বলা হয়। আমার এক পরিচিত ফুপার মাধ্যমে এক দালালকে ৯০০০ টাকা দেই পাসপোর্ট তারাতারি তৈরী করানোর জন্য। এখানে বলে রাখা ভাল তখন আর্জেন্ট পাসপোর্ট করতে অফিসিয়াল ফী ছিল ৩০০০ টাকা। কিন্তু শুধুমাত্র ফী দিয়ে পাসপোর্ট হাতে পেতেও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে পরিচিত অনেক কলিগকে। একজনের তো ট্যুরই বাতিল হল পাসপোর্ট সময়মত জমা না দিতে পারায়। তাই আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই নি। জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ যাতে নিজের দোষে বাতিল না হয় কোনো ভাবেই। দালালের সাথে একদিন উত্তরার পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ছবি তুললাম আর হাতের আংগুলের ছাপ দিয়ে আসলাম। এরপর দালাল বলল এখন শুধু ভেরিফিকেশন করবে। সেটিও অনেক ঝামেলার বিষয় ছিল। যাই হোক আমার ট্যুর শিডিউলের আগেই পাসপোর্ট হাতে পেয়ে গেলাম। এখন শুধুই অপেক্ষা আর উত্তেজনা।

আমাদের অফিসিয়াল ট্যুরগুলো টিম আকারে হত। আর শুরুর দিকের ট্যুর গুলো ছিল অনেকটা ট্রেইনিং এর মত। ১৯ জনের একটি টিমের সাথে আমার ট্রিপ ঠিক হল। এটা ছিল ভারতের নয়ডা নামক স্থান। দিল্লীর খুব কাছেই। এক মাসের একটি ট্রেইনিং এ গিয়েছিলাম। আমরা সবাই গুলশানের ইন্ডিয়ান এম্বাসিতে পাসপোর্ট জমা দিয়ে আসলাম। ভিতরে ভিতরে উদ্ভট দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। মাঝে একদিন স্বপ্নেও দেখলাম আমাদের টিমের সবার ভিসা হয়েছে আমারটা বাদে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই সবার ভিসা হয়ে গেল। কিন্তু ভিসার মেয়াদ দিল মাত্র একমাস। এই মেয়াদটা আবার ভ্রমণের প্রথম দিন থেকে শুরু নয়। যেদিন ভিসা পেলাম সেদিন থেকেই শুরু। আমাদের বস চিন্তা করে দেখল যে এয়ার টিকেট, এন্ডোর্সমেন্ট সহ আরো কিছু ফর্মালিটি করে ইন্ডিয়া পৌছাতেই ১০-১২ দিন লেগে যাবে। তাহলে আমাদের ভিসার মেয়াদ থাকবে মাত্র ১৭-১৮ দিনের। এটা শুনে মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো। আমার বস আমাদের এমডি এর সাথে এই ব্যাপারে কথা বলল। এমডি বলল আগে আপনারা ট্রেইনিং এ যান, পরে দেখা যাবে।

এই ১৯ জনের সবাই খুব পরিচিত। আর তার চেয়ে মজার ছিল আমাদের বিড়িখোর গ্রুপ। সেই গ্রুপের প্রায় সবাই এই টিমটাতে ছিলাম। আমার মত অনেকেরই প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। অফিসে বসে কাজের ফাকে ফাকে প্ল্যান চলত সারাদিন। দুদিন পরে সবাই বিমানের টিকেট হাতে পেয়ে গেলাম। জেট এয়ারওয়্জে এর টিকিট। এরপর একদিন ব্যাংক থেকে এন্ডোর্সমেন্ট করলাম। প্রথমবার ১০০ ডলারের নোট হাতে নিলাম। সেটাও মজার অনুভূতি।

আমি তখন থাকতাম আশকোনা তে। এয়ারপোর্টের ঠিক বিপরীত দিকে অল্প দূরেই। আমাদের ফ্লাইটটি ছিল কলকাতা হয়ে দিল্লী। ঢাকা থেকে বিকেল সারে চারটায় ছাড়ার কথা। সবাই এয়ারপোর্টে তিনটার দিকে মিট করার কথা। আগের রাতে একটুও ঘুমাতে পারি নি। প্রতিক্ষা আর উত্তেজনায়। ভ্রমণের দিন সবাই ট্যাক্সি বা ব্যক্তিগত গাড়ীতে এয়ারপোর্টে আসল। বাসা খুব কাছেই ছিল তাই রিক্সাতে করে লাগেজ সহ এয়ারপোর্ট বাসস্ট্যান্ডে নেমে বাকিটা পায়ে হেটেই গেলাম। এর আগে কাউকে বিদায় বা রিসিভ কোনো জন্যও এয়ারপোর্টে যাওয়া হয় নি। এই প্রথম। কোনদিকে যেতে হবে সেটাও জানি না। পুলিশের কাছে জিজ্ঞেস করে উপরের(ডেপার্চার) টার্মিনাল-২ তে ঢুকলাম। এন্ট্রান্স গেটেই আমাদের অনেকের সাথেই দেখা হয়ে গেল। এরপরে শুধু তাদের ফলো করলাম। আগে ট্রাভেল করেছে এমন অনেকেই অনলাইন চেকইন করে পছন্দমত সীট সিলেক্ট করেছে। আমি অনলাইন চেকইন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। ভাগ্যক্রমে চেকইন করার সময় উইন্ডো সীট পেয়ে গেলাম। আমাদের অনেকেরই উইন্ডো সীট না পেয়ে মন খারাপ। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হল।

ইমিগ্রেশন পার হলাম কোনো ঝামেলা ছাড়াই। তবে লাইনটা বেশ দীর্ঘ ছিল। ইমিগ্রেশন পুলিশ কিছুটা প্যারা দিয়েছে বৈকি। যাইহোক, ইমিগ্রেশনের পরে ডিউটি ফ্রী শপে গেলাম সিগারেট কিনতে। বাইরের চেয়ে কিছুটা কম দামেই এক কার্টুন সিগারেট কিনলাম। আমরা বিড়িখোর গ্রুপ গেলাম স্মোকিং জোনে। স্মোকিং জোন না বলে ইটভাটা বলাটা সমীচিন। ছোট্ট একটা রুম। দেখে মনে হল ভেন্টিলেশনের কোনো ব্যবস্থা নাই। থাকলেও চোখে পরে নি। আমার মনে হয় ঐখানে ঢুকে কারো সিগারেট ধরানোর দরকার নাই। জাষ্ট রুমে ঢুকে চোখ বন্ধ করে দুইবার নিঃশ্বাস নিলেই পরপর দুইটা সিগারেট খাওয়ার নেশা হয়ে যাবে। চারদিকে শুধু ধোয়া আর ধোয়া। তারপরও কিছুক্ষণের মাঝেই দুইটা সিগারেট শেষ করে ফেললাম, কিছুটা রোমাঞ্চ আর কিছুটা উত্তেজনায়। যেকোনো জার্নির আগে কেনো যেন আমার বারবার ওয়াশরুমে যেতে হয়। বিশেষ করে বাসের লং জার্নিগুলোতে। সেই অভ্যাস মত আমি বারবার টয়লেটে যাচ্ছিলাম। এটা দেখে হাদি ভাই বলল প্লেনের মধ্যে টয়লেট আছে এত চিন্তা করার কিছু নাই। এই বলে খেপাতে শুরু করল সবাই। হাদি ভাই হচ্ছে আমাদের বিড়িখোর গ্রুপের অন্যতম প্রধান সদস্য। আরোও ছিল: বাকী ভাই, কৃষ্ণ দা, পুলক আর আমি। সময়ের আবর্তে এদের দুজন এখন দেশের বাইরে সেটেল্ড। একজন নিজেই কোম্পানির মালিক। আর আমি সরকারের কামলা খাটি। মাঝে মাঝে মনে পড়ে সেই দিন গুলোর কথা।

বোর্ডিং এর সময় হয়ে গেল। আমরা একে একে লাইন ধরে এগুচ্ছিলাম। বোর্ডিং এর গেটেও আরেক দফা চেকিং চলছে। আমার হাতে মিনারেল ওয়াটারের বোতল। সেটা নিয়ে যেতে দিল না, ফেলে দিতে হল। ফেলে দেওয়ার আগে পানিটুকু শেষ করলাম। বোর্ডিং এর সময় বেশ সুন্দরী এক বিমানবালা অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। সীট খুজে পেতে সাহায্য করল অন্য আরেকজন। জেট এয়ারওয়েজের কেবিন ক্রু রা সবাই খুব হেল্পফুল। বাংলাদেশ বিমানেও জার্নি করার সৌভাগ্য(!) হয়েছিল অন্য এক সময়। বিমান বাংলাদেশের কেবিন ক্রুরা কেন যেন এদের মত না। তাদের ভাব অনেকটা সেকেলে প্রাইমারী স্কুলের টিচারদের মত। কোনো সাহায্য চাইলে ভ্রু কুচকে তাকায়।

ল্যাপটপের ব্যাগটা ওভারহেড কম্পার্টমেন্টে রেখে, আমি আমার সীটে গিয়ে বসলাম। ছোট জানালা দিয়ে পড়ন্ত বিকেলে ডানা মেলে দাড়িয়ে থাকা প্লেনগুলো দেখতে অদ্ভুত লাগছিল। রানওয়ের পাশে ছোটো লেক গুলোতে সূর্যের আলো পড়ে রুপালি নদীর মত চিকচিক করছে। সীটের সামনে লাগানো একটা স্ক্রীন হঠাৎ অন হয়ে গেলো। সেখানে বিমানের সেফটি ইন্স্ট্রাকশন চলছে। পাশাপাশি একজন কেবিন ক্রু হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিচ্ছিল ইমার্জেন্সি সিচুেশনে কী করতে হবে। কিছুক্ষণ পর ক্যাপ্টেনের আওয়াজ শুনতে পেলাম। তারপরই আমাদের প্লেনটা আস্তে আস্তে রানওয়ের দিকে যেতে লাগল। কিছুদুর এগিয়ে একটা বাক নিয়ে প্লেনটা আবার দাড়াল। আমি মনে মনে ভ্রমণের দোয়া পড়ছিলাম। হঠাৎ একটা ঝাকি দিয়ে প্লেনটা খুব জোরে চলতে শুরু করে। একটা সময় দেখলাম আমরা হাওয়ায় ভাসছি। ঢাকা শহরের বিল্ডিংগুলো ক্রমশ ছোটো হয়ে আসছে। দুটো চক্কর দিয়ে পশ্চিম দিকে ছোটা শুরু করল। জানালা দিয়ে নিচের সবকিছুই দারুণ লাগছে।

কিছুদুর এগোতেই বিশাল মেঘরাশির দেখা পেলাম। মেঘটাকে মনে হচ্ছিল সাদা পাহাড়। কিছুক্ষণ পর নিচের দিকে তাকিয়ে মনে হল প্লেনটা মেঘের সমুদ্রের উপরে ভাসছে। নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে বিষ্ময় সুচক আওয়াজ বের হল। ওয়াও!!! এত জোরে কথাটা বলেছিলাম যে আমার নিজেরই লজ্জা লাগছিল। কিন্তু লজ্জাটা কেটে গেলো যখন দেখলাম আমার কলিগদের মাঝেও কেউ কেউ আমার মতই জোরে জোরে আমার মত বিষ্ময় প্রকাশ করছে। জীবনের সব প্রথমই মজার হয়। প্রথম ভ্রমণ, প্রথম বনভোজন কিংবা প্রথম প্রেম। এগুলোর একটা আলাদা আকর্ষণ থাকে। সবকিছুতেই ভালোলাগা একটা ঘোর থাকে। আমি চারপাশে যা দেখছিলাম তাতেই অভিভূত হচ্ছিলাম। হঠাৎ এক কলিগের ডাকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। হিমালয় পর্বতের সারি চোখে পড়ল। অনকগুলো পর্বতচুরা মাথায় বরফের বোঝা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। হয়তবা কাঞ্চনজঙ্ঘাও রয়েছে তার মধ্যে। আমার মনে হল স্বপ্ন দেখছি।

মুশফিকের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম। মুশফিক হল সবচেয়ে ভ্দ্র কলিগদের একজন। ইশারা করে দেখাল ক্রুরা খাবার সার্ভ করছে। আমি ভেবেছিলাম বিকেলবেলার স্ন্যাক্স জাতীয় কিছু হবে। কিন্তু কাছে আসতে ভূল ভাঙল। এতো মুটামুটি লাঞ্চের আয়োজন। খাবারের দুটো মেনু ভেজ/নন ভেজ। মুশফিককে জিজ্ঞেস করলাম ভেজ/নন ভেজ কী? ও বলল নিরামিষ ভোজি/মাংস ভোজি। পরে জানতে পেরেছি ইন্ডিয়ানদের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ ভেজিটেরিয়ান। জীবনে কখনো মাংস বা মাংসজাত খাবার খায় না। আমার ভাবতেই অবাক লাগে, কীভাবে পারে? আমি নন ভেজ মেনু সিলেক্ট করলাম। খাবার খেতে খেতে সামনের স্ক্রীনে মুভি দেখছিলাম। মুশফিক আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিল কীভাবে স্ক্রীনে মুভি চালাতে হয়। স্ক্রীনে ম্যাপের মাঝে যাত্রাপথও দেখা যায়।

খাবার শেষে ড্রিংক পরিবেশন করছিল। আমি চা নিলাম। ড্রিংক নিয়ে পরে একবার অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। একটা অফিসিয়াল ট্যুর ছিল সাউথ কোরিয়ায়। সিংগাপুরে ট্রানজিট ছিল। ট্যুর শেষে ফেরার করার সময় সিংগাপুর থেকে এক বাংলাদেশি ভদ্রলোকের পাশে আমার সীট। টুকটাক কথাবার্তায় জানতে পারলাম উনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। ওখানকার সিটিজেন। প্লেনে রাতের ডিনার সার্ভ করছিল। উনি দেখি এয়ার হোস্টেজের সাথে বেশ উচুস্বরে কথা বলছেন। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা কী? উনি বললেন উনি অনলাইনে চেকইন করার সময় ডিনারের জন্য হালাল ফুড সিলেক্ট করে রেখেছেন। কিন্তু এয়ার হোস্টেজ বলছে তাদের কাছে আজকে কোনো হালাল ডিস নেই। আমি উনাকে বললাম আপনি ভেজ ট্রাই করতে পারেন, ভেজের হালাল/হারাম নিয়ে সমস্যা নেই। আসলে এয়ার হোস্টেজও তাকে এই সাজেশনই দিচ্ছিল। তিনি বিশেষ অসোন্তষের সাথে খাবার টা নিলেন। আসল মজাটা হল তখন, যখন খাবার শেষে ড্রিংক পরিবেশন করছিল। উনি দেখি ওয়াইনের ক্যান নিচ্ছেন। আমি বললাম হালাল খাবারের জন্য এতো যুদ্ধ করে এখন আপনি ওয়াইন খাচ্ছেন? উনি তখন বললেন, ডিনারের পরে ওয়াইন না খেলে উনার নাকি হজমে সমস্যা হয়।

চা শেষ করতে করতেই ঘোষনা হল, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা কলকাতা এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবো। সবাই সীটবেল্ট বেধে নিলাম। জানালা দিয়ে পাখির চোখে কলকাতা শহর দেখছিলাম। ঢাকার তুলনায় কলকাতা শহরে গাছগাছালি অনেক বেশি মনে হল। একটা ঝাকুনি দিয়ে আমাদের প্লেন রানওয়ে স্পর্শ করল।

চলবে...

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:৫৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
জীবনের প্রথম পাসপোর্ট টাই করলেন দালালকে টাকা দিয়ে!
এভাবেই ডুকছে বাংলাদেশ

২৪ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৩

অশুভ বলেছেন: কথা সত্য। কিন্তু সিস্টেমের স্বীকার ভাই। ওই সময় আমি যদি দালালের মাধ্যমে না করতাম, নির্ঘাত আমার অফিসিয়াল কাজ ব্যহত হত। আমি লেখাতেই উল্লেখ করেছি, ইমার্জেন্সী ফী দিয়েও অনেকে সময়মত পাসপোর্ট হাতে পান নি।
ওই ঘটনার পরেও পাসপোর্ট সংক্রান্ত আরও অনেক তীক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে ভাই। আপনি যদি কখোনো পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে থাকেন এবং আপনার এরকম অভিজ্ঞতা না হয়ে থাকে, তাহলে হয় আপনি অনেক ভাগ্যবান ব্যক্তি, না হলে পাওয়ারফুল কেও আপনার আত্নীয়। :)

২| ২৪ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আপনি অনেক ব্যস্ত মানুষ সেটা মানলাম তারপরেও পাসপোর্ট এর আবেদন করার জন্য আপনি এক দিন বা অর্ধদিবস ছুটিও নিতে পারতেন । এখন কথা হচ্ছে, ওই দালাল আপনাকে কি ধরনের সহযোগিতা করেছে? তার একটা বিবরণ দিয়ে একটা পোস্ট দিবেন। সেটা আমাদের সকলের জন্য খুব উপকারী হবে । আমার ধারণা, দালাল আপনাকে কোন সহযোগিতাই করতে পারনি, ও করে নাই। আপনাকে শুধু পাসপোর্ট এর অফিসের নির্ধারিত রুমে নিয়ে গিয়েছে । এই রুমে নেওয়ার জন্য যদি সার্ভিস চার্জ হয় 6000 টাকা তাহলে সেটা হবে খুব দুঃখজনক ব্যাপার। এক জন ব্লগার পোস্ট দিয়েছেন তিনি জীবনের প্রথম পাসপোর্টটি তৈরী করেছেন দালাল ধরে। আপনি লিখেছেন, পাসপোর্ট তৈরি করতে ফি বাবদ খরচ হয়েছিল 3000 টাকা।

কিন্তু আপনি মোট খরচ করেছেন 9000 টাকা। এক জন সচেতন মানুষ এই ভাবে টাকা নষ্ট করলে, দালাল চক্রকে উৎসাহিত করলে দেশের সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?
এভাবেই তো কর্মচারীদের পেট বড় হয়ে যায়। তখন তারা টাকা ছাড়া কোনো কাজ করতে রাজি হয় না । বেতন টাকে মনে করে কিছুই না। কারণ যত পায় তত খায়।

২৪ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৪

অশুভ বলেছেন: আপনি অনেক ব্যস্ত মানুষ সেটা মানলাম তারপরেও পাসপোর্ট এর আবেদন করার জন্য আপনি এক দিন বা অর্ধদিবস ছুটিও নিতে পারতেন
-আপনি আমার কথাটা বুঝতে পারেন নি মনে হয়।"নির্ঘাত আমার অফিসিয়াল কাজ ব্যহত হত" কথাটা দিয়ে সময়মত পাসপোর্ট হাতে না পেলে আমার ট্রেইনিং(ফরেন) মিস হওয়ার কথা বুঝিয়েছি। আর একটা ব্যাপার বুঝলাম না, আপনি এত সচেতন নাগরিক হয়েও এটা জানেন না যে পাসপোর্ট করার জন্য নিজেকেই যেতে হয়। এবং সেজন্য আমার ছুটিও নিতে হয়েছে।

এই রুমে নেওয়ার জন্য যদি সার্ভিস চার্জ হয় 6000 টাকা তাহলে সেটা হবে খুব দুঃখজনক ব্যাপার। এক জন ব্লগার পোস্ট দিয়েছেন তিনি জীবনের প্রথম পাসপোর্টটি তৈরী করেছেন দালাল ধরে। আপনি লিখেছেন, পাসপোর্ট তৈরি করতে ফি বাবদ খরচ হয়েছিল 3000 টাকা।
-আমার মূল লেখাতেও আমি উল্লেখ করেছি, ইমার্জেন্সী ফী দিয়েও অনেকে সময়মত পাসপোর্ট হাতে পান নি। কিন্তু শুধুমাত্র ফী দিয়ে পাসপোর্ট হাতে পেতেও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে পরিচিত অনেক কলিগকে। একজনের তো ট্যুরই বাতিল হল পাসপোর্ট সময়মত জমা না দিতে পারায়। তাই আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই নি।
আর হ্যা, যদি দালালের কথা বলেন, তাহলে এটুকু বলতে পারি, পাসপোর্ট টা আমি ৫ দিনের মাথায় হাতে পেয়েছি। যেখানে ইমার্জেন্সী পাসপোর্ট করতেও ২১ কর্মদিবসের কথা লিখা ছিল।

এভাবেই তো কর্মচারীদের পেট বড় হয়ে যায়। তখন তারা টাকা ছাড়া কোনো কাজ করতে রাজি হয় না । বেতন টাকে মনে করে কিছুই না। কারণ যত পায় তত খায়।
-আমি একমত। আপনার সব কথাই ঠিক। আপনি নিজে যখন কোনো সমস্যায় পড়বেন তখন হয়ত অবস্থাটা বুঝতে পারবেন।

কথায় আছে বুঝলে বুঝপাতা, না বুঝলে তেজপাতা। :)

৩| ২৪ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৮

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর ।+

২৪ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৫

অশুভ বলেছেন: ধন্যবাদ সেলিম ভাই।

৪| ২৪ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৪

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: লুক। ভ্রমণ আমার খুব প্রিয়।

২৪ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৬

অশুভ বলেছেন: ভ্রমণ আমারও খুব প্রিয়। :)

৫| ২৪ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৪

চাঙ্কু বলেছেন: এক্সসাইটিং একটা ভ্রমণ করলেন!! ইমিগ্রেশন পুলিশ কি ঝামেলা করল?

২৪ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৪

অশুভ বলেছেন: ইমিগ্রেশন পুলিশ কি ঝামেলা করল?
-তেমন ঘোরতর কিছু না। অনেক লম্বা লাইন ছিল, এর মাঝেও ২-১ জন অফিসার কাজ না করে একটু খোসগল্প করছিলেন। তাই স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি সময় লেগেছিল ইমিগ্রেশন পার হতে।

৬| ২৪ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: ট্রেন যোগাযোগের দারুন মাধ্যম। সরকারের উচিত ট্রেনের দিকে আরো মনোযোগ দেওয়া।
ভ্রমন করতে আমারও ভা্লো লাগে।
এরপর ভ্রমন বিষয়ে লিখলে অবশ্যই ছবি দিবেন।

হুমায়ূন আহমেদের ভ্রমন সমগ্র আছে আমার।

২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:১৭

অশুভ বলেছেন: অনেক আগের কাহিনীতো রাজীব ভাই, তাই ছবি-টবি নাই। ল্যাপটপ খুজে দেখবো ছবি পাই কিনা। পেলে পরেরবার অবশ্যই দিব।

৭| ২৪ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:১২

Alamin12 বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
,এটি খুব ভাল সাইট ,যা আমাদের সবার খুব প্রয়োজন ।আপনার সাইট খুব তত্ত্ব ভিত্তিক
এবং সহজ -সরল ভাষায় লিখিত যা সবার বোঝার উপযোগী
তাই আমি সহ আমার বন্ধুরা আপনার সাইট নিয়মিত ভিজিট করিএবং বাসত্মবে কাজে লাগানোর
চেষ্টা করি ।কেন জানি না এই সাইট আমার খুব ভাল লাগে ।আমি চাই আপনি আপনার সাইট নতুনত্ব দিয়ে ভরিয়ে তুলবেন। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ , আর সময় পেলে আমাদের কম্পিউটার বিষয়ক বাংলা ব্লগ সাইট https://www.outsourcinghelp.net/ ভুবনেঘুরে আসবেনএবং সেখানে আপনি ইচ্ছা করলে কমিপউটার
ও ইন্টারনেট বিষয়ক টিপস লিখতে পারে, আমরা আপনার অপেক্ষায় থাকব ।

৮| ২৪ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:৩১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ ভ্রমন কাহিনী ।

২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:১৮

অশুভ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। :)

৯| ২৪ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:৪৯

শেরজা তপন বলেছেন: ব্লগ জীবনে আপনার লেখায় খুব কম-ই মন্তব্য করেছি! তাই আজকে মন্তব্য করতে খানিকটা কুণ্ঠা বোধ হচ্ছে- ভুমিকায় আমার নাম উল্লেখ করেছেন, সে জন্যই। আপনাকে ভ্রমনে আগ্রহান্বিত ও ভ্রমন কাহিনী লেখার পেছনে অনুপ্রেরনা দেবার জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি- সেই সাথে আমার ভ্রমন কাহিনী আপনাকে মুগ্ধ করে জেনে আনন্দিত হলাম
প্রথম ভ্রমন( মুলত বিদেশ ভ্রমন) মনে আছে- কিন্তু প্রথম প্রেমে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলি!আমার কাছে আমার প্রথম প্রেমটা ছিল দুর্ঘটনা, দ্বীতিয় প্রেমটা ছিল আবেগ আর ভালোবাসায় মথিত, সেটা ভেবে এখনো বুকের পাশে টনটন করে!! :)
লেখা ভাল লেগেছে- পরের পর্বে কষ্ট করে আমাকে একটু নক করবেন! ভাল থাকুন সুন্দর থাকুন- আমার মত মাঝপথে আটকে যাবেন না, লিখতে থাকুন অবিরাম

২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:১৪

অশুভ বলেছেন: কীজে বলেন তপন ভাই। আপনার মন্তব্য পেয়ে আমার লেখাটাই স্বার্থক। আমার এখোনো মনে আছে, যখন আপনি নিয়মিত লিখতেন আপনার প্রতিটি সিরিজের প্রত্যেকটি পর্বের জন্য অধির আগ্রহে বসে থাকতাম। প্রতিদিন অনেকবার করে আপনার ব্লগে ঘুরে আসতাম, নতুন কোনো লেখা আছে কীনা দেখার জন্য। কী দিনগুলোই না ছিল।
আমার মনে হয়, আপনার দ্বীতিয় প্রেমটাই ছিল প্রথম। আর প্রথমটা হয়তো ইনফেচুয়েশন বা শুধুমাত্র দুর্ঘটনাই। ;)
আবার লিখলে অবশ্যই আপনাকে জানাবো। :)

১০| ২৫ শে জুন, ২০২০ সকাল ৯:০৯

শেরজা তপন বলেছেন: ধন্যবাদ- এলেবেলে লেখা দিয়ে ফের আবার ব্লগে নিয়মিত হতে চাচ্ছি, দেখি সফলকাম হতে পারি কিনা( এখনকার আমার লেখাগুলো প্রায় দেড় যুগ আগের লেখা, তাই খানিকটা ছেলেমানুষী ভাব আছে)? আমি আপনার সাথে আছি- আপনিও পাশে থাকবেন।
প্রথম/ দ্বীতিয়/তৃতীয় প্রেম নিয়ে আমার অনেক কথা আছে- পড়ে বলবখন :) আরো লিখুন-ভাল থাকুন।

২৫ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৪৮

অশুভ বলেছেন: আপনার সব লেখাই আমার ভাল লাগে। আপনি ব্লগে নিয়মিত হলে, আমার জন্য অনেক বড় সুখবর। পাশে আছি নিরন্তর।

১১| ২৫ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:৫০

ডি মুন বলেছেন: প্রথমবার দেশের বাইরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা সবসময়ই অন্যরকম।
আবার বিদেশ থেকে দেশের সীমানায় ঢোকার সময়ও দারুণ অনুভূতি হয়।

ভদ্রলোকের হালাল খাবার খুঁজে, ডিনারের শেষে ওয়াইন খাওয়ার ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং।
মানুষের এই বৈপরীত্য সব জায়গায়। ঘুষের টাকা ড্রয়ারে রেখে মসজিদে ছোটা মানুষ এদেশে কম নেই।

২৫ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:০০

অশুভ বলেছেন: অসাধারণ বলেছেন, মানুষের এই বৈপরীত্য সব জায়গায়। মাঝে মাঝে নিজের মধ্যেই বৈপরীত্য খুজে পাই।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.