নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু না

অশুভ

নাথিং

অশুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এলোমেলো চিন্তা-৪ (ছোট ছোট পৃথিবী)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৫৯


খুব ছোটবেলায় আমার একটা ধারণা ছিল আমাদের এই পুরো বিশ্বভ্রম্মান্ড কোন বিশাল মানুষের পেটের মধ্যে। আর আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের পেটে একটা করে পৃথিবী আছে। স্কুলে যাওয়ার পর ভ্রম কিছুটা ভাঙলো।

তারপর একদিন সিনেমায় দেখলাম নায়ক নায়িকাকে বলছে, "তুমিই আমার পৃথিবী"। সদ্য শেখা ভূগোল সমন্ধীয় জ্ঞানে আমার সব গুলিয়ে যায়। সাতটি মহাদেশ আর পাঁচটি মহাসাগর কীভাবে একজন মানুষের মাঝে থাকে। তাহলে কি আমার আগের ধারণাই ঠিক ছিল। কাওকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জা লাগে।

বহু বছর পরে সিনেমার ডায়লগটার মর্মার্থ বুঝতে পারলাম। যখন হাইস্কুলে থাকতে একজনের প্রতি ভীষণ আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম। তখন থেকেই আমার জীবনে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর সংজ্ঞা পরিবর্তিত হতে থাকে। বুঝতে পারি, ছোটবেলায় আমার পৃথিবীতে শুধু একটাই মহাদেশ-মহাসাগর ছিল। সেটা হলো আমার মা। এরপর আস্তে আস্তে নতুন নতুন দেশ/মহাদেশ, সাগর/মহাসাগর সেই পৃথিবীতে যুক্ত হতে থাকে। আবার অনেক সাগর-মহাদেশ আমার পৃথিবী থেকে আলাদা হয়ে গেছে।

আমার খুব ঘনিষ্ট এক বন্ধু হুয়াওয়েতে জব শুরু করে। আমিও তখন একটা আইটি ফার্মে জব করি। অফিস শেষে বনানী পার্কে বসে রাত অব্দি আড্ডা দেই। সেই আড্ডায় থাকে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা। কোন দেশে কেমন সুবিধা, কোন দেশে জব নিয়ে যাওয়া যায় কিংবা জিআরই তে কত স্কোর করলে ভাল ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাওয়া যায়। এসবই ছিল আড্ডার মূল বিষয়বস্তু। তখন ওর আর আমার পৃথিবী একই কক্ষপথে ছিল। হঠাৎ ওর কোম্পানী থেকে কন্ট্রাকচুয়াল ইম্প্লয়ীদের ছাঁটাই শুরু করে। যদিও সে একটা লং রানিং প্রজেক্টে ছিল, তারপরও জব নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তায় থাকে। এদিকে তার বড় মামা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। গ্রামের বাড়িতে তার মামার বেশ বড়সড় গোছানো পাইকারী ব্যবসা ছিল। গ্রাম একই হওয়ার সুবাদে তার নানাবাড়ির লোকজন আর তার বাবা গ্রামে ফিরে বড় মামার ব্যবসা দেখাশোনা করতে বলে। অনেকরকম চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে সে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। এখন সে পুরোদস্তুর মহাজন। আমি গ্রামে গেলে তার দোকানে বসে মাঝে মাঝে লম্বা সময় ধরে আড্ডা দেই। কিন্তু এখনকার আড্ডাগুলো কেমন যেন পুরোনো দিনের মতো জমে না। সে তার ব্যবসার নানা খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আমার সাথে আলাপ করে, আমি শুধু হু-হা করি। বুঝতে পারি তার পৃথিবী এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। চাল-ডাল-তেল-লবণের দামের লাভ-লোকসানের সাথেই তার পৃথিবী আবর্তিত হয়। আমার পৃথিবীও সেই আগের মতো নেই।

কিছুদিন আগে ব্যাংকার বন্ধুদের আড্ডায় গিয়েছিলাম। তাদের কথপোকথন ছিল শুধু লোন নেয়া আর জমি কেনাবেচা নিয়ে। আমি নীরবে ভাবতে থাকি তাদের পৃথিবীর সাগর-মহাসাগর, দেশ-মহাদেশ সবকিছুই জমি কেনাবেচা নিয়েই। হঠাৎ চিন্তা হয়, আমার পৃথিবীর মূল উপাদান কী এখন? সকালে মেয়ের স্কুল, তারপর অফিস, অফিস শেষে মেয়ের সাথে কিছুটা সময় কাটানো আর তারপর গভীর রাত পর্যন্ত গেইম খেলা। এই বয়সে গেইম খেলি শুনলে অনেকেই অবাক হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এই অভ্যাসটা আমার পৃথিবীর অংশ হয়ে আছে বহুকাল ধরে। শুধু আমি একা না, আমার ভার্সিটি লাইফের কয়েকজন ঘনিষ্ট বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র সবার পৃথিবীতেই ছোট একটা অংশ হয়ে আছে এই বদঅভ্যাসটা। আমার এই ছোট্ট পৃথিবী নিয়ে আমি ভালই আছি।

এই বিশাল পৃথিবীর মাঝে এমন ছোট ছোট পৃথিবী নিয়ে সবাই ভাল থাকুক।

আগের লেখাগুলো-
এলোমেলো চিন্তা
এলোমেলো চিন্তা-২ (সবুজের সন্ধানে)

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:২২

নাহল তরকারি বলেছেন: সুন্দর।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৩২

অশুভ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নাহল ভাই।

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৩৯

রানার ব্লগ বলেছেন: আর বলবেন না ! অনেক দিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছিলো সারাক্ষন আলোচনা করলো কার হাটুতে কেমন ব্যথা কার বদ হজম হচ্ছে কার ঘুম কম হচ্ছে !! ভাববেন না আমরা অশতিপর বৃধ্য এক এক জনার বয়স ৪০ এর কম বেশি মানে ৩৯ ৩৮ ৪০ এই লাইনে !!!

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৪৯

অশুভ বলেছেন: আমার বয়সও এই রেঞ্জেই ভাই। তবে আমাদের কলিগদের আড্ডায় খেলা আর টুরিংয়ের আলোচনা বেশি হয়। সপ্তাহে ২-৩ ফুটবল খেলি। খেলাধুলা করলে শরীর ফিট থাকে আর ব্যাথা-ব্যাদনা কমে যায়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৬

নূর আলম হিরণ বলেছেন: গেইম আমিও খেলি। রাতে কাজ শেষে কিছুটা সময় গেইম খেলি যার ফলে বউয়ের বকা শুনতে হয়। :)

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫১

অশুভ বলেছেন: আমার বউ বুঝে গেছে গেইম বিষয়ে আমার সাথে কথা বইলা লাভ নাই। তাই এখন আর কিছু কয় না। বাইচা গেছি। :D

৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:০৪

শেরজা তপন বলেছেন: চার মাস পরে নতুন লেখা নিয়ে আসলেন। আপনার পোস্ট দেখে ভাল লাগল
ঠিক বলেছেন এভাবেই পৃথিবীর সবার পৃথিবী ধীরে ধীরে পাল্টে যায় :)
যার যেই পৃথিবী ভাল্লাগে- আর যে যেই পৃথিবীতে সুখ খুঁজে পায় সেই পৃথিবিই উত্তম!
নিয়মিত লিখুন

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৪

অশুভ বলেছেন: কী যে বলেন তপন ভাই। আমি হলাম পাঠক। লেখালেখি আমার দ্বারা হয় না। শিরোনামের সাথেই লেখার মিল আছে "এলোমেলো লেখা"। আপনার মন্তব্য আমার জন্য বিশেষকিছু। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:০১

অপ্‌সরা বলেছেন: পৃথিবী বদলায় সাথে সাথে বয়সের সাথে সাথে বদলায় মানুষও।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৮

অশুভ বলেছেন: আপনার মন্তব্যটি আমার প্রিয় একটি উক্তি মনে করিয়ে দিল।

“মানুষ মরে গেলে পচে যায়,
বেঁচে থাকলে বদলায়,
কারণে-অকারণে বদলায়”
-- মুনীর চৌধুরী

মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

৬| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ২:৩২

কামাল৮০ বলেছেন: জনগনের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করার লোক বাংলা দেশে খুব কম।তাদের আসল চিন্তা থাকে নিজের ভবিষ্যত।চাচা আপন পরাণ বাঁচা।ইহকালের এবং কাল্পনিক পরকালের।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:০২

অশুভ বলেছেন: সবাই যার যার চিন্তা করাটা খারাপ ব্যাপার মনে হয় না আমার কাছে। শুধু সততা বজায় রাখা আর অপরের ক্ষতি না করলেই হলো। তাহলেই পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হতো।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ কামাল ভাই।

৭| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৪৩

শেরজা তপন বলেছেন: এরপরে আর লেখা কই????

০৭ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:৩৮

অশুভ বলেছেন: নতুন কোন লেখা মাথায় আসে না তপন ভাই। টুকটাক যা মনে আসে তাই লিখে ফেলব শিঘ্রী। :)

৮| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৬

মিরোরডডল বলেছেন:



সত্যি তাই, প্রতিটা মানুষের একটা নিজস্ব পৃথিবী থাকে।
সেই পৃথিবী আবার সময়ের সাথে প্রতিনিয়ত বদলায়।

এক জীবনে পৃথিবীর যে কত রকম বর্ণিল রূপ আর পরিবর্তন দেখেছি।
দেখেছি কতরকম মানুষ আর তাদের পৃথিবী।
দেখেছি একই মানুষের বহুরূপ।

সবাই যার যার আপন ভুবনে ভালো থাকুক।
অশুভর আসন্ন পৃথিবী শুভ হোক।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:০০

অশুভ বলেছেন: আপনার মত একজন ব্লগারের মন্তব্য পেয়ে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.