নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করি না কখনোই, চেষ্টা করছি ভালো মানুষ হতে। জানিনা কবে ভালো হতে পারব! আর আমি এমনিতে বেশ ঠাণ্ডা, কিন্তু রেগে গেলে ভয়াবহ! একটু introvert টাইপের। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, তার যদিও অধিকাংশই ভেঙ্গে যায়! আশার পিঠে আশা বেঁধে তবুও নির্লজ্

অতনু কুমার সেন

সংক্ষেপে নিজের সম্পর্কে মূল্যায়নঃ ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে দাবি করি না কখনোই, চেষ্টা করছি ভালো মানুষ হতে। জানিনা কবে ভালো হতে পারব! আর আমি এমনিতে বেশ ঠাণ্ডা, কিন্তু রেগে গেলে ভয়াবহ! একটু introvert টাইপের। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, তার যদিও অধিকাংশই ভেঙ্গে যায়! আশার পিঠে আশা বেঁধে তবুও নির্লজ্জের মত স্বপ্ন দেখে যাই। স্বপ্ন দেখি আকাশ ছুবো, মেঘের ভেলায় উড়ে যাব, নিজের রঙে রাঙ্গিয়ে দিব, সত্য ও সুন্দরের আলো ফোটাবো। জানিনা পারব কি ব্যর্থ হবো। চেষ্টা তবু করেই যাবো।

অতনু কুমার সেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশু শ্রমিক আরিফ এর আত্তকথা আজ ৭ বছর পর নিজেকে সার্থক ভেবে লিখলাম!

১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:১১


২০০৮ এর কথা একটি কাজে মানিকগঞ্জ এ যাওয়া পুরুষ কন্ঠের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুনে ,অবাক হয়ে একটি দোকানের ভিতরে তাকিয়ে দেখি, ১২/১৪ বছরের একটি ছেলে চোখ মুছতে মুছতে বলছে, আর এমন ভুল জীবনেও হবে না চাচা আমাকে মাফ করে দিন,
কিন্তু লোকটার সে কথা সম্ভবত বিশ্বাস হয়নি, ঠাস করে আর একটা চড় বসিয়ে দিল ছেলেটির গালে, অসহায়ত্ব কাকে বলে ,নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট শিশুটির চেহারার দিকে তাকিয়ে ,সেটা যেন আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম , বিবেকের তাড়না আমাকে তড়িৎ গতিতে নিয়ে গেল, দু চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরা ছোট ছেলেটির পাশে, হঠাৎ করে আমাকে দোকানের ভিতরে দেখে ,লোকটা ভিষন বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করল কি চান আপনি ? আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম আপনি এ ছোট শিশুটির গায়ে হাত তুলেছেন কেন ? দেখুন ভাই অযথা ঝামেলা করবেন না, আপনি এখান থেকে চলে যান, আমি ছেলেটির হাত ধরে টেনে আমার কাছে এনে জানতে চাইলাম, লোকটা তোমাকে মারছে কেন? সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, অনবরত চোখের পানি পড়ছে, তোমার নাম কি? আমার কথা যেন তার কানে যায়নি, ভয়ার্ত চোখে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে, লোকটা এবার চেঁচিয়ে উঠলো, কেন খামাখা আমার সময় নষ্ট করছেন? আপনাকে তো যেতে বলেছি । ততক্ষণে বেশ কিছু মানুষ এসে জড়ো হয়েছে, সবার একই প্রশ্ন কি হয়েছে ? আমি মোবাইলে স্হানীয় থানায় কল দিচ্ছি, কিন্তু কল যাচ্ছে না ।

আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটি জিজ্ঞেস করল , ঘটনা কি ভাইয়া? ইতিমধ্যে যা দেখেছি তাকে বলতেই এক পলকে লোকটার গলা চেপে ধরে এক ঘুষিতে নিচে ফেলে দিল। কোন রকমে তাকে থামিয়ে বললাম অন্যায়ের প্রতিবাদ অন্যায় দিয়ে হয়না, ঠিক তখনই চেনা কন্ঠে আওয়াজ এল , " আরে বাপ্পি আপনি এখানে? " । পিছনে তাকিয়ে দেখি এস আই সাইফুল ইসলাম নূর ভাই মাথার হেলমেট খোলতে খোলতে মোটরবাইক থেকে নামছে, গায়ে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা নুর ভাই কে দেখে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। এতক্ষণ উচু গলায় কথা বলা দোকানী , ফজলু মিয়ার চেহারায় স্পষ্ট ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছে । এবার নিজ থেকেই গড়গড় করে বলে যাচ্ছিল, তার কোন দোষ নাই, ছেলের মা বলেছে কথা না শুনলে শাসন করতে। ছেলেটির নাম আরিফ, আজ থেকে চার মাস আগে তার মা নিজে এসে, ছেলেকে কাজ শিখার জন্য এখানে দিয়ে গেছে, এখন পর্যন্ত দিনে দুবেলা খাবার ছাড়া কোন বেতন পায়না সে।

এতক্ষণে দোকানের ভিতরে আমার চোখ বুলানো হয়ে গেছে, ফজলু মিয়া এখনও বলে যাচ্ছে, গত চার মাসে কোন কাজ শিখেনি, সে ভীষণ ফাঁকিবাজ । কোন কাজ ঠিক মতো করতে পারে না, আজ এটা ভাঙে তো কাল ওটা ,কিছু বললেই কাঁদে , এই দেখুন আমার এক বস্তা কাপর ওয়াশ করে নাই ।

আরিফ তখনও নিরবে কাঁদছে , সব শুনে ক্ষীণ গলায় বলল ডান হাত ব্যাথা কাজ করতে করতে তাই ধুতে পারেনি কাপর গুলো, সাথে সাথে মিথ্যুক কোথাকার বলে চেঁচিয়ে উঠলো ফজলু মিয়া । আমি আরিফ কে নিয়ে দোকানের বাইরে চলে এলাম, তার ছোট্ট মুখের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া হচ্ছে, চড় খাওয়া গালটা বেশ ফুলে গেছে ।

ইতিমধ্যে জানতে পারলাম, আরিফ ক্লাস এইট তে পড়ত, সে এখনও লেখা পড়া করতে চায়, তার মা নাজমার ও একই ইচ্ছা ছিল, বেশ কয়েক মাস ধরে নাজমার শ্বাস কষ্টটা বেড়ে গেছে, ঠিক মতো কাজ করতে পারে না, মায়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আরিফ সিদ্ধান্ত নেয় নিজে কাজ করবে । তোমার বাবা কই ? প্রশ্ন টা শুনে কষ্টের দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমার বয়স যখন তিন বছর, তখন বাবা মারা গেছে , বাবার চেহারা টাও তার মনে নাই , একমাত্র মা ছাড়া এই দুনিয়াতে তার আর কেউ নাই । মা একটি হোটেলে থালা বাসন ধুয়া মুছার কাজ করে, রাতের খাবার টা সেখান থেকে আসে, লক্ষ করলাম ছেলে টা খুব রোগাটে, মাথার চুল গুলো অপুষ্টির জন্য হালকা লাল রংয়ের, গলার নিচের হাড় দুটি চামড়া ভেদ করে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে । এস আই নূর ভাইয়ের এর ডাক শুনে তাকিয়ে দেখি তার হাতে কিছু টাকা, ফজলু মিয়ার কাছ থেকে আরিফের ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায় করেছে ।

শফিকুল সহ আরিফের বাসায় গিয়ে যা দেখলাম, তাতে আমার চোখের কোণে, কখন যে পানি জমে উঠেছে টেরই পাইনি, আরিফের মা নাজমা ছোট্ট একটা ভাঙা ঘরে জীর্ণ শরীরে শুয়ে আছে, গায়ে জ্বর, চার দিন হল কাজে যেতে পারেনি। প্রতিবেশীদের এক বেলা খাবারে কোন রকমে দিন যাচ্ছে, পুলিশ সহ আমাদের সবাইকে দেখে নাজমা প্রচন্ড ভয়ে কাঁপতে শুরু করল , তাকে আশ্বস্ত করে সমস্ত ঘটনা খুলে বলতেই, ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নাজমা হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল । আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম আরিফের পড়াশোনা সহ তাদের দুজনের দ্বায়িত্ব আমি নিতে চাই, কথাটা শুনে নাজমা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল, পরের দিন সকালে তাদের দুজনকে ডাক্তার দেখানো হল, মা ছেলে দুজনই রক্ত শুন্যতায় ভুগছে, নাজমার শ্বাসকষ্ট ছাড়া আর কোন কঠিন রোগ না থাকায় নিশ্চিন্ত হলাম ।
শহর থেকে অদূরে মানিকগঞ্জ এ থাকা আমাদের সামান্য জমিতে ,তাদের থাকার জন্য ছোট একটা ঘর তুলে দিলাম,আরিফ কে হাজি বুরহান উদ্দিন স্কুলে ভর্তি করা হল, ঘটনাটি ৭ বছর আগের কথা, তখন আমিও খুব বেশি বড় না তাই খরচ সামলানোর মত সাবলম্বি ছিলাম না, তাই আরিফের পরাশুনার জন্য কিছু পরিচিত ভাই এবং আমার পরিচিত কিছু বিদেশি সাহায্য এর জন্য ব্যবস্থা করে দি!
আশ্চর্যের বিষয় কি জানেন?? সেই ছোট আরিফ আজ ডাক্তারী পরছে! ইন্ডিয়ায় গিয়েছে এম বি বি এস করতে!

নাজমা খুব কর্মঠ আর বুদ্ধিমতী, সে দিনের পর থেকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে, হাঁস, মুরগি, ছাগল লালন পালন করে, নাজমা নাকি বেশ কিছু টাকা জমিয়েছে, মুখ ভার হাসি নিয়ে বলছিল সেদিন, টাকা গুলো একমাত্র সন্তানের বিয়েতে খরচ করবে ।
দোয়া করবেন আরিফের জন্য যেন ডাক্তার এর মত ডাক্তার হতে পারে!

- সংগ্রহ
বর্ণ হাসান বাপি ভাই

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা, নাকি অন্যের লেখা, আপনি প্রকাশ করেছেন?

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৩৪

রাকু হাসান বলেছেন:




বাহ বাহ চমৎকার ,চমৎকার । আপনার লেখাটি পড়তে গিয়ে আমি আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ছিলাম অনকে টা । ভাবছিলাম কত রকমের জীবন আমাদের । শেষ টা তে এমন সুখবর পেয়ে কি যে ভাল লাগছে ,লেখে বুঝানোর মত না । এভাবে যদি বিত্তবানরা এগিয়ে আসতো তাহলে আরিফের মত কত ঝরে পড়া ছেলে মেয়ে ঠিক গৌরবে সমাজে মাথা উচু করে দাঁড়াবার সুযোগ পেত । আরিফ ভাল থাকুক,আপনি ও । প্রতিষ্ঠিত হয়ে আরও হাজারো ছেলে মেয়ের উপকার করুক ।শুভকামনা

৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:২৩

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ভালো লাগছে। বাপি ভাইয়ের মতো মানুষদের বড্ড প্রয়োজন আজকাল।

৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৩৭

করুণাধারা বলেছেন: খুব ভালো লাগলো পড়ে। মানুষ মানুষের জন্য.....

প্রথম ছবিটি বুঝতে পারছি, আরিফ। কিন্তু দ্বিতীয় ছবিটি বুঝতে পারলাম না। সে যদি দর্জির কাজ করতো, তাহলে লেখাপড়া করলো কখন?

শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ।

৫| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: শেষের ছবিটা দেখে খুব মন খারাপ হলো।

৬| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:০৫

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: যেহেতু ফার্ষ্ট পারসনে লিখেছেন। সেহেতু ধরে নিচ্ছি এটা কোন গল্প নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.