নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি জাতীয় মহাকাব্য শাহনামা এবং একজন মহাকবি ফেরদৌসীর সামান্য কিছু কথা

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০০


শাহনামা হচ্ছে পারস্যের বর্তমান ইরান কবি ফেরদৌসীর লিখিত একটি দীর্ঘ মহাকাব্য। এটি একই সাথে ইরানের এবং সারা বিশ্বের ফার্সি ভাষাভাষী লোকদের জন্য জাতীয় মহাকাব্য হিসেবেও পরিচিত। ফেরদৌসী ৯৭৭ থেকে ১০১০ সালের মধ্যে প্রায়৩০ বছরের অধিক সময় ধরে এই মহাকাব্য রচনা করেন।

শাহনামায় প্রায় ষাট হাজার শ্লোক রয়েছে। ইরানের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে তুলে আনা হয়েছে এই মহাকাব্যে। শহনামাতে মূলত ইরানে ইসলাম পূর্ব ও সপ্তম শতাব্দীতে ইসলাম শাসন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

এই কাহিনীতে রাজাদের গুণগান এবং পরবর্তীকালে কবির নিজের অনুভূতির বহিপ্রকাশ ঘটেছে। বর্তমানে ইরান তার পার্শ্ববর্তী ফার্সি ভাষায় কথা বলা আফগানিস্তান ও তাজাকিস্তানের লোকদের কাছে শাহনামা তাদের সাহিত্যের ধারক।

মহাকাব্যটি বর্তমান ইরানের পূর্ব ইতিহাসকে তুলে ধরেছে এবং ফার্সি লোকদের সাংস্কৃতিকে ধারণ করছে।এটিতে ইসলাম পূর্ব শেষ সামানাইড রাজার কথাও বলা হয়েছে।

ফারসি সাহিত্যের গৌরবময় যুগের সময়কার বিশ্ব সাহিত্যে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন এমন কবি সাহিত্যিকের সংখ্যায়ও ফারসি সাহিত্যে একেবারে কম নয় । গৌরবময় যুগের কবিদের মধ্যে সর্বাগ্রে যার নাম করতে হয় তিনি হলেন ইরানের মহাকবি হাকিম আবুল কাসেম ফেরদৌসী, তিনি বিখ্যাত কথাশিল্পী এবং ইরানের গৌরবের প্রতীক ।

ফেরদৌসীর জন্ম হয় খোরাসানের তুস নগরের নিশাপুরে ৯৪১ খ্রিঃ৷ তার জীবনী সম্পর্কে প্রাচীনতম উত্‍স হিসেবে ইতিহাসবিদেরা যে গ্রন্থটির কথা উলেস্নখ করেন সেটি হচ্ছে নিযামি আরম্নযির তাযকেরায়ে চাহার মাকালে (১১৫৫ খ্রিঃ)৷ এটি রচিত হয় ফেরদৌসীর মৃতু্্যর ১৫০’বছর পর (৫৫০ হিজরি)৷ সাসানীয় শেষ সম্রাট ইয়াজদির্জাদ (৯১৪-৯৪৩ খ্রিঃ) পারস্যের রাজা বাদশাহর কাহিনী, জনশ্রম্নতি, ঘটনা ইত্যাদি সংগ্রহ করে সিয়ারম্নল মুলুক অথবা বোসত্মান নামা নামে অভিহিত করেন৷ দশম শতাব্দীতে সামানীয় সম্রাট আবু মনসুর সিয়ারম্নল মুলুক অথবা বোসত্মাননামা সংশোধন করে শাহনামায় রূপ দেওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তিদের নিযুক্ত করেন ।

কয়েক বছরে গ্রন্থটি সমাপ্ত হলে আল মোরি নামক জনৈক ঐতিহাসিক দ্বারা সম্পাদনা করে তা গদ্যে লিখিয়ে নেন । কবি দাকিকির ওপর ন্যসত্ম করা হয় এর কাব্যরূপ দেয়া । কিন্তু দাকিকি তার কৃতদাসের হাতে নিহত হলে এই দুরূহ কাজ অসমাপ্ত থেকে যায় । কারণ মাত্র দুই হাজার লাইন সমাপ্ত করার পর পরই তার মৃতু ঘটে৷ তখন এই দায়িত্ব অর্পণ করা হয় কবি উনসুরির ওপর । উনসুরি যখন নিজস্ব ইচ্ছায় ফেরদৌসীকে সুলতান মাহমুদের কাছে হাজির করলেন এবং তার কাব্য প্রতিভা সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন তখন সুলতান মাহমুদ সম্পূর্ণ শাহনামার কাব্যরূপ দেওয়ার ভার অর্পণ করলেন ফেরদৌসীকে ।

সপ্তম শতাব্দীতে ফেরদৌসী মূলত সামানাইড সম্রাজ্যের রানীর জন্য লিখেছিলেন। কিন্তু পারস্যে মুসলিম বিপ্লবের পর যখন সামানাইড সম্রাজ্যের পতন হয় তখন ফেরদৌসী নতুন শাসক মাহমুদ গজনিকে তার লেখা উৎসর্গ করেন। মাহমুদ ছিলেন পারস্যের শিল্প এবং সাহিত্যের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক।

পারস্য সম্রাট সুলতান মাহমুদ যখন ফেরদৌসীকে শাহনামা লেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তখন তিনি ফেরদৌসীর কাছে ওয়াদা করেছিলেন এই মহাকাব্যে যতগুলো শব্দ থাকবে তার বিনিময়ে প্রত্যেক শব্দের জন্য একটি করে স্বর্ণ মুদ্রা কবিকে দেওয়া হবে। তারপর ফেরদৌসী ৬০০০০ শব্দে মহাকাব্য লেখার কাজ শেষ করেন। কিন্তু সম্রাট তার প্রিয় ভাজন মন্ত্রীর পরামর্শে কবিকে ৬০০০০ হাজার রৌপ্য মুদ্রা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ফেরদৌসী রৌপ্য মুদ্রা গ্রহন না করে সেগুলো তার চাকরদের মাঝে ভাগ করে দেন। রাজার কানে এ খবর যাওয়া মাত্র রাজা রাগান্বিত হন এবং ফেরদৌসীকে ধরে আনার নির্দেশ দেন। রাজার ভয়ে কবি পালিয়ে যান কিন্তু পরে রাজা তার ভুল বুঝতে পারে এবং তাকে স্বর্ণমুদ্রা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ততদিনে কবি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার কন্যা সে মুদ্রা গ্রহণ করেন নি। পরবর্তীতে কিছু মুদ্রা দিয়ে কবির কবর সংস্কার করা হয় এবং কিছু গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হয়।

ফেরদৌসীর শাহনামা রচনা সমাপ্ত হয় ১০০৯ খ্রিস্টাব্দে । ফারসি গদ্যের প্রথম পদৰেপ শাহনামা । দশম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ফারসি গদ্যের উত্‍কর্ষ সাধিত হয় শাহনামার সংস্কার সাধন কেন্দ্র করে । ফেরদৌসির সমকালীন কবিদের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো কবির সাহিত্য প্রতিভার নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় না৷ জঙ্গনামা কাব্য (১৭২৩ খ্রিঃ) রচয়িতা কবি হেয়াত মামুদের আবির্ভাব ঘটে শাহনামা রচনার ৭০০ বছর পর৷ তবে বৌদ্ধ পণ্ডিত শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর (৯৮২ থেকে১০৫৩) ছিলেন ফেরদৌসির সমসাময়িক ।

শাহনামা হচ্ছে প্রাচীন ইরানের ইতিহাস, কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি নিয়ে বিভিন্ন কাব্যগাথা। এতে আছে ৯৯০টি অধ্যায় ৬২টি কাহিনি। পুরো মহাকাব্যে ৬০ হাজার বার আছে অন্ত্যমিল। এটি হোমারের ইলিয়ড এর চেয়ে সাত গুণ এবং জার্মান মহাকাব্য নিবেলুঙগেনলিয়েড-এর (Nibelungenlied) চেয়ে ১২ গুণ বড়। ইংরেজিতে এ পর্যন্ত শাহনামার যতগুলো অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে সবগুলোই প্রায় সংক্ষেপিত। ১৯২৫ সালে বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আর্থার অ্যান্ড এডমন্ড ব্রাদার্স পুরো শাহনামার একটি ইংরেজি অনুবাদ নয় খণ্ডে প্রকাশ করেছিলেন। সেই ইংরেজি অনুবাদের কোনো পুনর্মুদ্রণ এখন আর পাওয়া যায় না। তা ছাড়া রাশিয়া থেকেও এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩১

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুন্দর।






ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩২

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৭

মানুষ জিহাদ হাসান বলেছেন: ভাল লাগলো তথ্য গুলো জেনে।

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫১

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: আপনাদের ভালো লাগাই লেখার স্বার্থ।

৩| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪২

আবু তালেব শেখ বলেছেন: বাংলায় অনুবাদ হয়নি?

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০৯

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: হতে পারে তর্কের কিছু নাই ভাই ।

৪| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি শাহনামা পড়েছেন?

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০৯

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: এখনও সে সৌভাগ্য হয়নী।

৫| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪২

টারজান০০০০৭ বলেছেন: শাহনামা পড়ি নাই। তবে ছুডুকালে সোরাব রুস্তমের ধুন্ধুমার একশনের কাহিনী পড়িয়াছি ! সোরাব মরিলে খারাপ লাগিয়াছে ! প্লেটোর মতন আমার রাষ্ট্রীয় মডেলেও কবিদের স্থান নাই !

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:১০

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ভালো তবে আমি সোরাব রুস্তমের ফিলিম দেখছিলাম ।

৬| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:৫২

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: সুন্দর শেয়ার।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:১১

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ হাসু ভাই।

৭| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:১৪

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ভুলে যাওয়া ইতিহাসটি আবার সামনে চলে এলো।। খুব ভাল লাগলো।। শাহনামা এবং কবি ফেরদৌসী দুইই পরিচিত সেই অনেক আগে।।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:১২

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় সচেতনহ্যাপী ভাই।

৮| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:২৭

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ভালো বিষয় উপস্থাপন।

১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:২৯

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ মফিজ ভাই।

৯| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৮

মলাসইলমুইনা বলেছেন: আমার জন্মদিনে (খুব সম্ভবত ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে) আমার বড় ভাইয়া আমাকে গিফট করেছিলেন "ছোটদের শাহনামা" | খুবই এব্রিজ একটা ভার্সন শাহনামার | কিন্তু ছোট বেলায় যে বইগুলো পরে সবচেয়ে বেশি মনখারাপ করতাম শাহনামা ছিল সেই বইগুলোর একটা | সোহরাব রুস্তমের কাহিনীটা পরে কত যে চোখের পানি ফেলেছি ! কবি ফেরদৌসীর উপর লেখা একটা বই আমি ক্লাস এইট বা নাইনে পড়েছি | তার জীবনীর সবটুকুই ওই বই থেকে জানা | সেখানে একটা বড় অংশে শাহনামার রচনার সমসাময়িক ঘটনা, সুলতান মাহমুদের সভায় তার কবি পদ পাওয়া এগুলো ছিল | সুলতান মাহমুদের সাথে প্রথম যেদিন তার দরবারে সাক্ষাৎ হলো তখন তিনি সুলতানের প্রশংসা করে যেই ক'টি লাইন বলেছিলেন তার মর্মার্থ ছিল জন্মের পর পরই মার্ বুকে মুখ দিয়েই ছোট বেবি মাহমুদ উচ্চারণ করে উঠলো | তাই তার নাম হলো মাহমুদ | সুলতান মাহমুদ তার কবিতা শুনে এতই খুশি হলেন যে সিংহাসন থেকে নেমে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন " আয় ফেরদৌসী, তু দরবার মারা ফেরদৌস কারদারি" মানে হে স্বর্গীয়, তুমি আমার দরবারকে স্বর্গে (ফেরদৌসে) পরিণত করেছো | সেদিন থেকেই তুষ নগরীর আবুল কাসেম, ফেরদৌসী নামে পরিচিত হলেন | চমৎকার ছিল সেই বইটা | আপনার লেখাটা পড়তে পড়তে সেই বইয়ের ভুলে যাওয়া অনেক কিছু মনে পড়লো | অনেক ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটার জন্য |

১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৩০

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.