নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৯৭১ সালের ৪ এবং ৫ই ডিসেম্বর সিলেট, গাজীপুরে যে যুদ্ধ হয়েছিল তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:৫৭


গাজীপুরের যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালের ৪থা এবং ৫ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পরিচালিত একটি সামরিক অভিযান। এটি সংঘটিত হয়েছিল কুলাউরার কাছে গাজীপুর টি ষ্টেটে। যেটি পূর্ব পাকিস্তানের সিলেট জেলায় অবস্থিত। অগ্রসরমান মিত্র বাহিনী,মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত ছিল। তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের উপর আক্রমন করেছিলো। এই যুদ্ধটা অনেকের কাছে অবশ্য সিলেটের যুদ্ধ[ নামেও পরিচিত।অভিযানটি ১৯৭১ সালের ২৭শে নভেম্বর বিকালে ৪/৫ গোরখা রাইফেলস কদমতলার দিকে অগ্রসর হয়। স্থানটি পূর্ব পাকিস্তানের সিলেট বিভাগের সিমান্তের কাছাকাছি কুলাউরা/মৌলভীবাজার সেক্টরের উল্টোদিকে অবস্থিত। তার আগে এই এলাকা দখলের জন্য ছোট ছোট আক্রমণ পরিচালিত হয়েছিল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৮ম মাউন্টেইন ডিভিশনের উল্টোদিকে ছিল ৫৯ তম মাউন্টেইন ব্রিগেড। এই এলাকাটি সীমান্ত পর্যন্ত চা বাগান ঘেরা পাহাড় দিয়ে পরিবেষ্টিত ছিল। আরো পশ্চিমে দৃষ্টিসীমার ভেতরে আরো কিছু ছোট ছোট পাহাড় চমৎকার প্রতিরক্ষামূলক ব্যাবস্থা নিশ্চিত করেছিলো। সেই সাথে ভারতীয় সিমান্তে নজরদারীর জন্য জায়গাটি ছিল চমৎকার। পাহাড়গুলো ছিল কুলাউরার ঠিক পূর্বে এবং সিলেটের সমতল অঞ্চল যেখান থেকেই শুরু হয়েছিল। কুলাউরা ছিল যোগাযোগ ব্যাবস্থার কেন্দ্র এবং রেলপথে ধর্মনগর, গাজীপুর,মৌলভীবাজার, সিলেটের সাথে সংযুক্ত ছিল।

গাজীপুরের ধর্মতলা, কদমতল, সাগরনাল, গাজীপুর, কুলাউরা, রোডের অনেকটা অংশ গাজীপুর চা বাগানের ম্যানেজারের বাংলো এবং দক্ষিণপূর্ব দিকের উঁচু এলাকা দিয়ে গিয়েছিল। চা গাছের সারি এই এলাকায় গোলকধাঁধা সৃষ্টি করেছিলো এবং এর গলি গুলো স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বেষ্টিত ছিল। এর উত্তরের উঁচু জমি ছিল নজরদারির জন্য চমৎকার স্থান। এখানকার ব্যাঙ্কারগুলো কলা গাছ দিয়ে আচ্ছাদিত ছিল যা কেলাকাবাগিচা নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর রাত ৯ টার দিকে ৬ষ্ঠ রাজপুত বাহিনী গাজীপুর আক্রমণ করে এবং শক্ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ভোরের কিছুক্ষন আগে সেটি স্পষ্ট হয় যে আক্রমণটি ব্যার্থ হয়েছে এবং সাহায্য চেয়ে পাঠানোর মত সময়ও নেই। এই অবস্থায় ৪/৫ গোর্খা রাইফেলস, সীমান্ত বাহিনী ১৯৭১ সালের ৪/৫ ডিসেম্বর পরবর্তী রাতের গাজীপুর দখল অভিযানের ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। তারা ৪থা ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে। আগের রাতের আক্রমণের সম্মুখীন হয়ে পাকিস্তানী বাহিনী যে কোন দিক থেকে যে কোন রকম আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সতর্কতামূলক ব্যাবস্থা গ্রহণ করে। তাদের সাহায্যের জন্য কামান প্রস্তুত ছিল। পাকিস্তানের চমৎকার সংগঠিত ২২ বেলুচ কোম্পানি গাজীপুরের কেলাকাবাগিচায়, স্কাউটদের সাথে ম্যানেজারের বাংলোতে এমএমজির কারখানায় এবং কোম্পানির সদর দফতরে এক প্লাটুন করে নিয়োজিত ছিল এবং সাথে অন্যান্য পরিদর্শনমূলক এবং সাহায্যকারী যন্ত্রপাতি ছিল। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামূলক ব্যাবস্থা নির্মাণাধীন এলাকা কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল এবং তাদের সুসজ্জিত ব্যাঙ্কার প্রস্তুত ছিল। ৪/৫ গোর্খা রাইফেলস পর্যায়ক্রমিক ভাবে ডেল্টা কোম্পানির সাহায্যে কেলাকাবাগিচা, আলফা কোম্পানির সাহায্যে ম্যানেজারের বাংলো, ব্রাভো এবং চার্লি কোম্পানির সাহায্যে কারখানা অঞ্চল দখলের পরিকল্পনা করেছিলো। সিও টু বা শ্যাম কেলকার কে বি এবং সি কোম্পানি পরিচালিত কারখানা আক্রমণের প্রধান কমান্ডার করা হয়েছিল। লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিল ডেল্টা কোম্পানি। রাত ৮ টা ৩০ মিনিটের দিকে সামনের সৈন্যরা কেলাকাবাগিচার উত্তরের উঁচু জায়গায় পৌঁছায় এবং পাকিস্তানী বাহিনী কামান, এমএমজি এবং এলএমজি দিয়ে আক্রমণ করে। প্রায় ৮.৪৫ নাগাদ কোম্পানি আক্রমণ শুরু করে। একদম শেষ মুহূর্তে পাকিস্তানীরা আক্রমনে সুবিধা করতে পারে এবং তারা হিংস্র হয়ে ওঠে। সম্মুখ যুদ্ধে অনেকেই আহত হয়। পরবর্তী লক্ষ্য ম্যানেজারের বাংলোর চারপাশে ব্যাঙ্কার থাকার কারণে এটি রীতিমত একটি দুর্গ হয়ে উঠে। চা গাছের সারির ফাঁক থেকে এবং কেলাকাবাগিচার সামনে থেকে আক্রমণ পরিচালিত হতে থাকে। রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে আলফা কোম্পানির কোন খবর পাওয়া যাচ্ছিল না ফলে ব্রাভো কোম্পানির উপর ম্যানেজারের বাংলো দখলের দায়িত্ব পরে। আলফা কোম্পানি জানত না যে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ব্রাভো কম্পানিকে তাদের কাজটি দেয়া হয়েছে। ব্রাভো কোম্পানি যখন কেলাকাবাগিচার পাশ থেকে আক্রমণ করছিল তখন সৌভাগ্যবশত আলফা কোম্পানি একটি সঙ্কীর্ণ বাঁকের আড়ালে ছিল। ম্যানেজারের বাংলো দখলের সময় ব্রাভো কোম্পানির কমান্ডার চোয় সহ অনেকেই হতাহত হয়েছিল। অন্যদিকেও তখন সিও টু বা মেজর শ্যাম কেলকার এর মৃত্যুতে নীরবতা বিরাজ করছিল। আক্রমণের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় সিও টু বা মেজর শ্যাম কেলকার গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান। চা কারখানার শেষ এবং ফলাফল নির্ধারণকারী আক্রমণটি কমান্ডিং অফিসারের এবং এ বি হরলিকার, এমভিসির বক্তব্যে তুলে ধরা হলোঃ

এই অবস্থায় আমি আমার গ্রুপের সাথে ম্যানেজারের বাংলো এবং কারখানার গেটের মাঝামাঝি ছিলাম। কারখানার গেট আমার প্রায় ১০০ মিটার সামনে ছিল। কিন্তু একটি এমএমজি গুলিবর্ষণের মাধ্যমে গেটটি সুরক্ষিত রেখেছিল। আমি লক্ষ্য করলাম ৫-৬ জন জওয়ান (সৈন্য) আমার সামনে এবং কয়েকজন জওয়ান (সৈন্য) আমার পেছনে। আমরা একটি লম্বাটে (কিন্তু কম প্রশস্ত, ড্রেনের মত) নালায় অবস্থান নিয়েছিলাম, যা ছিল শুকনো এবং অগভীর। কিন্তু এর গভীরতা আমাদের বিস্ফোরিত কামানের গোলার উড়ন্ত স্প্লিনটার থেকে এবং শোঁ শোঁ করে ছুটে যাওয়া ছোট গুলি থেকে নিরাপত্তা দিয়েছিল।…………. শুধুমাত্র চার্লি কোম্পানি তাদের কমান্ডারের অধীনে এগিয়ে যাচ্ছিল। এমএমজি টি অবিরত ভাবে গুলিবর্ষণ করে যাচ্ছিল।………….. আরও একটু দেরী হলে কারখানা এলাকার নিয়ন্ত্রণ শত্রুপক্ষের নিয়ন্ত্রনে চলে যেতে পারতো।……….. আমি জানতাম পরবর্তী মুহূর্তে আমি মারা যেতে পারি, কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম যে কারখানা এলাকার নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে থাকবে। যখন আমি লক্ষ্য করলাম আমার সামনে যারা আত্মগোপন করে ছিল তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং পেছনে যারা ছিল তারা অন্ধকারে তাদের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে, আমিও দ্রুত দৌড়ে কয়েক গজ সামনে এগিয়ে গেলাম। কি হচ্ছে আমি বোঝার আগেই আমার সামনের ছোট দলটি মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে গেটের দিকে দৌড়ে গেল। তারা কারা ছিল? ডেয়ারডেভিলস? আমি জানি না। তখন অন্ধকার ছিল এবং আমি তাদের মুখ দেখতে পারছিলাম না। কারখানার ভেতরে ঢোকার পর আমরা সবাই যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ছড়িয়ে পরলাম। শত্রুপক্ষ তাদের এমএমজি, অস্ত্র, গুলি এবং অন্যান্য আত্মরক্ষার যন্ত্রপাতির সাথে তাদের কিছু মৃত এবং আহত লোকজন ফেলে পালিয়ে গেল।

যুদ্ধে যে ফলাফল ঘটেঃ
অবশেষে গাজীপুর চা বাগান এলাকা দখলমুক্ত হয়। সেই আক্রমণের মাধ্যমে ২২ বেলুচের দখলদারীত্বের অবসান হলো এবং ১৯৭১ সালের ৬ই ডিসেম্বর ৪/৫ গোর্খা রাইফেলসের কুলাউরা দখলের মাধ্যমে তাদের ব্যাটালিয়ন সদরদফতর কুলাউরা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। পাকিস্তানী বাহিনী প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হয়। গাজীপুরের সেই এলাকায় ১৫ জন পাকিস্তানী যোদ্ধার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায় এবং পাকিস্তানীরা কমপক্ষে আরও ১৫ জনের মৃতদেহ এবং প্রায় ৪০ জন আহত যোদ্ধাকে বহন করে নিয়ে যায়। ভারতীয়দেরও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। একজন অফিসার মেজর এসজি কেলকার এবং বিভিন্ন পদের ১০ জন নিহত হন। ৪ জন অফিসার,জশি রাওয়াত, ভিরু রাওয়াত, শাহরাওয়াত এবং ওয়াই ভারত, ২ জন জেসিও ডেল্টা সিনিয়র জেসিও সুবেদার বাল বাহাদুর থাপা সহ এবং অন্যান্য পদের প্রায় ৫৭ জন আহত হন।

তথ্যসূত্রঃ Click This Link

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:


যাঁরা দেশকে মুক্ত করেছিলেন, তাঁদেরকে দেশ চালাতে না দিয়ে ভুল মানুষেরা দেশ চালায়েছে

২| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:০৬

চিন্তক মাস্টারদা বলেছেন: দেশটা ছিল আমাদের। আমাদের অদক্ষতার কারণে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধটা ছিল ভারত পাকিস্তানের। তারপরও স্বাধীন হলাম। কিন্তু এখনো স্বাধীনতার স্বাদ পেলাম না। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ছিলাম এক জুলুমে নিপতিত এখন আরেক জুলুমে নিমজ্জিত। বারবার শকুনেরা দেশকে শাসনের নামে শোষণ করেছে। কোন রাজনৈতিক দল আমার মুক্তিবাহিনীরর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেনি। বাস্তবায়ন করেনি ২৫ মার্চের রাতে নিহত হওয়া অসংখ্য নিরপরাধ মানুষের স্বপ্ন। ১৪ ডিসেম্বরে শহিদ হওয়া বাঙালি বুদ্ধিজীবী ভাইদের চিন্তার কোন বাস্তবায়িত রূপ দেখিনি। দেখেছি কেবল, 'মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন' নামে নিজেদের চরিতার্থের পূজা।

৩| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১৪

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: সময় নিয়ে পড়বো তাই প্রিয়তে রাখলাম।

৪| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: প্রথম মন্তব্যকারী আমার ওস্তাদ চাঁদগাজী তার সাথে আমি সহমত পোষন করছি।

৫| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৫৮

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: পারলে কাদেরিয়া বাহিনীর বীরত্বগাথা নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েন তো; উনার যে বিশাল বাহিনী আর অস্ত্রশস্ত্র ছিলো, শুনেছি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র সমর্পন না করলে টাঙ্গাইলে পুনরায় যুদ্ধ করতে হতো।

৬| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১১

কামরুননাহার কলি বলেছেন: যুদ্ধ যে কি সেটা চোখে না দেখা গেলে বুঝা যায় না। তাইনা ভাইয়া। তবে যুদ্ধের অনেক লেখা পড়ে বোঝা যায় যে সেই সময়ের দিনগুলো কতটা ভয়নাক ছিলো।

৭| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৩

তারেক ফাহিম বলেছেন: আমরা যারা যুদ্ধ দেখিনি, আপনার ব্লগ পড়ে কিছুটা হলেও অাঁচ করতে পারবে।

৮| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৮

পবন সরকার বলেছেন: ভায়াবহ যুদ্ধের ঘটনা। এরকম ঘটনাগুলো বাংলার ইতিহাসে লিখে রাখা দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.