নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৬


১৯৭১ সালের ১০ই থেকে ১৪ই ডিসেম্বর পাকিস্তানের নর পিচাশ পাক সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর সকল বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে।সে সময় এই কাজে বাংলাদেশীদের মধ্যে অনেক রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর লোকেরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিল।১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এই দেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য হাজার হাজার শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি এবং সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের ওপর চালায় নির্মম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন তারপর করা হয় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল যে তাদের পরাজয় অনিবার্য। তারা আরো মনে করেছিল যে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা বেঁচে থাকলে এই দেশের মাটিতে তারা কখনই বসবাস করতে পারবে না। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন এবং পঙ্গুত্ব করতে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের বাসা এবং কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়।শেষ করে দেয়া হয় দেশের আগামী ভবিষৎকে,১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্যতম বর্বর ঘটনা ।শুধু তাই না এ ঘটনা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিতও করেছিল।

পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের বাংলাদেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরপরই নিকট আত্মীয়রা মিরপুর এবং রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের লাশ খুঁজে পায়। বর্বর পাক বাহিনী ও রাজাকাররা এই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেছিল। বুদ্ধিজীবীদের লাশজুড়ে ছিল,সে সকল প্রতিটি আঘাতের নির্মম চিহ্ন, চোখ, হাত,পা বাঁধা, কারো কারো শরীরে একাধিক গুলিরও চিহ্ন, এমনও দেখা গেছে অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে ও খুঁচিয়ে। লাশের ক্ষত চিহ্নের কারণে অনেকেই তাদের প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি। ১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সঙ্কলন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন,নিউজ উইক,এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায় যে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৭০ জন ছিল।

পাকিস্তান নামক অগণতান্ত্রিক এবং অবৈজ্ঞানিক রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই বাঙালিদের বা পূর্বপাকিস্তানীদের সাথে পশ্চিমপাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্র বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকে। তারা প্রথমত বাঙালিদের মুখের ভাষা এবং সংস্কৃতির উপর আঘাত হানে। এরই ফলশ্রুতিতে বাঙালির মনে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হতে থাকে এবং বাঙালিরা সেই অবিচারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু করেন। সেই সকল আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকতেন সমাজের সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবীরা। তারা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ভাবে বাঙালিদের বাঙালি জাতীয়তা বোধে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ফলেই জনগণ ধীরে ধীরে নিজেদের দাবি এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে থাকে যা পরবর্তীতে তাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে ধাবিত করে। আর সেজন্যই শুরু থেকে বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। তাই যুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানী বাহিনী বাছাই করে করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে থাকে। তাছাড়াও যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে যখন পাকিস্তানের পরাজয় যখন শুধু সময়ের ব্যাপার তখন বাঙালি জাতি যেন শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে তাই তারা বাঙালি জাতিকে মেধা শূন্য করে দেবার লক্ষ্যে তালিকা তৈরি করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। এ প্রসঙ্গে শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে যে যুক্তিটি দেওয়া হয়েছে তা প্রাসঙ্গিক এবং যুক্তিযুক্তঃ
এটা অবধারিত হয়, বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন জাতির বিবেক, জাগিয়ে রাখেন তাদের রচনাবলীর মাধ্যমে, সাংবাদিকদের কলমের মাধ্যমে, গানের সুরে, শিক্ষালয়ে পাঠদানে, চিকিৎসা, প্রকৌশল, রাজনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের সান্নিধ্যে এসে। একটি জাতিকে নির্বীজ করে দেবার প্রথম উপায় বুদ্ধিজীবী শূন্য করে দেয়া। ২৫ মার্চ রাতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অতর্কিতে, তারপর ধীরে ধীরে, শেষে পরাজয় অনিবার্য জেনে ডিসেম্বর ১০ তারিখ হতে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দ্রুতগতিতে ।
মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি পাকিস্তানী বাহিনীর পক্ষে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল।
২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনার সাথে একসাথেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পাকিস্তানী সেনারা অপারেশন চলাকালীন সময়ই খুঁজে খুঁজে অনেক বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে থাকে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষককেও ২৫শে মার্চের সেই কালো রাতেই হত্যা করা হয়েছিল। তবে পরিকল্পিত হত্যার ব্যাপক অংশটি ঘটে যুদ্ধ শেষ হবার মাত্র কয়েকদিন আগে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তাদের প্রশিক্ষিত আধা সামরিক বাহিনী আল বদর এবং আল শামস বাহিনী একটি তালিকা তৈরি করে যেখানে এই সব স্বাধীনতাকামী বুদ্ধিজীবীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ধারণা করা হয় পাকিস্তানী বাহিনীর পক্ষে এই কাজের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি। কারণ স্বাধীনতার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত বঙ্গভবন থেকে তার স্বহস্তে লিখিত ডায়েরী পাওয়া যায় যাতে অনেক নিহত এবং জীবিত বুদ্ধিজীবীদের নাম পাওয়া যায়।তাছাড়াও আইয়ুব শাসন আমলের তথ্য সচিব আলতাফ গওহরের এক সাক্ষাৎকার হতে জানা যায় যে ফরমান আলীর তালিকায় তার বন্ধু কবি সানাউল হকের নামও ছিল। আলতাফ গওহরের অনুরোধক্রমে রাও ফরমান আলি তার ডায়েরীর লিস্ট থেকে সানাউল হকের নাম কেটে দেন। তাছাড়া আলবদরদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা তিনিই করেছিলেন বলে তার ডায়েরীতে একটি নোট পাওয়া যায়।এছাড়াও তার ডায়েরীতে হেইট ও ডুসপিক নামে দুজন মার্কিন নাগরিকের কথাও পাওয়া যায়। তাদের নামের পাশে ইউএসএ এবং ডিজিআইএস লেখা ছিল।তার মধ্যে হেইট ১৯৫৩ সাল থেকে সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীতে যুক্ত ছিলেন এবং ডুসপিক ছিল সিআইএ এজেন্ট। এই কারণেই সন্দেহ করা হয় পুরো ঘটনার পরিকল্পনায় সিআইএর ভূমিকা ছিল।
তথ্যসূত্রঃ Click This Link
http://www.nytimes.com/1971/12/19/archives/125-slain-in-dacca-area-believed-elite-of-bengal-125-found-slain.html
https://www.state.gov/documents/organization/48049.pdf
অনুবাদ কৃতজ্ঞতা বাংলা পিডিয়া।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৩০

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: জানা ছিল না জানা হল। সুন্দর একটি পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৬

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:০৭

নাইম রাজ বলেছেন: ভালো লাগল শেয়ার।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৭

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ নাইম রাজ ভাই।

৩| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১৫

মামুন ইসলাম বলেছেন: চমৎকার লেখনী।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৮

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই।

৪| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৪৬

কামরুননাহার কলি বলেছেন: যখন এই ঘটনা গুলো পড়ি তখন খুব খারাপ লাগে।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৮

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৫| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমি মাঝে মাঝে ভাবি- যদি সেই সময় আমি থাকতাম, তাহলে দেশের জন্য আমার ভূমিকা কি হতো।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৯

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.