নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মানভূম জেলায় বাংলা ভাষা আন্দোলন 1940,,\'\'শুন বিহারী ভাই তোরা রাখতে লারবি ডাঙ্গ দেখাই,,

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:৪৭


মানভূমে বাংলা ভাষা আন্দোলন ১৯৪০ এর দশকের শেষ থেকে ১৯৫০ এর দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত মানভূম জেলায় বা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের পুরুলিয়া জেলা, অনুষ্ঠিত এক আন্দোলন ছিল।যা তৎকালীন বিহার রাজ্যের মানভূম জেলায় বসবাসকারী বাংলাভাষী মানুষদের মধ্যে জোর করে হিন্দী ভাষা চাপিয়ে দিতে গেলে তারা বাংলা ভাষার জন্য এই আন্দোলন করেন এবং একই সাথে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে নতুন জেলা তৈরী করতে সরকারকে বাধ্য করেন।১৭৬৫ সালে দ্বিতীয় শাহ আলম বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হলে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বিহার এবং উড়িষ্যা সমেত সমগ্র বাংলার দেওয়ানী দিতে বাধ্য হন। কোম্পানি বাংলার জঙ্গলমহল এলাকায় কর সংগ্রহ করা শুরু করলে তারা প্রশাসনিক সুবিধার জন্য সেই এলাকাকে ১৭৭৩ সালে পাঞ্চেত, ১৮০৫ সালে জঙ্গল মহল এবং ১৮৩৩ সালে মানভূম এই তিন ভাগে ভাগ করেন। মানভূম জেলার সদর দপ্তর হয় মানবাজার। এই জেলা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলা এবং বর্ধমান জেলা ও ঝাড়খন্ড রাজ্যের ধানবাদ, ধলভূমও সেরাইকেলা খার্সোয়ান জেলার অংশ নিয়ে ৭,৮৯৬ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে তৈরী করা হয়।পরবর্তীকালে ১৮৪৫, ১৮৪৬, ১৮৭১ ও ১৮৭৯ সালে মানভূমকে আরো ভাগ করা হয়।১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও বাংলা ভাষাভাষী সমগ্র মানভূম এবং ধলভূম জেলাকে নতুন তৈরী বিহার উড়িষ্যা রাজ্যের অন্তর্গত করা হয়। আরএই বিভক্তির ফলে ওই অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ জানালেও সেই সিদ্ধান্ত রদ হয়নি। জাতীয় কংগ্রেসের ১৯২০ সালের নাগপুর অধিবেশনে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ পুনর্গঠনের দাবী আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৩৫ সালে বিহারে জাতীয় কংগ্রেস মন্ত্রীত্ব লাভ করার পর ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে মানভূম বিহারী সমিতি নামক এক সংগঠন গড়ে ওঠে।আর তার বিপরীতে মানভূম জেলার বাঙ্গালীরা ব্যারিস্টার পি আর দাসের সভাপতিত্বে মানভূম সমিতি নামক সংগঠন তৈরী করেন। বিহার সরকার আদিবাসী এবং উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রাথমিক স্তরের বিদ্যালয় খুলতে শুরু করলে বাঙ্গালীরাও বাংলা স্কুল খুলতে তৎপর হয়ে পড়েন।সে সময় সতীশচন্দ্র সিংহ রাঁচি, পালামৌ, সিংভূম এবং মানভূম জেলা নিয়ে ছোটনাগপুর নামক এক নতুন প্রদেশ গঠন বা বাংলার সঙ্গে পুনরায় সংযুক্তির প্রস্তাব করেন।১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে জাতীয় কংগ্রেসের ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের নীতির বাস্তব রূপায়নের দাবিতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিকতা বেড়ে উঠতে শুরু করে। সেই পরিস্থিতিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু দেশের স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তাকে বিবেচনা করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রদেশ গঠনের সুপারিশ করেন এবং সেই হিসেবে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন বা দার কমিশন নিয়োগ করেন। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর মাসে কমিশন মত দেয় যে স্বাধীনতার সাথে সাথে জাতীয় কংগ্রেস তার অতীত অঙ্গীকার থেকে অব্যহতি পেয়েছে এবং শুধুমাত্র ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন না করে ভারতের ঐক্যবদ্ধতাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।সেই কমিশনের প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের এক উচ্চপর্যায়ের কমিটি নিয়োজিত হয়।
১৯৪৮ সাল থেকে তৎকালীন বিহার সরকার ওই রাজ্যের মানুষদের ওপর হিন্দী ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। প্রাথমিক স্তরে এবং সরকারি অনুদান যুক্ত বিদ্যালয়ে হিন্দী মাধ্যমে পড়ানোর নির্দেশ আসে। জেলা স্কুলগুলিতে বাংলা বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং হিন্দীকে বিহার রাজ্যের আনুষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।মানভূম জেলার বাংলাভাষী মানুষদের ক্ষোভ আঁচ করে জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র মুক্তি পত্রিকায় ১৯৪৮ সালে ৮ই মার্চ হিন্দী প্রচার, বাংলা ভাষাভাষীদের বিক্ষোভ ও মানভূম জেলার বঙ্গভুক্তির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হল।এই বিষয়টি বিবেচনার জন্য ১৯৪৮ সালের ৩০শে এপ্রিল বান্দোয়ান থানার জিতান গ্রামে অতুলচন্দ্র ঘোষের সভাপতিত্বে জেলা কমিটির অধিবেশন হলে সেখানে প্রতিনিধিদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। সে বছর ৩০শে মে পুরুলিয়া শহরের অধিবেশনে মানভূমের বঙ্গভুক্তির প্রস্তাব ৫৫-৪৩ ভোটে খারিজ হয়ে গেলে অতুলচন্দ্র ঘোষ সহ সাইত্রিশজন জেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করে ১৯৪৮ সালের ১৪ই জুন পাকবিড়রা গ্রামে লোক সেবক সংঘ তৈরী করেন। বিহার সরকার বাংলাভাষীদের প্রতিবাদসভা এবং মিছিল নিষিদ্ধ করলে মানভূম জেলায় আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। লোক সেবক সংঘ ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত সত্যাগ্রহ আন্দোলন এবং ১৯৫৪ সালের ৯ই জানুয়ারি থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারি টুসু সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সে আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগদান করে। হাজার হাজার বাংলাভাষী মানুষ কারাবরণ করে।সে সময় বেশ কয়েকটি টুসু সঙ্গীত জনগনের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। তার মধ্যে একটি হলঃ

শুন বিহারী ভাই
তোরা রাখতে লারবি ডাঙ্গ দেখাই


স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বাংলা ভাষা আন্দোলনের দুইজন নারী কর্মী লাবণ্যপ্রভা ঘোষ এবং ভাবিনী মাহাতো
আর সেই আন্দোলনের ফলে ১৯৫৩ সালের ২৯শে ডিসেম্বর ভারত সরকার সৈয়দ ফজল আলির সভাপতিত্বে হৃদয়নাথ কুঞ্জরু এবং কবলম পানিক্করকে নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন তৈরী করেন। সেই কমিশন ১৯৫৫ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে মানভূম জেলায় তদন্ত করে সেই বছর ১০ই অক্টোবর তাদের বক্তব্য জমা দেন। তাদের বক্তব্যে মানভূম জেলা থেকে বাঙালী অধ্যুষিত এলাকাগুলি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ১৯টি থানা নিয়ে পুরুলিয়া জেলা নামে এক নতুন জেলা তৈরী করার প্রস্তাব দেন। তারা মানভূম জেলা থেকে ধানবাদ মহকুমার ১০টি থানা এবং পুরুলিয়া মহকুমার ২টি থানা বিহার রাজ্যে রেখে দেয়ার প্রস্তাব করেন। অপরদিকে ধলভূম পরগণায় বাংলাভাষীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্বীকার করেও যেহেতু ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ সে জেলায় বসবাস করেন সে কারণে কমিশন জামসেদপুরকে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করতে বা ধলভূম পরগণা ভেঙ্গে বাংলায় আনতে রাজি ছিলেন না। সেই প্রস্তাবে ১৯৫৬ সালের ১৭ থেকে ২০শে জুন বিহারপন্থীরা মানভূম জেলায় ধর্মঘটের ডাক দেন। অপরদিকে বাংলা ভাষা আন্দোলনকারীরা ধানবাদ বিহারের অন্তর্ভুক্তিতে খুশি ছিলেন না।
১৯৫৬ সালের ২৩শে জানুয়ারী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীকৃষ্ণ সিং পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার উভয় রাজ্যের সংযুক্ত করে পূর্বপ্রদেশ নামে এক নতুন প্রদেশ গঠনের প্রস্তাবনা করেন। তাঁরা প্রস্তাব দেন যে, ঐ প্রদেশের সরকারি ভাষা হিসেবে হিন্দী এবং বাংলা উভয়েই স্বীকৃত হবে। মন্ত্রীসভা, বিধানসভা, পাবলিক সার্ভিস কমিশন একটি করে থাকলেও হাইকোর্ট থাকবে দুইটি। সেই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা ছাড়াও বামপন্থী দলগুলিও প্রতিবাদ করেন। দুই রাজ্যে সেই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মধ্যে বিহার বিধানসভায় ২৪শে ফেব্রুয়ারী প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যায়। লোক সেবক সংঘের কর্মীরা ১৯৫৬ সালের ২০শে এপ্রিল পাকবিড়রা গ্রাম থেকে বাঁকুড়া, বেলিয়াতোড়, সোনামুখী, পাত্রসায়র, খন্ডঘোষ, বর্ধমান, পান্ডুয়া, মগরা, চুঁচুড়া, চন্দননগর, হাওড়া হয়ে কলকাতা শহরের দিকে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা শুরু করে ৬ই মে কলকাতা পৌঁছায়, ৭ই মে মহাকরণ অবরোধের কর্মসূচী অনুসারে বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ পৌঁছছে ৯৬৫ জন কারাবরণ করেন। এই ঘটনার তিন দিন আগে ৪ঠা মে উভয় রাজ্যের সংযুক্তির প্রস্তাবনা বাতিল হয়ে যায়।১৯৫৬ সালের ১৭ই আগষ্ট বাংল-বিহার সীমান্ত নির্দেশ বিল লোকসভায় এবং ২৮শে আগষ্ট রাজ্যসভায় পাশ হয়। ১লা সেপ্টেম্বর তাতে ভারতের রাষ্ট্রপতি সই করেন। তার ফলে ১৯৫৬ সালের ১লা নভেম্বর ২৪০৭ বর্গ মাইল এলাকার ১১,৬৯,০৯৭ জন মানুষকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নতুন জেলা পুরুলিয়া তৈরী হয়। সম্পূর্ণ ধানবাদ মহকুমা বিহার রাজ্যে রয়ে যায়।
তথ্যসূত্রঃ
http://calcuttahighcourt.nic.in/district_courts/purulia.htm

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:১৬

কানিজ রিনা বলেছেন: অথচ কলকাতাবাসি বাংলা ভাষার তেমন
কোনও আনুষ্ঠানিক দিকনির্দেশ মুলোক
কার্জক্রম চালু নাই। দায়সারা ভাবে একুশে
ফেবরুয়ারী পালন করে দুই একটা চ্যানেলে।
ধন্যবাদ বিস্তারিত তুলে ধরায়।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৩০

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ কানিজ আপা।সকাল সকাল সুন্দর একটা কমেন্ট করে পোস্টের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়ায় আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
শুভ সকাল।

২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:৫২

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ভালো লাগল। :)

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:২৯

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.