নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিব্বতের লাসা বিভাগে অবস্থিত "দ্গা\'-ল্দান বৌদ্ধবিহার" এর ইতিহাস

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৪:০৬


দ্গা-ল্দান বৌদ্ধবিহার অথবা দ্গা-ল্দান-র্নাম-র্গ্যাল-গ্লিং হল মধ্য তিব্বতের লাসা বিভাগে অবস্থিত দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের অন্যতম একটা প্রধান বৌদ্ধবিহার। ১৪১০ খ্রিষ্টাব্দে ফাগ-মো-গ্রু-পা রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা গোং-মা-গ্রাগ্স-পা-র্গ্যাল-ম্ত্শানের আর্থিক সাহায্যে ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পা নামক দ্গে-লুগ্স বৌদ্ধ ধর্মসম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা লাসা শহর থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার পূর্বে ৪৩০০ মিটার উচ্চতায় 'ব্রোগ-রি পর্বতে দ্গা-ল্দান বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করেন। ভবিষ্যতের বুদ্ধ মৈত্রেয়ের পবিত্র বাসস্থান তুষিতা স্বর্গের নামকরণ অনুসারে এই বিহারের নামকরণ করা হয়। সে বছরেই বিহারের মূল মন্দির এবং সত্তরটির ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। ১৪১৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পা চক্রসম্বর, বজ্রভৈরব এবং গুহ্যসমাজতন্ত্র নামক অনুত্তরযোগতন্ত্রের তিন তন্ত্রকে প্রতিনিধিত্বকারী একটি ত্রিমাত্রিক মন্ডল নির্মাণ করেন, যা তার জীবনের চতুর্থ মহান কৃতিত্ব হিসেবে পরিচিত। সপ্তদশ শতাব্দীর তিব্বতী থাংকায় গুহ্যসমাজতন্ত্রের দেবতা অক্ষোভ্যবজ্র ও তাঁর সঙ্গিনী স্পর্শবজ্রা
গুহ্যসমাজতন্ত্র সতেরোটি অধ্যায় নিয়ে গঠিত। উত্তরাতন্ত্র বা ব্যাখ্যাতন্ত্র নামক একটি পৃথক তন্ত্রকে অনেক সময় এই তন্ত্রের অষ্টাদশ অধ্যায় হিসেবে মনে করা হয়। অনেক পন্ডিতের মতে প্রথম বারোটি অধ্যায় এই তন্ত্রের মূল অংশ এবং পরবর্তী অধ্যায়গুলি পরবর্তীকালে যোগ করা হয়েছে। গুহ্যসমাজতন্ত্র মহাযোগতন্ত্রের অন্তর্গত। তিব্বতে এই তন্ত্রকে র্নাল-ব্যোর-ব্লা-মেদ-র্গ্যুদ নামে অভিহিত করা হয়। সর্বতথাগততত্ত্বসংগ্রহ নামক প্রাচীন পুঁথিতে এই তন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। সংস্কৃত ভাষায় এবং তিব্বতী এবং চীনা অনুবাদে এই তন্ত্রের পুঁথির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।বৌদ্ধ প্রবাদানুসারে, বজ্রধর গুহ্যসমাজতন্ত্র সম্বন্ধে ওড্ডিয়ানের রাজা ইন্দ্রভূতিকে সর্বপ্রথম শিক্ষাদান করেন। পরবর্তীকালে এই তন্ত্র বিভিন্ন বৌদ্ধ পন্ডিতদের মধ্যে দিয়ে প্রচারিত হয়। এই তন্ত্র অষ্টম শতাব্দীর বৌদ্ধ পন্ডিত বুদ্ধশ্রীজ্ঞানের মাধ্যমে জ্ঞানপদ ঐতিহ্য বা য়ে-শেস-ঝাব্স-লুগ্স নামে প্রচারিত হয়। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আর্য ঐতিহ্য বা গ্সাং-'দুস-'ফাগ্স-লুগ্স নামে অপর একটি ঐতিহ্য নাগার্জুন, আর্যদেব এবং চন্দ্রকীর্তি প্রমুখ বৌদ্ধ পন্ডিতদের টীকাভাষ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তিব্বতে মার-পা-ছোস-ক্যি-ব্লো-গ্রোস এই তন্ত্রের প্রচলন করেন।জ্ঞানপদ ঐতিহ্যের কেন্দ্রীয় দেবতা পীতবর্ণের মঞ্জুবজ্র মঞ্জুশ্রীর অপর একধরণের রূপ। এই দেবতার তিনটি মুখ ও ছয়টি হাত। তার ডানদিকের মুখ শ্বেতবর্ণের এবং বামদিকের মুখমন্ডল লালবর্ণের। তার হাতে একটি তরোয়াল, একটি পুস্তক, একটি তীর এবং একটি ধনুক রয়েছে। আর্য ঐতিহ্য গুহ্যসমাজতন্ত্রের কেন্দ্রীয় দেবতার নাম নীলাভ কালো বর্ণের অক্ষোভ্যবজ্র। তিনি পাঁচ ধ্যানী বুদ্ধের অন্যতম অক্ষোভ্যের একটি রূপ। অক্ষোভ্যবজ্র তার হাতে পাঁচ ধ্যানী বুদ্ধের বাকি চার বুদ্ধের বিভিন্ন চিহ্ন ধারণ করে থাকেন। তিনি তার ডানদিকের হাতে বৈরোচনের চক্র ও অমিতাভের পদ্ম এবং রত্নসম্ভবের মণি ও অমোঘসিদ্ধির তরোয়াল ধারণ করে থাকেন। এছাড়াও তার অপর দুই হাতে তিনি বজ্র এবং ঘন্টা ধারণ করে থাকেন।দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহারের প্রধানদের দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পা, বা গানদেন ত্রিপা বলা হয়ে থাকে। স্মোন-লাম-লেগ্স-পা'ই-ব্লো-গ্রোস নামক অষ্টম দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পার সময় থেকে এই পদে পর্যায়ক্রমিক ভাবে ব্যাং-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়র প্রধান বা ব্যাং-র্ত্সে-ছোস-র্জে এবং শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়র প্রধান বা শার-র্ত্সে-ছোস-র্জে অধিষ্ঠিত থাকেন। ব্স্তান-'দ্জিন-লেগ্স-ব্শাদ নামক ছত্রিশতম দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পার সময়কালে এই বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শার-র্ত্সে এবং ব্যাং-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ের ভিক্ষুদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে এবং শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ের ভিক্ষুরা বিহারের প্রশাসনিক ক্ষমতা দখল করেন। এই রকম বিরোধের নিরসনের জন্য নিয়ম করে দেওয়া হয় যে বিহারের দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পা সর্বোচ্চ সাত বছরের বেশি প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।

দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহার তিব্বতের অন্যতম প্রধান একটি ধর্মীয় বিশ্বপবিদ্যালয় হিসেবে গড়ে ওঠে। ম্খাস-গ্রুব-র্জে-দ্গে-লেগ্স-দ্পাল-ব্জাং নামক বিহারের তৃতীয় প্রধানের সময়কালে এই বিহার দ্পাল-ল্দান, য়ার-'ব্রোগ, পাঞ্চেন শাক্যশ্রী এবং ছোস-গ্রাগ্স এই চারটি মহাবিদ্যালয়ে বিভক্ত ছিল। পরবর্তীকালে দ্পাল-ল্দান এবং য়ার-'ব্রোগ, মহাবিদ্যালয় দুটিকে একত্র করে ব্যাং-র্ত্সে মহাবিদ্যালয় এবং পাঞ্চেন শাক্যশ্রী ও ছোস-গ্রাগ্স মহাবিদ্যালয় দুটিকে একত্র করে শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ে পরিণত করা হয়। ব্যাং-র্ত্সে কথাটির অর্থ উত্তর দিকের শিখর এবং শার-র্ত্সে কথাটির অর্থ পূর্ব দিকের শিখর।

ব্লো-স্ব্যোং-ন্যি-মা'ই-'ওদ গ্রন্থের রচয়িতা হোর-স্তোন-নাম-ম্খা'-দ্পাল-ব্জাং ব্যাং-র্ত্সে মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। অপরদিকে শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গ্নাস-ব্র্তান-রিন-ছেন-র্গ্যাল-ম্ত্শান । দ্গে-লেগ্স-দ্পাল-ব্জাং নামক বিহারের একুশতম প্রধানের সময়কালে নবপ্রতিষ্ঠিত গ্সাং-ফু-ন্যাগ-রোং মহাবিদ্যালয়কে শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গে একত্রীভূত করা হয়।ব্যাং-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ে ক্লু-'বুম, ত্শা-বা, ব্সাম-লো, হার-গ্দোং , গ্সের-স্কোং, ত্রে-হোর,র্গ্যাল-রোং, স্বা-তি,ম্ঙ্গা'-রিস, র্দো-রা ,ব্রা-ন্যি, গো-বো এবং কোং-পো এই তেরোটি বিভাগ বা খাং-ত্শান ছিল। পরবর্তীকালে স্বা-তি ও ম্ঙ্গা'-রিস বিভাগদুটির অবলুপ্তি ঘটানো হয় এবং ফা-রা নামক একটি নতুন বিভাগ খোলা হয়। অপরদিকে শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ে র্দো-খাং, ফু-খাং , ন্যাগ-রে, ল্হো-পা, জুং-ছু , থে-পো , চো-নি, র্তা-'ওন , ম্ঙ্গা'-রিস, সোগ-পা এবং গুং-রু এই এগারোটি বিভাগ ছিল।

ভিক্ষুরা তাদের জন্মভূমি অনুসারে এই বিভাগে ভর্তি হতে পারত যেমন মঙ্গোলিয়ায় জন্মগ্রহণ করা কোন ভিক্ষু হার-গ্দোং বিভাগে ভর্তি হতে পারত।দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহারের এই দুইটি মহাবিদ্যালয়ে ভিক্ষুরা সূত্র ও তন্ত্র উভয় বিষয় সম্বন্ধে অধ্যয়ন করতে পারতেন। উভয় মহাবিদ্যালয়েই ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পা, র্গ্যাল-ত্শাব-র্জে-দার-মা-রিন-ছেন এবং ম্খাস-গ্রুব-র্জে-দ্গে-লেগ্স-দ্পাল-ব্জাং এই প্রথম তিনজন বিহার প্রধানের রচিত গ্রন্থ সম্বন্ধে পড়ানো হত। তাছাড়া শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ে পান-ছেন-ব্সোদ-নাম্স-গ্রাগ্স-পা নামক পঞ্চদশ দ্গা'-ল্দান-খ্রি-পা রচিত সূত্র সম্বন্ধীয় গ্রন্থগুলি সম্বন্ধে শিক্ষাদান করা হত।এগুলো সবই ছিল এই বিহারের প্রধান।
গণচীনের বিরুদ্ধে ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতীদের বিদ্রোহের সময় দ্গা'-ল্দান বৌদ্ধবিহার সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে লাল রক্ষক এই বিহারের ওপর গোলাবর্ষণ করে। বিহারের ভিক্ষুদের বিহারের প্রতিষ্ঠাতা ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পার সংরক্ষিত দেহ পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য করা হয়, শুধু তার মাথার খুলি একজন ভিক্ষু কোন রকমে সরিয়ে রাখতে সমর্থ হন।১৯৮০-এর দশকে এই বিহারের পুনর্নির্মাণ শুরু হয়।তিব্বতের নির্বাসিত জনগণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে মুন্ডগোদ নামক স্থানে ভারত সরকার দ্বারা প্রদত্ত জমিতে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে দ্গা-ল্দান বৌদ্ধবিহার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এই বিহারে ১৩,০০০ ভিক্ষু বসবাস করতেন। যদিও এই বিহারে প্রাচীন পাঠ্যক্রমকেই অনুসরণ করা হয়, তবুও আধুনিক কলাকৌশল, যোগাযগ ব্যবস্থা, কৃষি উন্নয়ন সংস্থা, হস্তশিল্পকেন্দ্র প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের পরিষেবার সূচনা করা হয়েছে। র্দো-র্জে-শুগ্স-ল্দান বিতর্কে চতুর্দশ দলাই লামাকে বিরোধিতা করায় ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে শার-র্ত্সে মহাবিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় র্দো-খাং বিভাগের প্রায় পাঁচশো ভিক্ষুকে এই বিহার থেকে নির্বাসিত করা হলে তাঁরা ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে নিকটেই শার গাদেন নামক একটি নতুন বৌদ্ধবিহার স্থাপন করেন। এরফলে র্দো-খাং বিভাগটি বন্ধ হয়ে যায় ।


তথ্যসূত্রঃ Click This Link
https://studybuddhism.com/en/advanced-studies/history-culture/monasteries-in-tibet/gelug-monasteries-ganden

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: তিব্বত যাবো।
নিজের চোখে সব দেখে আসবো।

০২ রা মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৬

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: আমারে সাথে নিয়ে যদি সুরভি ভাবীকে সাথে না নেন।

২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২৬

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ভালো ।

০২ রা মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৭

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.