নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা কলেজ

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:২৬


ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা কলেজ যা বেথুন কলেজ নামে পরিচিত।এই কলেজটি বেথুন সাহেব নামে বিখ্যাত জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন প্রতিষ্ঠিত করেন।বিটন ছিলেন এক ভারত প্রেমী ব্রিটিশ রাজকর্মচারী ।তিনিই সর্ব প্রথম বেথুন বালিকা বিদ্যালয় বা বেথুন স্কুল ও বেথুন কলেজ প্রতিষ্ঠা করে বাংলার নারী জাগরণের সূত্রপাত ঘটান। বেথুন কলেজ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মহিলা কলেজ। ইংরাজীতে মহাকাব্য লিখতে উদ্যত মাইকেল মধুসূদন দত্তকে বাংলায় লিখতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন এই বেথুন সাহেবই। ১৮১৮ সালে কলকাতায় ডেভিড হেয়ার স্কুল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকেই, বাঙালিদের মধ্যে নারীর শিক্ষার অধিকার পুরুষের সমান কিনা তা নিয়ে চলছিল তর্ক বিতর্ক। এই সোসাইটির একজন সচিব রাজা রাধাকান্ত দেবের নারীশিক্ষার পক্ষে মত থাকলেও স্কুল সোসাইটির অন্যান্য সদস্যদের অনেকেই এবিষয়ে একমত ছিলেন না। ১৮২১ সালে ব্রিটিশ ফরেন সোসাইটির মিস মেরি অ্যান কুককে ভারতে নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য পাঠানো হয়। সোসাইটির মতানৈক্যের কারণে মেরি অ্যান কুককে তার কাজ নির্বাহ করা থেকে বিরত থাকতে হওয়ায় তিনি চার্চ মিশন সোসাইটির সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন। তার প্রচেষ্টায় প্রায় ২৭৭টি বালিকা ১০টি স্কুলে পড়বার সুযোগ পায়। এর পর লর্ড আর্মহার্স্টের স্ত্রী লেডি আর্মহার্স্টের উদ্যোগে "বেঙ্গল লেডিস সোসাইটি" গঠন করা হয়। ১৮৩৮ সালের এক সরকারি রিপোর্ট অনুসারে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ১৯টি মেয়েদের স্কুলে প্রায় ৪৫০টি বালিকাকে ভর্তি করা হয়েছিল।তখনও বাংলার সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েদের এইসব স্কুলে যাবার আনুমতি ছিলনা।
জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন ভারতে নারী শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করলে পন্ডিত মদন মোহন তর্কালঙ্কার, রামগোপাল ঘোষ, রাজা দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

কোলকাতার মির্জাপুরে রাজা দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের দান করা জমিতে হিন্দু মহিলা বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। ১৮৪৯ সালের ৭ই মে এর নাম পরিবর্তন করে বেথুন স্কুল রাখা হয়। পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই স্কুলের কার্যকারী সমিতির প্রথম সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন তার যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এই স্কুলকে দান করেন। কর্ণওয়ালিস স্কোয়ারের পশ্চিমদিকে ১৮৫০সালের ৬ই নভেম্বর বাংলার ডেপুটি গভর্নর স্যার জন লিটার একটি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটনের মৃত্যুর পর বেথুন স্কুলকে ওই ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়।
বেথুন স্কুলের সভাপতি বিচারপতি স্যার রিচার্ড গার্থ ও সম্পাদক মনোমোহন ঘোষের প্রচেষ্টায় ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দের ১লা আগস্ট বেথুন স্কুল বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়।১৮৭৯ সালে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বেথুন স্কুলের প্রথম স্নাতক কাদম্বিনী বসু উচশিক্ষার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাঁর স্বীকৃতিতে বেথুন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। একজন মাত্র ছাত্রী কাদম্বিনী বসুকে নিয়ে কলেজের পঠন-পাঠন শুরু হয়।
ইয়ং বেঙ্গল দল ভারতীয় নারীর কল্যাণের জন্য সদা মুখর ছিল। পূর্বতন হিন্দু স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র এবং তখনকার বারাসত গভমেন্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্যারী চরণ সরকার ১৮৪৭ সালে কলকাতার উপকণ্ঠে বারাসতে বালিকাদের জন্য একটি অবৈতনিক বিদ্যালয় পতিষ্ঠা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কালীকৃষ্ণ মিত্রর নামে। যার নাম রাখা হয় কালীকৃষ্ণ গার্লস হাই স্কুল। সম্ভবতঃ এই স্কুলটিই বেথুন সাহেবকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল যখন তিনি সেখানে কাউন্সিল অফ এডুকেশনের সভাপতি হিসাবে পরিদর্শনে যান।দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,মদন মোহন তর্কালঙ্কার ইত্যাদি কয়েকজনের সুপারিশে স্কুল কমিটির সচিব হিসাবে নিযুক্ত হয়ে বেথুন সাহেব ১৮৪৯ সালে সেকুলার নেটিভ ফিমেল স্কুল (ধর্মনিরপেক্ষ দেশীয় নারী বিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেন । কলকাতায় এইধরণের প্রচেষ্টা এই প্রথম ছিল এবং তা তৎকালীন সমাজে গভীর রেখাপাত করেছিল ১৮৫১ সালের ১২ই অগষ্ট বেথুন মারা যান। তিনি নিজের স্থাবর ও অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি স্কুলকে দান করে যান১৮৫৬ সালে তৎকালীন সরকার এটি অধিগ্রহণ করে এবং ১৮৬২ সালে এর নামে রাখা হয় বেথুন স্কুল ।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ এবং আরো কয়েকজন উদারপন্থী কুড়ি বছর ধরে স্কুলটির ক্রিয়াকাণ্ড সমর্থন করলেও স্কুলটি বৃহত্তর জনসমর্থন হতে বঞ্চিত ছিল। ১৮৬৮ সালে তদানীন্তন প্রধানা শিক্ষিকা মিস পিগট পদত্যাগ করতে বাধ্য হন কারণ তিনি খ্রীষ্ট ধর্ম পঠনপাঠনের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন যা ভারতীয় সমাজে ভীতিপ্রদ ঘৃণ্য বিদেশী ধর্ম হিসাবে পরিগণিত ছিল ।

স্কুলটি স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের কট্টর অংশ থেকে এর বিরুদ্ধে তীব্র পতিক্রিয়ে দেখা দেয়। যখন চারিদিকে ঢাকা পালকি বা চতুর্দোলায় চড়ে এর ছাত্রীরা সড়ক দিয়ে নতুন স্কুলে পড়তে যেত তখন লোকজন তার দিকে অবাক হয়ে তাকাত এবং গালিগালাজ করত।তখনকার বিখ্যাত কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তখনকার জনমানসকে সুন্দর ভাবে চিত্রিত করেছেন:

যত ছুঁড়িগুলো তুড়ি মেরে কেতাব হাতে নিচ্ছে যবে,
এ বি শিখে, বিবি সেজে, বিলাতি বোল কবেই কবে;
আর কিছুদিন থাকরে ভাই! পাবেই পাবে দেখতে পাবে,
আপন হাতে হাঁকিয়ে বগি গড়ের মাঠে হাওয়া খাবে।


স্কুলটি প্রথম দিকে বহু দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে চলে যতদিননা স্কুলটি অ্যানেট অ্যাক্রয়েড ও দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী ইত্যাদি কিছু ব্রাহ্ম সমাজীয় লোকেদের পরিচালিত বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলিত হয়। বেশ কিছু মেধাবী ছাত্রী এরপর স্কুলটিতে যোগ দেন কাদম্বিনী বোস, সরলা দাস, অবলা দাস এবং সুবামাপ্রভা বসু, যাঁদের সবাই পরবর্তীকালে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। বেথুন স্কুল বাঙালি ভদ্রলোক দের চোখ খুলে দিয়েছিল। এর দেখাদেখি আরো অনেক মেয়েদের স্কুল এর পরে খুলতে শুরু করে। দ্র্রষ্টব্য বিষয় হল ধর্মনিরপেক্ষ স্কুলগুলি খোলার পর পূর্বের ধর্মপাঠ সর্বস্য স্কুলগুলি উঠে যায়।

উনিশ শতকের রক্ষণশীল হিন্দু সমাজে নারীর পুঁথি পাঠ পাপ বলে মানা হত। তারা বিশ্বাস করত সাক্ষর পত্নীর স্বামী নিরক্ষর পত্নীর স্বামীর থেকে তাড়াতাড়ি মারা যায়। এমনকি উনিশশো আশির দশকেও নারীশিক্ষা তীব্র বিরোধিতার চলতে থাকে। অনেক দশক ধরেই বেথুন স্কুলের ছাত্রসংখ্যা অপরিবর্তিত থেকে যায়। এদের অধিংশই ছিল ব্রাহ্ম পরিবারের। ১৮৮৮ সালে বেথুন স্কুলের ১৩৬ জন ছাত্রীর মধ্যে ৮৭ জন ছিল ব্রাহ্ম, ৪৪ জন হিন্দু, এনং ৫ জন খ্রিষ্টান। ১৮৮৬ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজকে পুনর্নবীকরণ করে একটি উচ্চবিদ্যালয়ে (সেকেণ্ডারী স্কুল) পরিণত করা হয়। ১৮৯০ সালে ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেবছর ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলেও মেয়েদের ভর্তির পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়। তার অর্থ ব্রাহ্ম ও খ্রিষ্টান পরিবারের থেকে বড় সংখ্যক মেয়েরা বেথুন ছাড়া অন্যান্য স্কুলেও যেত। ১৮৯৪ সালে ১৩৮ জন ছাত্রীর মধ্যে ৭০ জন ছিল হিন্দু, ৫৫ জন ব্রাহ্ম, এবং ১৩ জন খ্রিষ্টান। ঊনবিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষ প্রান্তে এসে তবেই বাংলায় নারী শিক্ষাবিরোধী ভ্রান্ত ধারণাগুলি ধীরে ধীরে অপসারিত হয়।
তথ্যসূত্রঃ History of Bethune College

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:৪৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


১৭০ বছর আগে, সামান্য কর্মচারী হয়ে এক ইংরেজ কলেজ করেছেন; ২০১৮ সালে, জাতির টাকায় আমাদের প্রেসিডেন্ট 'টোকাই'দের জন্য একটা স্কুলও করতে পারছেন না, এরা কি হতভাগা লোকজন!

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:৫১

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: চাঁদগাজী ভাই জাতীর জন্য আমরা বড় দুর্ভাগ্য জনিত মানুষ।

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৩০

খায়রুল আহসান বলেছেন: অজানা তথ্য, আলোকপাত করার জন্য ধন্যবাদ। ১৮৯৪ পর্যন্ত সেই স্কুলে একজনও মুসলমান ছাত্রী ছিলেন না। প্রথম কেউ হয়তো এসেছিলেন তারও অনেক পর। কবে এসেছিলেন, তা জানেন কি?
পোস্টে ভাল লাগা + +

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:১৬

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: আপনার মন্তব্যে লেখায় উৎসাহ ফিরে পেলাম ।ধন্যবাদ এবং শুভকামনা জানাই আপনাকে ।

৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৩৬

blogermassud বলেছেন: আপনার পোস্ট মানেই অন্যরকম কিছু।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:১৭

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ মাসুদ ভাই ।

৪| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:২৫

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: লেখা পড়ে অনেক কিছু জানলাম। কিন্তু প্রথম কমেন্ট পড়ে খারাপ লাগছে:(

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:১৮

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ চাঁদগাজী ভাই সত্য কথাই বলছে।

৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:১৬

শায়মা বলেছেন: খুব ভালো লাগলো বেথুন কলেজের ইতিহাস ভাইয়া।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:২০

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল।ধৈর্য সহকারে সময় নিয়ে পোস্টটি পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।

৬| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:১০

প্রামানিক বলেছেন: পোষ্ট পড়ে অনেক কিছু জানা হলো। ধন্যবাদ

৭| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: ভেরি গুড পোষ্ট।

৮| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৯

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: পোষ্ট পড়ে অনেক ভালো লাগল।

৯| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:১৮

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: অজানা তথ্য জানা হল আপনার এ কষ্ট সাধ্য পোস্টের খাতিরে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.