নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসাদ কাজল

আসাদ কাজল

খেয়ালি, পড়তে ভালোবাসি, মাঝে মাঝে নিজেই কিছু লিখি।

আসাদ কাজল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুস্যুত

১০ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৭:৪৭

সকাল থেকেই মেজাজটা চড়ে আছে জাহেদের। গতরাতে ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় তিনটা বেজে যায়। সকাল সাতটা বাজতে না বাজতেই জ্যানেট এর ফোন। ভুলটা ওরই। দেশের একটা প্রথম সারির কম্পিউটার সলিউসন্স অর্গানাইজেশনে সিনিয়র সিস্টেম এনালিসট জাহেদ। ক্লায়েন্ট কল এড্রেস করার জন্য তার অধীনে তিনটা গ্রুপে মোট ন’জন আছে। ওদের ব্রিফ করা আছে নেহায়েত জীবন মরন সমস্যা না হলে অফিস সময়ের বাইরে ওর সাথে যোগাযোগ করবে না। কিছু ক্লায়েন্ট একটু কমপ্লিকেটেড হয়েই থাকে। ওরকম স্পর্শকাতর কিছু গ্রাহককে ও ইচ্ছে করেই নিজের সেল নাম্বার দিয়ে রেখেছে। অহেতুক জটিলতা এড়ানোর জন্যে। এমনি এক ক্লায়েন্ট জ্যানেট কোলটার। জিওলজিস্ট। একটা ব্রিটিশ জিওলজিকাল সার্ভে কোম্পানিতে কাজ করে। বাংলাদেশে ওরা অফশোর সার্ভে করছে একটা। ওই কোম্পানিতে পুরো সিস্টেম সাপোর্ট দিচ্ছে জাহেদরা। অফশোরে তিনটা পয়েনটে সার্ভে চলছে। সার্ভে পয়েন্ট এর সাথে লজিস্টিক সাপোর্ট এর জন্যে চট্টগ্রামে লোকাল অফিস বসানো হয়েছে। জ্যানেট বসে ঢাকা বারিধারার অফিসে। সে বাংলাদেশের অপারেসন্স চীফ হিসেবে কাজ করছে। ওদের রেজিওনাল হেড অফিস হচ্ছে দুবাই। সার্ভে পয়েন্ট, চট্টগ্রাম অফিস, ঢাকা অফিস এসবের সাথে দুবাই অফিসের অপারেসন্স দেখতে গিয়ে ওর যে গলদঘর্ম অবস্থা, তা দেখে জাহেদ ভাবল কম্পিউটার সলিউসন্স নিয়ে ওর বোঝা কিছুটা কমানো উচিত। এটা ওর মানবিক দায়িত্ব বলেই মনে হলো। গত তিন বছর ওই দায়িত্বের পার্শপ্রতিক্রিয়ায় অনেক কিছুতেই জড়াতে হয়েছে জাহেদকে। আজ সকালেরটাও অমন কিছু। সকাল সাতটাতেই ওর মোবাইলে টানা রিং বাজতে থাকলে অনেকটা বিরক্ত হয়ে অবশেষে ফোনটা ধরে। ফোনে জ্যানেটের অধৈর্য গলা

- আহ, ঘুম থেকে উঠলে তাহলে! এখনই আমার বাসায় চলে এসো প্লিজ! ইট’স আর্জেন্ট!

জ্যানেটের সাথে ওর সম্পর্কটা খুব কাছের বন্ধুর মতো। তাই জাহেদ জানে এটা জ্যানেটের এস ও এস। আর দেরি না করে ও বেরিয়ে পড়ে। জ্যানেট থাকে বারিধারায় ওর অফিসের উপরের তলায়। অতো সকালে তেমন জ্যামে পড়তে হলো না জাহেদকে। জ্যানেটের অফিসে ঢুকেই দেখে তিনজন অফিস স্টাফসহ জ্যানেট মুখ গোমরা করে বসে আছে ওর লিভিং রুমে। জাহেদকে দেখেই জ্যানেট ওঠে দাঁড়ায়,

- চলো, এখুনি বেরুতে হবে। যেতে যেতে বলছি।‘

- একটু বসি, অনেক দূর থেকে এসেছি। আগে বলো কি হয়েছে।‘

জাহেদ একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে। জ্যানেট জানালো ওর এসি কাজ করছে না কাল রাত থেকে। কোম্পানিকে ফোন করা হয়েছে। ওদের টেকনিশিয়ান আসবো আসছি করে রাতে আর আসে নি, এখন সকাল ৮টা বাজে, এখনও কারো দেখা নাই। এদিকে এসি নষ্ট থাকার কারণে ও সারারাত ঘুমোতে পারে নি। ও চায় এখনই জাহেদের সাথে ওই অফিসে গিয়ে এসি ফেরত দিয়ে নতুন আরেকটা এসি নিয়ে বাসায় আসবে। মেজাজটা খিচড়ে ওঠে জাহেদের। ইংরেজগুলো এখনও ভাবে এইসব গরীব দেশে ওরা যা চায়, তাই হবে। জাহেদ বলে,

- ঠিক আছে। তুমি ফ্রেস হয়ে নাও। চলো বের হই। আমি এখনও কিছু খাই নি। আগে ব্রেকফাস্ট সারবো কোথাও বসে, তারপর এসি অফিসে যাবো।‘

এসি’র কাগজপত্র হাতে নিয়ে দেখে ওটা কেনা হয়েছে স্টেডিয়াম পাড়ার দোকান থেকে। সুযোগটা ছাড়া ঠিক হবে না। অনেকদিন হাত ডুবিয়ে গরুর নেহারি খাওয়া হচ্ছে না। জ্যানেটকে গাড়িতে বসিয়ে জাহেদ সোজা এসে পড়ে তোপখানা রোডে। তোপখানা রোডে সচিবালয়ের উলটো পাশে কিছু রেস্তোরাঁ আছে। ওদেরই একটাতে ঢুকে পড়ে ওরা। জ্যানেটের এখনো মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। ও কফি ছাড়া কিছুই খাবে না। তাই ওর জন্য কফি আর নিজের জন্য গরম গরম গরুর নেহারি আর নান রুটি আনতে বলে হাতে মুখে একটু পানির ঝাপটা দিতে বেসিনের দিকে এগোয় জাহেদ। হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে বসতে না বসতেই খাওয়া হাজির। খাওয়া আসতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে জাহেদ। অনেকটা চোখ বন্ধ করেই খাচ্ছিলো। খাওয়ার ফাঁকে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে অবাক চোখে জ্যানেট দেখছে ওকে। ওই অবসথায়ই একটা আঙ্গুল উঠিয়ে ওকে চুপ থাকতে বলে। মিনিট দশেক পরে চেটেপুটে খাওয়া শেষ করে চা’র অর্ডার দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আবার টেবিলে এসে বসে জাহেদ।

- এবার বলো।‘ বলে শুরু করে জাহেদ।

- তোমার খাওয়া দেখে মনে হচছিলো গত তিনদিন তুমি কিছুই খাওনি বা আগামী তিনদিন তোমাকে উপোস রাখা হবে বলে সরকার সমন জারি করেছে।‘ জ্যানেট বলে।

চা চলে এসেছে। চায়ে একটা চুমুক দিয়ে জাহেদ বলে,

- বিষয়টা তা নয়, বিবর্তনের কোন একটা পর্যায়ে আমরা যে মাংসাশী ছিলাম তা মাঝে মাঝেই মনে পড়ে যায়, তাই হাড় চাবানোর সুযোগ পেলে দাঁত কেমন কড়মড় করে ওঠে।‘

এবার গাম্ভীর্য খানিকটা সরে যায় জ্যানেটের। হেসে বলে,’

- সবাই তেমন নয়।‘

- ‘তা ঠিক, কেউ কেউ বিবর্তিত হয়ে খানিকটা ওপরের স্তরে ওঠে গেছে। যেমন তোমার কথাই বলি। তোমার সামনের দিকের ইনসাইসর বা কেনিন দাঁতগুলো কেমন একটু ভোঁতা হয়ে গেছে। ধারালো নয় আমাদের মতো।‘

এবার হো হো করে হেসে উঠলো জ্যানেট। ‘

- তোমার সাথে কথায় পারা যাবে না। চা শেষ হয়েছে, এবার ওঠো।‘

বলে নিজেই উঠে দাঁড়ালো জ্যানেট। বিল চুকিয়ে জ্যানেটকে নিয়ে স্টেডিয়াম মার্কেটের দোকানে চলে আসে জাহেদ। ম্যানেজার লোকটা ভালোই। ওদের কথা শুনে আরেকটা নতুন এসি সহ টেকনিশিয়ান পাঠিয়ে দেয় তখনই। জ্যানেটও ওদের সাথেই যায়। ব্যাপারটা মিটে গেলে অফিসে চলে আসে জাহেদ।

দিলখুসায় বিসিআইসি ভবনের সাত তলায় অফিস জাহেদের। বিল্ডিঙে ঢোকার মুখেই বড় নোটিশটা চোখে পড়লো। লিফট নষ্ট, লিফটের কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য কতৃপক্ষ দুঃখিত। মনে মনে কতৃপক্ষের পিণ্ডী চটকাতে চটকাতে সিঁড়ি চড়তে থাকে জাহেদ। অফিসে ওর কামরায় ঢুকে এসি’র ঠাণ্ডা বাড়িয়ে দিয়ে চেয়ারে ঝিম মেরে বসে থাকে। ওর মোবাইল আর একসটেনশন লাইন বাজতেই থাকে থেকে থেকে। কাঁচের দরজা ঠেলে কমার্শিয়ালের ইমতিয়াজ ঢুকলে চোখ তুলে তাকায় জাহেদ।

- ডলফিন গ্রুপের সার্ভারের জন্য হার্ড ড্রাইভ এই শিপমেন্টেও এলো না জাহেদ ভাই।

কিছু না বলে নির্বিকার চোখে ইমতিয়াজকেই যেন তাকিয়ে দেখতে থাকে জাহেদ। ভাবছে দিনের শুরুটা আর কতটা খারাপ হতে পারে। ওর এই তাকানোতে অস্বস্তি বোধ করে ইমতিয়াজ।

- এবার আমাদের দিক থেকে কোনও ঘাটতি ছিল না জাহেদ ভাই। ওদেরকে বেশ কয়েকবার রিমাইন্ডার দেয়া হয়েছে, ওরা নিশ্চিত করেছে এবার মিস হবে না, তারপরেও হয়ে গেল। আপনি চাইলে ই মেইলগুলো আপনাকে ফরোয়ার্ড করে দিতে পারি।

- আমি যে সমস্যায় পড়েছি, তোমাদের কার গাফিলতি কোথায় এটা নির্ণয়ে এর কোন সমাধান আছে কি? তোমাকে এই কাজের গুরুত্ব ভাল করেই বোঝানো হয়েছে। তুমি জান ওদেরকে আরেকটা সার্ভারের সাথে লিঙ্ক আপ করে আপাতত কাজ চালানো হচ্ছে। ওটাও কোন কারণে ক্রাশ করলে এর দায়িত্ব কে নেবে? নাকি ওদের অফিস গুটিয়ে চলে যেতে বলে দেব?

- এরকমতো হয় না, কিভাবে যে হয়ে গেল... মানে জাহেদ ভাই আপনি জানেন ... আমতা আমতা করতে থাকে ইমতিয়াজ।

- এটা সেকেন্ড টাইম হলো। প্রথম দফা এরকম হলে ওভারলুক করা যায়, দ্বিতীয় দফা একই ভুল কি করে হয়? তোমরা ইনভয়েস কনফার্ম করেছ বলেই এল সি ওপেন হয়েছে, শিপমেন্ট এসেছে। ইনভয়েসে যে ওটা ছিল না কারো চোখে পড়েনি?

- ভুলটা ওখানেই হয়ে গেছে, নতুন মেয়েটা এসেছে...

- খোঁড়া অজুহাত দিয়ো না ইমতিয়াজ। আমি কোনকিছুই আর শুনতে চাই না। তুমি যেভাবে পারো পার্সেল বা কুরিয়ার, আমাকে ওটা এনে দাও। তা নাহলে ডলফিন গ্রুপে বড় কোন সমস্যা হলে আমি তোমাদের একিউজ করে এম ডি বরাবার চিঠি পাঠিয়ে দেব।



ওদের কোম্পানিটার বয়স বছর ত্রিশেক। প্রথমদিকে ইলেকট্রনিক্স, কপিয়ার, ফ্যাক্স এসব নিয়ে বাংলাদেশের অফিস পাড়ায় ব্যবসা শুরু করলেও ধীরে ধীরে কম্পিউটার ও কম্পিউটার এক্সেসরিজে ঝুঁকে পড়ে। গত বিশ বছরে কম্পিউটার, কম্পিউটার এক্সেসরিজ ও নেটওয়ার্কিং সাপোর্টে বাংলাদেশের প্রথম পছন্দের একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আর জাহেদ জানে এটা সম্ভব হয়েছে, যাঁরা ব্যবসাটা করছেন তাঁরা তা ভালো বোঝেন বলেই। এখানে এইচ আর, সেলস, সাপোর্ট, লজিস্টিক সবগুলো ডিপার্টমেন্ট এমনভাবে লিঙ্ক করা আছে যে একটা আরেকটার পিঠে চাবুক মারছে, ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে সবাই। মোবাইলে সকাল থেকে একগাদা ফোনকল আর মেসেজ জমে আছে। কয়েকটা বেশ জরুরী। সামিরা ফোন করেছে বেশ ক’বার। কি কারণে কে জানে। অতো সকালে ওর কি প্রয়োজন থাকতে পারে মাথায় আসছে না জাহেদের। জরুরী মিটিং আছে সেলস টীম আর হেড অব অপারেশনস এর সাথে। মিটিং থেকে বেরিয়ে ছুটতে হবে নর্দার্ন ব্যাংকের গুলশান ব্রাঞ্চে। ওদের কিছু রাউটার সমস্যা করছে, তাছাড়া ওরা নতুন একটা সেট আপে যাবে। নতুন সেট আপে যাবার আগে একটা টেকনিকাল ফিজিবিলিটি রিপোর্ট চায় ওরা। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, নতুন কোন ঝামেলা না আসলে, সন্ধ্যায় জাকিয়ার সাথে দেখা করার কথা। ইন্টারকমে হেড অব অপারেশনস এর পি এ জলি আপা’র তাগাদা শুনে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে দাঁড়ায় জাহেদ।



আজ সকাল থেকেই জাকিয়ার মনটা উৎফুল্ল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সামিরার গায়ে হাত দিয়ে দেখে জ্বর নেই। গত দিন চারেক ধরেই সামিরার জ্বর। ঋতু পরিবর্তনের জন্যেই এমন হচ্ছে হয়তোবা। মেয়েটা এমনিতেই খাবার খেতে চায় না। প্রতিবার খাবার নেয়া মানে এক ঘণ্টার একটা প্রোগ্রাম। এর মধ্যে জ্বর জারি হওয়া মানে কিছু না খেয়ে শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে যাওয়া। পড়াশোনা শেষ করে ব্যাংকের চাকুরীই পছন্দ করেছিল জাকিয়া। ওর একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও শ্রম দিয়ে দ্রুত কিছু প্রমোশনও পেয়ে যায়। জাহেদের সাথে ছড়াছাড়ি হবার পর সামিরাকে দেখা শোনা করতে গিয়ে ও বুঝতে পারে ব্যাংকের চাকুরীতে সময় দেয়া সমভব নয় আর। ওর পড়াশোনার রেজাল্টগুলো ভালো হবার কারণে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দু এক জায়গায় ঢুঁ মারতেই একটাতে ওকে কনফার্ম করে ফেলে। সকাল দশটা থেকে দুটা পর্যন্ত ক্লাস থাকে। ওই চার ঘন্টা বাদে এখন পুরো সময়টা মেয়ের সাথে কাটাতে পারে। জাহেদের গ্রামের বাড়ি থেকে ওর মা’র পাঠানো কাজের মেয়েটা এখনও আছে জাকিয়ার সাথে। জাহেদই জোর করে ওকে গছিয়ে দিয়েছে। মেয়েটা সামিরাকে খুব পছন্দ করে, সামিরাও। তাই জাকিয়া বিশেষ আপত্তি করেনি। আর দুদিন পরেই সামিরা চার বছরে পা দিবে। মেয়েটা অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। জন্মদিন নিয়ে ও নিজেই অনেক প্ল্যান করছে। কাকে কাকে দাওয়াত দিবে নাম বলছে। কে কি গিফট দিবে তার আগাম ধারনা করছে। বাবাকে নিয়ে অনেক প্ল্যান করছে। জাকিয়া জানে জাহেদ কি রকম ব্যস্ত থাকে আজকাল। ও আদৌ সামিরার জন্মদিন মনে রেখেছে কিনা কে জানে। আজ বিকেলে ওর সাথে দেখা করার কথা, দেখা যাক। কাজের মেয়েটাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে অনেকটা তাড়াহুড়া করেই ক্লাস নিতে বের হয়ে যায় জাকিয়া।



জাকিয়া আর জাহেদের সম্পর্কটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থা থেকেই। জাকিয়া ইকোনমিক্সে আর জাহেদ কম্পিউটার সায়েন্সে পড়তো। জাহেদের দুবছরের ছোট বোন সেঁজুতি’র মাধ্যমে জাকিয়া আর জাহেদের পরিচয়। জাহেদ বন্ধুদের সাথে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে সায়েন্স এনেক্স বিল্ডিং এর নিচে আড্ডা দিত। সেঁজুতি জাহেদের সাথে দেখা করতে এলেই জাকিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আসতো। শুরুর দিকে সেঁজুতির আগ্রহে আসলেও ধীরে ধীরে জাকিয়ার আগ্রহে ওদের এনেক্স বিল্ডিং এ ঢুঁ মারাটা অনেকটা নিয়মিত হয়ে যায়। এভাবেই এক সময় জাকিয়া জাহেদের সমপর্ক গাড় হয়। জাহেদ নেটওয়ার্কিং এ মাস্টার্স করে একই বিষয়ে মাইক্রোসফট সার্টিফিকেসনটাও করে ফেলে। তারপরেই চাকুরীতে যোগ দেয়। জাহেদ চাকুরীতে যোগ দিয়েই জাকিয়ার বাবা মা’র কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়। জাকিয়ার বাবা মা ভেবে দেখি বলে প্রকারান্তরে ‘না’ বলে দেন। একান্ত বাধ্য হয়েই ওরা বিয়ে করে ফেলে।



মোবাইলটা একটানা বেজে চলছে। চট্টগ্রামের জি ই সি’র মোড়ে হোটেল পেনিনসুলার এগারো তলায় একটা ডিলাক্স রুমে অনেক কষ্টে চোখ খুলে বিছানার পাশ থেকে হাতড়ে হাতড়ে মোবাইলটা নিয়ে চোখের সামনে ধরে জাহেদ।

- বাবা তুমি কোথায়?

চমকে উঠে বিছানায় বসে পড়ে জাহেদ। সামিরা ফোন করেছে। এতো সকালে? পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকায় জাহেদ। চট্টগ্রাম শহর আড়মোড়া ভাঙছে সবে। ঘড়ি দেখেনি এখনও। সাতটার মতো হবে হয়তো।

- বাবা তুমি ঘুম থেকে এতো সকালে উঠে গেছো? মা কোথায়? তোমার শরীর ভালো বাবা?

- আমাকে ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ বল নি কেন বাবা?

- ওহ আল্লাহ! হ্যাপি বার্থ ডে মা! আমি যে তোমার জন্য শপিং করতে বেরিয়েছি বাবা... তোমার জন্য ইয়া বড় একটা কেক নিতে হবে, বার্বির মতো একটা পিঙক কালারের জামা নিতে হবে...

- তুমি আমার কাছে আসো না কেন বাবা?

- আমি তো তোমার কাছেই বাবা, এই যে আমরা কথা বলছি!

- আমি তোমাকে দেখছি না কেন?

- চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাবে

- চোখ বন্ধ করলে কিছুই দেখা যায় না বাবা, তুমি কি বোকা!

- আমাকে বোকা বললে আমি কিন্তু কেঁদে দিবো বাবা

- তুমি বোকা! তুমি বোকা!... চিৎকার করতে থাকে মেয়েটা। জাহেদের বুকের ভেতরে রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে ফোঁটায় ফোঁটায়।

- তুমি এতো সকালে উঠে গেছো কেন বাবা?

- আজ আমার জন্মদিন, তাই সবাই উঠে গেছে। বাবা জানো, মা এই এত্তগুলো বেলুন নিয়ে এসেছে। আজ আমি আর মা সারাদিন ঘরে বেলুন লাগাবো। তুমি আসছো না কেন বাবা? বেলুনগুলো কে ফুলিয়ে দিবে?

- আমি এইত আসছি বাবা, এবার মাকে একটু দাও...

- না, আমার সাথে কথা বলো। জেদ করতে থাকে মেয়েটা।

জাহেদ জানে এখন ফোন কেটে দেয়া সম্ভব না। কেটে দিলে মেয়েটা অভিমানে কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলবে। তাই আরও অনেক কথা, অনেক প্রতিশ্রুতির পর ওর মাকে লাইনে পাওয়া গেল।

- আমি দুঃখিত জাহেদ। এই সকালে মেয়েটা তোমার ঘুম ভাঙগিয়ে দিল। ওর জন্মদিনে ঘুম ভেঙ্গে তোমাকে না দেখেই বায়না ধরেছে তোমার সাথে কথা বলবে।

- নাহ... ভালোই করেছে। আমাকে আজ সকালেই উঠতে হতো। আগ্রাবাদ অফিসে একবার ঢুঁ মেরে সাড়ে দশটার ফ্লাইটে ঢাকা ফিরছি।

- সত্যি করে বলতো, আজ সামিরার জন্মদিন, তোমার মনে ছিল?

- তুমি আমাকে কি মনে করো?

- আমি তোমাকে কি মনে করি, তোমাকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে অনেক আগেই।

- আমার মেয়ের জন্মদিন আমি ভুলে যাবো, এটা তুমি ভাবলে কি করে?

- দু দিন আগে আমার সাথে দেখা হবার কথা ছিল তোমার। সামিরার এবারের জন্মদিনটা একটু অন্যরকম ভাবে করার চিন্তা করেছিলে তুমি। ওটা নিয়েই কথা বলার ছিল। তুমি দেখা করো নি।

- দেখো, তুমি জানো আমি কি ধরণের চাপে থাকি অফিসের কাজ নিয়ে। হঠাৎ চট্টগ্রামে ছুটে আসতে হলো।

- আমাকে অজুহাত শুনিয়ো না জাহেদ। তোমার আমার সম্পর্ক ঐ পর্যায়ে নাই। আমাদের কারো প্রতি তোমার দায়বদ্ধতা নাই। মেয়েটা কোন অপরাধ করে নি। আমাদের ব্যর্থতা ওকে কষ্ট দিক, এটাতো আমরা কেউই চাই না।

- আচ্ছা আমি আসছি ...

জাহেদ যে শুধুমাত্র চাকুরীর খাতিরে এই ছুটোছুটি করছে, বিষয়টা এরকম না। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং ওর একটা প্যাশন। ও রাতদিন ডুবে থাকতে পারে এসব নিয়ে। বিয়ের পরও ওর কাজের ধরণের জন্য জাকিয়াকে বা সংসারে সময় দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। একটা কথা আজ ও নিজেই মেনে নেবে, চাকুরীর শুরুতে কাজের প্রতি আবেগ আর এই কাজে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নে ও বুঁদ হয়ে ছিল। নতুন সংসার বা ভালোবাসার মানুষ জাকিয়া, ওর মাথায় ছিল না। তারপর জাকিয়াও ব্যাংকে জয়েন করলে ওদের দেখা কম হবার পাশাপাশি কথাও কমে গেলো। জাকিয়ার দিক থেকে চেষ্টার ঘাটতি ছিল না। ও ব্যাংক থেকে ফেরার সময় টুকটাক বাজার করে নিয়ে আসতো। রান্না খুব একটা পারতো না কিন্তু জাহেদের পছন্দের খাবারগুলো বা নতুন কিছু করে জাহেদকে খাওয়াবার সাধনা অটুট ছিল। অথচ জাহেদ খেতে বসে এসব রান্নার পেছনে জাকিয়ার শ্রম, জাকিয়ার কষ্ট, জাকিয়ার ভালোবাসা না দেখে ওর চেষ্টার ত্রুটি দেখিয়ে দিতো। সামিরা হবার পর ওদের জীবন যেন আরও কঠিন হয়ে এলো। কে ক্যারিয়ার ছাড়বে? ছ’মাস ছুটি শেষে জাকিয়া অফিসে জয়েন করার পর যেন পুরো আকাশ মাথায় ভেঙ্গে পড়ে। দুইদিন জাহেদ ছুটি নেয় তো, দুই দিন জাকিয়া ছুটি নেয় আবার কেউ ছুটি না পেলে জাহেদের এক জুনিয়র কলিগ থাকে পাশেই, অনেক বলে কয়ে ওর বাসায় দিয়ে আসে। সে যে কি দুঃসহ স্মৃতি। শেষমেশ জাহেদের মা বাড়ি থেকে একটা কাজের মেয়ে পাঠিয়ে দেয়াতে ওরা রক্ষা পায়। ওর আর জাকিয়ার সম্পর্কটা তিক্ততা কিংবা অবিশ্বাস থেকে ভেঙ্গে যায় নি, ওরা ওটা চায় নি বলেই ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়ে আলাদা হয়ে গেছে। ওরা চায় নি ওদের ভালোবাসাটা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধটা তিক্ততা আর ঘৃণার দুঃস্বপ্নে পরিণত হোক। ওরা চায়নি ওদের ভালোবাসার অবশেষ ওদের মেয়েটা ওদের ব্যর্থতা দেখুক।

বৃহস্পতিবার, লাঞ্চের পর ফিল্ড সাপোর্ট টীমের উইকলি রিপোর্ট আর ওদের রিকুয়ারমেন্ট লিস্টে চোখ বুলাচছিল জাহেদ। সি জি এস গ্রুপের হাবগুলো এই নিয়ে দ্বিতীয়বার পাল্টে দেয়া হলো। কিছু কেবল শিপমেন্টের সময় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। সি জি এস গ্রুপে ক্ষতিগ্রস্থ কেবলগুলো টেম্পোরারি বেসিসে লাগানো হয়েছিল। বারবার হাব না পাল্টে কেবলগুলো চেক করা দরকার। ইন্টারকমে ফিল্ড সাপোর্ট টীমের নইমকে ডেকে পাঠায় জাহেদ। এই সময় ওর মোবাইলে জ্যানেটের এস এম এস আসে। নতুন একটা ছবির ডি ভি ডি পেয়েছে জ্যানেট। আজকাল এটা একটা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাহেদ বাহির থেকে খাবার কিনে জ্যানেটের বাসায় চলে আসে। কখনও কখনও অবশ্য জ্যানেট নিজেই কিছু রান্না করে। ওরা একসাথে রাতের খাবার খেতে খেতে একটা ছবি দেখে। ছবি সম্পর্কে জ্যানেটকে একটা ছোটখাটো এনসাইক্লোপিডিয়া বলা যায়। ওকে কেবল বললেই হলো কিছু মিউজিকাল ফিল্ম দেখতে চাই, ও ইংরেজি, ফ্রেঞ্ছ, স্প্যানিশ মিলিয়ে এক গাদা নাম বলে দিবে। পরিচালকের নাম সহ। কিছু ওয়ার ফিল্ম বলো, ওর কাছে আছে শ’খানেক। জ্যানেটের সাথে জাহেদ প্রথম দেখে ফিডলার অন দ্য রুফ ছবিটা। ষাটের দশকের হলিউড মিউজিকাল। এক ইহুদী পরিবারের গল্প। বিবাহযোগ্যা পাঁচ কন্যার পিতাকে কেন্দ্র করে সবগুলো চরিত্রের ঘুর্নন। কি অসাধারণ সব গানগুলো। ম্যাচ মেকার, ম্যাচ মেকার কিংবা ইফ আই অয়ার এ রিচ ম্যান গানগুলো এখনও কানে বাজে। জাহেদ ওকে দেখিয়েছে সারেং বৌ। বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ, প্রকৃতি আর ভালোবাসার গল্প ওকে যেন দুই হাতে জড়িয়ে রেখেছিলো সারাক্ষণ। ছবির দৃশ্যায়ন আর জাহেদের অনুবাদ যেন একে অন্যের পরিপূরক হয়ে গিয়েছিলো। বেশ কিছুদিন ধরে জ্যানেট ধরেছে বেইলি রোডে মঞ্চ নাটক দেখতে যাবার জন্যে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের জাকিয়ার সাথে অনেক স্মৃতি ওখানে। কি এক বিচিত্র কারণে ওর আর জাকিয়ার স্মৃতি মেশা আছে এমন কিছু জাহেদ কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না। ওদের এই সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্য ও নিজেকেই দায়ী করে। একটা মানুষের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে ও। এই অপরাধবোধ ওকে ছাড়ছে না কিছুতেই। জাকিয়া ভীষণ দৃঢ় চরিত্রের একটা মেয়ে। পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ও জাহেদকে বিয়ে করেছিলো। জাহেদের হাত ধরে ও পুরো পৃথিবীর মুখোমুখি দাঁড়াতে চেয়েছিলো। সমস্ত অপারগতা নিজের ঘাড়ে নিয়ে ভীষণ আঘাত পেয়ে ও সরে গেছে।

- তুমি আসছো না?

সন্ধ্যার মুখেই জ্যানেট ফোন করে। কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, জ্যানেটের এস এম এস এর জবাব দিতে পারেনি জাহেদ।

- দুঃখিত, কাজে ব্যস্ত ছিলাম, তোমাকে ফোন করা হয়নি।

- আহ, আসছোনা তাহলে, ঠিক আছে... জ্যানেটের গলা কেমন যেন বিষণ্ণ শোনায়

- নাহ, আসছি, একটু পরেই বের হবো অফিস থেকে। কি খেতে চাও বলো...

- সত্যি আসছো! মুহুর্তেই যেন উচ্ছ্বাসে হাওয়ায় ভাসে জ্যানেট। আজ তোমার খুব পছন্দের একটা রেসিপি ডাউনলোড করেছি। ওটা রান্না করবো। তুমি চলে এসো।

মাস তিনেক আগে আরও তিন বছরের জন্য জ্যানেটের চাকুরী এক্সটেনশন হয়েছে। সাথে সাথে জ্যানেট আর জাহেদের ঘনিষ্ঠতাও যেন বাড়ছে। আজকাল ছুটির দিনগুলো ছাড়াও সাপ্তাহিক কাজের দিনগুলোতেও ওরা একসাথে লাঞ্চ বা ডিনারের সময় করে নিচ্ছে। সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি আর্থ সামাজিক কাঠামোয় বেড়ে ওঠা, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন রঙের দু জন মানুষ যেন আবিষ্কারের নেশায় মেতে উঠেছে। কি ভীষণ আগ্রহ একে অন্যকে জানার। আর এতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে অফিসের কাজের ব্যস্ততার শেষে দুজনের একাকিত্ব।



রবিবারে কাজের চাপ এমনিতেই বেশি থাকে, বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো হঠাৎ করে সেদিনই সেট আপে যাবে এমন একটা সার্ভার ক্রাশ করে। সেলস টীম আর লজিসটিক ওটা নিয়ে সাপোর্ট টীমের ঘাড়ে চেপে বসলো। দম ফেলার ফুরসত নেই, এমন সময় জাকিয়ার ফোন! জাকিয়াতো এখন ক্লাসে থাকার কথা। এসময় ও কখনও ফোন করে না। কাজের চাপে জাহেদের মাথাও চড়ে আছে। একবার দেখে ও ফোনটা ধরলো না। টানা তিনবার বেজে উঠলে, খুব বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরে।

- কি, হয়েছে কি?

- সামিরা এক্সিডেন্ট করেছে... ফোনের ওপাশ থেকে ফোঁপাতে ফোঁপাতে জাকিয়া বললো

- মানে? চিৎকার করে উঠে জাহেদ... তোমার এখন ক্লাসে থাকার কথা, সামিরা বাসায় থাকার কথা, এক্সিডেন্ট হলো কিভাবে?

- আমরা হলি ফ্যামিলিতে আছি, তুমি এক্ষুনি চলে এসো প্লিজ...কান্নার দমকে জাকিয়ার গলায় কথা আটকে আসছে।



জাহেদের মাথা এলোমেলো হয়ে গেলো। অফিস থেকে হাসপাতাল অব্দি ও যেন উড়ে চলে এলো। ইমারজেন্সি থেকে ড্রেসিং করে, ঔষধ দিয়ে ওকে কেবিনে ট্রান্সফার করে দিয়েছে। জাহেদ কেবিনে ঢুকে দেখে বেডে শুয়ে আছে সামিরা। হাতে ব্যান্ডেজ। ঠোঁট ফুলে আছে। মুখের কয়েক জায়গায়, পেটে, হাঁটুতে চামড়া ছড়ে গেছে। পেইন কিলার দেয়ার কারণে ঘুমোচ্ছে। ঘুমের মধ্যেও ‘বাবা’ ‘বাবা’ বলে ফুঁপিয়ে উঠছে থেকে থেকে। ওর হাত ধরে ওর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছে জাকিয়া। চোখ দিয়ে এখনও ঝরঝর করে জল বেরুচ্ছে। জাহেদ পাশে বসতেই ওর হাত চেপে ধরে জাকিয়া। দুজনেই চুপচাপ বসে থাকে অনেক্ষন। তারপর জাকিয়ার কাছ থেকে ধীরে ধীরে যা জানে তা হলো, বেলা এগারোটার দিকে জাকিয়া তখন ক্লাসে, সামিরা বারান্দায় বসে খেলছিলো, কাজের মেয়েটা ছাদে কাপড় শুকোতে দিতে যায়। ও তাড়াহুড়া করে ছাদে যাবার সময় ঘরের দরোজা বন্ধ করতে ভুলে যায়। এদিকে সামিরা একটা মোড়ার উপর দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখছিলো, ও হঠাৎ দেখে বাবা যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। ও বাবাকে অনেক ডাকলেও বাবা ওর দিকে তাকায়নি। তাই ও ঘরের দরোজা খোলা পেয়ে একাই নিচে নেমে রাস্তায় চলে আসে, আর তখনই একটা মটর সাইকেলে চাপা পড়ে। তেমন সিরিয়াস কিছু হয়নি, ফ্রেকচার নাই, চামড়া ছড়ে গেছে রাস্তায় ঘষা খেয়ে।

- আমাদের কি কোথাও ভুল হয়ে গেলো জাহেদ? ... অনেকটা ফিসফিসিয়ে জাকিয়া বলে।

- আমরা বোধ করি খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছি। আমরা আমাদের ভালোবাসার অপমান দেখতে চাইনি বলে, আমাদের সম্পর্কের তিক্ততা দেখতে চাইনি বলে, আমাদের মাঝখানে অবিশ্বাস জমুক এটা চাইনি বলে, একে অপরের কাছ থেকে পালিয়েছি। আমাদের ভালোবাসার বিশ্বাসে স্পর্ধা রেখে আগামী অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড়াতে সাহস করিনি। আমরা আমাদের মেয়েটার চাওয়া পাওয়াকে মুল্য দেইনি। স্বার্থপরের মতো কেবল আমাদের কথা ভেবেছি, নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। বেঁচেছি কি? জীবন গল্প উপন্যাস নয়। আমরা চাইলেই আমাদের মতো করে বাঁচতে পারিনা, আমাদের মতো করে জীবন সাজাতে পারিনা। দুজন ভালোবাসার মানুষ একসাথে থাকলেই জীবন ফুলের বাগান হয়ে যায় না। ভালোবাসার মানুষদের বরং একসাথে হাতে হাত ধরে স্থির বিশ্বাসে, প্রেমে, জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, প্রতিকূলতার মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। আমাদের এই ব্যর্থতায় তোমার যতটুকু দায়, তার চেয়ে হাজারগুন বেশি আমার। যদি কখনও পারো ক্ষমা করে দিয়ো।

এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না জাকিয়া। জাহেদের ঘাড়ে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে উঠে। দু’হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে জাহেদ। অনেক অনেকদিন পর ওর অনেক জ্বরের শরীরের প্রতিটা কোষে যেন ঠাণ্ডা আরাম একটা অনুভুতি ছড়িয়ে পড়ে।



শেষ বিকেলের আলো রাস্তার উলটো পাশের বিল্ডিঙের কাঁচের দেয়ালে লেগে চারপাশে কেমন একটা কমলা আলো ছড়িয়ে রেখেছে। সেই আলোতে হাত ধরাধরি করে হাসপাতালের গেট পেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ায় তিনজন ভালোবাসার মানুষ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.