![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার সামনেই একটি এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো। আমি দাঁড়িয়ে আছি বাসের জন্যে। একটি যুবক ছেলে, বয়স হবে বড়জোর ২৬/ ২৭। রাস্তা পার হচ্ছিল আমার সামনে দিয়েই। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কয়েকটা গাড়ি তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো শাঁ শাঁ করে। এরপরও কয়েক সেকেন্ড পার হলো। তখনও সবকিছু ঠিক ছিল। হঠাৎ! হঠাৎ চোখের পলকেই একটি মাইক্রো বাস
এসে ২৬/ ২৭ বছরের ছেলেটিকে দিলো ধাক্কা। বিকট চিৎকার করে ছেলেটি রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে গেলো। সবকিছু আমার
সামনে দিয়েই ঘটে গেলো। কতোটা তড়িৎ
গতিতে যে ঘটলো, সেটা আমিও বুঝতে পারিনি। মনে হচ্ছে সবকিছুই স্থবির হয়ে গেছে। নড়তে-চড়তে পারছিনা। আমার
থেকে মাত্র চার-পাঁচ হাত দূরত্বে ঘটলো এই দূর্ঘটনা। মাইক্রো বাসটিকে দেখলাম আরো দ্রুত গতিতে ছুটে পালাচ্ছে। তারা হয়তো ভাবছে ছেলেটি মরে গেছে। বেঁচে থাকলেও একটু পর মরে যাবে। জীবিত
মানুষের দায় নেওয়া যায়, কিন্ত একটি লাশের দায় নেওয়া মানেই জেনেশুনে আগুনে ঝাপ দেওয়া। জেল-জরিমানা। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে ফাঁসি। আমি ছেলেটির কাছে দৌড়ে এলাম। ছেলেটি আমার থেকে চার-পাঁচ হাত দূরত্বেই পড়ে আছে। এইটুকু দৌড়ে আসতে আমার মনে হলো আমি কোন জাতীয় রেসে ৪০০ মিটার দূরত্ব এইমাত্র দৌঁড়ে এসেছি। নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে হলো। ছেলেটির দিকে তাকালাম। মাথার বামপাশ কানসহ একদম থেঁতলে গেছে। রক্তের ফোঁয়ারা বইছে সেখান থেকে। রক্ত সেখান থেকে গড়িয়ে এসে স্তুপাকারে জমা হচ্ছে ছেলেটির হাতের কাছেই। রক্তে তার নীল রঙের গেঞ্জিটা ছপ ছপ করছে। ছেলেটি মুখ হাঁ করছে আর বন্ধ করছে। মনে হয় ছেলেটি তার মাকে ডাকার চেষ্টা করছে। চরম বিপদে মানুষ পরম প্রিয় মানুষটিকেই ডাকে। তার পা দুটো অল্প অল্প নড়ছে। আমি তাকে টেনে তুললাম। তার লাল রক্তে আমার সাদা শার্ট পুরোটাই রক্তবর্ণ ধারন করলো। ছেলেটির ঠোঁট নড়ছে। মনে হয় সে কিছু একটা বলতে চাইছে। কি বলতে চাইছে সে? কি করবো কিছুই মাথায় আসছেনা। আমার শার্ট খুলে তার মাথার থেঁতলে যাওয়া অংশে বেঁধে দিলাম এই আশায় যদি রক্তপড়া একটু কমে। হঠাৎ নজর গেলো তার হাতের দিকে। সে একটি কাগজ ধরে আছে। মনে হচ্ছে কোন প্রেসক্রিপশান। সেটারও অর্ধেকটা অংশ রক্ত লেগে লাল হয়ে আছে। প্রেসক্রিপশানটা খুললাম। এটি কোন প্রেসক্রিপশান নয়। 'আবদুল আলিম স্মৃতি মেডিকেল হাসপাতাল' নামের একটি মেডিকেলের নাম আছে তাতে। তাতে রোগির নামের জায়গায় লেখা 'নীলু আক্তার'। কাগজটির কোন জায়গায় কোন ঔষধের নাম লেখা নেই। শুধু লেখা আছে 'তিন ব্যাগ ও
নেগেটিভ ব্লাড, এমার্জেন্সি'। বুঝতে পারলাম ছেলেটি কারো জন্য হয়তো ব্লাড সংগ্রহের জন্য বেরিয়েছিলো। এবং সেটা খুব এমার্জেন্সি। কাগজটি পকেটে রাখলাম। পকেটে রেখেই ছেলেটির দিকে তাকালাম। চোখ দুটো বুজে আছে। রক্ত এখনও ঝরছে। আমার হাত বেঁয়েও পড়তে শুরু করেছে। কাছের একটি হসপিটালে ছেলেটিকে নিয়ে আসলাম। ডাক্তারেরা তাকে
এমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলো এবং বললো খুব খারাপ অবস্থা। প্রচুর ব্লাড গেছে। ব্লাড দরকার। ছেলেটির ব্লাড গ্রুপ 'এ পজিটিভ', এবং এই হসপিটালে 'এ পজিটিভ' গ্রুপের ব্লাডের প্রচুর কালেকশান আছে। সুতরাং ব্লাড নিয়ে তেমন কোন ঝামেলায় যেতে হলোনা। একটি ব্যাপারে মোটামুটি একটু স্বস্তি। তাকে এমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়ার পর মনে পড়ল তার সেই কাগজটির কথা যেটা তার হাতে ছিল। খোঁজ নিয়ে জানলাম ' আবদুল আলিম স্মৃতি হাসপাতাল' টি এখান থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিনে, মফস্বলে। এদিকের ব্যাপারটি মোটামুটি গোঁজগাজ করে বের হলাম 'আবদুল আলিম স্মৃতি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। পাক্কা তিন ঘণ্টা লাগলো পোঁছাতে। মফস্বল হলেও এলাকাটি বেশ ডেভলাপড। পাকা রাস্তা-ঘাট। খোঁজ নিলাম এখানে 'নীলু আক্তার' নামের কোন পেশান্ট আছে কিনা। তারা জানালো 'নীলু আক্তার' নামের একজন রোগিই এখানে এডমিট আছেন। ডেলিভারি কেইস। ও নেগেটিভ ব্লাড লাগছে। মা আর সন্তান দুজনের অবস্থায় বিপদজনক। কাল বিলম্ব করলাম না। বললাম যে আমি ব্লাড দিতে এসেছি। আল্লাহর অসীম কৃপা যে সেই আমার ব্লাড গ্রুপও ছিল সেই দূর্লভ 'ও নেগেটিভ'। ব্লাড দিলাম। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করলাম। ওইদিকের কোন সংবাদ তাদের জানালাম না। মনের ভেতর ছেলেটির চিন্তায় অস্থির হয়ে আছি। কে জানে কি হলো সেদিকে। তখন সন্ধে ছয়'টা। আর অপেক্ষা করতে পারলাম না। নীলু আক্তারের একজন পুরুষ অভিভাবকের কাছে আমার ফোন নাম্বার দিয়ে চলে এলাম। বললাম আমাকে ফোনে জানানোর জন্য কি হয় না হয়। আমি তখনও গাড়িতে। আর পাঁচমিনিট পর ছেলেটিকে ভর্তি করে রেখে যাওয়া হাসপাতালে পৌঁছে যাবো। এমন অবস্থায় একটি ফোন এলো। ফোনটি এসেছে নীলু আক্তারদের সেদিক থেকে। ভদ্রলোক বেশ প্রফুল্ল, খুশি খুশি গলায় জানালেন যে নীলু আক্তারের একটি ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। খবরটি শুনে মূহুর্তের জন্যে সারাদিনের সব ক্লান্তি কোথায় যেন চলে গেলো। তারা আমাকে বিশেষ ধন্যবাদ দিলো। বাবুকে দেখতে বেড়াতে যেতে বলল। হাসপাতালে এলাম। দ্রুত ছুটলাম এই হাসপাতালের এমার্জেন্সির দিকে। পথিমধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসককে পেয়ে গেলাম। জানতে চাইলাম ছেলেটির কন্ডিশান। ডাক্তার জানালেন মিনিট দশেক হলো ছেলেটি মারা গেছে। মস্তিষ্ক থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরন হয়েছে। #পুন:শ্চ , ছেলেটি ছিল নীলু আক্তারের স্বামী আর নবাগত সন্তানের পিতা।
২| ২১ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮
সালমা শারমিন বলেছেন: এটা সত্য ঘটনা!!!!????? মানতে ভিষন কষ্ট হচ্ছে।
৩| ২১ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৫৩
রাসেল বলেছেন: Dear Brother,
If this is reality, I have no word to give you thanks. My sellout and gratitude to you. I know that I would not do as you but should do. However, well wishes for you.
৪| ২৩ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৪৬
সুমন কর বলেছেন: গল্প নাকি সত্য !! যাই হোক, হৃদয় ছুঁয়ে গেল। +।
৫| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫৩
ভ্রমরের ডানা বলেছেন: দুর্ঘটনার প্রতিকার চাই!
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭
জেকলেট বলেছেন: কি বলব!!! বাপ নিজের অনাগত সন্তানের মুখটি পর্যন্ত দেখে যেতে পারলনা.. অবশ করা অনুভুতি..