নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধর্মে কর্মে বর্ণে আমি মানুষ\nতাই মানুষের গান গাই\nনশ্বর পৃথবীতে বর্ণে শব্দে কিছুটা কারন; \nরেখে যাই।

মনির হোসেন মমি

চাই স্বাবাভীক মৃত্যুর গ্যারান্টি

মনির হোসেন মমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতৃপ্ত জীবন..প্রবাসী

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৮

বেকারত্বের অভিশাপে যখন দিক-বেদিক দিশেহারা তখন রিটায়াড` বাবা আমার সংসারটাকে বিভিন্ন কায়দায় টিকে রাখার চেষ্টায়,বুঝতে দেয়নি সংসারের অভাবটাকে।রিটায়াড` হওয়া প্রাপ্ত সামান্য ক’টা টাকা তাও বেকারত্ব ঘুচানোর বিদেশ যাবার জন্য দিয়ে রেখেছিলাম প্রায় দূ’বছর হলো এক আদম বেপারীকে।আজ হলো কাল হলো বলতে বলতে কোন নরমাল চাকরীও করতে পারছিলাম না। তাছাড়া মূলধনও শূণ্যের কোঠায়।রিটায়াড` বাবা আমার অন্নের খুজে সামান্য পূজিতে লুঙ্গি-কাপড়ের গাট্টি মাথায় নিয়ে এ হাট থেকে ঐ হাটে ছুটে যেত। আমার কষ্ট লাগত যখন দেখতাম ষাট বছরে বাবা আমার গাওয়াল করে রাতে ঘেমে বাসায় ফিরত ক্লান্ত দেহে।তখন মনে হত যদি কোথাও অজানা দেশে চলে যেতে পারতাম যেখানে বাবারা নিদিষ্ট একটি বয়সে কেবলই আরামে নিশ্চন্তের আশ্রয়ে থাকতে পারবে।

বাবা আমার পাক- আমলে পুলিশে চাকুরী করত।দেশ স্বাধীনের আগে পুলিশের চাকুরীতে ঘোষ খেতে হত বলে চাকুরীটাই ছেড়ে দিয়ে চলে এলো পরিবার নিয়ে নারায়নগঞ্জে -সিদ্ধিরগঞ্জ “আদমজী জুটমিলে"

একজন লাইন সরদার হিসাবে।শুরু হলো স্বাধীনতার সংগ্রাম।আমি তখন মায়ের কোলে।বাবা আমাদের নিয়ে পৈতৃক বাড়ী কুমিল্লায় চলে আসে। সেখানে আমাদের গ্রামটাকে রক্ষা করার কাজে বাবা যোগদেন স্হানীয় অন্যান্য লোকদের সাথে।যদিও বাবা আমার বড় কোন মুক্তিবাহীনির সাথে ছিলেননা কিন্তু শহরের ঘটে যাওয়া অনেক খবরা খবরই গ্রামের মানুষের সাথে আদান প্রদান করে গ্রামকে রক্ষার কাজে সহযোগিতা করতেন।অবশেষে দেশ হলো স্বাধীন আমরা পরিবার সহ চলে এলাম শহরে- সেই আমার জন্মভুমি সিদ্ধিরগঞ্জের ওমরপুরে।

জীবনে এত ইতিহাস জমেছে যে শুরু করলে কোথায় এর ইতি হবে তা আমি নিজেও জানিনা।অবশেষে ২/৩ বছর পর আমার বিদেশে যাবার সকল প্রস্তুতি শেষ হলো।বাবাকে সাথে নিয়ে চলে এলাম জিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোটে।রাত ১২টায় সিঙ্গাপুর ফ্লাইট।ইমিগ্রেসনে ঢুকার আগে বাবার সাথে কিছুক্ষন কথা হলো ।বাবার চোখের এক কোনে জমে ছিল বিদায়ের অশ্রু শেষ পযন্ত` তা আর ধরে রাখতে পারেনি ,গড়িয়ে পড়ল আমার বাম কাধে।কে জানতো ঐ দেখাই হয়তোবা আমার শেষ দেখা-শেষ কথা ।নিজেকে সামলিয়ে ঢুকে গেলাম ইমিগ্রেশন রুমে।যেতে যেতে দেখি বাবা চেয়ে আছেন পলকহীন দৃষ্টিতে।

চলে এলাম স্বপ্নের দেশ সিঙ্গাপূর।অনেক টাকা রোজগাড় করব বলে বাবা,মা ভাই বোনকে ছেড়ে প্রবাসে দিন কাটাতে থাকলাম।কিন্তু যেই টাকার জন্য এত ত্যাগ স্বীকার সেই টাকা কিংবা ডলারের নাগাল দুই মাস হয়ে গেলো পাচ্ছিনা।তিন মাসের মাথায় কিছু টাকা পেলাম।বাবাকে ফোনে বলে দিলাম।বাবা যেন খুসিতে আত্বহারা।সবাইকে বলছে ছেলে টাকা পাঠিয়েছে আমাদের আর কোন দূঃখ থাকবেনা।কিন্তু বিধি বাম যার মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছি সে বাবাকে আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি বলে ঘূরাচ্ছে।এভাবে আরো এক মাস চলে যাচ্ছে ছেলের হাতের প্রথম রোজগারের টাকা পিতার হাতে পেতে পেতে।



একদিন এলো কাল বৈশাখী ঝড়……. ফোনে জানতে পরলাম আমার পরম শ্রদ্ধেয় বাবা আর নেই। চলে গেছেন কোন এক অজানা দেশে যেখান থেকে সে এসেছিলেন।......

আমার মনে একটা কষ্টের দাগ কেটে গেলো যে

“আমি এমন একজন হতভাগা ছেলে যে কিনা তার প্রথম রোজগাড়ের টাকা বাবার হাতে পৌছাতে পারল না”

চলে গেলো বেশ কয়েকটি দিন কোন কাজে মন বসছে না।মাঝ রাতে বাবা যেন আমায় বলছে "আজ অনেক দিন হলো আলু ভতা` ছাড়া কিছুই ঘরে খাবার জুটেনা-তোমার পাঠানো টাকাও পাইনি"।মনে অনেক রাগ হল সালার বেটা হুন্ডিওলাকে শিক্ষা দিব।ভোরে চলে গেলাম সেরাঙ্গনে মোস্তফা প্লাজার সামনেই হুন্ডির কাচা মালের দোকান।সেই দোকানে কোন্পানী কাজের পর আমি কাজ করি।কোন্পানীর কাজ শেষ হয় ৫টায় এর পর থেকে রাত ২/৩টা পয`ন্ত।আবার ভোর সকাল ৫টার আগেই রুমের নীচে কোন্পানীর গাড়ী আসত আমাদের কাজে নিয়ে যেতে।ভোরে কোনমতে উঠে আধাঘুমের মধ্যেই নিজেকে ফ্রেস করে কাপড়-চাপড় পড়ে গাড়ীতে উঠতাম।ছোট্র গাড়ীতে অনেক চাপাচাপি করে বসতে হয়।আমাদের কাজের সাইটে গাড়ী পৌছতে প্রায় দেড়-দুই ঘন্টা লেগে যেত।রাতের অতৃপ্ত ঘুমটা পুসিয়ে নিতাম গাড়ীতে উঠে।কখনও ১০০ কখনও ১০০ এর উপরে গাড়ীর গতি বেগ।ফ্রি রোড পেয়ে যেন হাওয়াই বিমান।আমরা ভিতরে যে যার ঘুমাচ্ছে ,কথা বলছে ।আমাদের সাথে ছিল ইন্ডিয়ান তামিল।সংখ্যায় প্রায় সমান।আজ হঠাৎ বৃষ্টি এলো।লরির(গাড়ীর)ছাউনি ছিল প্লাষ্টিকের।বৃষ্টি আসার সাথে সাথে ছাউনি গিট্টু খুলে দিলাম।সঙ্গে সঙ্গে লরির ভিতরে অন্ধকার নেমে এলো।এমনিতেই লরিতে জায়গা হত না তার পর অঝর ঝাড়ে বৃষ্টি।আমি লরির এ কোনে পদা`টা একটু ফাক করে বৃষ্টির মাঝে লরি চলার দৃশ্য অনুভব করছি।হঠাৎ চিৎকার শুনলাম।

-মনির ভাই -----ধরেন।পাশে চেয়ে দেখি নারায়নগঞ্জের রাজ্জাক নামে এক সহ জীবন যোদ্ধাকে তামিল কয়েকজনে মারছে।তার গলায় স্বনে`র চেইন ছিল।অন্য এক তামিল যখন ঐ ছেলের চেইনের দিকে নজর দিয়ে ঘুসি মারার ছলে চেইনে হাত দিল সঙ্গে সঙ্গে বাম হাত দিয়ে তামিলের

হাতটি ধরে ডান হাতে তার চেহারায় এক ঘুষি।সঙ্গে সঙ্গে সে সিনেমার মত অন্য তামিল-বাংল মিশ্রিত দলের উপরে গিয়ে পড়ল।বাহিরে আকাশ কাপিয়ে অঝরে বৃষ্টি।মাঝে মাঝে হেচকা বৃষ্টি আসছে পদা`র ফাক দিয়ে। নিজেকে সামলে নিলাম।আর এক বন্ধু আমাদের পাশে এসে দাড়াল।নাম তার সানি দেশের বাড়ী মুন্সিগঞ্জ।তিন বন্ধু ওরা বেশ কয়েকজন।বাকী বাঙ্গালীরা ভয়ে লরির এক কোনে বসে বসে তামশা দেখছে।শো শো করে লরি ছুটছে তার গন্তব্যে ।মাঝে মাঝে আকাশে বিজলী চমকাচ্ছে।লরি ড্রাভার ঝগড়া আচঁ করতে পেয়ে লরি হঠাৎ ঝগড়ার মাঝে থেমে যায়।সবাই যেন হুমড়ি খেয়ে সামনের দিকে ঝুকে পড়লাম।লরি থামার সাথে সাথে তামিলরা লরি থেকে নীচে নেমে গাছের ডাল ভাঙ্গতে গেলো।গাড়ীর ড্রাভার ছিল আমাদের খুব ভালো বন্ধু সে জাতে তামিল কিন্তু তার চলা ফেরায় বাঙ্গালীয়ানার ছোয়া রয়েছে।সানি ড্রাইভারকে মেনেজ করে ওদের নীচে রেখেই লরি নিয়ে চলে আসি আমাদের কাজের সাইটে।এরপর উধ্ব`তন কম`কতা`র মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়।তার পর থেকে ঐ গ্রুপের কয়েকজন তামিল আমার খুব প্রিয় হয়ে যায়।প্রতিদিনই তাদের সাথে আড্ডা হত তাদের ভাষার ছবি দেখতাম।ঐ সময় তামিলদের ছবির মান ভালো ছিল না।বলা চলে ডিজিটাল বিহীন।অল্প কয়েক বছরেই তামিল ছবি হিন্দী ছবিকেও মানের দিক দিয়ে ছাড়িয়ে যায়।ছবিতে মামা-ভাগ্নীর প্রেম বিয়ে দেখে আমার অবাক লাগল।এ কি করে হয়!কথা প্রসঙ্গে কথা হয় এক তামিল বিবাহিত বন্ধুর সাথে জানা গেল এর আসল রহস্য।এটা তাদের পারিবারিক ঐতিয্য`।সে বলল তার বোনকে বিয়ে দিতে যে টাকা খরচ হয়েছিল সে তার ভাগ্নীকে বিয়ে তা আবার ফেরত এনেছে।তবে এখন এ প্রথা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে।তারাও বুঝতে পারছে যে এই রীতি ঠিক নয়।কিন্তু টাকা ফেরত আনতে এ রীতি হয়েছিল।ধীরে ধীরে তা পারিবারিক ঐতিয্যে রূপ নেয়।সিঙ্গাপুরে তামিলদের অবস্হান তৃতীয় জাতি।যখন মালেশিয়া থেকে ভাগ হয় তখন সিঙ্গাপুর ছিল প্রায় জঙ্গল।ভয়ে কেউ কাজ করতে যেতনা সে দেশে।বাংলাদেশেও অফার এসেছিল সে দেশে লোক পাঠাতে কিন্তু বাংলাদেশের তখনকার সরকার ডিনাই করে কপাল পূড়ে জনগণের।অবশেষে ইন্ডিয়ান তামিলনাড়ু রাজি হয়।তারা আজ সেখানে তিনটি জাতির মধ্যে একটি।তামিলদের পূব`পূরুষরা যারা এখনও বেচে

তারা অনেকে এখন সেই চুক্তি ক্লিনের কাজ করে তারা কাজকে কাজ বলে মেনে নেয়াতে আজ তারা প্রতিষ্টিত।তাদের ছেলে মেয়েরা সিঙ্গাপুরে কেউ ইঞ্জিনয়ার কেউ প্রকৌশলী কেউবা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়।একমাত্র সিঙ্গাপুরের জন্য তামিল নাড়ু প্রতিষ্টিত অবশ্য এ ক্ষেত্রে তাদের অক্লান্ত শ্রম আর মেধার বিশেষ অবদান রয়েছে।

আজ রবিবার ।রবিবারে সিঙ্গাপুর সেরাঙ্গন/টাক্কা এরিয়ায় হলিডের কারনে মেলার মত অবস্হা হয়।কাজ করতে আসা বিভিন্ন রাষ্ট্রের লোকেদের মিলন মেলা।কেউ সপ্তাহের বাজার কেউ হুন্ডিতে দেশে টাকা পঠাতে কেউবা শুধু আড্ডা মারতে আসে।সেরঙ্গনে মোস্তফা এন্ড সামছুউদ্দিন প্লাজা।বিশ্বের নাম কারা প্লাজার একটি।প্রায় ৬০/৭০ হাজার আইটেমের বস্তু পাওয়া যায় সেখানে।প্লাজায় ঢুকলে জীবনের সাথে জড়িত কি না আছে সেখানে।একেবারে চাল-ডাল থেকে শুরু করে হীরা-মুক্তা।প্লাজার বাহিরে BMW,NISAN,TOYOTA,MARSEDEZ,বিশ্বের বড় বড় গাড়ী কোন্পানীরা একটি করে গাড়ী শো রাখতে রীতিমত সেখানে টেন্ডার হয়।বিশাল এক এরিয়ায় রয়েছে হীরা মুক্তার বসবাস।এর অপজিটে আছে ডেসকা রোড সিঙ্গাপুরে এক নামে চিনে একটি পতিতালয় হিসাবে।মোস্তফা প্লাজার মালিক একজন তামিল মুসলিম।সে সিঙ্গাপুর যখন আসে তখন শুণ্য হাত ।সিঙ্গাপুর এসে সে সুইপ নামের একটি ১.৫ মিলিয়ন ডলারের লটারী পেয়ে প্রথমে ছোট করে দোকান করে তার পর মেধা সততা আর পরিশ্রম দিয়ে সে প্রতিষ্টিত হয়।

চলবে........

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.