নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধর্মে কর্মে বর্ণে আমি মানুষ\nতাই মানুষের গান গাই\nনশ্বর পৃথবীতে বর্ণে শব্দে কিছুটা কারন; \nরেখে যাই।

মনির হোসেন মমি

চাই স্বাবাভীক মৃত্যুর গ্যারান্টি

মনির হোসেন মমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রজম্মের ঋণ শোধ০১

৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:১১

আকাশে বজ্রপাত,সু সু বাতাসের শব্দ,জানালায় টুস টাস কি যেন কঠিন পদার্থের আঘাত। রোজী জানালা খুলতেই জানালার কাচঁগুলো ঝড় ঝড়িয়ে পড়ে গেল। বাতাসের তীব্র গতি মাথায় রাখা ঘুমটার ওড়নাটা উড়ে গেল।কাগজ দিয়ে ভঙ্গুর জানালাটার ছিদ্রটি বৃথাই বন্ধ করার চেষ্টায় হঠাৎ চোখঁ পড়ে দূরে…এমন ঝড়ো হাওয়ায় কয়েক জন অস্ত্রধারী মিলিটারী একজন যুবককে পিছনে হাত বেধে চোখেঁ কালো কাপড়ে বাধা অবস্হায় ধাক্কাতে ধাক্কাতে কোথাও যেন নিয়ে যাচ্ছে রোজীর অকপট নজর সেদিকে বাতাসের গতির সাথে হেচকি বৃষ্টির ধারা যেন রোজীকে ভিজিয়ে দিচ্ছে সে দিকে তার খেয়াল নেই।মিলিটারী ছেলেটিকে নিয়ে জঙ্গলের ভিতর রোজীর দৃষ্টির বাহিরে চলে যায়।কিছুক্ষণ রোজী ভাবনায় মগ্ন তার পর সাহস করে তার ছোট আট দশ বছরের এক ভাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে হাতে জ্বলন্ত হারিকেন হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের পিছু নেয়।চারদিকে ব্যাঙের গ্যা গ্যা শব্দ,কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে হাটতে গিয়ে মাঝে মাঝে ওরা পিচ্চিল খায়। কিছু দূর যাবার পর ওরা দেখতে পেলো , মিলিটারীরা ছেলেটিকে চোখ বাধাঁ অবস্হায় একটি গর্তে ফেলে রেখে চলে যায়।রোজী ও তার ভাই সুজন সাহসীকতার সহিত এগিয়ে যায় গর্তের নিকট।ছেলেটি মরার মতন চোখঁ হাত বাধা অবস্হায় গর্তে নিশ্চুপ শুয়ে আছে মরে গেছে না বেচে আছে বলা মুসকিল।গর্তের কাছে গিয়ে গর্তে উকি দেয় রোজী,নিথর দেহটির পাশে আরো কিছু মানুষের ছিন্ন ভিন্ন কঙ্কালের হাড় হাড্ডি মনে হয় পাক মিলিটারীরা মুক্তিকামী বাঙ্গালীদের শায়েস্তা করে এখানে এই গর্তে ফেলে যায়,গর্তটিও বেশ বড় সর।রোজীর হাতের হারিকেনটির আলো নিথর দেহটির মুখবয়ে গিয়ে পড়ে রোজী দেখতে পেল ছেলেটির চোখের পাতা নড়ে উঠার দৃশ্য,চারদিকে তাকিয়ে ভাইকে সাথে নিয়ে নিথর দেহের অচেনা ছেলেটিকে গর্ত থেকে উপরে তুলে উড়না দিয়ে ছেলেটির মুখের কাদাঁ গুলো মুছে দেয়াতে ছেলেটির সামান্য জ্ঞান ফিরে শুধু মা মা মা তিন চার বার ডাক দিয়ে আবার জ্ঞান হারায়।রোজী ও তাই ভাই সুজন ছেলেটিকে ধরা ধরি করে বাসায় নিয়ে গরম পানি করে কর্দমাক্ত আর রক্ত মাখা শরীরটাকে পরিস্কার করে।এরই মধ্যে রোজীর বাবা গ্রাম্য দরবার শেষ করে বাসায় ফিরেন।রোজীর বাবা কেরামত মাওলানা পাঞ্জেগানা নামাজী আল্লাহ ভক্ত লোক,পাড়ার ছোট খাটো বিচার করেন।রোজী বাবাকে ঘরে প্রবেশ করতে আন্দাজ পেয়ে আহত ছেলেটিকে চাদর দিয়ে ঢেকে রাখে।ছোট ভাইটিকে বাবাকে কিছু না বলে সে ব্যাবপারে শাষিয়েছে রোজী।বাবা ঘরের বারান্দায় ঢোকে রোজীকে ডাকছে।

-মা রোজী, কই গেলি মা…আমারে কিছু খেতে দে,বড্ড খিদে লাগছে।

রোজী ঘরের ভিতর থেকে উত্তর দেয়..মা নেই বলে সকল কাজই রোজীকে করতে হয়।কেরামত মাঝে মাঝে চিন্তায় পড়েন যদি রোজী না থাকত তবে কেরামতের অনেক কষ্ট হত চলা ফেরায় তাই যদি এমন কোন ছেলে পেত তাহলে তাকে ঘর জামাই করে রেখে দিতেন এ নিয়ে বাপ বেটীর মাঝে মাঝে তুমুল তর্ক হয়, রোজীর কথা হলো তার স্বামী ঘর জামাই থাকবে কেনো তার স্বামী হবে বলিষ্ট সাহসী শিক্ষিত কর্মঠ পুরুষ ।

কেরামত মাওলা নীমের ঢাল দিয়ে দন্ত পরিস্কার করে পাশে রাখা বদনার জল দিয়ে হাত মুখ পরিস্কার করে বারান্দায় ছেলের বিছানো মাদল পাটিতে বসেন।মেয়ে ডাল-ভাল বেড়ে দিয়ে আবার ভিতরে চলে যায় আহত ছেলেটির কাছে।ছেলেটি এখন কিছুটা সুস্হ্য তবে মিলিটারীর বুটের আঘাতগুলো বেশ কষ্ট দিচ্ছে ঠিক মত সেবা না দিলে ছেলেটি বিছানা থেকে আর উঠতে পারবে বলে মনে হয় না বিধি বাম কেরামত মাওলা জানতে পারলে মেয়েকে কেটে ফেলবে কিন্তু রোজী এত সব না ভেবে একজন মুমূর্ষ মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধা মানুষের সেবা করছে এটা তার যেন কর্তব্য মনে করে।ছেলেটির কষ্ট আর সয় না রোজীর চোখঁ বন্ধ মাথায় হাত রেখে রোজী চমকে যায় জ্বরে যেন ছেলেটির গা পুড়ে যাচ্ছে।ঐ দিকে কেরামত মেয়েকে ডাকছে,,,,কৈ রে মা কই গেলি পানি দে,লবন দে।রোজীর ছোট ভাই কিছুই যেন দেখেনি সে যা আছে পাতের সামনে তাই ভক্ষণে মগ্ন।বাবা কেরামত রোজীকে না আসতে দেখে সে নিজেই আইট্টা হাতে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে দেখে মেয়ে রোজী তার ঘাটে বিছানায় কাকে যেন চাদর মুড়ি দিয়ে লোকানোর চেষ্টা।

-কি রে মা ঐ চাদর দিয়ে কি লুকাইতেছস….বলে কেরামত মাওলা চাদরটি টান দেন।আহত ছেলেটি আঘাতে চাইতে পারছে না এবং তেমন একটা কথা বলতেও পারছে না।কেরমত মাওলা ছেলেটির কপালে হাত দেন প্রচন্ড জ্বরে কাপছেঁ ছেলেটি কেরমত রেগে যায় মেয়ের উপর।মেয়ে ভয়ে ছিল না জানি তার বাবা কি কান্ড ঘটান।কিন্তু মেয়ে রোজীর ভাবনা ভয়টি কেটে গেল বাবার কথা বার্তা শুনে।

-তোমার কি আর আক্কল জ্ঞান অবে না….ছেলেটি জ্বরে মরে যাচ্ছে আর তুমি চাদর মুড়ি দিয়ে রেখে দিছো…যাও হাড়িতে পানি নিয়ে পানি পট্টির ব্যাবস্হা করো।কেরামত ছেলেটিকে ডেকে ডাক্তার আংকেলের কাছে পাঠায়।মেয়েকে কিছু প্রশ্ন করে পানি পট্টির ব্যাবস্হার ফাকে ফাকে রোজী উত্তর দেয়।

-ছেলেটি কে?

-জানি না।

-জানি না মানে কি কইতাছ,কেমনে এলো এখানে?

-আপনি আসার আগে আমাদের ঘরের দক্ষিন ভাগের জঙ্গলে আমি জানালা বন্ধ করার সময় দেহি কিছু মিলিটারী এরে জঙ্গলের ভিতরে টেনে হিচড়ে নিয়ে পুরানো একটা গর্তে ফেলে রেখে চলে যায়।

-তারপর?তারপর ঘরে আনল কে?

-জি,আমি আর ছোট গিয়ে গর্তে উকি দেয়ার পর দেখলাম ছেলেটি মরেনি মাথা নড়াচড়া করতে দেখলাম এর পর দুজনে ধরে ঘরে নিয়ে আসি।আমি ভুল করেছি আমারে যা মন চায় কন ছেলেটারে ভাল হতে দেন।

মেয়ের কথা শুনে বাবা কেরামত মাওলা গর্বে বুক ফুলিয়ে মেয়েকে সাবাস জানান।

-সাবাস মা,আমি সারা জীবন নামাজ রোজা করে যে সোয়াব কামাইছি তুমি এই কয় ঘন্টাই কামাইয়া লাইছ…এটাইতো মুসলমানের আসল চরিত্র অসহায়দের পাশে থাকা,মৃত্যু পথ যাত্রীদের সেবা করা।মনে রাখবে “জীবে প্রেম করে সে জন সেবিসে ঈশ্বর”

বাবার এমন কথা শুনে রোজীর যেন বিশাল এক পাহাড় সমপরিমান চিন্তা মাথা থেকে নেমে গেল।রোজী ছেলেটির কপাল বরাবর একটি মাটির হাড়ি ঝুলিয়ে তলায় ছিদ্র করে পানি ঢালছে।কেরামত তার ছোট ছেলেকে ডাক্তার আনতে পাঠিয়েও চিন্তায় পড়ে গেল।গ্রামে ডাক্তার নেই পাশের গ্রাম থেকে আনতে হয় এ দিকে পাক মিলিটারীরা জায়গায় জায়গায় ক্যাম্প বসাইতেছে, এদেশের উদিয়মান শিক্ষিত যুবকরা এই ক্যাম্প বসানো নিয়ে প্রতিবাদ করায় ক’দিন আগেও বেশ কয়েকজন যুবককে মিলিটারীরা টর্চার করে মেরেছে এই নিয়ে পুরো গ্রামই আতংকে।কখন যে পাক মিলিটারী কার উপর চড়াও হয় বলা মুশকিল।ছেলেকে এভাবে একা অন্য গ্রামে ডাক্তার আনতে পাঠানো ঠিক হয়নি এবার কেরামত মাওলা চিন্তায় মগ্ন।

দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে পূর্ব গ্রামের বেশ কয়েকটি কাচা মাটির ঘর।পাক মিলিটারী আর স্হানীয় রাজাকারা যারা মক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিতে ইন্ডিয়া গেছেন তাদের ঘর বাড়ীতে আগুন দিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন।ছোট বড় যুবক বয়স্ক ছুটাছুটি যে যে দিকে পারছে পালাচ্ছে ।চারদিকে ভয়ার্ত চিৎকারে আকাশঁ ভারী হয়ে গেছে।অগ্নিস্ফুলিঙ্গের অতি নিকটে একটি দুই তিন বছরের শিশু হাটি হাটি পা পা করে পাকিদেরঁ অত্যাচারিত মায়ের লাশের কাছ থেকে হেটে একটু সামনে এগিয়ে আবার মায়ের বুকে এসে মা মা বলে কাদঁছে।তার আশে পাশে ভয়ে ছুটে চলা মানুষগুলো যেন আপনা জান বাচা অবস্হায় কেউ কারো দিকে তাকাবার সময় যেন নেই।ডাক্তার আনতে আসা কিশোর সুজন শিশুটির চিৎকারে থমকে যায় লক্ষ্য করে দেখল একটি শিশু মায়ের বুকে হাত রেখে কাদঁছে চারদিকে তাকিয়ে সুজন দ্রুত শিশুটিকে কোলে নিয়ে বাশঝাড়ের ভিতরে লুকিয়ে পড়ে……।

চলবে…

গভীর অন্ধকারে বাশ ঝাড়ে লুকিয়ে থাকা সুজন ছোট্র শিশুটিকে নিয়ে ভয়ার্ত মনে এ দিক সে দিক তাকাচ্ছে হঠাৎ চোখে তার টর্চের তীক্ষ্ন আলোর রস্মি ভয় পায়িয়ে দেয়।তবু সে সেখানে স্হির টর্চের আলো আবারও সুজনের চোখ বরাবর সুজনের হাত শিশুটির মুখ চেপে রেখেছে যাতে সে কোন শব্দ না করে ।লাইটের আলো সরতে যতক্ষণ ততক্ষণে কয়েকজন অস্ত্রাধারী লুঙ্গি পেন্ট পড়া অবস্হায় সুজনের চারপাশে এসে দাড়িয়ে পড়ে।

-ভয় নেই...আমরা এ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা তুমি এখানে কি করছ, এক্ষুনি চলে যাও অন্যত্র.. এদিক দিয়েই পাক মিলিটারীরা আসবে।

সুজন একেতো নিজেই ভয়ে কাত তার উপর ছোট আরেকটি শিশু।সুজন বাশ ঝাড়ের ভিতর দিয়ে সোজা চলে আসে গ্রামের সরু পাকা রাস্তার ধারে উপরে উঠতে কানে ভেসে আসে চলন্ত গাড়ীর শব্দ থেমে যায় সুজন রাস্তার ঢালুতে শিশুটিকে নিয়ে শুয়ে পড়ে নিজেকে লোকানোর চেষ্টা।গাড়ীটি তার কাছাকাছি এসে থেমে যায়।গাড়ী থেকে বেশ কয়েক জন অস্ত্রধারী লোক নেমে একটু সামনে যে রাস্তার উপরে কালবাটটি ছিল সেখানে প্রায় পাচ জয় জন দ্রুততার সহিত কালবার্টের কয়েকটি স্হানে টাইম বোমা ফিট করে আবার গাড়ী ঘুড়িয়ে দ্রুত প্রস্হান নেয়।সুজন সব ঘটনাই অবলোকন করে কিন্তু তেমন কিছুই বুঝতে পারে নি গাড়ীটি প্রস্হান নেবার পর সে এবার রাস্তার উপরে উঠে ছেলেটিকে কোলে নিয়ে চলতে গিয়ে থেমে যায় তার সম্মূখ বরাবর বেশ কয়েকটি মিলিটারী গাড়ী আসতে দেখে।আবারো শিশুটিকে নিয়ে লুকিয়ে পড়ে সুজন।গাড়ীগুলো কালবার্টের বরাবর আসতেই প্রচন্ড শব্দে কালবার্টটি উপর দুটো মিলিটারী গাড়ি সহ ব্লাষ্ট হয়ে উড়ে গেল।সুজন আতংকে চিৎকার দেয় পাশে লুকানো থাকা মুক্তিবাহিনীর দুজন বাঙ্গালী সুজনকে মূখ চেপে তাদের আস্তানায় নিয়ে যায়।

জঙ্গলে মাটির নীচে গর্ত করে মুক্তি বাহিনীরা তৈরী করেছেন নিরাপত্তা আর প্লানিংয়ের জন্য একটি আস্তানা।সুজন সহ শিশুটিকে গর্তের আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হয়।শিশুটি সম্ভবত খাবারে জন্য কান্নায় চোখের জল পড়ছে তার গাল বেয়ে।মুক্তিবাহিনীর এক জন সুজনকে নাম দাম বাসা বাড়ী জিজ্ঞাসা করে সেটিসফাই হয় এ বাঙ্গালী শিশু ও কিশোর।তাদের কাছে ছিল দূর গ্রাম থেকে আসা কৃষকের পালিত গরুর দুধ তা শিশুটিকে খেতে দিল।সুজন মুক্তিবাহিনী পেয়ে ভয় কেটে গেল সে এখন সাহসের বলতে শুরু করে সেও তাদের সাথে রাজাকার ধ্বংস করবে পাকিদের পাখির মতন গুলি করে মারবে অথচ মনে হয় না সে ভারী রাইফেলটা আলগাতে পারবে তার সাহস দেখে এক মুক্তিবহিনী তাকে সাবাস দেন।

-সাবাস বীর বাঙ্গালী,তবে তুমি অনেক ছোট তুমি বন্দুক চালাতে পারবে না।

-আমি বড় হবো কবে আমাকে বড় করে দেন না, আমিও যুদ্ধে যাবো।

-তুমি যে শিশুটকে এতক্ষণ বাচিয়ে রেখেছ তাতেই তুমি ক্ষুদে মুক্তযোদ্ধা হিসাবে ইতিহাসের পাতায় ঠায় করে নিবে।তোমার বাড়ী কোন গ্রামে?তোমার বাবার নাম কি?

-বাবা কেরামত মাওলা থাকি দক্ষিন গ্রামের রসুলপুরে ।

সুজনের বাবার নামটি শুনে ছেলেটির পরিচয় পেয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা ব্যাক্তিটি।যেমন বাপ তেমন ছেলে তার বাবা কেরামত মাওলা পাশ্ববর্তী দুটি গ্রামের গোপনী মুক্তিযোদ্ধা সংঘটিত কমিটির মুক্তিবাহিনী সংগ্রহ কর্তা।শিশুটিকে আর এক মুক্তিযোদ্ধা দেখ ভারে দায়ীত্ত্ব নেয়।মুক্তিযোদ্ধা ব্যাক্তিটি অনেক গোপনীয়তায় সুজনকে তার বাবার কাছে পৌছে দেন এবং সে ব্যাক্তিটি কেরামত মাওলার সাথে ঘন্টা খানেক বেশ গোপনীয় কথা বার্তা বলে প্রস্হান নেন।

ছেলেকে পেয়ে বাবা কেরামত দুশ্চিন্তা থেকে বাচলেন।মেয়ে রোজীর কাছে সুজনকে রেখে বাবা বেরিয়ে পড়লেন বলে গেলেন দুদিন পর বাসায় ফিরবে।দেশ স্বাধীনের জন্য কিছু সলা পরামর্শ করতে তাকে ঢাকায় তলব করা হয়।

মেয়ে রোজী আহত ছেলেটিকে ধীরে ধীরে সুস্হ্য করে তুলেছে সে এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল।ছেলেটিকে রোজী কিছু প্রশ্ন করে যার কোন উত্তরই ছেলেটি দিতে পারে নি অথবা সে ইচ্ছে করেই পরিচয় দিচ্ছে না অথবা এমনও হতে পারে যুদ্ধের ভয়ংকর সর্বনাশা হামলায় তার সব পরিচয় রক্তের সাথে মিশে গেছে।ছেলেটিকে যখনই পরিচয় জানতে চায় তখনই ছেলেটি অন্তর হতে বেড়িয়ে আসে একটি করুন দীর্ঘশ্বাস।মুখে কোন শব্দই সে করতে পারে না পাকিদের অত্যাচারে তার রক্তাক্ত কন্ঠনালীতে জয় বাংলার শ্লোগানটি চিরতরে ধ্বংস করে দিয়েছে।তবে কাগজে কলমের খোচায় লিখে দেয়.....

-আমি একা,আমার এখন আর কেউ নেই...আমার কন্ঠনালীটি দিয়ে বজ্র কন্ঠে পাকিদের দেখলে বের হতো জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু,,,, সেই কন্ঠটিতে শব্দের মরন হয়েছে...।তবে অন্তরে বুকে এখনও জেগে আছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরনার বক্তব্য "এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম-জয় বাংলা.... বলতে গিয়ে ছেলেটির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল মাটিতে।

ছেলেটির প্রতি রোজীর ধীরে ধীরে মায়া জম্মাতে লাগল প্রায় পনের দিনের সেবায় রোজী ছেলেটিকে মনের গভীরে কখন যে স্হান দিল তা বোধ করি উপলব্দি করতে পারে ছেলেটি যখন বলল সে চলে যাবে। তখনই বুঝতে পারল তার মনের সাগরে নতুন এক স্বপ্নের চর জেগে গেছে।একটি পশুর সাথে যখন কেউ দীর্ঘদিন বসবাস মানে পালিত সেবার কাজ করেন একদিন সেই পশুটিকেও মনে হবে স্ব-গোত্রী রক্তের বন্ধন আর সে তো মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ট জীব।ছেলেটি কাগজে আবার লিখছে.....

-আমি চলে যাব,আমাকে বিদায় দিতে হবে।

রোজীর উত্তরও কাগজে, ছেলেটির লেখার নীচ বরাবর একই পৃষ্টায় লিখতে থাকে।ঠিক সে সময় সুজন আসে রোমান্টিজমে ভিলেন সেজে।

-তোমরা কি লিখছ?নাকি চোর ডাকাত খেলছ?

রোজী বিরক্ত হয়ে সুজনকে ধমক দেয় সে বোনের ধমক খেয়ে বাহিরে চলে যায়।হাটতে হাটতে সুজন চলে আসে মেঠো রাস্তার পাশে শরষে ক্ষেতে মৌমাছির শরষে ফুলের মধু সংগ্রহের দৃশ্যগুলো দেখতে থাকে,ফাকে ফোকে ফরিং পেলে ধরার চেষ্টা করে নিজেকে আনন্দে রাখে।শরষে ফুলে ছেয়ে গেছে দূর দিগন্ত।যে দিকে চোখ যায় কেবল সবুজের মাঝে হলুদের বসবাস।কি অপরূপ বাংলা মায়ের রূপ যেন স্বর্গ এসেছে নেমে বাংলা মায়ের সবুজে ঘেড়া বুকে।এমন দেশটি ছেড়ে কার যেতে মন চায় যেখানে মাটির মমতায় মিশে আছে আদর সোহাগ মান অভিমান অভিভূত হয়ে সুজন তাকিয়ে রয় দূর বহুদূর মনে হয় ঐ তো ঐ গ্রামের শেষে মিশে আছে নীলাকাশেরঁ শেষ ঠিকানাটি।মেঠো পথ ধরে বয়ে গেছে একে বেকে ছোট্র একটি খাল সেই খাল দিয়ে দেখা যায় মাঝে মাঝে ছোট্র নৌকায় দু চারটি যাত্রীর এ গ্রাম ও গ্রামের দিকে যাতায়াতের বাংলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের মনোরম দৃশ্য।সুজন মৌমাছি আর ফরিংয়ে ধরার কৈশরের খেলায় মেতে রয়।

-কেনো চলে যাবেন,আমরা কি আপনাকে কোন কষ্ট দিয়েছি।

-না তা হবে কেনো, এমন বিপদে আপনি না সাহায্য করলে আমি হয়তো আজ সেই অন্ধকার গর্তেই হাড় কন্ঙাল হয়ে যেতাম।

-আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন।

-তা কি হয়!

-হবে না কেনো একশ বার হবে,আমিই তো বলছি তাছাড়া.......

লিখতে গিয়ে রোজীর কলম থেমে যায় হয়তো রোমান্টিকতার লজ্জাটি কলমকে স্পর্শ করেছে।

-তা ছাড়া কি?.........লিখুন।

---তা ছাড়া...... আমি আপনাকে ভালো....।

মনের ভাব প্রকাশের লেখাটি পুরোপুরি শেষ হতে পারে নি হঠাৎ তীব্র শব্দে মাটি সহ ঘরটি কেপে উঠল।আতংকে রোজী তার ছোট ভাইকে ডাকছে................সুজন সুজন...।ঘরের বাহিরে বের হয়ে দেখে প্রায় মাইল খানিক দূরে শর্ষে ক্ষেত গুলিতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ।হলদে সবুজে রংঙে লালের সংমিশ্রন।আহত ছেলেটি রোজীর ভয়ার্ত চিৎকারে বাহিরে রোজীকে শান্ত দিতে থাকে।কোথাও সারা শব্দ নেই সুজনের।আহত ছেলেটি সুজনের খোজেঁ দৌড় দেয় সেই শর্ষে ক্ষেতের দিকে পিছু নেয় রোজী।

শর্ষে ক্ষেতে লুকিয়ে ছিল কয়েক জন কৃষক মুক্তিযোদ্ধা।অপেক্ষায় ছিল ক্ষেতের পাশে মেঠো পথ দিয়ে যখন পাকিরা যাবে তখনই হামলা করবে কৃষক সংগ্রামীর দল ।ইনফরমেশনটা ছিল ভূল,কথা ছিল একটি লরিতে দশ বারো জন মিলিটারী এ পথ দিয়ে এ গ্রামে প্রবেশ করবে আর তখনই শর্ষে ক্ষেতে লুকিয়ে থাকা পনের জনের একটি মুক্তিবাহিনীর দল এ্যাটাক্ট করবে তাদের লরিকে লক্ষ্য করে।কিন্তু ঘটনা উল্টো ঘটে হঠাৎ সেই পথ দিয়ে পাকিদের অস্ত্র সহ কয়েকটি লরি প্রবেশ করে সামনে পাকিদের ক্যাম্পে অস্ত্রগুলো জমা দিতে সেই সময় শর্ষে ক্ষেত থেকে কৃষক মুক্তিবাহিনীর হঠাৎ অতর্কীত হামলার প্রতিত্তোরে পাকিরা হেভি অস্ত্র বোমা ব্যাবহার করে। সেখানে প্রায় তিন চার জন মুক্তিবাহীনি শহীদ হন আর কৈশরের উম্মাদনায় খেলা রত সুজনের লাশটি পড়ে ছিল শর্ষে ক্ষেতে, সবুজ ঘাসে রক্ত মাখা টি শার্টটির জীর্ণ অংশটুকু লেগে ছিল নিথর শরীরে।সুজনের দেহের চিহ্নে কোন বুলেটের দাগ ছিল না ছিল রাইফেলের অগ্রভাগে ক্রীচের আঘাত।আঘাতে তার পেটের নারি-ভুড়ি বেড়িয়ে গেছে হয়তো পাকিরা যাযার বেলায় সুজনকে ক্রীচের আঘাতে শহীদ করে যায়।

রোজী এবং আহত ছেলেটি ঘটনা স্হলে আর সবার মতন হন্নে খুজছেঁ ভাইটিকে।এরই মধ্যে আরো কিছু মুক্তিযোদ্ধা এবং গ্রামের লোকজন ঘটনা স্হলে এসে আতংকে চিৎকারে লাশ গুলোকে কাধে নিয়ে জয় বাংলা জয় বাংলা উচ্চ স্বরে বলতে বলতে ঘটনা স্হল প্রস্হান করছেন।রোজীর চোখে পড়ে এক মাত্র ছোট ভাই সুজনের নৃশংসতায় শহীদ হওয়া নিথর দেহটি, চিৎকারে আকাশ ফাটিয়ে রক্ত মাখা ক্ষয়ে যাওয়া ভুড়ি বিহীন লাশটি বুকে জড়িয়ে নেয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৪০

যুবায়ের বলেছেন: চমৎকারভাবে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাটা বর্ননা করেছেন।
পোষ্টে ভালোলাগা+

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪১

মনির হোসেন মমি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.