নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিকৃতবুদ্ধির অধিকারী

বর্ষন মোহাম্মদ

অস্থিতিশীলতা, নষ্টামি, আর যাবতীয় প্রতারণা-প্রবণতার বিরুদ্ধে খেলা চলবে

বর্ষন মোহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঁচ হাজার বছর আগে আবিষ্কৃত হয়ে ছিল মিষ্টি

০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:১৭

ইতিহাসবিদগণের মতে যা গ্রহণযোগ্য তা হলো পাঁচ হাজার বছর আগে ঢাকার কাছে দুগ্ধজাত মিষ্টির আবির্ভাব ঘটে। ইতিহাসের সেই ধারায় আজও বলা হয় বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনীর হাটে মেলে খাঁটি মিষ্টি। মিষ্টি এখন দেশজুড়ে। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে মিষ্টির দোকান নেই।
বাঙালী সংস্কৃতির মিষ্টিপ্রীতি প্রবাদপ্রতিম। ঘরে বাইরে মুখে যে কোনভাবেই হাসির রেখা ফুটে উঠতেই মিষ্টির আগমনী বার্তা এসে যায়। ঐতিহ্যের এমন মিষ্টি সংস্কৃতি অন্য কোথাও নেই। আর সন্দেশের কথাই আলাদা। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো সন্দেশের আভিধানিক অর্থ ‘সংবাদ’ (নিউজ, ইনফরমেশন, মেসেজ, রিপোর্ট)। ‘ডেলিশিয়াস সুইটমিট মেড বাই পোসেট’ এ অর্থটি আছে অনেক পরে। হিন্দি ভাষাতেও সংবাদকে বলা হয় সন্দেশ। সেই সন্দেশ কি করে জিভেয় জল আসা মিষ্টান্ন হয়ে গেল এর ব্যাখ্যা পাওয়া বেশ কঠিন। পৌরাণিক কাহিনীতে উল্লেখ আছে কয়েক হাজার বছর আগে গোয়ালারা গাভীর দুধ দুইয়ে সংরক্ষণ করার পর খার হয়ে গেলে তা দিয়ে খারখন্দ বানাত। সেই খারখন্দই শক্ত মিষ্টি হয়ে সন্দেশে পরিণত হয়। বাঙালীর মিষ্টি প্রীতির ধারায় একটা সময় সন্দেশ থেকেই তৈরি হতে থাকে নানা জাতের মিষ্টি। অষ্টাদশ শতকে চিনির সিরায় ছানার মিষ্টি চুবিয়ে রেখে তৈরি হয় রসগোল্লা। কারও বর্ণনায় এসেছে রসগোল্লা মিষ্টির রাজার আসনে বসেছে। বাকিগুলো মন্ত্রী, উজির, নাজির, পাইক ও পেয়াদা। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো মিষ্টি হিসেবে এসেছে লাড্ডুর নাম। কেউ বলেন ভারতবর্ষে প্রায় তিন হাজার বছর আগে এসেছে মতিচুরি লাড্ডু। বেসন দিয়ে ক্ষিরের মতো দানাদার করে বুন্দিয়া বানাবার পর শক্ত গোলাকৃতি করে যা হয় তাকেই বলা হয় মতিচুরি লাড্ডু। এ লাড্ডু ছিল মুঘলদের প্রিয়। এখনও লাড্ডুর একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে আছে দিল্লী। হিন্দী প্রবাদে আছে “দিল্লী কা লাড্ডু জো খায়া ওভি পাস্তায়া জো নাহি খায়া ওভি পাস্তায়া।” উৎসব পার্বণ আনন্দের খবরে আনুষ্ঠানিকতায় মিষ্টি নিয়ে এত যে মাতামাতি এ মিষ্টির প্রকৃত উপাদান ছানা উপমহাদেশে তৈরি করা শিখিয়েছে পর্তুগীজরা। প্রাচীন আমলে কোন এক সময়ে দুধের ছানা ছিল পরিত্যাজ্য। ফেলে দেয়া হতো। বৈদিক যুগে দুধ থেকে তৈরি খাবার ছিল পৌরাণিক ধারার অংশ। উপমহাদেশের প্রখ্যাত ধ্রুপদী সঙ্গীতশিল্পী অনুপ জালোটার কণ্ঠে ননী, মাখন ও ছানার গল্প নিয়ে ভজন আছে। পর্তুগীজদের পর বাঙালীরাই ছানা থেকে একের পর এক দুগ্ধজাতীয় খাবার বানাতে থাকে। শুরুতে এদের বলা হতো হালুইকর। পরে ময়রা। আজও এই নামেই তারা পরিচিতি। বঙ্গদেশে ঠিক কত বছর আগে ময়রারা মিষ্টির ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছিল তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। তবে এখন পর্যন্ত এত মিষ্টির মধ্যে সন্দেশের আভিজাত্য আলাদা। বলা হয়, ছানা আবিষ্কারের আগেই সন্দেশ তৈরি হয়। প্রাচীন আমলে বেসন, নারিকেল, মুগ ও বুটের ডালের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে সন্দেশ বানানো হতো। কালের পরিক্রমায় দুধ ফেটিয়ে ছানা বানিয়ে, ক্ষির দিয়েও তৈরি হয় সন্দেশ। নারিকেলের সঙ্গে চিড়া মিশিয়ে ক্ষিরের প্রলেপেও তৈরি হয়। একটা সময় গ্রামে কোজাগরি পূর্ণিমার রাত উপভোগ করতে উঠানে বসে গীত গাওয়ার পর সন্দেশ খাওয়ার রীতি ছিল। এই রাতে প্রণয়কে পাকাপোক্ত করতে প্রেমিক-প্রেমিকারা সন্দেশ আপ্যায়ন করত। হলুইকরদের পেছনে ফেলে বাঙালী ময়রারা ছানা দিয়ে কত ধরনের সন্দেশ বানানো যায় তার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। নরমপাক, কড়াপাক, শক্তপাক, কাঁচাগোল্লা, চন্দনসহ এমন সব সন্দেশ বানাতে থাকে যার স্বাদ দেশী-বিদেশী মিষ্টিপ্রেমীদের মুখে লেগে থাকে। এরপর ঋতুভিত্তিক সন্দেশও তৈরি হতে থাকে। গ্রীষ্মের সন্দেশ, শীতের সন্দেশ, শরতের সন্দেশ কতই সন্দেশ! এর মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলে শীতের সময়ে পাটালি গুড়ের সন্দেশ আরেক মাত্রা যোগ করে। এত বৈচিত্র্যের সন্দেশ দেখে ও খেয়ে মিষ্টিবিলাসীরা বলতে থাকে এরই নাম বাঙালী ময়রা। একবিংশ শতকে সন্দেশের অগ্রযাত্রা থেমে নেই। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ মিষ্টির প্রতিষ্ঠান বগুড়ার এশিয়া সুইটস দশ রকমের সন্দেশ তৈরি করছে। এদের উল্লেখযোগ্য সন্দেশ হলো, ক্ষির কদম, মনময়ূরী, ইলিশপেটি, প্রাণহারা ও পদ্মসন্দেশ। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীদের একজন টুটুল জানালেন, দেশের বিভিন্নস্থান থেকে সন্দেশের ভাল কারিগর আনেন। উন্নতমানের সন্দেশ বিক্রি করেন তাঁরা। এদিকে রসে টইটুম্বুর বাঙালীর রসগোল্লার বৈচিত্র্য কম নয়। রসগোল্লার পুরনো নাম গোপাল গোল্লা। গোপালকে সিরায় ডুবিয়ে হয়েছে রসগোল্লা। এর চারধারে ভিড় করে থাকে পানতোয়া, চমচম, কালোজাম, রসমালাই, রসমঞ্জুরি ও ম-া ইত্যাদি। হালে স্পঞ্জের রসগোল্লা সুনাম কুড়িয়েছে। ইতিহাস বলে ভারতবর্ষের প্রথম দিকের গবর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিংয়ের বাসভবনে মিষ্টির স্বাদ দিতে গেলে লর্ডের স্ত্রীর নামেই একটি মিষ্টি বানায় ময়রা। নাম দেয়া হয় লেডিকেনি। বাঙালীর মিষ্টিপ্রেমের কথা ফুরাবে না। আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে গেলে এখনও মিষ্টি নেয়া হয় প্যাকেটে করে। আগে নেয়া হতো মাটির হাঁড়িতে করে। মিষ্টির যে কত শ্রেণীভাগ তার ইয়ত্তা নেই। অঞ্চলবিশেষে একেক মিষ্টির খ্যাতিও আছে। হালে বগুড়ার সরার দই ও যশোরের খেজুরের সন্দেশ মিষ্টি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যে জায়গারই মিষ্টি হোক উৎসবে- পার্বণে আনন্দে মিষ্টিমুখ না করালে বাঙালীর আনন্দের ও আতিথ্যের ষোলোকলা পূর্ণ হয় না। মিষ্টির জায়গায় বড় আসন করে নিচ্ছে সন্দেশ। শিশু-কিশোরদের জ্ঞানের ভা-ারে মন যোগাতে এক শ’ বছর আগে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী প্রকাশ করেছিলেন সন্দেশ নামের সাহিত্য পত্রিকা। সেই সন্দেশ আর মিষ্টির সন্দেশের অগ্রযাত্রা থেমে নেই।—সংগ্রহীত

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



মিস্টি মানে ছানা, ভেজাল ও চিনি জাতীয় ভেজালের মিশ্রণ; এটার বিপক্ষে প্রচারণা শুরু হোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.