নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিকৃতবুদ্ধির অধিকারী

বর্ষন মোহাম্মদ

অস্থিতিশীলতা, নষ্টামি, আর যাবতীয় প্রতারণা-প্রবণতার বিরুদ্ধে খেলা চলবে

বর্ষন মোহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাটেশ্বর বৌদ্ধ নগরী: এবার মিলল পিরামিড আকৃতির স্থাপনা

১০ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩১


দেড় হাজার বছরের পুরোনো বৌদ্ধ নগরী টঙ্গিবাড়ীর নাটেশ্বরে এবার মিলেছে দুটি বড় আকারের পিরামিড আকারের অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ, স্মারক কুঠুরি, সুরক্ষা প্রাচীরের অংশ আর নকশা করা ইট। এ দেশের ইতিহাসকে আরও বর্ণিল ও তথ্যবহুল করে তুলেছে তাৎপর্যপূর্ণ এ আবিস্কার।
প্রসঙ্গত, বৌদ্ধ ধর্মে স্তূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য। নাটেশ্বরে আবিস্কৃত স্তূপ দুটি দশম-একাদশ শতকের ব্যতিক্রমী দুষ্প্রাপ্য পিরামিড আকৃতির হওয়ায় এগুলোকে অতীত বাংলার তাৎপর্যপূর্ণ স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। বিক্রমপুরে আবিস্কৃত প্রায় দুই হাজার বর্গমিটার আয়তনের স্তূপ বিশালত্বের দিক থেকে সাঁচী, ভারহুত, অমরাবতী, সারনাথ ইত্যাদি বিখ্যাত মহাস্তূপের সঙ্গে তুলনীয় বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক শাহ সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। সময় বিবেচনায় এটি পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের (৯৮২-১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দ) পূর্বের কীর্তি।
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. নূহ-উল-আলম লেনিন। তিনি জানান, আবিস্কৃত অষ্টকোণাকৃতি স্তূপের দৈর্ঘ্য ১৮ মিটার, প্রস্থ ১২ মিটার। সুরক্ষা প্রাচীরের ১৭ মিটার অংশ উন্মোচিত হয়েছে। এবারের আবিস্কারে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বসতিজুড়েই ছিল সুরক্ষা প্রাচীর। পুরো বসতিতে সুরক্ষা প্রাচীর পাওয়ার ঘটনাও এ দেশে এটিই প্রথম। স্তূপের কেন্দ্রে বিশেষ ধরনের স্থাপত্য 'স্মারক কুঠুরি'ও দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আবিস্কার। এই কুঠুরিতে রাখা হতো গৌতম বুদ্ধ বা তার শিষ্যের দেহভস্ম।
স্মারক কুঠুরির ওপরের অংশ গোলাকার (৪টি ধাপ) ও নিচের অংশে চতুস্কোণাকৃতি। নাটেশ্বরে দ্বিতীয় পর্যায়ের সব স্থাপত্যে মিলেছে বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শনের প্রতীকী প্রকাশ। এই স্মারক কুঠুরির গোলাকার অংশ বৌদ্ধ ধর্মীয় দর্শনের সৃষ্টিতত্ত্ব 'শূন্যবাদ'-এর প্রতীকী রূপ। শূন্যতত্ত্ব অনুযায়ী শূন্য হচ্ছে সব সৃষ্টি এবং বিলয়ের উৎস। স্মারক কুঠুরির চতুস্কোণ 'চার আর্যসত্য'র প্রতীকী রূপ। এই চার আর্যসত্য হলো- ১. জীবনে দুঃখ আছে; ২. দুঃখের কারণ আছে; ৩. দুঃখের বিনাশ আছে; ৪. দুঃখ বিনাশের উপায়ও আছে। দুঃখ বিনাশের উপায় হলো অষ্টমার্গ। যার মধ্যে রয়েছে- সত্য জ্ঞান অর্জন ও দুঃখ বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান; সৎ সংকল্প; সৎ বাক্য; সৎ কর্ম; সৎ জীবিকা; সৎ চিন্তা; সঠিক চৈতন্য-চিত্তের প্রশান্তি; এবং সৎ ধ্যান বা সঠিক ধ্যান। অষ্টকোণাকৃতির মূল স্তূপের আটটি কোণ এই অষ্টমার্গের প্রতীকী রূপ।
খননকাজের তত্ত্বাবধানকারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহ সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এর আগে বিভিন্ন খননে নকশা আকৃতির ইটের ভাঙা টুকরো মিলেছে। কিন্তু স্থাপত্যের সঠিক অবস্থানে ইটের নকশা পাওয়া যায়নি। এবার সুরক্ষা প্রাচীরের বাইরের দিকের দেওয়ালে অন্তত একটি ইটের পূর্ণাঙ্গ নকশা সঠিক অবস্থানে আবিস্কৃত হয়েছে। নাটেশ্বরে খননের সময় পোড়ামাটির ফলক না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন খননকারীরা। কিন্তু নকশা করা ইটের ব্যবহার দেখে কেটেছে তাদের সে হতাশা। অতীশ দীপঙ্করের জন্মভূমিতে স্তূপ কমপ্লেক্সের দেওয়াল অলংকরণের ক্ষেত্রে পোড়ামাটির ফলকের বদলে নকশা করা ইটের ব্যবহার গবেষকদের সামনে নতুন চিন্তার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

শাহ সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১১ সাল থেকে এই প্রত্নতত্ত্ব জরিপ ও খননকাজ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে সদরের রামপাল ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামে হাজার বছরের বৌদ্ধবিহার, টঙ্গিবাড়ীর নাটেশ্বর গ্রামে বৌদ্ধ মন্দির এবং রামপাল ইউনিয়নের বল্লালবাড়ি এলাকায় সেন বংশের রাজবাড়ি আবিস্কৃৃত হয়। ২০১২ থেকে ১৫ সালের মধ্যে নাটেশ্বর গ্রামে খননের ফলে বেরিয়ে আসে বৌদ্ধ মন্দির, স্তূপ, ইটের নালা, রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মিলেছে দেশের সবচেয়ে বড় দুষ্প্রাপ্য পিরামিড আকৃতির নান্দনিক স্তূপের ৪৪ মিটার দীর্ঘ দক্ষিণ বাহু।

অধ্যাপক শাহ সুফি মোস্তাফিজুর বলেন, স্তূপ মুখ্যত সমাধি। তবে এটি বৌদ্ধ ধর্ম, দর্শন ও সংস্কৃৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। স্তূপ স্থাপত্যের মূল অংশ অণ্ড সাধারণত গম্বুজ আকৃতির হয়। কিন্তু নাটেশ্বরে আবিস্কৃত স্তূপটি ব্যতিক্রমী-দুষ্প্রাপ্য পিরামিড আকৃতির। পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জন্মভূমি বিক্রমপুরে প্রায় ১২০০ বছরের প্রাচীন ৪৪ দশমিক ৪৪ মিটার বা প্রায় ২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের একটি স্তূপ আবিস্কার তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

সংবাদ সম্মেলনে ড. নূহ-উল-আলম লেনিন জানান, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জন্মের আগেই বিক্রমপুরে অনেক সমৃদ্ধ বৌদ্ধ সভ্যতা ও সংস্কৃৃতি বিকাশমান ছিল। সেই উঁচুমানের সভ্যতায় বিশ্ববরেণ্য পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের জীবনীগ্রন্থে যে ধরনের বিবরণ রয়েছে, তার সঙ্গে নাটেশ্বরে আবিস্কৃৃত বিশাল আকৃতির স্তূপ ও অন্যান্য নান্দনিক স্থাপনার মিল পাওয়া যায়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



বৌদ্ধ ধর্ম আছে জানি; উহাতে আবার দর্শন কোথা থেকে এলো?

২| ১০ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৮:০৮

শাহ আজিজ বলেছেন: ভাল তথ্য পেলাম । স্তূপে মিশরিয়দের প্রথা আসাটা স্বাভাবিক কারন মিশরীয়দের আরও রিচ কালচার এবং আরও পুরাতন । সেকালের মিস্ত্রিরা পর্যটনে বিবিধ জায়গায় কাজ করত বা কারযাদেশ পেত ।

৩| ১০ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৮:৪৫

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ।
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন বিক্রমপুর অঞ্চলে এই খননের উদ্যোগ নিয়ে অসামান্য কাজ করেছে। ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছেও কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনিও দিনের পর দিন বিক্রমপুরে থেকে অসামান্য কাজ করে যাচ্ছেন।

৪| ১০ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:৫৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: কয়েক বছর আগে গিয়েছিলাম ওখানে।

৫| ১১ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: খুব ভালো।

৬| ১১ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৩:১২

অনল চৌধুরী বলেছেন: আয়তনে ছোটো হওয়ার পরও বাংলাদেশের পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়-শালবন, উয়ারী-বটেশ্বরসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিস্কৃত হয়েছে। কিন্ত সভ্যতার উত্তরাধিকারী হওয়ার পরও বাঙ্গালীরা এতো নষ্ট ও নীচ কেনো, সেটা নিয়ে গবেষণা দরকার।

৭| ১১ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:০২

জাহিদ হাসান বলেছেন: বাংলাদেশের সব মানুষ এক সময় বৌদ্ধ ও হিন্দু ছিলো।

৮| ১৪ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৩৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
মুল্যবান তথ্যসমৃদ্ধ পোষ্ট ।
প্রিয়তে গেল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.