![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অস্থিতিশীলতা, নষ্টামি, আর যাবতীয় প্রতারণা-প্রবণতার বিরুদ্ধে খেলা চলবে
দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে যে কয়টি মানদণ্ড প্রয়োজন এর মধ্যে অন্যমত যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন। এরি ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক সড়ক ও রেল যোগাযোগের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করার জন্য চেষ্টার কমতি নেই। বলা যায় গত ৪৯ বছরে দেশের সড়ক যোগাযোগে যত উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে; ১২ বছরে কিন্তু কম হয়নি। অর্থাত বড় বড় প্রকল্পের কাজ হয়েছে এই সময়ে। আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ চলমান। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বদলে যাবে গোটা দেশের চিত্র। এক অন্য রকম বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে সামনের দিনগুলোতে।
যার বাস্তব উদাহরণ হলো পদ্মা সেতু। সকল বাধা উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে যোগাযোগ খাতের সর্ব বৃহৎ এই প্রকল্পটি এখন চালু হওয়ার অপেক্ষায়। যা শুধুমাত্র দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন নয়, গোটা দেশের সম্পদ। অর্থাৎ এই সেতু দেশের বার্ষিক উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানের গতি ত্বরান্বিত করতে। আন্তর্জাতিক সড়ক যোগাযোগে অনেক বড় ভূমিকাও রাখবে। ২০২০ সালে সরকারের সফলতার ঝুঁলিতে যুক্ত হলো সেতুটি দৃশ্যমান হওয়া। যেন হাত বাড়িয়ে পদ্মা সেতু...। সব মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিছক স্বপ্ন হয়ে থাকেনি।
২০০১ সালের চার জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন থেকেই দেশের মানুষ গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এর মধ্যে কেটেছে ১৯ বছরের বেশি সময়। গত ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা দুই মিনিটে দেশে আরেকটি নতুন ইতিহাসের সৃষ্টি। এদিন পদ্মা সেতুতে সর্বশেষ স্প্যান বসানো হয়েছে। যুক্ত হয়েছে মাওয়া-জাজিরা দুই প্রান্ত। দৃশ্যমান হয়েছে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটারের সেতুটি। এর মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে স্বপ্ন, অবসান হয়েছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার। রচিত হয়েছে ঐতিহাসিক সেতুবন্ধন। ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে এই দিনটি। এখন বাকি শুধু যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া। ২০২২ সালে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। সবকিছু ছাপিয়ে বিজয়ের মাসে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ সৃষ্টি করল আরও এক বিস্ময়।
সেতুর কাজ শেষ হলে, দক্ষিণের ২৯ জেলার মানুষের যোগাযোগে বিরাট পরিবর্তন আসবে। সময় বাঁচবে অন্তত তিন ঘন্টা। এখানেই শেষ নয় যা একসময় গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায়। আর উপকৃত হবে তিন কোটির বেশি মানুষ। দারিদ্র্য কমবে এক দশমিক নয় শতাংশ হারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সেতুকে কেদ্র করে আবর্তিত হবে ভবিষ্যত বাংলাদেশ।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অর্থাৎ আগামী বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে সেতুর কাজ। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এখনের বাস্তবতা হলো সেতু নিয়ে আর কোন অনিশ্চয়তা নেই। মেঘ কেটে গেছে। প্রমত্তা এই মহানদীর বুকচিরে চার লেনের সড়কে ছুটবে একের পর এক যানবাহন। মাঝখানে থাকবে ডিভাইডার। সড়কপথের ৪০ফুট নিচ দিয়ে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে ছুটে যাবে ট্রেন। ১১০কিলোমিটার গতিতে চলবে পণ্যবাহী ট্রেন। সে সময় দেখার অপেক্ষা সবার।
অগ্রগতি ৯১ ভাগ ॥ গত ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৯১ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৩৮ ভাগ। পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। বাকি ৪০টি স্প্যান বসাতে তিন বছর দুই মাস লাগল। প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। সে হিসেবে ৩ বছর ২ মাস ১০ দিনে বসানো হচ্ছে সেতুর সব স্প্যান। বন্যা, নদী ভাঙ্গন, চ্যানেলে নাব্য সঙ্কট, করোনাভাইরাস মহামারীসহ নানা জটিলতা কাটিয়ে একে একে ৪০টি স্প্যান বসানো হয়। গত ৪ ডিসেম্বর ৪০তম স্প্যান বসানো শেষ হয়। ১০ ডিসেম্বর শেষ স্প্যানটি নদীর এপার-ওপারকে হাত ধরে যেন মিলিয়ে দিল।
প্রকল্পের নদীশাসন কাজের ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার কাজের শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেয়ান আবদুল কাদের বলেন, সার্বিকভাবে সেতুতে যান চলাচল শুরু করতে পারবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে। সে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ চলছে। না পারলে সময় বাড়ানো হতে পারে। তবে মন্ত্রিপরিষদদ সচিব থেকে শুরু করে সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী বলছেন, সেতুটি সবার জন্য ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে উন্মুক্ত করা হবে।
আর যা বাকি ॥ ৪১তম স্প্যান বসার মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান পদ্মা সেতু। তবে আরও কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। যা সম্পন্ন হতে লাগবে প্রায় আরও এক বছর। এমনটাই জানিয়েছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোঃ আবদুল কাদের।
তিনি জানান, ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১ হাজার ২৮৫টি এবং ২ হাজার ৯৫৯ টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে হাজার ৯৩০টি স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপার-টি গার্ডারের মধ্যে ৩১০টি স্থাপন করা হয়েছে। বাকি রোডওয়ে স্ল্যাব, রেলওয়ে স্ল্যাব ও সুপার-টি গার্ডার বসাতে প্রায় আটমাস সময় লাগবে। এর পরে স্ল্যাবের ওপর হবে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। এ ছাড়া ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজও বাকি।
কাদের আরও জানান, ভাঙ্গনের কারণে পদ্মা সেতুর ১২৬টি রোডওয়ে স্ল্যাব ও ১৯২টি রেলওয়ে স্ল্যাব নদীতে তলিয়ে যায়। সেগুলো নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। রেলওয়ে গার্ডার লুক্সেমবার্গ থেকে আনা হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ সেগুলো কনস্ট্রাকশন সাইটে চলে আসার কথা। এসব কাজ ছাড়াও বিদ্যুত, গ্যাস ও টেলিযোগাযোগ লাইন স্থাপনের কাজ বাকি আছে। সব মিলিয়ে বছরখানেক পর যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে পদ্মা সেতু। রেল সড়কের জন্য আলাদা স্ল্যাব বসানো হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে থাকছে গ্যাসলাইন, বিদ্যুত সংযোগ ও ফাইবার অপটিক্যাল। বাগেরহাটের রামপাল ও পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে আসা বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে।
সেতুর স্টিলের স্প্যানের ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। এই পথ তৈরির জন্য কংক্রিটের স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। সম্পন্ন হয়ে গেলে পিচ ঢালাই করা হবে। পুরো কাজ শেষ হলে যানবাহন চলাচলের পথটি হবে ২২ মিটার চওড়া, চার লেনের। মাঝখানে থাকবে বিভাজক। স্প্যানের ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। সেতুতে একটি রেললাইনই থাকবে। তবে এর ওপর দিয়ে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ দুই ধরনের ট্রেন চলাচলেরই ব্যবস্থা থাকবে। ভায়াডাক্টে এসে যানবাহন ও ট্রেনের পথ আলাদা হয়ে মাটিতে মিশেছে।
দুই পাড়ে গড়ে উঠবে উন্নত শহর ॥ পদ্মা সেতুর সঙ্গে দুই পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রাও একেবারে বদলে যাবে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বৃহৎ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেতুর দুই পাশে সিঙ্গাপুর ও চীনের সাংহাই শহরের আদলে পরিকল্পিতভাবে নতুন শহর গড়ে তোলা হবে। এর সঙ্গে আবাসিক সুবিধার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি হবে শিল্প-কারখানা। যার মাধ্যমে প্রায় কোটি মানুষের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। বিনিয়োগের ১৯ ভাগ রিটার্ন আসবে প্রতিবছর।
দেশে দীর্ঘ বিশে^ ১১তম ॥ বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুর তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে চীনের ডেনইয়াং কুনশান গ্র্যান্ড ব্রিজ। চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সাংহাই ও নানজিং এলাকায় দীর্ঘতম সেতুটি অবস্থিত। চীনের ইয়াংজি নদীর ওপর ব্রিজটি স্থাপিত। সেতুর সঙ্গে রয়েছে রেললাইনও। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৬৪ দশমিক আট কিলোমিটার। ২০১০ সালে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। সেতুটিতে খরচ হয় ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। পৃথিবীর বৃহত্তম সড়ক সেতুগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা সেতুর অবস্থান ১১তম। তবে নদীর ওপর নির্মিত সব সেতুর মধ্যে দৈর্ঘ্যরে দিক থেকে পদ্মা সেতুর অবস্থান প্রথম।
সেতুর ফাউন্ডেশনের গভীরতার দিক থেকেও এর অবস্থান প্রথম। প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, বিশে^র শক্তিশালী সেতুগুলো সাধারণত ‘সি’ আকৃতির হয়। কিন্তু নদীর অবস্থানের কারণে ওপর থেকে দেখলে পদ্মার নির্মাণ হয়েছে ‘এস’ আকৃতির। পদ্মার লাইফ টাইম ধরা হয়েছে শত বছর। এই সময়ে বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে সেতুর বড় রকমের কোন মেরামতের প্রয়োজন হবে না। নতুন করে রং করা, প্রয়োজনে নাট-বল্ট টাইট দেয়া, ঝালাই কাজ প্রয়োজন হতে পারে।
থাকবে চার লেনের সড়ক ॥ পদ্মা সেতুর ওপর নির্মিত সড়ক হবে চার লেনের। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই বড় পরিসরে সড়ক করা হয়েছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সড়ক যোগাযোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর সেতুতে যানবাহন চলাচলে চাপ বাড়বে। মূলত এই বিবেচনা থেকেই সেতুর পরিধি বড় করা হয়েছে। চার লেনের সড়কের মাঝখানে থাকবে রোড ডিভাইডার। ফলে যানবাহন আলাদা আলাদা লেনে চলবে। এতে দুর্ঘটনারও কোন সম্ভাবনা থাকবে না।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিশে^র আমাজান নদীর পর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় নদী পদ্মা। প্রমত্তা এই নদীতে ৪১তলা গভীর পর্যন্ত পাইল করে পিলার বসানো হয়েছে। সেতুর মোট প্রস্থ ৭২ ফুট। ভায়াডাক্ট নির্মাণ হয়েছে তিন দশমিক ১৮ কিলোমিটার। মাওয়া-জাজিরা প্রান্ত মিলিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়েছে ১৪ কিলোমিটার। দুই পাড়ে নদী শাসন হয়েছে ১২ কিলোমিটার। কাজ করেছে চার হাজার মানুষ। মোট ৪২ পিলারের মধ্যে প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং হয়েছে ছয়টি। মাটি জটিলতার কারণে ২২টি পিলারের পাইলিং হয়েছে ৭টি করে। মোট পাইলিং হয়েছে ২৮৬টি। পানির স্তর থেকে সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট। সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি।
মূল পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। সেতুর নক্সা করেছে আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইচসিওএম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। মূল সেতুর নির্মাণকাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিএমবিইসি)। নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। সেতু ও নদীশাসনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে। মাওয়া ও জাজিরায় পদ্মার উভয় তীরে সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ যৌথভাবে করছে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচসিওএম। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার পরামর্শক হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কার্স অর্গানাইজেশন।
মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে যানবাহন সেতুতে ওঠার জন্য এবং সেতু থেকে নামার জন্য দুইদিকে ভাগ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। এটি মূলত ভায়াডাক্ট বা ডাঙ্গায় সেতুর অংশ। দুই প্রান্ত মিলিয়ে সেতুর এই অংশের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। মাঝখান দিয়ে চলে যাবে ট্রেনলাইন। জাজিরা প্রান্তে আছে টোল প্লাজা।
নানা বাধা-বিপত্তি ॥ বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছিল ২০১৩ সাল। প্রকল্পের অর্থ ঋণ হিসেবে জোগান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পাঁচটি সংস্থা।
এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আর জাইকার দেয়ার কথা ছিল ৪১ দশমিক ৫ কোটি ডলার। কিন্তু বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১২ সালের ২৯ জুন অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নেয়। বিশ্বব্যাংক আর্থিক সহযোগিতা থেকে সড়ে দাঁড়ানোর পর ২০১২ সালের ১০ জুলাই জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে তাঁর সরকার আর কোন দেশ বা সংস্থার কাছে স্বেচ্ছায় সহায়তা চাইবে না। কেউ স্বেচ্ছায় দিতে চাইলে ভাল। এর পরই দেশের নিজস্ব অর্থায়ন পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ এগোতে থাকে। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন।
নির্মাণ শেষে পদ্মা সেতু জিডিপিতে ১ দশমিক ২৬ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করছেন সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। সেতুতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের’ সক্ষমতা হচ্ছে ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোন সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে। সেতুর নদীতে থাকা ৪০টি পিলারের নিচের পাইল ইস্পাতের। আর ডাঙ্গার দুটি পিলারের পাইল কংক্রিটের। নদীতে যেসব পাইল বসানো হয়েছে, সেগুলো তিন মিটার ব্যাসার্ধের ইস্পাতের বড় বড় পাইপ, যার ভেতরটা ফাঁপা। ২২টি পিলারের নিচে ইস্পাতের এমন ৬টি করে পাইল বসানো হয়েছে। বাকি ২২টিতে বসানো হয়েছে ৭টি করে পাইল। আর ডাঙ্গার দুটি পিলারের নিচের পাইল আছে ৩২টি, যা গর্তের মধ্যে রড-কংক্রিটের ঢালাইয়ের মাধ্যমে হয়েছে। আর নদীর পানি থেকে প্রায় ১৮ মিটার উঁচু পদ্মা সেতুর তলা। পানির উচ্চতা যতই বাড়ুক না কেন, এর নিচ দিয়ে পাঁচতলার সমান উচ্চতার যে কোন নৌযান সহজেই চলাচল করতে পারবে।
২| ১২ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:২৬
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
সেতুটির কারিগরি দিকের উপর বেশ তথ্য বহুল পো্ট ।
সেতুটির একটি ভাল বিবরন পাওয়া গেল ।
সেতুটির পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হোক
এ কামনাই রইল ।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: লেখায় নতুন কোনো তথ্য নেই।