নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিকৃতবুদ্ধির অধিকারী

বর্ষন মোহাম্মদ

অস্থিতিশীলতা, নষ্টামি, আর যাবতীয় প্রতারণা-প্রবণতার বিরুদ্ধে খেলা চলবে

বর্ষন মোহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জগদীশচন্দ্র বসুর \'বসুবিজ্ঞান\' মন্দির বা Bose Institute প্রতিষ্ঠার কথা (পর্ব-১)

২১ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৬


জগদীশচন্দ্র বসুর নব-আবিষ্কারে শুধু যে সেখানকার বিচক্ষণ বিজ্ঞানী-মহলই মুগ্ধ হলেন, তাই নয়, জগদীশচন্দ্র এবং অবলাবসু নিজেরাও চমৎকৃত হলেন লন্ডনের রয়েল ইনস্টিটিউশন পরিদর্শন করে। বাস্তবিক এই প্রথম জগদীশচন্দ্রের চিন্তা-ভাবনায় প্রবেশ করলো, এইরকম একটি সার্বিক বিজ্ঞান-কেন্দ্র নিজের দেশে প্রতিষ্ঠাধ করতে হবে, যেখানে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে স্বাধীনভাবে গবেষণা করবেন, আলোচনা করবেন। ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে, বসু বিজ্ঞান মন্দিরের ভাবনা তাঁর এ সময়েই। কিন্তু তাঁর নিজের গবেষণা থেমে থাকেনি কখনও; সেইসব গবেষণার সাথে সাথে চলতে লাগলো বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার ভাবনা ও পরিকল্পনা। যদিও তাঁর সে সময়ের ভাবনা-চিন্তা সবই ছিল প্রেসিডেন্সি কলেজকে ঘিরেই। আসলে তিনি বিজ্ঞানকে কুক্ষিগত করতে চাননি—সকলের জন্য বিজ্ঞান গবেষণার অর্গল খুলে দিয়েছিলেন। সদ্য প্রকাশিত (২০১৬) এক পুস্তকে এক ইংরেজ লেখক Marc Raboy লিখছেন: ‘‘মার্কনি তাঁর আবিষ্কারের পেটেন্ট নেবার একবছর আগেই ১৮৯৫ সালে কলকাতার টাউন হলে সকলের সামনে বসু তাঁর তৈরি মাইক্রোওয়েভকে টাউন হলে সকলের সামনে ব্যবহার করে দূর রাখা ঘণ্টাকে বাজিয়ে দিয়েছিলেন। অতি সজ্জন-আদর্শবাদী বসু তাঁর আবিষ্কারকে কমার্শিয়ালাইজ করতে আগ্রহী ছিলেন না, মনে করতেন, অন্যেরা তাঁর আবিষ্কারকে স্বাধীনভাবে ব্যবহার করুক। আর এ কারণে যখন তিনি ভারতে রিসার্চ ইনস্টিটিউট গড়লেন, তখন সমস্ত সদস্যদের নিষেধ করেছিলেন পেটেন্ট নিতে।’’
সুতরাং বুঝাই যায়, বিজ্ঞান মন্দির তৈরিতে তাঁর আদর্শ ছিল সর্বব্যাপী, সর্বজনের, এমনকি নিজেকে নিঃশেষে, নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দেওয়া বিশ্বের মানবতার কাছে।


উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকটায় একের পর এক গবেষণা আর আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে ভারতের বিজ্ঞানচর্চার দরজা-জানালা খুলে দিলেন জগদীশচন্দ্র। এ কারণে ইংলন্ডের রয়েল সোসাইটির বড় বড় বিজ্ঞানীরা সুপারিশ করলেন ভারত সরকারের কাছে যাতে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্রের জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে একটি অতি আধুনিক মানের গবেষণাগার তৈরি করা হয়। রয়েল সোসাইটির সদ্য প্রাক্তন সভাপতি লর্ড কেনভিন ১৮৯৬ সালের ২৩শে অক্টোবর ভারত সরকারের সচিব জর্জ হ্যামিলটনকে এ বিষয়ে উক্ত সুপারিশ সম্বলিত চিঠিটি লিখলেন। এখানে যাঁরা সই করলেন, তাঁরা যে যুগের এক ঝাঁক প্রখ্যাত ব্যক্তি, বিজ্ঞানী—রয়েল সোসাইটির সভাপতি লর্ড লিস্টার, লর্ড কেনভিন, অধ্যাপক পয়েনটিং, স্যার উইলিয়াম রামসে, স্যার গ্যাব্রিয়েল স্টোক্‌স ও অধ্যাপক থমসন প্রমুখ।
সচিব মহাশয়ের এ রকম জোরালো সুপারিশপূর্ণ পত্র পেয়ে ১৮৯৭ সালের মে মাসে এই সুপারিশপত্রটিসহ একটি নোট পাঠালেন ভারত সরকারের কাছে, যেখানে এ রকম একটি বিজ্ঞান-ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠার বিবেচনার কথা বলা হলো।
সুতরাং তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড এলগিন জগদীশচন্দ্রের সঙ্গে কথা বললেন এবং জানালেন যে, সরকার এ রকম গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে খুবই আগ্রহী, তিনি বাংলা সরকারের সঙ্গে এবিষয়ে কথা বলবেন।
কিন্তু তৎকালীন শিক্ষা কমিটির ডিরেক্টর এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ মশাই জগদীশচন্দ্রের যুগান্তকারী কাজকর্ম সম্বন্ধে কোনো আগ্রহই দেখালেন না। তাই যা হবার তাই হলো। প্রেসিডেন্সি কলেজে জগদীশচন্দ্রের জন্য একটি আধুনিক মানের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের সুপারিশের উপর জল ঢেলে দিলেন অর্থসচিব এডওয়ার্ড নর্মান বেকার।
জগদীশচন্দ্র যারপরনাই হতাশ হলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে এমন গবেষণা মন্দির তৈরি হলে তিনি যথেষ্ট খুশি হতেন সন্দেহ নেই, কিন্তু মনে মনে তাঁর জেদও বাড়তে লাগলো রয়েল ইনস্টিটিউশনের মতো একটি স্বাধীন বিজ্ঞানচর্চাকেন্দ্র তৈরির ভাবনা। সরকারের এ রকম হতাশাব্যঞ্জক কাজে জগদীশচন্দ্র কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন, তা জানা যায় রবীন্দ্রনাথকে লেখা তাঁর একটি পত্রে। পত্রটি লেখা হয়েছিল ১৯০১ সালের ২০শে জুলাই। তখন তিনি ইংলন্ডের রয়েল ইনস্টিটিউশনেই অবস্থান করছিলেন
‘‘বন্ধু, ৫ বৎসর পূর্ব্বে অনেক চেষ্টা করিয়া
দেশে বিজ্ঞানাগারের জন্য এ দেশ হইতে সমস্ত এক
প্রকার ঠিক করিয়া গিয়াছিলাম। শেষে ক্ষুদ্র লোকের
চেষ্টায় আমার পরাজয় হইল। সেই ক্ষোভ আমার
কোনদিন মিটিবে না। কারণ আজ সেই পরীক্ষাগার
থাকিলে ভারতবর্ষকে পুণ্যক্ষেত্র করিতে পারিতাম।’’


সুতরাং, আর পিছু ফিরে তাকানো নয়, জগদীশচন্দ্র এবার পুরোপুরি একার চেষ্টায় এগিয়ে গেলেন বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠায়। পাশে পেলেন অনেককেই তবে যাঁকে তিনি ‘‘আমার প্রিয় মা’’ বলে সম্বোধন করতেন, সেই ওলি সারা বুলের সাহায্যের কোনো তুলনাই হয় না এক্ষেত্রে। সঙ্গে অবশ্যই ভগিনী নিবেদিতা। এদেশের সরকার যা বুঝলো না, তা বুঝলেন দুই বিদেশিনী যাঁরা স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই ভারতকে ভালবেসেছিলেন। শ্রীমতী ওলি সারা বুল ১৮৮০ সালে তাঁর স্বামী বিশ্বখ্যাত বেহালাবাদক ওলি বোর্নম্যান বুলকে হারিয়েছেন। সারা প্রভূত সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন। তিনিই এগিয়ে এলেন জগদীশচন্দ্রের সাহায্যে। ১৯০২ সালের ২রা জানুয়ারি লন্ডনে বসে শ্রীমতী সারা একটি উইল তৈরি করলেন। সে উইলে লেখা হলো একটি বিজ্ঞান-গবেষণা কেন্দ্র তৈরির জন্য তিনি বিশ হাজার আমেরিকান ডলার দান করছেন অধ্যাপক জগদীশচন্দ্র বসুকে। নিজের হাতে তিনি সে উইলটি লিখেছেন। অনেক গবেষকই মনে করেন বসু বিজ্ঞান মন্দিরের জন্ম আসলে ওই ১৯০২ সালেরা ২ জানুয়ারি।
১৯০৬ থেকে ১৯০৯-এর মধ্যে চারটি কিস্তিতে বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য পাওয়া গেল অর্থ এবং কলকাতার গ্রিনলেজ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তা পরিচালিত হলো। এ অর্থ ব্যবহৃত হলো বিজ্ঞান মন্দিরের জমি (পুণ্যঅঙ্গন) কেনার জন্য। জমি পাওয়া গেল রাজাবাজারে জগদীশচন্দ্র বসুর বসতবাড়ি ৯৩ নম্বর আপার সার্কুলার রোডের (বর্তমান আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড) উত্তর দিকে। বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য জগদীশচন্দ্র নিজেও তাঁর সঞ্চিত বেশ কয়েক লক্ষ টাকা দান করলেন।
আচার্য জগদীশচন্দ্র সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিলেন ১৯১৫ সালে এবং অধিকাংশ সময়টা দিলেন বসুবিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠায়, যদিও অবসরের পরেও তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে এমিরেটাস অধ্যাপক ছিলেন। ১৯০৮ সালেই তিনি বিজ্ঞানমন্দির তৈরির জন্য রাজাবাজারের নিজের বাড়ির উত্তরদিকে প্রায় ৫০ কাঠা জমি (৮০ ফুট চওড়া এবং ৪০০ ফুট লম্বা) কিনে ফেলেছিলেন।
বসু বিজ্ঞান মন্দির ভবনের নকশা তৈরি করেছিলেন অবনীনাথ মিত্র। তিনি বসুবিজ্ঞান মন্দিরের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন। তিনি একস্থানে লিখছেন : ‘‘আমি আচার্যদেবের নির্দেশে বসুবিজ্ঞান মন্দির নির্মাণের ভার গ্রহণ করি এবং তাঁরই প্রেরণায় সারনাথ, বারাণসী, চুনার প্রভৃতি ভারতের বহু বিশিষ্টস্থানে গিয়ে আমাদের প্রাচীন গৃহনির্মাণ পদ্ধতি অনুধাবনের চেষ্টা করি। এভাবে আমি বিশেষ ভারতীয় মতে বসুবিজ্ঞান মন্দিরের নকশা তৈরি করি। বলাবাহুল্য যে, এই কাজে প্রতিপদে আমাকে নানাবিধ উপদেশ দিয়ে অনুপ্রাণিত করতেন আচার্যদের স্বয়ং। সুতরাং বসু‍বিজ্ঞান মন্দির বা Bose Research Institute-এর উদ্বোধন হয়ে গেল ১৯১৭ সালের ৩০ নভেম্বর। দিনটা ছিল আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ৫৯তম জন্মদিন।
উনিশ শতকের শেষের কয়েক বছরে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে অনেকগুলো যুগান্তকারী আবিষ্কারের ঘটনা ঘটে যেগুলোর ভিত্তিতে বিংশ শতাব্দী হয়ে ওঠে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও প্রযুক্তির স্বর্ণযুগ। বিজ্ঞান-মরুতে গবেষণার ফল ফলানোর জন্য একাই লড়ে চলেছেন জগদীশচন্দ্র।
এক্স-রে আবিষ্কারের পরপরই জগদীশচন্দ্র তাঁর নিজের পরীক্ষাগারে এক্স-রে উৎপাদন করেন। শুধু তাই নয়, এক্স-রে’র সাহায্যে যে শরীরের রোগ নির্ণয় করা যায় তার সফল প্রয়োগ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম শুরু করেন জগদীশচন্দ্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈনিকদের শরীরে এক্স-রে প্রয়োগ করে বিশ্বের প্রথম চিকিৎসা-পদার্থবিজ্ঞানী (Medical Physicist) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন মেরি কুরি। মেরি কুরির জন্মদিন ৭ই নভেম্বরকে ‘ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল ফিজিক্স ডে’ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু মেরি কুরিরও অনেক আগে জগদীশচন্দ্র কলকাতায় এক্স-রে দিয়ে রোগীর শরীরের ছবি তুলতে শুরু করেছিলেন। ডাক্তার নীলরতন সরকার তাঁর রোগীদের জগদীশচন্দ্রের কাছে পাঠাতেন এক্স-রে করার জন্য। ১৮৯৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লেখা জগদীশচন্দ্রের এক চিঠিতে তার প্রমাণ মেলে: “যদি পারেন তাহা হইলে সকালে ৮টার সময় প্রেসিডেন্সি কলেজ হইয়া আসিবেন। রঞ্জেন কলে একজন রোগী দেখিতে হইবে। তাহার পৃষ্ঠভঙ্গ হইয়াছে। ডাক্তার নীলরতন সরকারের কথা এড়াইতে পারিলাম না।”
নতুন যন্ত্র প্রস্তুত করার ব্যাপারে আশ্চর্য দক্ষতা ছিল জগদীশচন্দ্রের। বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহার তিনি যে কোন ব্যাপারেই করতে পারতেন। ১৯০৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেজ মেয়ে রেণুকা খুব অসুস্থ। অক্সিজেন দেয়া দরকার। তখন অক্সিজেন সহজলভ্য ছিল না। জগদীশচন্দ্র ভাবলেন আবেশ-কুন্ডলির (induction coil) সাহায্যে অক্সিজেনের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ-চালনা করলে অক্সিজেন আংশিকভাবে ওজোনে (O3) পরিণত হয়। ওজোন মিশ্রিত অক্সিজেন থেকে আয়নিত অবস্থায় যে অক্সিজেন পাওয়া যায় তা শ্বাসকষ্ট দূর করার পক্ষে সহায়ক। জগদীশচন্দ্র এই কাজের জন্য একটা যন্ত্র বানিয়ে রবীন্দ্রনাথকে পাঠিয়েছিলেন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: কোথা থেকে কপি করেছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.