নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিকৃতবুদ্ধির অধিকারী

বর্ষন মোহাম্মদ

অস্থিতিশীলতা, নষ্টামি, আর যাবতীয় প্রতারণা-প্রবণতার বিরুদ্ধে খেলা চলবে

বর্ষন মোহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শম্ভু আচার্য – আঁকাআঁকি আমার কাছে স্বর্গীয় মনে হয়

১৭ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০৪


পটচিত্রের গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারাকে বাঁচিয়ে রেখেছে মিরকাদিম পৌর সভার কালিন্দীপাড়ার ঠাকুরবাড়ির আচার্য পরিবার। আট পুরুষ ধরে এ শিল্পকে লালন করে চলেছেন তাঁরা। সেই বংশধারার নবম পুরুষ শম্ভু আচার্য। আঁকাআঁকি আমার বংশানুক্রমে, এবং এই শিল্প নিয়ে আছি আমাদের পরিবারে আমি নবম পুরুষ। একদম ছোটবেলা থেকে রংতুলির মধ্যেই বেড়ে উঠেছি। বুঝতে শেখার আগেই এগুলো আমার কাছে চলে এসেছে এবং অক্ষরজ্ঞান হওয়ার আগেই আমি ফুল পাখি লতাপাতা আঁকা শিখেছি। বর্ণমালা অ আ শেখার আগেই নাকি আমি এগুলো আঁকতে পারতাম। এটাই ছিল আমার খেলা। মনে করেন, কচুগাছ। দেয়ালের মধ্যে টান দিতাম, সবুজ হয়ে গেল। ইট কোনোটা বেশি পোড়া, কোনোটা কম, এগুলো দিয়ে তখনই রং বানাতে শিখে গেছি। সবাই অবাক হয়ে বলত, তোর রং নাই তুলি নাই, তুই এই ছবি আঁকলি ক্যামনে! তারপর কয়লা ছিল, অঙ্গার; এটা দিয়ে বানাতাম কালো রং।



আমি আঁকতাম মানুষের অগোচরে, যখন মানুষ থাকত না, তখন আমি চট করে, তড়িঘড়ি করে এঁকে ফেলতাম। মানে, সবাইকে একটা চমক দিতাম আমি, মানে কে আঁকল! আমাদের গ্রামে বেশির ভাগ বাড়িতেই ছিল টিনের ঘর। আমাদের বাড়ির পশ্চিমে ছিল একটা দেয়ালঘেরা বাড়ি। বাড়িটা ছিল নতুন। সেই দেয়ালের মধ্যে আমি আঁকতাম। ওই বাড়িতে এক বুড়ি ছিল। আমি ডাকতাম ঠাকুমা। সে বুড়ি ছিল বড় দজ্জাল। তার কাছ থেকে মায়ের কাছে বিচার আসত। সে আমার মাকে বলত, শম্ভুর মা, শম্ভু তো আমাদের দেয়ালটা নষ্ট কইরা ফালাইল। মা তখন বালতিতে জল নিয়ে আমার কানে ধরে বলত, মোছ, এটা মোছ। আমি মুছতাম। মোছার পরে মনের মধ্যে ক্ষোভ হতো, রাগ হতো, মনে মনে ভাবতাম দজ্জাল ঠাকুমা আমাকে মার খাওয়াল! আবার একটু পরে করতাম কী, শিকে ধরে জানালা বেয়ে ওপরে উঠে ফুল পাখি আঁকতাম। তারপর আবার বিচার দিত। আমি বলতাম, আমি কি ওখানে উঠতে পারি? এটা তো অনেক উঁচু। এত উঁচুতে উইঠা আমি আঁকি ক্যামনে! ক্যামনে আঁকলাম? আবার একটু পর ওই ঠাকুমাই আমাকে বলত, তুই তো ভালোই আঁকতে পারছ রে।
তারপর স্কুলেও বেত খেতাম। প্রথমে অ আ তো কলাপাতায় লিখতাম, তারপর স্লেটে। স্লেটে এক পিঠে লিখতাম আর অন্য পিঠে ছবি আঁকতাম। শিক্ষক মাঝেমধ্যেই বেত্রাঘাত করত। আবার কতক্ষণ পর নিজেরাই বলত, নারে, তুই তো ভালোই আঁকতে পারছ। এখানে একটা ফুল আঁক, এখানে একটা পাখি আঁক। এভাবে আঁকতে আঁকতেই আঁকিয়ে হইলাম। এখনো সেই আঁকার জগতেই আছি। এই নিয়েই চলে, চলছে।

এই আঁকাআঁকি করতে গিয়ে অনেক রকম ঘটনা ঘটেছে। একটা বলি—চীনে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। আমি আর শাকুর শাহ স্যার চীন গিয়েছিলাম। সাংহাই যাব। ওই দেশে এক জায়গায় প্লেন দুই ঘণ্টা লেইট। আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো হোটেলে। দেওয়া হলো শুয়রের মাংস, শুয়রের মাংস তো খাই না। দেওয়া হলো গরুর মাংস, ওটাও তো খাই না। ওয়েটার মেয়েদের বোঝাই, ওরা ইংরেজি বোঝে না, আমাদের কথা কিছুই বোঝে না। এরপর করলাম কী, শুয়রের ছবি আঁকলাম, সেটার ওপর ক্রস চিহ্ন দিলাম। গরুর ছবি দিলাম, এরপর ওটার ওপর ক্রস চিহ্ন দিলাম। চট করে ছবি এঁকে এটার ওপর ক্রস চিহ্ন দিতে দেখে সেই মেয়েদের কী যে হাসি। মানে, টান দিলাম আর শুয়র-গরু হইয়া গেল দেখে ওরা হাসছিল। এরপর চিংড়ি মাছ আঁকলাম, গাজর আঁকলাম, টমেটো আঁকলাম। কিন্তু তড়িঘড়ি করে ভাত আঁকি কী করে! এটা আঁকলে তো নাও বুঝতে পারে! তাই ধানগাছ আঁকলাম। ধানগাছ আঁকার পর এরা বুঝে ফেলল। কতক্ষণ পর গরম ভাত বাটিভরে নিয়ে হাজির। ধোঁয়া উঠছিল ভাত থেকে। মনে হলো এক বছর পর ভাত খেলাম আর কি! শাকুর শাহ স্যার বললেন, শম্ভু, তোমার বুদ্ধিটা ভালোই। বললাম, কী করব স্যার, ওরা ইংরেজি বোঝে না, ইশারা বোঝে না। এটা যদি না করতাম তবে তো শুয়র খাওয়া লাগত, গরু খাওয়া লাগত। এগুলো তো খাই না স্যার। তাই এটা করতে হলো।

আর আঁকি তো আসলে, বাবা ছবি আঁকত, মা আলপনা করত, বাড়িতে পটচিত্র তৈরি হতো, প্রতিমা তৈরি হতো। সেই পারিবারিক ধারাতেই আঁকাআঁকি। ছোটবেলা থেকে অন্য কিছু হওয়ার আর কোনো বিষয় মাথায়ই ছিল না বা ভাবনাতে এ ধরনের কিছু আসেনি যে অন্য কিছু হতে হবে। ছেলেবেলাই এটা করছি, এখনো করছি। আমার মনেপ্রাণে, ধ্যানে, এমনকি স্বপ্নে বিশ্বাস করি, এটাই আমি বিশ্বাস করি এবং এটা আমার কাছে স্বর্গ মনে হয়।





মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমিও আকাআকি করতে পছন্দ করি।

২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:৪২

চাঁদগাজী বলেছেন:



এ পেশায় উনি কেমন করছেন, পরিবার চলছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.