নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় সবুজ ডাইনি...

কোনো জটিলতা নেই তবুও জটিলতর শেষ বিকেলের রোদ

বেলা্যেত

চলচ্চিত্র নির্মাণ করছি, চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখালেখি করছি, চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রকাশনার সম্পাদনা করছি এবং চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রতিনিধিত্বশীল একটি সংগঠনের কর্মী। আগ্রহের ক্ষেত্রটি মূলত সামগ্রিক চলচ্চিত্র-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করার, সেটাই করার চেষ্টা করছি।

বেলা্যেত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘যুদ্ধশিশু’ নান্দনিক বিচারে উদ্ভট; রাজনৈতিক বিচারে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিপদজনক

০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১১:১১

ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ যৌথ আয়োজনে ২ জুন, সোমবার বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘চলচ্চিত্রের রাজনীতি, চলচ্চিত্রের অর্থনীতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। সা¤প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘যুদ্ধশিশু’ মুক্তি পাওয়ার প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল।



এই আয়োজনে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল চলচ্চিত্রের নান্দনিক গুরুত্বের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের রাজনীতি এবং চলচ্চিত্রের অর্থনৈতিক রাজনীতি। এই আয়োজনের এবারের বিষয় ভারতীয় চলচ্চিত্র 'যুদ্ধশিশু'। ভারতীয় নির্মাতা মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত নির্মিত এই চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭১।



আয়োজকরা গভীর মনোযোগের সঙ্গে ভারত, বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বেশকিছু দেশে একযোগে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্রকে বিশ্লেষণের আলোকে হাজির করেন। এই চলচ্চিত্র যেহেতু বাংলাদেশের জন্মলড়াইকে চিত্রায়িত করতে চেয়েছে তাই এই ছবির সম্ভাব্য সকল প্রবনতা এবং মনোভাব বিশ্লেষিত হওয়ার প্রয়োজন বলেই আয়োজকরা মত পোষণ করেন।



এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন লেখক এবং অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি চলচ্চিত্রকার শহিদুল ইসলাম খোকন, চলচ্চিত্র সমালোচক ও অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, চলচ্চিত্র সমালোচক জাঈদ আজিজ, চলচ্চিত্র গবেষক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী, সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, চলচ্চিত্রকর্মী কামরুল হাসান কাইউম, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী নাবীল আল জাহান প্রমুখ। আলোচনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক এবং ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন।



আলোচনার শুরুতে বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্রকর্মী কামরুল হাসান কাইউম। তিনি চলচ্চিত্রটির নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, পুরো ছবিতে আমি ‘যুদ্ধশিশু’ খুঁজে বেরিয়েছি কিন্তু পাই নি, শেষে আবিষ্কার করলাম বাংলাদেশই এই ছবিতে ‘যুদ্ধশিশু’! যা পাকিস্তানের সৈন্যদের ধর্ষণের ফলে জন্ম নিয়েছে বলে নির্মাতা আমাদের বুঝাতে চেয়েছেন!



চলচ্চিত্র সমালোচক ও অধ্যাপক ফাহমিদুল হক মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের ঘটনাপ্রবাহের সাথে চলচ্চিত্রে উপস্থাপিত ঘটনাপ্রবাহের অসামঞ্জস্য তুলে ধরেন। তার মতে, চলচ্চিত্রটিতে বাংলাদেশের নয়, বরং ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের গল্প বলে না, যা বলে তাতে আমরা মোটেও সম্পৃক্ত হতে পারি না। তিনি আরো বলেন, ‘যুদ্ধশিশু’ ভূগোলের ধারনাহীন একটি ছবি অনেকটাই উদ্ভট ধরণের যা ফ্যান্টাসি ধরণের ছবিতে আমরা দেখে থাকি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ মোটেও কোনো ফ্যান্টাসি নয়।



চলচ্চিত্র গবেষক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী বলেন, চলচ্চিত্রটিতে যুদ্ধশিশু ও বীরাঙ্গনার যে চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে বীরাঙ্গনা কিংবা যুদ্ধশিশুর প্রতিফলন মোটেও ঠিকভাবে হয়নি। এই ছবির বীরাঙ্গনারা আমাদের জানা ইতিহাসের পরিধির বাইরে বানিয়ে তোলা ঘটনাবলি দেখায়। যা এই ছবির নির্মাতার উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত বলেই মনে হয়।

চলচ্চিত্র সমালোচক জাঈদ আজিজ চলচ্চিত্রটিকে ফ্যাসিস্ট সিনেমা বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, বলিউডের অনেক সিনেমাকে যেমন হলিউডের সিনেমার ফেক ক্লোন বলা হয়, ঠিক তেমনি, ‘যুদ্ধশিশু’ চলচ্চিত্রটি বলিউডের সিনেমার ফেক ক্লোন। তিনি বলেন, যেকোনো ফ্যাসিস্ট সিনেমায় আমরা দেখি সেই ছবির কোনো ভূগোল থাকে না, সেই ছবির পাত্র-পাত্রীদের কোনো বাস্তবিক অস্তিত্ব থাকে না, আমরা জানতে পারি না তারা কারা, কোথা থেকে তারা এলো অথবা কোথায় তাদের কী পেশা ছিল? তারা শুধু বিশেষ একটি কারণে উদিত হয় এবং সেই কারণের প্রয়োজনে তাদের বিনাশ ঘটে। যুদ্ধশিশু সিনেমা যে গল্প যে বিশ্বস্ততার বাতাবরণে হাজির করে এই মোড়কীকরণের মধ্য দিয়েই তারা তাদের ভিন্ন এজে-া বাস্তবায়ন করে। ফ্যাসিস্ট সিনেমায় আমরা আরো দেখি সমাজের সবচেয়ে গৃহিত আইকনগুলোকে ব্যবহার করা হয় যাতে ছবির মূল গল্প ঢাকা পড়ে যায়। যে কারনে ‘যুদ্ধশিশু’ ছবিতে আমরা ইন্দিরা গান্ধি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ব্যবহার দেখতে পাই।



সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মূলত, বাংলাদেশে ভারতীয় চিন্তাভাবনা পুশ-ইন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা দেখব এই ছবি যেনো ঐতিহাসিক বাংলাদেশের গল্প বলার চেয়ে এক ধরণের আগামীর বাংলাদেশের গল্প বলতে চেয়েছে। তারা আমাদের বাঙালি পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার চেয়ে ‘বাংলাদেশী’ পরিচয়ে পরিচিত করতে চায়। তারা বলতে চায় আমরা যেন প্রকৃত মুসলমান হয়ে উঠি। তারা ছবিতে আমাদের আরো বলে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মুক্তি নাই, ‘আজাদী’ আছে!



লেখক ও অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান মেহেরজান চলচ্চিত্রটির সাথে ‘যুদ্ধশিশু’ চলচ্চিত্রটির তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও সা¤প্রতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে চলচ্চিত্রটি বিশ্লেষণ করেন। তার মতে, কোন কিছু না জানাটা অপরাধ নয়, বরং জানার চেষ্টা না করাটা অপরাধ। চলচ্চিত্রটি নির্মাণের পূর্বে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এই ছবির নির্মাতার ন্যূনতম জ্ঞান ও গবেষণার ইচ্ছার ওপর তিনি প্রশ্নারোপ করেন। তিনি বলেন, এই ছবি পোনে তিন ঘন্টা ধরে দেখাও একটি পরীক্ষা বটে! ছবিটির আগাগোড়া গল্পের সাথে আমি মুক্তিযুদ্ধের চিহ্ন খুঁজে পাই নি। এ যেনো কল্পলোকের মুক্তিযুদ্ধ! তিনি এই ছবির রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে উল্লেখ করে বলেন, তাতে দিল্লীর খুশি হওয়ার কারণ থাকতে পারে কিন্তু ঢাকার তাতে কোনো ফায়দা নাই! তিনি এই ছবির রাজনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে আরো বলেন, বাংলাদেশীদের মুসলমান আকারে এবং বাংলাদেশকে মুসলমানদের দেশ হিসেবে দেখাতে পারলে অখণ্ড ভারতের সুবিধা হয়; ভারতের বর্তমান রাজনীতির লক্ষ্যও তাই, তাতে করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অঙ্গিকার নষ্ট হয়। তিনি আরো বলেন, এই ছবির নান্দনিক কোনো দিক আমি খুঁজে পাই নি, কিছু রাজনৈতিক দিক খুঁজে পেয়েছি! তিনি এই ছবির বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন।



আলোচনার শেষ পর্যায়ে বৈঠকের সঞ্চালক বেলায়াত হোসেন মামুন বলেন, ‘যুদ্ধশিশু’ নিয়ে সকলের আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে ছবিটি মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র হিসেবে একটি উদ্ভট চলচ্চিত্র ছাড়া কিছু নয়। এই ছবির একটি ঐতিহাসিক ছবি হয়ে ওঠার জন্য যে যে শর্তপূরণ করার কথা তার কোনোটাই ঠিক করে পূরণ করে নি। এই ছবির নির্মাতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি হাস্যকর ছবিই ‘উপহার’ দিয়েছেন। যা আমাদের চূড়ান্ত অর্থে অপমানিত করেছে এবং আমরা এই ছবির নির্মাতাকে আমাদের নিন্দা জানাচ্ছি। বাংলাদেশে এই ছবি কিভাবে মুক্তি পেতে পারল এবং কিভাবে এই রকম কনটেন্ট নিয়ে একটি ছবি সেন্সর সনদ পেতে পারে! আমরা আরো অবাক হয়ে যাই যখন দেখতে পাই এই ছবির প্রশংসা করেন আমাদের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী! মামুন আরো বলেন, আমরা দেখেছি আমাদের প্রয়াত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ আমাদের সেন্সর বোর্ড নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল, সেখানে তারা কীভাবে এই ছবিকে ছাড়পত্র দিতে পারে?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১১:৩১

মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: আমি কামরুল হাসান কাইউম এর সাথে এক মত। বাংলায় নাম যুদ্ধশিশু। আর ইংরেজিতে বাস্টার্ড চাইল্ড। এটা ঠিক আমাদের গালি দেয়ার জন্যই বানানো। আমি সত্যি দুঃখিত, এই ছবি আবার যৌথ প্রযোজনায় তৈরি!

২| ০৩ রা জুন, ২০১৪ সকাল ৭:৪৮

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: তথ্য মন্ত্রীর কাছে তথ্য ছিল এই ছবি উত্তম। সেই তথ্য অন্য কেউই জানেন না, তাই এমন তথ্যে সবারই মাথা ঘুরে গেছে। আসল তথ্য আমার কাছে আছে! আর তা হল, তথ্য মন্ত্রী অনেক টাকা খেয়েই এই ছবির মুক্তির সুপারিশ করেছে। :-0 !:#P B:-/ :-B :#) B-)) :> =p~

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.