নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় সবুজ ডাইনি...

কোনো জটিলতা নেই তবুও জটিলতর শেষ বিকেলের রোদ

বেলা্যেত

চলচ্চিত্র নির্মাণ করছি, চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখালেখি করছি, চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রকাশনার সম্পাদনা করছি এবং চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রতিনিধিত্বশীল একটি সংগঠনের কর্মী। আগ্রহের ক্ষেত্রটি মূলত সামগ্রিক চলচ্চিত্র-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করার, সেটাই করার চেষ্টা করছি।

বেলা্যেত › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা চলচ্চিত্রের বাজার সম্প্রসারণ অথবা ‘দুই বাংলা’র এক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা_ বেলায়াত হোসেন মামুন

০৭ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৭

বাংলাদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শনের বিষয়ে কথা শুরু হয়েছে বছর তিনেক আগে থেকেই। আমরা শুরু থেকেই জানি দেশের অনেকেই ভারতীয় চলচ্চিত্র বাংলাদেশে বাণিজ্যিক প্রদর্শনের বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এটা কোনোভাবেই খারাপ কোনো বিষয় নয়। চলচ্চিত্রের আদান-প্রদান বিশ্বব্যাপি প্রচলিত একটি বিষয় সেখানে আমাদের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখা কোনো বুদ্ধিমত্তার বিষয় হতে পারে না। আমরা চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন করি। আমরা সারা বিশ্বের চলচ্চিত্র দেখা এবং দেখানোর চর্চা করি। তবে এই চলচ্চিত্র দেখা ও দেখানোর চর্চা চলচ্চিত্রের মান, বিষয় এবং আঙ্গিক নিরপেক্ষ নয়। আমরা অবশ্যই সারা বিশ্বের চলচ্চিত্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে বসে দেখতে চাই তবে তা ভালো চলচ্চিত্র। তবে যে কোনো দেশের যে কোনো চলচ্চিত্রই বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে বসে দেখার ইচ্ছে কারো থাকার কথা নয়। কেননা সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর যত ভাষায় যতরকম চলচ্চিত্র নির্মিত হয় আমরা কেউই তার সব চলচ্চিত্র দেখি না; সম্ভব নয় বলে। আমরা প্রত্যেকেই একটি বাছাইয়ের ভেতর দিয়ে যাই তা ব্যক্তিক হতে পারে অথবা গোষ্ঠীগত। নির্বিচার চলচ্চিত্র দেখার সময় ও সুযোগ আমাদের কারোই থাকে না। তাই বিচারহীনভাবে চলচ্চিত্র দেখার উৎসাহ থেকে দেশে পৃথিবীর অন্য দেশ ও ভাষার চলচ্চিত্র বাণিজ্যিক প্রদর্শনের কিছু অসুবিধা নিশ্চয়ই আছে। সে অসুবিধাগুলো কমবেশি সবাই বোঝেন তাই সেই আলোচনা অন্যত্র হবে।

সম্প্রতি পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বেশ বড় একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এই সফরে আমরা বাংলাদেশ থেকে তাদের যথাযথ সমাদর করতে পেরেছি তা আমাদের জন্য আনন্দের। এই সফরে যে প্রধান বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসার কথা ছিল তা অন্য আরেকটি বিষয়ের আড়ালে প্রায় হারিয়ে গেছে। সীমান্ত চুক্তি অথবা তিস্তার পানিবন্টনের মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো অনেকটাই মাইনর হয়ে গেছে। অনলাইন অথবা অফলাইন আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের সাথে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বিনিময়ের প্রসঙ্গটি। এখানে ‘দুই বাংলা’ এক করে দেয়ার একটি আবেদন এসেছে যা আমাদের বহুদিনের পুরোনো বেদনার অন্যতম কারণ। ভাগ হয়ে যাওয়া বাঙালির অনেক দিনের আকাক্সক্ষার নাম ‘অখ- বাংলা’। সে শুধু পশ্চিম বাংলার সাথে নয় আসাম এবং ত্রিপুরাও এর মধ্যে থাকবে। কিন্তু এই আকাক্সক্ষার প্রকাশ রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি করতে পারে যে কোনো সময়ে। কারণ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র আর ভারতের অঙ্গরাজ্য বা প্রদেশ হচ্ছে পশ্চিম বাংলা, আসাম এবং ত্রিপুরা। ফলে এই আকাক্সক্ষা বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র দুটির মধ্যে অনেক রকম রাজনৈতিক ‘টেনশন’ তৈরি করবে। যা আমাদের কারো জন্যই খুব আরামদায়ক হবে না। এ কথাও আমরা সবাই জানি। তাই এ বিষয়ে আমাদের অন্তরের কথা ‘অন্তরের গভীরে’ লালন করি; প্রকাশ্যে হাজির করি না।

এই অবস্থায় দুই বাংলার ‘এক’ হওয়ার আবেদন আমার বিচারে রাজনৈতিক নয়, ব্যবসায়িক। আমরা বাণিজ্যিকভাবে একে অপরের বাজারের অংশিদারিত্ব চাইছি বলেই মনে হচ্ছে। এখন আলোচনার বিষয় এই চাওয়ার মধ্যে আমাদের অর্থাৎ বাংলাদেশের আগ্রহ কতখানি আর পশ্চিম বাংলার উৎসাহ কতখানি?

আমরা লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশে ভারতীয় হিন্দি ভাষার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র আমদানীর বিরুদ্ধে একটি প্রবল আন্দোলন করেছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট নির্মাণ-অভিনয়শিল্পীরা। সেই চাপে এবং সরকারের আন্তরিকতায় আপাতত ভারতীয় হিন্দিভাষার চলচ্চিত্র ‘হয়ত’ ঠেকানো গেল। কিন্তু ভারতীয় বাংলাভাষার চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে আমাদের চলচ্চিত্র-ইন্ড্রাস্ট্রির অবস্থান কি?

বাহিরে থেকে মনে হতে পারে এই চলচ্চিত্র আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে আমাদের বাজারের সম্প্রসারণ হবে বা হচ্ছে। কিন্তু আপাত এই মনে হওয়ার সাথে বাস্তবতার সম্পর্ক কতখানি? সেই প্রশ্ন আমাদের নীতিনির্ধারণের ক্ষমতাপ্রাপ্তদের করতে হবে। মাঠ পর্যায়ের গবেষণা এবং বিশ্লেষণ ছাড়া এই বিষয়ে একমত হওয়া হবে হাসতে হাসতে ‘হাইজ্যাক’ হওয়ার মত বিপর্যয়কর।

আমাদের সিনেমাহল মালিকদের আবদার তাদের সিনেমাহল বাঁচাতে হিন্দিভাষার চলচ্চিত্র বাণিজ্যিকভাবে দেখাতে দিতে হবে। এই আবদারে একমত হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। সিনেমাহল মালিকদের চরিত্র মূলত ব্যবসায়িক। টাকা না পেলে সে সিনেমাহল বন্ধ করে দেবে আর টাকা পেলে হংকং মার্কা পর্নোগ্রাফি চালাতে কসুর করবে না। ঢাকার চলচ্চিত্রের কাটপিস বাণিজ্য চালিয়েছেন এই সিনেমাহল মালিকরা। কখনো কোনো নান্দনিক চলচ্চিত্রের জন্য তাদের সহনশীলতা পাওয়া যায় নি। বরং ভালো চলচ্চিত্রের বিষয়ে তারা বরাবরই অনান্তরিক এবং তাচ্ছিল্যপ্রবণ। কারণ ভালো চলচ্চিত্র সিনেমাহল ভরিয়ে তোলে না। এদের চরিত্র যেহেতু ব্যবসাপ্রবণ ফলে আজ ব্যবসা কম বলে সে সিনেমাহল ভেঙ্গে শপিং কমপ্লেক্স বানাবে আবার আগামী দিনে সিনেমা ভালো ব্যবসা করলে সেই শপিং কমপ্লেক্সের দুটো ফ্লোর ভেঙ্গে মাল্টিপ্লেক্স বানাবে। শুধুমাত্র সিনেমাহল মালিকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সিনেমার নীতিনির্ধারণ করার কোনো কারণ দেখি না। যদি তেমন কিছু হয় তাহলে বুঝতে হবে নীতিনির্ধারণের পর্যায়ে থাকা মানুষজন পণ্যের মতই বিক্রি হয়ে গেছেন। কেননা সিনেমাহল মালিকরা ক্রয়-বিক্রয়ে ভীষণ সিদ্ধ!

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে মমতা বেেন্দাপাধ্যায়ের এই সফরের প্রধান লক্ষ্য ছিল দুটো; একটি বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের আস্থা অর্জন এবং অন্যটি সিনেমার বাজার সম্প্রসারণ। মন্দ নয়। এতে বিরোধীতা করারও কিছু নেই। কারণ আমরাও চাই আমাদের বাজারের সম্প্রসারণ। ফলে এই সফর ভীষণভাবে স্বার্থসংশ্লিষ্ট। মমতা বলেছেন একটি যৌথ কমিটি করার কথা। আমাদের দিক থেকে এই পদক্ষেপে আন্তরিকভাবেই এগিয়ে যাওয়াই উচিত। তবে সাবধানী পদক্ষেপে। দাদা বলে নুয়ে পড়ার মত নয়। চলচ্চিত্র বিনিময়ের বিষয়ে যে যৌথ কমিটির কথা বলা হয়েছে সেখানে আমলা এবং চিহ্নিত ‘নুয়ে পড়াদের’ বাদ দিয়ে ভাবতে হবে। সেখানে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট মানুষের প্রাধান্য থাকতে হবে। চলচ্চিত্র বাছাইয়ের যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষজনকে রাখতে হবে। না হলে আমাদের বাজার দখল হবে আর আমরা হব ভোক্তা। কোন চলচ্চিত্র আনবো আর কোন চলচ্চিত্র পাঠাবো তা ভীষণভাবে স্বার্থগত এবং দূরদৃষ্টির বিষয়। তা যাদের নেই তাদের ওপর ভরসা করারও কিছু নেই। চলচ্চিত্র আনা-নেয়ার সিদ্ধান্তগ্রহনের প্রক্রিয়া থেকে সিনেমাহল মালিকদের দূরে রাখা জরুরি। এখানে শক্তিশালী ছাঁকনি দিয়ে ছবি বাছাইয়ের প্রয়োজন আছে। চলচ্চিত্রের মান ও বিষয় এই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রধান হওয়া উচিত। আনা-নেয়া অবারিত হওয়ার সুযোগ রাখার মত বুদ্ধিহীনতা না থাকা প্রজ্ঞাপূর্ণ হবে বলে মনে করি। আদর, আপ্যায়ন এবং সম্মানের চাটুবৃত্তি আর বাণিজ্য এক বিষয় নয়। আর চলচ্চিত্র কেবলি বিনোদনের ‘পণ্য’ নয়।

মনে রাখা জরুরি প্রভু ক্লাইভরা আমাদের শত্রু নয়; তারা সুযোগসন্ধানী। আমাদের শত্রু আমাদের আপন মীরজাফরেরা। এরা নিজেদের অন্নে প্রতিপালিত কিন্তু স্বার্থগত এবং দূরদৃষ্টির প্রশ্নে গর্দভ!

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ঢাকা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.