নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ত্যজ বাঙালী, আতরাফ মুসলমান ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান।রবীন্দ্রনাথ

ইমন জুবায়ের

জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]

ইমন জুবায়ের › বিস্তারিত পোস্টঃ

অটোমান কারা?

১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:১০

অটোমান সুলতান।

অটোমান সুলতানরা ছিলেন বৃহৎ এক সাম্রাজ্যের কেন্দ্রে। বিপুল ক্ষমতা ছিল তাদের হাতে। সাম্রাজ্যের অজস্র মানুষের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রন করতেন তারা। পরবর্তীকালে বিলাসী জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন অটোমান সুলতানরা। উপরোন্ত তাদের হাতে লেগেছিল রক্ত। অটোমান সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে বাস করত আর্মেনিয়রা। অষ্টাদশ শতকের ফরাসী বিপ্লব আর্মেনিয়দের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কাজেই সাম্রাজ্যের ঐক্য অটুট রাখতে আর্মেনিয়া গনহত্যার প্রথম পর্ব সম্পন্ন করেছিল স্বর্গীয় ক্ষমতাপ্রাপ্ত তথাকথিত অটোমান সুলতানরাই।



Ottoman নামটা এসেছে Osman থেকে। অটোমান মানে: যারা ওসমানকে অনুসরন করে। ওসমান ছিলেন এক তুর্কি বীরযোদ্ধা। জন্ম ১২৫৮ সালে আনাতোলিয়ায় (বর্তমান তুরস্ক) ইনিই তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। প্রায় ৬০০ বছর ধরে অটোমানরা তুরস্কসহ বিশাল এক সাম্রাজ্য শাসন করেছিল। আদিতে এরা ছিল সেলজুকদের বংশধর।

তো সেলজুক কারা?

সেলজুরা ছিল মধ্য এশিয়ার যাযাবর যোদ্ধা। এরা দুধর্ষ মঙ্গোলদের দ্বারা উৎখাত হয়ে পশ্চিমের আনাতোলিয়ায় সরে আসে। অস্টম ও নবম শতকে ইসলাম গ্রহন করে ও আনাতোলিয়ায় বিশাল এক সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। সেলজুক তুর্কিদের সাম্রাজ্য পতন হলে আনাতোলিয়ায় ছোট ছোট স্বাধীন তুর্কি রাজ্য গড়ে উঠেছিল। সে সময় ওসমানের নেতৃত্বে ওটোমান তুর্করা একে একে সবকটা রাজ্যই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে ওসমান নিজেকে স্বাধীন ঘোষনা করেন। তবে তখনও তার অনুসারীদের বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের মুখোমুখি হতে বাকী ছিল।

বাইজানটাইন সাম্রাজ্য পরিচিত ছিল পূর্বাঞ্চলের রোমান সাম্রাজ্যে হিসেবে। আসলে রোমান সাম্রাজ্যরই এক পূর্বমূখী সম্প্রসারণ ছিল বাইজানটাইন সাম্রাজ্য । রোমান সম্রাট কনসটানটাইন দ্য গ্রেট ৩২৬ খ্রিস্টাব্দে রাজধানী রোম থেকে সরিয়ে বাইজানটাইন নিয়ে আসেন। নতুন রাজধানীর নাম দেন কনসটানটিনোপল।

১৪৫৩ সালে অটোমানরা নগরটি দখল করে নেয়। নাম রাখে ইস্তানবুল।

তারপর ইস্তানবুলই হয়ে ওঠে ৬০০ বছর ধরে অটোমানদের রাজধানী ।

অটোমানদের রাষ্ট্র পরিচালনা নীতিতে তুর্কি, পারশিক, মঙ্গোল এবং ইসলামী ঐতিহ্যের সংমিশ্রন লক্ষ করা যায়। অটোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট ছিল নিরুঙ্কুশ রাজতন্ত্র। শাসককে বলা হত সুলতান। সালতানাতের উত্তরাধীকারী হত কখনও বড় ছেলে কখনও ভাই। তবে ৬০০ বছর ধরেই ক্ষমতার জন্য আতীব্র লড়াই লক্ষ্য করা গিয়েছে। সুলতান খলিফা উপাধি গ্রহন করতে পারতেন। মক্কা ও মদীনা ছিল অটোমান সাম্রাজ্যেরই অংশ। মুসলিমরা যাতে নির্বিঘ্নে হজ্জ করতে পারে তা নিশ্চিত করা ছিল সুলতানের অন্যতম দায়িত্ব।

সুলতানের প্রধান লক্ষ ছিল সাম্রাজ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। বিশেষ করে

নিম্নবর্গের প্রতি সুবিচার। তুর্কি শব্দ "আদালেত: অর্থ ন্যায় বিচার। সমাজে আদালেত প্রতিষ্ঠাই ছিল সুলতানের অন্যতম উদ্দেশ্য। এটি একটি ইসলামী ধারনা। ইসলামে ন্যায় বিচারক বলতে হযরত সুলাইমানকে বোঝানো হয়ে থাকে। অটোমানরা বিশ্বাস করত: শাসকের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকলেই তবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব। শাসকের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা না থাকলে; শাসক অন্যের উপর নির্ভর করতে বাধ্য হবেন-আর সে রকম হলেই প্রশাসনে দুর্নীতি অনিবার্য।

অটোমান সাম্রাজ্যে আদালেত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুলতানকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল নানা প্রতিষ্ঠন । সুলতানের একটি উপদেস্টা পরিষদ ছিল। সেই উপদেস্টা পরিষদের নাম ছিল দেওয়ান। দেওয়ান আমলাতন্ত্র নিয়ন্ত্রন করত । আমলারা নিয়ন্ত্রন করত স্থানীয় সরকারকে । আর, এসবি সুলতানের নাগালের মধ্যেই ছিল।

সুলতানের প্রধান কাজ ছিল রাজকর্মচারীর ওপর নজরদারী করা। উলামারা বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। সুলতান তাদেরও পর্যবেক্ষন করতেন। মাঝে মাঝে স্থানীয় সরকারের হালচাল দেখতে সফরে বেরুতেন সুলতান। অবশ্য ছদ্মবেশে। যদি অন্যায় দেখতেন তো প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করে অন্যায়ের প্রতিবিধান করতেন। সিয়াসেত ছিল দুনীর্তিবাজদের জন্য সুলতান কতৃর্ক আরোপিত কঠিন এক শাস্তি। অভিযুক্তদের দ্রুত দন্ডিত করা হত। ঘুষ কিংবা তদবীর করেও কোনও লাভ হত না।

দীর্ঘ ৬০০ বছরের বেশির ভাগ সময়ই গুপ্তচর নিয়োগ করে সুলতান সাম্রাজ্যের নানা প্রান্তের ওপর নজরদারী করতেন । গুপ্তচরেরা প্রতিবেদন জমা দিত কেন্দ্রে।

কুড়ি শতক অবধি অটোমানদের গুপ্তচর বিভাগই নাকি ছিল বিশ্বের সেরা।

পরে যে অটোমানদের পতন হয়েছিল তার প্রধান কারণই ছিল সুলতানদের উদাসীনতা।

সুলতানের ফরমান জনগনের কাছে প্রচার করা হত; এ কারণে কর আদায়কারীরা নতুন করের নাম করে জনগনকে হয়রানি করতে পারত না। উপরোন্ত, সুলতানের দরবারে হাজির হয়ে সরাসরি আর্জি জানানো যেত। সুলতান জনগনের মতামত শুনতেন; অগ্রাহ্য করতেন না। দোষীদের জন্য ছিল সিয়াসেত।

কুড়ি শতকে পৌঁছে তুর্কি সালতানাত প্রাচীন প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। এর প্রধান দূর্বলতা ছিল এই যে- রাজপরিবারের সদস্যরা তুরস্ককে মনে করত রাজপরিবারের সম্পত্তি। তারা ভোগ বিলাসে মগ্ন হয়ে পড়েছিল। সাম্রাজ্য চালাত আমলারা। যে আমলাতন্ত্র আবার কতগুলি অলঙ্ঘনীয় শর্তের অধীন ছিল। কাজেই, সুলতানও। প্রধান উজীর আমলাতন্ত্রের নানা দিক নির্দেশ দিতেন। আদতে রাজ্য তিনিই দেখতেন। এসব কারণে অটোমান শাসন ভয়ানক দূর্বল হয়ে পড়ে।

১৯২২ সালে কামাল পাশা অটোমানদের উৎখাত করে তুরস্ককে সময়োপযোগী প্রজাতন্ত্র ঘোষনা করেন।



বিস্তারিত দেখুন



http://wsu.edu/~dee/OTTOMAN/ORIGIN.HTM

http://www.allaboutturkey.com/ottoman2.htm

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:১২

মুকুল বলেছেন: ধন্যবাদ। অনেক কিছু জানলাম। +

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:২৭

লিপিকার বলেছেন: ভালো লেগেছে..........অনেক কিছু জানতে পারলাম......ধন্যবাদ

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:০০

রাইডার বলেছেন: +

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:২৭

রোমেল বলেছেন: সত্যিকার অর্থে ইউরোপিয়ান নগরী আনাতোলিয়ায় জাতিগত তুর্কিদের একেবারে প্রথম দিককার অবস্থানের ইতিহাস বিবেচনায় নিলে আজ অবধি প্রায় ১০০০ বৎসরের অবস্থান তাদের। এই বিরাট সময়টাতে বিশ্বসভ্যতার ক্রম অগ্রগামিতায় তারা তাদের সময়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আইন, রাষ্ট্র-পরিচালনা, শিক্ষা-ব্যবস্থা, রণকৌশল অনেক ক্ষেত্রে তাদের উদ্ভাবিত ও অনুশীলিত রীতি-নীতি আজকের উন্নত ইউরোপ বা পশ্চিমের দেশসহ বিশ্বব্যাপী অনুসরণ করা হচ্ছে।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো একটি সম্পূর্ণ মুসলিম সভ্যতা হওয়ায় অনেক সময়ই সভ্যতার অগ্রযাত্রার ইতিহাস আলোচনায় পশ্চিমা ঐতিহাসিকরা অটোমান সাম্রাজ্য প্রসংগকে তেমন আনতে চান না। কারণ অটোমানরা তাদের সময় ঠিক তেমনই পরাক্রমশালী ছিলো, যেমনটা আজকের বিশ্বে আমেরিকা। সেসময়ের ইউরোপের ইতিহাস হলো শক্তিশালী অটোমানদের কাছে পরাজিত ও পর্যুদস্ত হওয়ার ইতিহাস। যারা ইতিহাস পড়তে পছন্দ করেন, সহজেই এসব জানতে পারবেন।

তবে নিজেদের দোষেই অটোমানরা নিজেদের সেইসাথে মুসলিম সভ্যতার অগ্রযাত্রার পতন ঘটিয়েছে। যেখান থেকে উঠে দাঁড়াতে বহু সময় লাগবে।

৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:১৫

বিবর্তনবাদী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পোস্টের জন্য।

রোমেলকেও তথ্যপূর্ণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৬| ১৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:২৫

মিছে মন্ডল বলেছেন: ধন্যবাদ একটি তথ্যবহুল সুন্দর পোস্টের জন্য। অনেক কিছুই জানতে পারলাম, কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবে নয়। বিশেষ করে অটোমানদের সাথে বৃটেন ও অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশ, যারা রেনেসাঁর পরবর্তীতে জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে গিয়েছে, সেখানে অটোমানদের সম্পৃক্ততা কেন ছিলোনা বা তাদের সাথে আদতে কি ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় ছিলো সেটা জানার ইচ্ছে হচ্ছে।

৭| ১৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ১১:০৫

কুয়াশা বলেছেন: + অনেক তথ্য জানতে পারলাম।

৮| ১৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ১১:৩৩

অলস ছেলে বলেছেন: ধন্যবাদ

৯| ২৫ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৫১

পাপী বলেছেন: ++++++++++

১০| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:২৩

আকাশ_পাগলা বলেছেন: ১৯২২ সালে কামাল পাশা অটোমানদের উৎখাত করে তুরস্ককে সময়োপযোগী প্রজাতন্ত্র ঘোষনা করেন।


পোস্টটা দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ইমন ভাই।

কিন্তু, উপরের লাইনটা বুঝলাম না। কামাল পাশা উৎখাত করেছিল মানে কী? কামাল পাশা কী স্বাভাবিক ভাবে ক্ষমতা পায় নি? নাকি তাকেও রাজাদের স্টাইলে দখল করতে হয়েছিল?

১১| ২০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৩২

মোঃ অামির হামজা রুবেল বলেছেন: লর্ড কার্জন, কামাল পাশার মাধ্যমে ১৯২৪ সালের ৩রা মার্চ খেলাফতের সমাপ্তি ঘটে। কামাল পাশা তুরস্ককে সময়োপযোগী প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্টিত করেন নাকি লর্ড কার্জনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন তা নিয়ে আক্ষেপ থেকে যায়।

১২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৬

ওমর মোহাম্মদ ফারুক বলেছেন: ধন্যবাদ। অনেক কিছু জানতে পারলাম। এই অটোম্যানদের হিসেবটা মিলাতে খুব জামেলা হয়। আপনি মিলিয়ে দিলেন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.