নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ত্যজ বাঙালী, আতরাফ মুসলমান ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান।রবীন্দ্রনাথ

ইমন জুবায়ের

জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]

ইমন জুবায়ের › বিস্তারিত পোস্টঃ

পূজা কেন করা হয় পূজা কাকে করা হয়

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:২৭

সাধকানাং হিতার্থায়ৈ ব্রহ্মণে রূপকল্পনা ...



পূজা করা হয় ‘চৈতন্যময়ী’ প্রকৃতিকে। কেন করা হয়? চৈতন্যময়ী প্রকৃতিকে তুষ্ঠ করতেই পূজা করা হয়; যাতে পূজারী/ভক্তের জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময়, হয়ে ওঠে কল্যাণময় । কিন্তু, প্রকৃতিকে কেন চৈতন্যময়ী বলে মনে করা হয় ? এ প্রশ্নের উত্তর আমরা একটু পরে খুঁজব। তার আগে বলি যে, বাংলায় ‘পূজার’ ধারণাটি অতি সুপ্রাচীন। প্রায় তিন হাজার বছর আগে প্রাচীন বাংলায় ‘পূজার’ প্রাথমিক ধারণার উন্মষ বলে মনে করা হয়। কেননা, ‘পূজা’ শব্দটি কিন্তু বৈদিক আর্য দের সংস্কৃত ভাষার শব্দ নয়; ‘পূজা’ শব্দটি অস্ট্রিক ভাষার একটি শব্দ। সুপ্রাচীন বাংলার মানুষ কথা বলত ওই অস্ট্রিক ভাষায়।

সেই প্রাগৈতিহাসিক সময়ে সুপ্রাচীন বাংলায় বাস করত কিরাত ও আদি- অস্ট্রাল জাতি । তবে সুপ্রাচীন বঙ্গে কিরাতদের সংখ্যা ছিল কম; এদের চেহারা ছিল মঙ্গোলয়েডদের মত এবং আদি-অস্ট্রালদের সংখ্যা ছিল বেশি; এদের চেহারা ছিল অষ্ট্রেলিয়ার আদি অধিবাসীদের মতন! এরাই ছিল বাঙালির পূর্বপুরুষ; এরাই কথা বলত ‘অষ্ট্রিক’ ভাষায়। ‘পূজা’ শব্দটি সুপ্রাচীন বাংলায় প্রচলিত এই অস্ট্রিক ভাষারই শব্দ। এরাই প্রকৃতিকে ‘চৈতন্যময়ী’ মনে করত। ‘চৈতন্যময়ী’ প্রকৃতিকে পূজা করত।

তা হলে প্রাচীন বাংলার অষ্ট্রিকভাষী কিরাত ও আদি- অস্ট্রাল জাতি ‘চৈতন্যময়ী’ প্রকৃতিকে পূজা করলেও বর্তমানে কালীপূজা এবং শারদীয় দূর্গাপূজার মন্ত্রপাঠ এবং অন্যান্য কৃত্যের ক্ষেত্রে কেন সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করা হয়? বিশেষ করে আমরা দূর্গাপূজার সময় দূর্গাকে ‘বিদ্যা রূপেণ সংস্থিতা’,কিংবা ‘জ্ঞান রূপের সংস্থিতা’ এসব অভিধায় ভূষিতা হতে শুনি। এর কারণ কী।

খুলে বলছি। পন্ডিতদের অনুমান, বৈদিক আর্যরা প্রাচীন বাংলায় এসেছিল পশ্চিম দিক থেকে । সময়টা? ৮০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে। কিরাত ও আদি অস্ট্রালরা অরণ্যচারী শিকারী ছিল বলেই বৈদিক আর্যরা তাদের বলত ‘নিষাদ’ ( এর মানে ‘ব্যাধ’ বা ‘শিকারী’) জাতি । তারপর কি হল? আর্যদের বৈদিক ধর্মীয় বিশ্বাস নিষাদরা গ্রহন করল। এর মানে প্রাচীন বাংলার নিষাদ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস, আচার-আচরণ ইত্যাদি বদলে গিয়েছিল। বৈদিক ধর্মশাস্ত্র সংস্কৃত ভাষায় লেখা হয়েছিল বলে এবং সেই প্রাচীন সময়ে জীবনের প্রতিটি স্তরেই ধর্মীয় বিধিনিষেধ প্রবল ছিল বলেই প্রাচীন বাংলার নিষাদরা তাদের নিজস্ব ভাষার বদলে সংস্কত ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

অবশ্য আর্যরাও অনার্য নিষাদদের ধর্মীয় চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়েছির।

অনার্য নিষাদদের আদিম ও স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মবিশ্বাস ছিল সাংখ্য, তন্ত্র এবং যোগ। আর্যরা এই তিনটি মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ড. আহমদ শরীফ লিখেছেন:



বৈদিক ভাষায় দেশী শব্দ যেমন গৃহীত হয়েছে, তেমনি যোগপদ্ধতিও হয়েছে প্রবিষ্ট। বস্তুত এই দ্বিবিধ প্রভাব ঋগে¦দেও সুপ্রকট। তা ছাড়া দেশী জন্মান্তরবাদ, প্রতিমা পূজা, নারী, পশু ও বৃক্ষ-দেবতার স্বীকৃতি, মন্দিরোপসনা,ধ্যান, কর্মবাদ, মায়াবাদ এবং প্রেততত্ত্ব দেশী মানস প্রসূত। কাজেই যোগ ও তন্ত্র সর্ব ভারতীয় হলেও অষ্ট্রিক,নিষাদ ও ভোট -চীনা কিরাত অধ্যূষিত বাঙলা-আসাম-নেপাল অঞ্চলেই হয়েছিল এসবের বিশেষ বিকাশ। যোগীর দেহশুদ্ধি এবং তান্ত্রিকের ভূতশুদ্ধি মূলত অভিন্ন ও একই লক্ষ্যে নিয়োজিত। বহু ও বিভিন্ন মননের ফলে, কালে ক্রমবিকাশের ধারায় সাংখ্য, যোগ এবং তন্ত্র -তিনটে স্বতন্ত্র দর্শন ও তত্ত্বরূপে প্রতিষ্ঠা পায়। এবং প্রাচীন ভারতের আর আর ঐতিহ্যের মতো এগুলি আর্যশাস্ত্র ও দর্শনের মর্যাদা লাভ করে।(বাঙলা বাঙালি ও বাঙালীত্ব; পৃষ্ঠা,৪১)



আর এভাবেই বৈদিক আর্যদের সংস্কৃত ভাষায় নিষাদদের মাতৃভাষার শব্দও গৃহিত হয়েছিল। যেমন: ‘পূজা’ শব্দটি। ‘পূজা’ শব্দের অর্থ-শ্রদ্ধা। এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এরকম।



(১ ) প্রাকৃতিক শক্তিকে ‘চৈতন্যময়ী’ বলে মনে করা;

(২) সেই চৈতন্যময়ী শক্তিকে নিষাদের মানবীয় উপলব্দির সীমানায় নিয়ে আসা;

(৩) সেই চৈতন্যময়ী শক্তির সঙ্গে মাতাপিতার সর্ম্পক স্থাপন করা; এবং

(৪) সেই চৈতন্যময়ী শক্তির পূজা করা।



এই ছিল প্রাচীন বাংলার নিষাদদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং কৃত্য (রিচুয়াল)। তবে পূজা করার আরেকটি কারণ হল: ভক্তি । এই বিষয়টি সহজেই বোঝা যায়। পূজারীর হৃদয়ে ভক্তি না এলে সে পূজারই-বা কি অর্থ? এই কথাটা আমরা সহজেই উপলব্দি করতে পারি। ভক্তির উন্মেষ যে সুপ্রাচীন বাংলার নিষাদসমাজেই হয়ে এটি আমরা অনুমান করতে পারি।

কিন্তু, নিষাদরা প্রকৃতিকে কেন ‘চৈতন্যময়ী’ বলে মনে করেছিল ?

নিষাদদের কৌম (গোত্রীয়) সমাজটির গড়ন ছিল মাতৃতান্ত্রিক। সমাজবিকাশের অনিবার্য নিয়মে প্রথমে নিষাদসমাজ ছিল শিকারী ও খাদ্যসংগ্রকারী। তারা বাংলার প্রাচীন অরণ্যে ফলমূল কুড়োত। পরে হাতিয়ারের উন্নতি হল; তারা বনভুমি কেটে জমি চাষ করতে থাকে। এভাবে ওদের কৃষিজীবনে উত্তরণ ঘটে । তবে অনুন্নত হাতিয়ারের (টুলস) কারণে কৃষিজীবন ছিল ভারি অনিশ্চিত। ওদিকে গোত্রের জনসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছিল। কাজেই প্রকৃতির কৃপার ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় কী! সেই আদিম নিষাদসমাজটি মাতৃতান্ত্রিক ছিল বলেই প্রকৃতিকে তারা ‘চৈতন্যময়ী’ ভেবেছিল। তারা নারীকে জগতের আদি কারণ বলেও ভাবল । কাজেই অদৃশ্য প্রকৃতিক শক্তিটি ওদের আদিম মনে একজন দেবী হিসেবে প্রকাশ পেলেন, দেবতা হিসেবে নন। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে আর্যরা ভারতবর্ষে আসার পূর্বে শিব ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধানতম অনার্য দেবতা। একইভাবে, প্রাচীন বাংলাতেও আর্যরা আসার পূর্বে শিব ছিলেন প্রধানতম অনার্য দেবতা। যে কারণে প্রকৃতিকে দেবী কল্পনা করলেও শিব এর গুরুত্ব কখনওই হ্রাস পায়নি। আজও ...

সে যাই হোক। বাঙালিসমাজে পরবর্তীকালে দেবী ধারণার স্বতঃস্ফূর্ত বিবর্তন দেখতে পাই, যে দেবী ধারণার উন্মেষ ঘটেছিল সুপ্রাচীন বাংলায় নিষাদদের মাতৃতান্ত্রিক ধর্মীয় ভাবনায়। এই দেবী বাঙালিসমাজে 'শক্তি' দেবী নামে পরিচিতা। যারা শক্তি দেবীর উপাসনা করেন তারাই 'শাক্ত' বলে পরিচিত।ধর্মতত্ত্বের ভাষায়: শাক্ত-তান্ত্রিক। শক্তিদেবী অবশ্য বাঙালিসমাজে আরও নানা নামে পরিচিতা। যেমন: কালী, কামেশ্বরী, ভীমাদেবী, জগদ্বাত্রী, গন্ধেশ্বরী, অন্নপূর্ণা, বাসুলি, বিপদনাশিনী, সন্তোষীমাতা এবং দূর্গা।

এই যে প্রকৃতিকে দেবীরূপে ভজনা- এই বিশ্বাস, সাধনা, দর্শন ও আরাধনার সমস্ত প্রক্রিয়াকে আমরা একত্রে বলতে পারি- ‘তন্ত্র’। যে তান্ত্রিক বিশ্বাসের উন্মেষ হয়েছিল নিষাদদের ধর্মীয় চেতনায় । কাজেই তন্ত্রের উদ্ভব প্রাচীন বাংলায়। ( দেখুন; তন্ত্র: দুলাল ভৌমিক। বাংলাপিডিয়া)

আলোচনার এ পর্যায়ে এবার একবার মূল প্রশ্নে ফিরে যাওয়া যাক। পূজা কাকে করা হয়? এবং কেন করা হয়? পূজা করা হয় ‘চৈতন্যময়ী’ প্রকৃতিকে। কেন করা হয়? চৈতন্যময়ী প্রকৃতিকে তুষ্ঠ করতেই পূজা করা হয়; যাতে পূজারী/ভক্তের জীবন আনন্দময়, কল্যাণময় হয়ে ওঠে। তন্ত্র হচ্ছে দর্শন বা তত্ত্ব। আর পূজা হচ্ছে পদ্ধতি। পূজার উপচার বা উপকরণ নিষাদরা তাদের নিজস্ব পরিবেশ থেকেই সংগ্রহ করেছিল। পরবর্তীকালে বাংলায় তাদের এই ধারণার (প্রকৃতি কে ‘চৈতন্যময়ী’ বলে মনে করে দেবীরূপে ভজনা করা) বিবর্তিত হয়েছিল। এবং এই নারীকেন্দ্রিক তান্ত্রিক ধারণাটি পল্লবিত হয়েছিল। তন্ত্র সর্ম্পকে একটি ইউরোপিয় সূত্র লিখেছে,



The word "tantra" is derived from the combination of two words "tattva" and "mantra". "Tattva" means the science of cosmic principles, while "mantra" refers to the science of mystic sound and vibrations. Tantra therefore is the application of cosmic sciences with a view to attain spiritual ascendancy. In another sense, tantra also means the scripture by which the light of knowledge is spread .




তন্ত্রের প্রধান একটি সিদ্ধান্তই হল এই যে প্রাকৃতিক শক্তিকে চৈতন্যময়ী মনে করা। কিন্তু, শক্তি কি? বিশ্বজগতে সবই তো শক্তির সমাহার। যে শক্তিকে বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। আধুনিক সভ্যতা এই মূলতত্ত্বের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। প্রকৃতির সূত্র আবিস্কার করে এই শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা কতটা যৌক্তিক এই প্রশ্নও তো আজকাল উঠছে । এই দৃষ্টিভঙ্গি হটকারী কিনা, পরিবেশ বিপর্যয়ের মূলে এই দর্শন সক্রিয় কিনা- এসব প্রশ্নও নিয়েও তো আমরা আজ উদ্বিগ্ন।

তো, প্রাকৃতিক শক্তির নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তন্ত্রের সিদ্ধান্ত কি?

তন্ত্র প্রাকৃতিক শক্তির নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না। তার কারণ, তন্ত্র প্রাকৃতিক শক্তিকে চৈতন্যময়ী জেনেছে, মা বলে জেনেছে, মায়ের দেবীপ্রতিমা কল্পনা করেছে; দেবী মা (প্রাকৃতি কে) কে একজন তান্ত্রিক নিষ্ঠাভরে ভজনা করতে চায়, আরাধনা করতে চায়, পূজা করতে চায়। পাশাপাশি একজন তান্ত্রিক মনে করেন, একজন ভক্ত চৈতন্যময়ী শক্তির অনুগত থাকলে চৈতন্যময়ী শক্তির কৃপায় তার অশেষ কল্যাণ সাধিত হতে পারে।

এই হল বিজ্ঞান এবং তন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য।

চৈতন্যময়ী প্রকৃতিরূপী নারীবাদী তন্ত্রের দেবী দূর্গা- কালী- বাসুলী - তারা- শিবানী। কিন্তু তন্ত্রের কেন্দ্রে রয়েছেন (আমি আগেই একবার ইঙ্গিত দিয়েছি) অনার্য দেবতা শিব। তন্ত্রমতে শিব তাঁর শক্তি পেয়েছে কালীর কাছ থেকে। আবার শিব- এর রয়েছে পৃথক নিজস্ব শক্তি। তন্ত্রমতে পুরুষ শক্তিলাভ করে নারীশক্তি থেকে। শিব শক্তি লাভ করেছেন তাঁর নারীশক্তির প্রকাশ- গৌড়ীর শক্তি থেকে। তবে শিবের নিজস্ব শক্তিও স্বীকৃত। তন্ত্রসাধনার মূল উদ্দেশ্যই হল- (প্রাকৃতিক) শক্তি দেবীর সাধনা করে "শিবত্ব" লাভ তথা শক্তিমান হওয়া।

এখানেই বলে রাখি যে- প্রাচীন ও মধ্যযুগের বঙ্গবাসী পরবর্তীকালে নগর গড়ে তুললেও সে তার আদিম পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য কখনও পরিত্যাগ করেনি কিংবা বিস্মৃত হয়নি। এই বাঙালি মননের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নগরেও পূজা হয়েছে। উপচার হল পূজার উপকরণ। এমন কী, পূজার উপচারেও দেখা যায় নিষাদ উপকরণ। আপত চাল, তিল, জল, দুধ, কুশাগ্র, দই, যব, শ্বেতসরিষা, চন্দন, বিল্বপত্র বা বেলপাতা, কচু, হরিদ্রা, জয়ন্তী, ডালিম, বেল, অশোক, মানকচু, ধান, কলাগাছ, গম, মাষকলাই, তিসি। এ সবই প্রাচীন বাংলার লোকজসমাজের কৃষিপণ্য।

এখানেই বলে রাখি যে প্রাচীন বাংলার নিষাদসমাজের তান্ত্রিক বিশ্বাস ও বাহিরাগত (আর্যরা প্রাচীন বাংলার বাইরে থেকে এসেছিল বলে) আর্যবৈদিক মতের কিছু পার্থক্য রয়েছে। বহিরাগত আর্যদের বৈদিক ধর্মবিশ্বাসটি মূলত পুরুষতান্ত্রিক; পক্ষান্তরে বাংলার অনার্যদের তান্ত্রিক মত মাতৃতান্ত্রিক। তা ছাড়া

আর্যদের বৈদিক মত হল ঋষিজ: তার মানে দার্শনিক বা ফিলোফফিক্যাল। এ কারণে মানবকল্যাণে এর ভূমিকা প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষ। অন্যদিকে তান্ত্রিকমত মুণিজ বা বিজ্ঞান ভিত্তিক হওয়ায় জগৎসংসারে জীবজগতে এর প্রভাব প্রত্যক্ষ। সনাতনধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিধান্ত হল- দর্শনের সামগ্রিক দৃষ্টি এবং তন্ত্রমতের খন্ডিত বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি একত্রিত হলেই জ্ঞান সম্পূর্ণ হয়। এ কারণেই বেদের যজ্ঞ এবং তন্ত্রের পূজা সম্মিলিত ভাবে সনাতনধর্মকে একটি দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে। (দেখুন;রণজিৎ কর; সনাতনধর্ম: মত ও মতান্তর।)

তন্ত্র থেকে তত্ত্ব। তন্ত্রের বৈশিষ্ট্য বা উদ্দেশ্য হল তত্ত্বের সিদ্ধান্তকে জীবনের কর্মক্ষেত্রে রূপদান করা। কাজেই তন্ত্রের প্রচারের মাধ্যম আচরণ বা থিউরি নয়, প্র্যাকটিস। তন্ত্রমতে নারী জগতের আদি কারণ। তন্ত্রের উদ্ভব প্রাচীন বাংলার মাতৃতান্ত্রিক নিষাদসমাজে হয়েছিল বলেই এমনটাই ভাবা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল।

কিন্তু, তন্ত্রমতে কেন নারী জগতের আদি কারণ?

ঈশ্বর নিরাকার। রূপহীন। যে কারণে প্রাচীন বৈদিক আর্যরা ঈশ্বরের রূপ বর্ণনা করেছেন এভাবে-



‘রূপংরূপ বিবর্জিতস্য ভবতো ধ্যানেন যদবর্ণিতং।’



এর মানে হল- ‘হে রূপহীন ঈশ্বর! ধ্যানে তোমার রূপ বর্ণনা করেছি।’

তন্ত্রমতে নারী জগতের আদি কারণ এই জন্য যে এই নিরাকার রূপহীন ইশ্বরকে যখন নারী ভাবা হয় তখন ঈশ্বরের মাহাত্ম ক্ষুন্ন হয় না। কাজেই ভক্তের মানসিক প্রবনার ওপরই মাতৃমূর্তির কল্পনা। যে কারণে বলা হয়েছে -



‘সাধকানাং হিতার্থায়ৈ ব্রহ্মণে রূপকল্পনা’



এর মানে হল- ‘সাধকের হিতের জন্য ঈশ্বরের রূপ কল্পনা করা হয়েছে।’



সুপ্রাচীন বাংলার গুরুত্বপূর্ন এক অনার্য ধর্মীয় বিশ্বাস হল- যোগ ( যাকে আমরা ইয়োগা বলে জানি)। পূজার সঙ্গে যোগ-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ট সর্ম্পক রয়েছে। এই বিষয়টিও আমাদের জানতে হবে। নইলে পূজা কেন করা হয়, এবং কাকে করা হয় এসব নিগুঢ় বিষয় পরিস্কার হবে না ।

আমরা জেনেছি যে তন্ত্র নারীবাদী হলেও এর কেন্দ্রে রয়েছেন শিব ; যিনি প্রধানতম অনার্য দেবতা। এবং তন্ত্রে নারীকে জগতের আদিকারণ মনে করা হলেও বিশ্বপ্রকৃতির সমস্ত শক্তির উৎস হলেন শিব। আর এই কারণেই তো, কাজী নজরুল ইসলাম আহিরি ভৈরব রাগে রচিত তাঁর বিখ্যাত ‘অরুণকান্তি কে গো যোগী ভিখারি’ গানটিতে শিব কে ‘ত্রিভূনের পতি’ বলে উল্লেখ করেছেন-



‘নবমেঘ চন্দনে ঢাকি অঙ্গজ্যোতি/

প্রিয় হয়ে দেখা দাও ত্রিভূবন পতি

বিষাণ ফেলিয়া হও বাঁশরীধারী ...




উত্তর ভারতে শিব সম্বন্ধে বলা হয়েছে-‘সত্যম’,‘শিবম’,‘সুন্দরম’। এ সমস্ত কারণে যোগ- এর উদ্দেশ্যই হল ‘শিবত্ব’ অর্জন। মধ্যযুগের বাংলায় চন্দ্রদ্বীপবাসী (বরিশালের) মীননাথ শিবপন্থি নাথধর্ম প্রচার করেছিলেন । মীননাথ-এর শিষ্যদের বলা হয় নাথযোগী। নাথযোগীরা সাহিত্যকে আশ্রয় করে তাদের ধর্ম-দর্শন প্রচার করেছিলেন। এদের লেখা কাব্য বাংলা সাহিত্যের অমূল্য রতœ বলে বিবেচিত। নাথযোগীদের লেখা ‘গোরক্ষ বিজয়’-এ লেখা রয়েছে-



‘মুন্ডে আর হাড়ে তুমি কেনে পৈর মালা

ঝলমল করে গায়ে ভস্ম ঝুলি ছালা।

পুনরপি যোগী হৈব কর্ণে কড়ি দিয়া।’




এই চারটি চরণে আসলে একজন যোগীর ছবিই আঁকা হয়েছে। যোগীর ছবিটি আসলে অনার্য শিবেরই ছবি। এবং কড়ি জিনিসটা অস্ট্রিকভাষী নিষাদ/ কিরাতের উপচার (উপকরণ)। এবার তাহলে বলি যোগ- এর সঙ্গে চৈতন্যময়ী মা-প্রকৃতির কী সর্ম্পক। যোগীগণ শরীরের চৈতন্যকেই প্রাণশক্তি বা আত্মা বলে মনে করতেন। দেহের বাইরে চৈতন্য যেহেতু সম্ভবপর নয়; সুতরাং, শরীর সম্বন্ধেই অনার্য যোগীঋষিরা সুপ্রাচীনকালে কৌতূহলী হয়ে উঠেছিলেন। (পাঠক, এই সুপ্রাচীন ভাবনাকে বাউল দর্শনেরও ভিত্তি বলে মনে করতে পারেন কিন্তু) দেহকে বোঝা ও একে নিয়ন্ত্রন করে ইচ্ছে মতন পরিচালিত করা যোগসাধনার অন্যতম লক্ষ্য। ‘কায়া’ মানে শরীর। ‘কায়সাধন’ মানে শরীরের সাধনা।‘ কায়সাধন অতি প্রাচীন দেশী শাস্ত্র, তত্ত্ব ও পদ্ধতি।’(বাঙলা বাঙালি ও বাঙালীত্ব: আহমদ শরীফ; পৃষ্ঠা ৪৩) এ ছাড়া শরীর বিষয়ক বাঙালির ধর্মতত্ত্বের একটি বড় সিদ্ধান্ত এই -



‘ব্রহ্মান্ডে য গুণাঃ সন্তি তে তিষ্টন্তি কলেবরে’।



এর মানে, ‘যা আছে ভান্ডে (মানে শরীরে/মানবদেহে) তাই আছে বিশ্বভ্রহ্মান্ডে বা ইউনিভার্সে ।’ ড.আহমদ শরীফ একবার মন্তব্য করেছিলেন: ‘বাঙালির ধর্মতত্ত্বে পাপ-পুন্যের কথা বেশি নেই। অনেক বেশি রয়েছে জীবন রহস্য জানবার বুঝবার প্রয়াস।’ (বাঙলা বাঙালি ও বাঙালীত্ব: আহমদ শরীফ পৃষ্ঠা; ৪৮) পন্ডিতের এ কথা একালেও যেমন সত্য সেই আদিম নিষাদ-যুগেও সত্য।

... বলেছিলাম তন্ত্রের একটি বিরাট সিদ্ধান্ত হল শক্তিকে চৈতন্যময়ী মনে করা। সেই চৈতন্যময়ী শক্তি কি কেবল প্রকৃতিতেই বিরাজ করে?

না। চৈতন্যময়ী শক্তি সর্বত্র বিরাজমান।

মানবদেহে?

অবশ্যই।

প্রাচীন বাংলার বাঙালি যোগীগণ শরীরের ভিতর যে চৈতন্যকেই প্রাণশক্তি বা আত্মা মনে করেন তিনিই সেই চৈতন্যময়ী । এই মানবচৈতন্য সেই শক্তিরই এক রূপ। দেহের বাইরে চৈতন্য সম্ভব নয় বলেই জীবন রহস্য জানবার বুঝবার প্রয়াস প্রাচীন বাংলার বাঙালি যোগীগণ শরীর সম্বন্ধে কৌতূহলী হয়েছে এবং এভাবে সুপ্রাচীন কালেই বাউল দর্শনের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। ছান্দোগ্য উপনিষদেও এর সমর্থন



‘এই পৃথিবীতে দেহেরই পূজা করিবে, দেহেরই পরিচর্যা করিবে। দেহকে মহীয়ান করিলে এবং দেহের পরিচর্যা করিলেই ইহলোক ও পরলোক-এই উভয়লোকই লাভ করা যায়। (বিরোচন। ৮/৮/৪)



এবার বলি তন্ত্রমতে পূজার আধার ১১ টি। এসব আধার পূজারীর দেহের সঙ্গে সর্ম্পকযুক্ত। দেবীপ্রতিমা, প্রজ্জ্বলিত অগ্নি, পাত্রস্থিত জল, চিহ্নিত যন্ত্র, মন্দির পরিচায়ক ছবি অংকিত বিশেষ চিহ্ন (সাত্ত্বিক চিহ্ন, ঔঁ কার চিহ্ন) মস্তক শিরোদেশ এবং পূজারীর হৃদয়।

পূজায় দুটি বিষয় রয়েছে। এক মন্ত্র ও উপচার। একটি অন্তরের দিক ও অন্যটি বাহ্যিক দিক। মন্ত্র অন্তরের দিক, উপচার বাহ্যিক দিক। উপচার হল পূজার উপকরণ। আশ্চর্য এই যে -পূজার উপচারও দেহের সঙ্গে গভীরভাবে সর্ম্পকিত। পূজায় প্রধান হল পঞ্চোপচার। যেমন সুগন্ধ দ্রব্য, পানীয়, প্রদীপ, পাখার বাতাস ও ফুল। এসবের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য। আসলে পঞ্চোপচার হল পূজারী দেহের প্রাণের মনের বেদনের ও অহং এর প্রতীক যা দেবীর নিকট নিবেদন করা হয়। এর মানে পূজারী তার বস্তুময় জীবনক্ষেত্র, প্রাণময় জীবনক্ষেত্র, মনোময় জীবনক্ষেত্র, বোধময় জীবনক্ষেত্র এবং আনন্দময় জীবনক্ষেত্র প্রতীক হিসেবে দেবীর কাছে নিবেদন করলেন। এর নামই আত্ম নিবেদন। এভাবে উপাসক মানুষ তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করল।

এ পোস্টের গোড়ায় এই দুটি প্রশ্ন ছিল যে পূজা কাকে করা হয়? পূজা কেন করা হয়?

বাঙালি হিন্দু তান্ত্রিক বলেই পূজা করে; বাঙালি হিন্দুর ঐতিহ্যে যোগসাধনার ভূমিকা রয়েছে বলেই তারা পূজা করে। বাঙালি হিন্দু তান্ত্রিক বলেই প্রাকৃতিক শক্তিকে চৈতন্যময়ী মনে করে। এবং সেই চৈতন্যময়ী শক্তিকে বাঙালি হিন্দুর মানবীয় উপলব্দির সীমানায় নিয়ে এসে সেই চৈতন্যময়ী শক্তির সঙ্গে মাতাপিতার সর্ম্পক স্থাপন করে, সেই চৈতন্যময়ী শক্তিকে দেবীরূপে কল্পনা করে পূজা করে। অষ্ট্রিক ভাষার শব্দ ‘পূজা’ অর্থ-শ্রদ্ধা ...



এই পোস্টটির তথ্যের উৎস:



আহমদ শরীফ; বাঙলা বাঙালি ও বাঙালীত্ব।

নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য; ধর্ম ও সংস্কৃতি; প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট

ড. এম আর দেবনাথ; সিন্ধু থেকে হিন্দু ।

রণজিৎ কর; সনাতনধর্ম: মত ও মতান্তর।



মন্তব্য ৬২ টি রেটিং +১৩/-০

মন্তব্য (৬২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:১৩

চ।ন্দু বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপনার জন্যে ধন্যবাদ।

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৩২

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:২৭

নজিবুল্লাহ বলেছেন: ঐশী ধমগুলো (ইসলাম, খৃষ্টান, ইহুদী) যেমন স্রষ্টা প্রেরিত গ্রন্থ ও তার প্রেরিত বার্তাবহকে (রাসূলে) বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে, এবং এ ঐশী গ্রন্থ ও ঐশী বার্তাবাহকের দিক নির্দেশনায় তারা তাদের দৈহিক পরিশীলতা, আত্নিক চরম উন্নতি, নৈতিকতার চর্চা করে সুখি-স্বাচ্ছন্দময় সমাজ বিনির্মান করে থাকে হিন্দু ধর্মে কি তাহলে তেমন কোন স্রষ্টা, স্রষ্টার গ্রন্থ বা স্রষ্টার প্রেরিত রাসুলে বিশ্বাসী নয় ? দেহচৈতণ্যকে আত্মা ধরে দেহ চর্চাকেই আত্মার চর্চা ও এ দেহচৈতন্যকেই কি তাহলে তারা প্রকৃতি এবং এ প্রকৃতিকেই কি তাহলে তারা স্রষ্টা হিসেবে বিশ্বাস করে ? যদি তাই হয় তাহলে এ কথা কি বলা যায় যে, ভগবান = প্রকৃতি, প্রকৃত=দেহচৈতণ্য, দেহচৈতণ্য = দেহচর্চা বাদ বা বাউলবাদ ? ঐশী ধর্মগুলোর ন্যায় আলাদ স্রষ্টার অস্তিত্ব ও স্রষ্টার গ্রন্থে যদি তারা বিশ্বাসী হয়ে না থাকে আর পাপ পূন্যের চাইতে যদি দেহচর্চাই তাদের ধর্মের মূল উপজীব্য হয়ে থাকে তবে তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো কি সব তাদের সাধু-মুনিদেরই রচনা ? তাদের ধর্মে কি কোন ভগবানের নিজস্ব ধর্ম গ্রন্থ নেই যেমন আছে অপর তিন ঐশী ধর্মে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআন ? আসলে আপনার পোষ্ট এর শেষের অংশগুলো খুবই ঘোলাটে লাগায় অপর তিন ধর্ম-দর্শনের সাথে হিন্দু ও বাউল ধর্মের দেহতত্ত্বের দর্শন এর পার্থক্যটা ক্লিয়ার হলো না।

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৫৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনি লিখেছেন: ঐশী ধমগুলো (ইসলাম, খৃষ্টান, ইহুদী) যেমন স্রষ্টা প্রেরিত গ্রন্থ ও তার প্রেরিত বার্তাবহকে (রাসূলে) বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে, এবং এ ঐশী গ্রন্থ ও ঐশী বার্তাবাহকের দিক নির্দেশনায় তারা তাদের দৈহিক পরিশীলতা, আত্নিক চরম উন্নতি, নৈতিকতার চর্চা করে সুখি-স্বাচ্ছন্দময় সমাজ বিনির্মান করে থাকে হিন্দু ধর্মে কি তাহলে তেমন কোন স্রষ্টা, স্রষ্টার গ্রন্থ বা স্রষ্টার প্রেরিত রাসুলে বিশ্বাসী নয় ?

আমার উত্তর ...আপনি যা যা বললেন এই বিষয়গুলিও সনাতন হিন্দুধর্মে রয়েছে। তবে এই বিষয়টির প্রকাশের ভাষাটি অন্যরকম। এবং অঞ্চলভেদে সেরকম হতেই পারে। যেমন, সনাতন হিন্দুধর্মে বেদ পবিত্র গ্রন্থ। বেদ কে অপৌরষেয় মনে করা হয়। তার মানে বেদ কোনও মানব এর রচিত নয়। বেদ এক নির্গুণা পরম শক্তির কথা বলে। ইনি ব্রাম্ভন। (ব্রাহ্মণ ণয়) এঁকে ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ব্রাম্ভন এর গুণের প্রকাশ হলেন তিনজন দেবতা। ব্রহ্মা, বিষু ও শিব। ...এছাড়া সনাতন হিন্দুধর্ম ৬টি দর্শনের ষড়দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলো হল সাংখ্য যোগ মীমাংশা ন্যায় বেদান্ত বৈশেষিক ও যোগ। নৈতিকতার বিষয়টিও রয়েছে। অহিংসা পরম ধর্ম -এই কথা মহাভারতের প্রথমেই পাবেন। কাজেই,
আপনি যা যা বললেন এই বিষয়গুলিও সনাতন হিন্দুধর্মে রয়েছে। তবে এই বিষয়টির প্রকাশের ভাষাটি অন্যরকম। এবং অঞ্চলভেদে সেরকম হতেই পারে। তবে প্রেরিত রাসুলে বিশ্বাসী না হলেও অবতারে বিশ্বাস করে হিন্দুরা রামও কৃষ্ণ যেমন বিষ্ণুর অবতার।

আপনি লিখেছেন ...

দেহচৈতণ্যকে আত্মা ধরে দেহ চর্চাকেই আত্মার চর্চা ও এ দেহচৈতন্যকেই কি তাহলে তারা প্রকৃতি এবং এ প্রকৃতিকেই কি তাহলে তারা স্রষ্টা হিসেবে বিশ্বাস করে ? যদি তাই হয় তাহলে এ কথা কি বলা যায় যে, ভগবান = প্রকৃতি, প্রকৃত=দেহচৈতণ্য, দেহচৈতণ্য = দেহচর্চা বাদ বা বাউলবাদ ? ঐশী ধর্মগুলোর ন্যায় আলাদ স্রষ্টার অস্তিত্ব ও স্রষ্টার গ্রন্থে যদি তারা বিশ্বাসী হয়ে না থাকে আর পাপ পূন্যের চাইতে যদি দেহচর্চাই তাদের ধর্মের মূল উপজীব্য হয়ে থাকে তবে তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো কি সব তাদের সাধু-মুনিদেরই রচনা ? তাদের ধর্মে কি কোন ভগবানের নিজস্ব ধর্ম গ্রন্থ নেই যেমন আছে অপর তিন ঐশী ধর্মে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআন ? আসলে আপনার পোষ্ট এর শেষের অংশগুলো খুবই ঘোলাটে লাগায় অপর তিন ধর্ম-দর্শনের সাথে হিন্দু ও বাউল ধর্মের দেহতত্ত্বের দর্শন এর পার্থক্যটা ক্লিয়ার হলো না।

আমার উত্তর ...

সনাতন হিন্দুধর্ম ৬টি দর্শনের (ষড়দর্শন) ওপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলো হল সাংখ্য যোগ মীমাংশা ন্যায় বেদান্ত বৈশেষিক ও যোগ। এবং পাঁচটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত। বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব, সৌর ও গানপত্য। এদের পঞ্চপোসনা বলে। কাজেই দেহচৈতণ্যকে আত্মা ধরে দেহ চর্চাকেই আত্মার চর্চা ও এ দেহচৈতন্যকেই কি তাহলে তারা প্রকৃতি এবং এ প্রকৃতিকেই কি তাহলে তারা স্রষ্টা হিসেবে বিশ্বাস করে কি না ? ...এই ধারণাটি আসলে যোগ দর্শন এর অর্ন্তগত। এই ধারণা দিয়ে সামগ্রিক হিন্দুধর্মকে বিবেচনা করা যাবে না। কারণ ৫টি সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষ্ণবদের সংখ্যা বেশি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। জগৎ ব্যাখ্যায় বৈষ্ণব মতবাদ অন্য রকম।

আপনি লিখেছেন:

যদি তাই হয় তাহলে এ কথা কি বলা যায় যে, ভগবান = প্রকৃতি, প্রকৃত=দেহচৈতণ্য, দেহচৈতণ্য = দেহচর্চা বাদ বা বাউলবাদ কিনা ?


বাউল বাদ বা বাউল ধর্ম সাংখ্য তন্ত্র যোগ বৌদ্ধ সহজিয়া বৈষ্ণব সহজিয়া এবং সুফিবাদের প্রভাবে গড়ে উঠেছে। কাজেই ওপরের সংজ্ঞাটি বাউল ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও সংজ্ঞাটি অপরিসর।

বাউলরা হিন্দু বা মুসলমান নয়। আলাদা সম্প্রদায়। তারা বাংলার লৌকিক ধর্ম অনুসরণ করে। কাজেই প্রথাগত ধর্মের (ইহুদি খ্রিস্টান ও ইসলামে) ধারণা সঙ্গে সাদৃশ্য থাকার কথা নয়। ধর্মগ্র্রন্থ বলে ফিক্সড কিছু নেই। লালন ফিক্সড কিছু বিশ্বাস করেন নি। অনুসন্ধান করেছেন মাত্র। অন্য ধর্মের অনুসারীরা ফিক্সড বিধিবিধান অনুসরণ করেন। পার্থক্য এখানেই।

বাংলার লোকধর্ম একটি দুটি পোস্ট করে উপলব্দি সম্ভব নয়। এর চর্চা জীবনভর করতে হয় ...

ধন্যবাদ।

৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৩৩

আশীষ কুমার বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার লেখাটি। অনেক সময় নিয়ে লিখেছেন মনে হচ্ছে। ধন্যবাদ :)

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:০০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: Thanks!

৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৩৮

চাষাভূষা বলেছেন: অজানাকে জানলাম। ভালো লেগেছে।

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:০১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৪১

নিয়েল ( হিমু ) বলেছেন: শারদিয় শুভেচ্ছা জানবেন ।
আমি দেখতে আসছিলাম সাম্প্রদায়ীক কোন সন্ত্রাস এইখানে ল্যাদাইছে কি না ।

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:০৩

ইমন জুবায়ের বলেছেন: শারদিয় শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ।

৬| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৪৩

বিপ্লব কান্তি বলেছেন: কতদিন আগে কে কোথা এসেছিলেন , কি করেছিলেন , এগুলো এখন বসে বলা বা গবেষনা করা বড়ই অসম্ভব ব্যাপার । কোন গবেষনারই কোন ভিত্তি নেই ।
যার যার বিশ্বাস মত এগুলো বলে যায়, অনেকে বই লিখেন , অনেকে মুখে বলেন আর অনেকে নিশ্চুপ থাকেন ।

ব্যাধ (যারা তীর দিয়ে পশু শিকার করতো) দের কথা বেদে উল্লেখ আছে ।

আর পূজা ....... সাকার উপাসনা ...........

সনাতন ধর্মে নিরাকার উপাসনা ও প্রচলিত আছে , নিরাকার উপাসনা তারাই করেন যারা সৃষ্টি সম্পর্কে, প্রকৃতি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞানসম্পন্ন । যারা অন্তরে ঈশ্বর জ্যোতি জাগিয়ে তুলতে পারেন । এই ঈশ্বর জ্যোতি জাগানোর মধ্যে আবার যোগের সম্পর্ক আছে । সনাতন ধর্মগ্রন্হ গীতায় কৃষ্ণ অর্জুনকে পরামর্শ দিয়েছেন এবং বারে বারে বলেছেন যোগ করতে , কিন্তু যোগ মোটেই সহজ ব্যাপার নয় । চঞ্চল চিত্তে যোগ করে মনকে কেন্দ্রীভূত করা আলোর দিকে, সেটা সহজ নয় এখনকার সময়ে । তবে বর্তমান বিজ্ঞানীরা যোগ করাটাকেই মানসিক শান্তির প্রধান উপায় বলেছেন । সনাতন ধর্মগ্রন্হ বেদ-বিভিন্ন উপনিষদে যোগকেই সুস্হ থাকার, নিরোগ রাখার আবার ঈশ্বর জ্যোতি মনে প্রকাশের প্রধান উপায় বলে গেছেন ।



যোগ সম্পর্কে বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাই লামা বলেছেন " If Every 8 Years old in the world is taught meditation, We will eliminate violence from this world within one generation."

যোগ ও একটি সাকার উপাসনা, স্হির চিত্তে মনের মধ্যেই ঈশ্বরের প্রকাশ । আর সামনে মূর্তি নিয়ে সাকার উপাসনায় ভক্তের ভক্তি বেশি প্রকাশ পায় ।

এগুলো সব আলোচনা সেখানেই শেষ হয়ে যায় , যখন যার যার ব্যক্তিগত চিন্তা পূজাতে বা ধর্মে প্রকাশ পায় ।

যেমন : আপনার পোষ্টের শিরোনাম " পূজা কেন / কাকে করা হয় - পূজার উদ্দেশ্য "

আমি যদি বলি , নাথিং - পূজার উদ্দেশ্য হলো

যদি বলি : লোক দেখানো
যদি বলি : রাজনৈতিক শক্তির প্রকাশ করা ।
যদি বলি : নিজ বংশের নাম প্রকাশের জন্য
যদি বলি : চাঁদার টাকা পয়সা মেরে দেওয়ার একটি উপায় তৈরি করা
যদি বলি : ইলেকশন বা নির্বাচন নামক বাংলাদেশী প্রহসনের একটি উপায় বা প্রচার করা ।
যদি বলি : কমিটি নিয়ে দ্বন্ধ তৈরি করে সভাপতি-সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় কতিপয় নেংটু ব্যক্তির প্রচেষ্টা ।
যদি বলি : কতিপয় সন্ত্রাসীর দলগত প্রচেষ্টা
যদি বলি : গাঁয়ের বধূর প্রার্থনার জন্য নতুন তীথি
যদি বলি: গাঁয়ের বধূর কুড়ে করে একটি উৎসবের উপস্হিতি
যদি বলি : যদি বলি সকাম কর্ম
যদি বলি: নিস্কাম কর্ম

সব বলা সত্যি , এগুলো কিন্তু আপনার শরীফ-কর-দেবনাথ গবেষক সাহেব বলেনি বা উল্লেখ করেনি ।

তাই এগুলো নিতান্তই যারা যার উদ্দশ্যে , সমস্টিগত কিছু বলা অপ্রাসংগিক , কারন কারো উদ্দেশ্য বা মনোতত্ব আপনি পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করে পড়তে পারবেন না

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:০৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: শারদিয় শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ।

৭| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৫৩

নজিবুল্লাহ বলেছেন: মোটামুটি যা বুঝলাম ব্রাম্ভন হলেন একমাত্র ভগবান (আল্লাহ)। যিনি তিনটি গুণে আত্ম প্রকাশ করেছেন- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব। তার কিতাব হলো একমাত্র বেদ। আর রাম ও কৃষ্ণ হলেন বিষ্ণুর অবতার (রাসুল)।

হিন্দু ধর্মানুসারীগণ যে পাচ ভাগে বিভক্ত (বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব, সৌর ও গানপত্য) তারা সবাই ই কি উপরোক্ত বিশ্বাসে বিশ্বাসী ? আর তাদের মাঝে যে ছয়টি দর্শন রয়েছে (সাংখ্য যোগ মীমাংশা ন্যায় বেদান্ত বৈশেষিক) এ ছয় দর্শনের ভিত্তিতেই কি তারা পাচ সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়েছেন ? অর্থাৎ এ পাঁচ সম্প্রদায় ই কি উপরোক্ত ছয় দর্শন এ বিশ্বাসী ? আর তাদের মাঝে বর্ণভেদ/শ্রেণী ভেদ আসল কোথা থেকে ?

বাউল ধর্মের সাথে ইসলামের খাটি সুফিদের কোন মিল নেই। কারণ ইসলামী সুফিবাদ হলো শুধুমাত্র আত্মা দর্শন। তাতে বৈষ্ণব সহজিয়া দর্শন বা বাউল দর্শন এর ন্যায় বিকৃত যৌনাচারের কোনরুপ দেহবাদ নেই। Click This Link
সুফি গণ মুসলিম আর বাউলগণ মুসলিম নন। যাই হোক বাউল দর্শন এর ব্যাপারে আমার কোন আগ্রহ নেই। আমার আগ্রহ ছিল শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে কিন্তু আপনার পোষ্ট এ বাউল প্রসঙ্গ আসায় আমি বাউল সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম যে, বাউলদের দেহবাদ আর হিন্দুদের দেহবাদ/নারী মুতি পূজা এক দর্শনজাত কিনা। যাই হোক হিন্দু ধর্ম নিয়ে আমার প্রশ্ন হলো তারা যখন পুজা করে তখন কি তারা মনে করে যে, তাদের হাতে গড়া মূর্তির মাঝে তাদের ব্রাম্ভন (আল্লাহ) এসেছেন ? তাদের ধর্মগ্রন্থে যদি নরাকার স্রষ্টার কথা বলা হয়ে থাকে তাবে কেন তারা তাকে আকারের গন্ডিতে আবদ্ধ করতে চায় ?

তাদের মূল ধর্ম গ্রন্থ (স্রষ্টা প্রেরিত বেদ) এর বয়স ও ইতিহাস কি ? কার উপর কোন ভাষায় এ গ্রন্থ এসেছিল ? আপনি কি সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী ? ধর্ম বিষয়ে আপনার বিশ্বাস কি ? ইহুদী-খৃষ্টান-ইসলাম ধর্ম গ্রন্থ ও ধর্মের ন্যায় ফিক্সড নীতিমালা না থাকলে জীবনভর কিভাবে তা চর্চা করা সম্ভব ? তাদের ধর্মগ্রন্থগলোর সঠিক ইতিহাস কি ? প্রধান তিন ধর্ম গ্রন্থ ওল্ড টেষ্টামেন্ট, নিউ টেষ্টামেন্ট ও কোরআন এর সাথে বেদ ও গীতার পার্থক্য কি কি ? আপনি প্রথমেই বলেছেন অঞ্চলভেদে ধর্মের নীতিমালা গুলোতে পার্থক্য থাকাই স্বাভাবিক। তাহলে এ চার ধর্মের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে এ চার ধর্মই স্রষ্টার ধারনায় বিশ্বাসী। কিন্তু ইব্রাহীমীক তিন ধর্ম যেমন একশ্বরবাদী চেতনার কড়া কড়াতি আবদ্ধ হিন্দু ধর্ম তেমন একশ্বরবদী কড়াকড়ীতে আবদ্ধ নয়, বরং প্রকৃতিকেও স্রষ্ট বিবেচনায় তার পূজা করা হয়। তাহলে কি আমরা বলতে পারি না যে, স্রষ্টা সর্ব যুগেই ধর্ম গ্রন্থ পাঠিয়েছিলেন এবং সকল ধর্মাবলম্বীদের দাবী অনুযায়ীই ইসলাম হলো সর্বশেষ স্রষ্টা প্রেরিত ধর্ম। তাহলে সর্বশেষ ধর্ম যদি বলে অপর ধর্মগুলোও স্রষ্টা প্রেরিত এবং এ সর্বশেষ ধর্মই এখন মানতে হবে তবে কি তা যৌ্ক্তিক নাকি অযৌক্তিক ? হিন্দু ধর্মের ব্যাপারে ইসলামী পন্ডিতদের কিছু মতামত http://www.amarblog.com/boiragi/posts/151691

মোট কথা হলো ধর্মের ব্যাপারে আপনার বিশ্বাস কি তা জানতে চাচ্ছিলাম।

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৩৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: মোটামুটি যা বুঝলাম ব্রাম্ভন হলেন একমাত্র ভগবান (আল্লাহ)। যিনি তিনটি গুণে আত্ম প্রকাশ করেছেন- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব। তার কিতাব হলো একমাত্র বেদ। আর রাম ও কৃষ্ণ হলেন বিষ্ণুর অবতার (রাসুল)।


এই বিশ্বাসে বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব, সৌর ও গানপত্য অস্বীকার না করলেও সবাই গুরুত্ব এক ভাবে দেওয়ার কথা না। কারণ, বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব, সৌর ও গানপত্য -এই পাঁচ ধারার দল-উপদলও তো আছে। তাছাড়া হিন্দুধর্ম বলতে যা বোঝায় সেটি আর্য -অনার্য, লৌকিক শাস্ত্রীয় বিশ্বাসের মিশ্রনে গড়ে উঠেছে। যে ধর্মের উন্মেষ সিন্ধু সভ্যতায় এবং যা বাংলার দূর্গা আরাধনা অবধি বিস্তৃত । কাজেই এ পাঁচ সম্প্রদায় ই কি উপরোক্ত ছয় দর্শন এ বিশ্বাসী কিনা ? এর উত্তরে বলায় যায় সনাতন ধর্মটি কেবল ছয় দর্শনে সীমাবদ্ধ থাকেনি। থাকার কথাও নয়। কেননা, ৩,৫০০ বছর আগে পাঞ্জাবে এর রূপ একরকম ছিল; মধ্যযুগের বাংলায় অন্যরকম। আবার মনিপুরে অন্যরকম। কম্বোডিয়া এবং মালয়শিয়ায় আরেক রকম।

বর্ণভেদ এল আর্যরা ভারতে আসার পর। আর্যরা অনার্য দ্রাবিড়দের পরাজিত করেছিল। অনার্য দ্রাবিড় জাতিকে দস্যু দাস অসুর শুদ্র নিষাদ এসব বলত। এরাই এখন ভারতের হরিজন বা দলিত। এদের শোষন করতে আর্যসমাজের হর্তাকর্তারা বিধান তৈরি করেন ... এ বিষয়ে বিস্তারিত পাবেন দেব রাজ চানানা-র প্রাচীন ভারতে শূদ্র বইতে।

আপনি লিখেছেন, বাউল ধর্মের সাথে ইসলামের খাটি সুফিদের কোন মিল নেই। কারণ ইসলামী সুফিবাদ হলো শুধুমাত্র আত্মা দর্শন। তাতে বৈষ্ণব সহজিয়া দর্শন বা বাউল দর্শন এর ন্যায় বিকৃত যৌনাচারের কোনরুপ দেহবাদ নেই।

বাউলরাও কিন্তু আত্মদর্শনেরও দাবী করে। লালন এর অনেক গানে রয়েছে,

আত্মদর্শন জানে যারা শাঁইয়ের নিগূঢ় লীলা দেখছে তারা।
আমি আগেও বলেছি, বাউলদর্শন বাংলার লৌকিক দর্শন। যা হাজার বছরের চিন্তাধারায় গড়ে উঠেছে। বাউল দর্শনে বিকৃত যৌনাচারের কারণ বামাচারী তন্ত্র। বাউল দর্শনকে কেবল বিকৃত যৌনাচার দিয়ে বিচার করলে ভুল হবে আবার সুফিবাদকে কেবল আত্মদর্শন দিয়ে বিচার করলে ভুল হবে। দেখুন এনামূল হক এর বঙ্গে সুফি প্রভাব তবে সুফিবাদে আত্মদর্শন প্রধান বিষয়।


আপনি লিখেছেন:

আপনি লিখেছেন:

বাউলদের দেহবাদ আর হিন্দুদের দেহবাদ/নারী মুতি পূজা এক দর্শনজাত কিনা। যাই হোক হিন্দু ধর্ম নিয়ে আমার প্রশ্ন হলো তারা যখন পুজা করে তখন কি তারা মনে করে যে, তাদের হাতে গড়া মূর্তির মাঝে তাদের ব্রাম্ভন (আল্লাহ) এসেছেন ? তাদের ধর্মগ্রন্থে যদি নরাকার স্রষ্টার কথা বলা হয়ে থাকে তাবে কেন তারা তাকে আকারের গন্ডিতে আবদ্ধ করতে চায় ?


বিপ্লব ক্নান্তি ৬নং কমেন্টে বলেছেন ... সনাতন ধর্মে নিরাকার উপাসনা ও প্রচলিত আছে , নিরাকার উপাসনা তারাই করেন যারা সৃষ্টি সম্পর্কে, প্রকৃতি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞানসম্পন্ন । যারা অন্তরে ঈশ্বর জ্যোতি জাগিয়ে তুলতে পারেন । এই ঈশ্বর জ্যোতি জাগানোর মধ্যে আবার যোগের সম্পর্ক আছে ।

আশা করি আপনার উত্তর পেয়েছে। এর সাথে আমার প্রথম দিকের মন্তব্য আরেকবার পড়তে পারেন।

আপনার বাকি প্রশ্ন পরে সময় করে দেব।
ধন্যবাদ।

৮| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:১৭

তানভীরসজিব বলেছেন: চৈতন্যময়ী শব্দটার মানে একটু বলবেন সহজভাবে ।

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৪২

ইমন জুবায়ের বলেছেন: চৈতন্য শব্দটি এসেছে চেতনা থেকে। ইংরেজিতে consciousness। যেমন আমরা বলি তোমার চৈতন্যের উদয় হোক। এই শব্দকে নারীর ওপর আরোপ করলে বলা হবে: চৈতন্যময়ী। যেমন: কিরণময়ী; জ্যোর্তিময়ী।

ধন্যবাদ।

৯| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৩৮

টুন্টু কুমার নাথ বলেছেন: খুব সুন্দর উপস্থাপনার জন্য ধন্যবাদ।
আর আমাদের বিপ্লব কান্তি এত ক্ষেইপ্পা গেলেন কেন বুঝতে পারলাম না।

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৪৩

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

শারদ শুভেচ্ছা রইল।

১০| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৪৪

আশীষ কুমার বলেছেন: @ নাজবুল্লাহ... আপনার মন্তব্যগুলো পড়লাম। শুরু থেকেই বুঝতে পারছিলাম এ বিষয়ে আপনার আগ্রহ ও জ্ঞান আছে।

এক্কেবারে এক কথায় বলতে গেলে সনাতন ধর্ম একেশ্বরবাদী। এখানে বহুর কোন স্থান নেই। তাহলে কেন এত এত পূজা এত এত নিয়মকানুন? বিভিন্ন পূজার দেব/দেবীকে শক্তির (মতান্তরে/কোন কোন ক্ষেত্রে প্রকৃতির) একেক রূপ হিসাবে কল্পনা করা হয়। একেক রূপকেই আলাদা আলাদা ভাবে আরাধনা করা হয়। এটার ডিটেইল ব্যাখ্যাতে যাচ্ছি না।

বর্ণভেদ হিন্দুধর্মের কলংক নয়, অলঙ্কার। তবে বর্ণপ্রথা নামে যা এখন বা আরো আগে থেকেই চলছে তা অবশ্যই কলঙ্ক। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, কর্মের মাধ্যমে বর্ণ নির্ধারিত হবে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। ব্রাহ্মণের ছেলেই ব্রাহ্মণ থেকে যাচ্ছে। কিন্তু শুদ্রের ছেলেরও পূর্ণ অধিকার আছে পূজা অর্চনা করার বা পরিচালনা করার। কিন্তু আধিপত্যবাদীদের আচরণের জন্য তা বর্ণপ্রথা নামে কলঙ্ক হয়ে রইল।


সনাতন ধর্মে নিরাকার (নরাকার নয়!) বা সাকার দুধরণের উপাসনার কথাই বলা হয়েছে। যে যেভাবে করে শান্তি পায়...। তারা যখন পূজা করে তখন তারা অবশ্যই মনে করে মূর্তিতে ভগবান থাকেন!! কারণ ভগবান সর্বদা সর্বত্র বিরাজমান বলেই তারা বিশ্বাস করেন। এটা তাদের পদ্ধতি, তাদের আচার। আপনার বিশ্বাস হয় না বা করেন না বলেই আপনি হিন্দু নন।

না, আপনি এক কথাতেই এটা বলতে পারেন না যে ইসলাম সর্বশেষ স্রষ্ঠা প্রেরিত ধর্ম। এটা আপনার বিশ্বাস। সবার নয়। এটা শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাই বিশ্বাস করেন। পৃথিবীতে আরো অনেক ধর্ম আছেন। কোন ধর্মের লোকই কিন্তু বলবে না তার ধর্ম শ্রেষ্ঠ নয়।

ছোটবেলায় একটা শ্লোক পড়েছিলাম, "স্বধর্ম নিধনং শ্রেয়, পরধর্ম পরিত্যাজ্য"।

(পুরোটায় ব্যক্তিগত মতামত, সে অর্থে তর্ক বা বিতর্ক নয়।)

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৫১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, কর্মের মাধ্যমে বর্ণ নির্ধারিত হবে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। ব্রাহ্মণের ছেলেই ব্রাহ্মণ থেকে যাচ্ছে। কিন্তু শুদ্রের ছেলেরও পূর্ণ অধিকার আছে পূজা অর্চনা করার বা পরিচালনা করার। কিন্তু আধিপত্যবাদীদের আচরণের জন্য তা বর্ণপ্রথা নামে কলঙ্ক হয়ে রইল।

ভালো লাগল।

ধন্যবাদ।

১১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৪৪

জেনারেশন সুপারস্টার বলেছেন: ভালো আলোচনা হবে আশা করি।
কষ্টসাধ্য পোস্টের জন্য ++++++

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৪৮

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

১২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৫০

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: ভাল লেগেছে। প্রিয়তে রেখে দিলাম.....।।

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:০০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৫৭

কাব্য সৈনিক বলেছেন: আমি মনেকরি সব ধর্মের উদ্দেশ্য এক । যে যার ধর্ম পালন কর । তাতেই মঙ্গল । ভালোলাগা রইলো ।

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:০০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: সুন্দর বলেছেন।
অনেক ধন্যবাদ।

১৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:০০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন:
তত্ত্ব তথ্যে মন নেই আমার
মন আমার খোজে প্রাণ নাথ
কৃষ্ণ রুপে দেয় দেখা কে
সেইতো সখা নাথেরো নাথ।

ভক্তি করি প্রাণের টানে
মন ভরে সত্য দর্শনে
ভাষা বাক্যের প্রভেদ ছেড়ে
অনুভবে দেখী সে সবখানে।।

পূজা আমার নিত্য মনে
ভোগে, ত্যাগে প্রয়োজনে
ভিন্ন প্রকাশ চেতনা ধ্যানে
তবে কেন তানা না না।।

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:০২

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ভক্তি করি প্রাণের টানে
মন ভরে সত্য দর্শনে
ভাষা বাক্যের প্রভেদ ছেড়ে
অনুভবে দেখী সে সবখানে।।


সুন্দর!

ধন্যবাদ।

১৫| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:০১

বিপ্লব কান্তি বলেছেন: ১০ নম্বর কমেন্ট >>>>>>>

না ..... স্যার ....... ধর্মের বোঝাবোঝিতে যদি যান ....... তাহলে ব্রাহ্মণ হতে গেলে কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয় , এখনকার ব্রাহ্মণরা ঐ ধাপগুলো পেরোতে পারেন না ........ তাই গীতা বা বেদে যে ব্রাহ্মণের কথা বলা আছে .....সেটা হতে পারেন না । বিপ্র পর্যন্ত হতে পারেন

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:০৩

ইমন জুবায়ের বলেছেন: জানলাম।
ধন্যবাদ।

১৬| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:০৮

আশীষ কুমার বলেছেন: এতদিনে আজ বুঝি জাগিয়াছে দেবী!
ওই রোষহুহুংকার! অভিশাপ হাঁকি
নগরের 'পর দিয়া ধেয়ে চলিয়াছ
তিমিররূপিণী! ওই বুঝি তোর
প্রলয়-সঙ্গিণীগণ দারুণ ক্ষুধায়
প্রাণপণে নাড়া দেয় বিশ্বমহাতরু!
আজ মিটাইব তোর দীর্ঘ উপবাস।
ভক্তেরে সংশয়ে ফেলি এতদিন ছিলি
কোথা দেবী? তোর খড়্গ তুই না তুলিলে
আমরা কি পারি? আজ কী আনন্দ, তোর
চণ্ডীমূর্তি দেখে! সাহসে ভরেছে চিত্ত,
সংশয় গিয়েছে; হতমান নতশির
উঠেছে নূতন তেজে। ওই পদধ্বনি
শুনা যায়, ওই আসে তোর পূজা। জয়
মহাদেবী!

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৩৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৭| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৮

রাইসুল বাঙ্গালী বলেছেন: আ শী ষ বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার লেখাটি। অনেক সময় নিয়ে লিখেছেন মনে হচ্ছে। ধন্যবাদ :)

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:০৩

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৮| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:২৮

নিরুদ্দেশ বলেছেন: শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল, ভালো থাকবেন।

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:৫৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৯| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:৪২

তানভীরসজিব বলেছেন: লেখাটি বেশ ভালো লাগল । ইনফরমেটিভ। ধন্যবাদ ।

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:৫৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

২০| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৪৪

সিলেটি জামান বলেছেন: পোস্টে ++++

২১ শে অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৫:১৭

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

২১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:০৩

ইউনিকর্নের পুনর্জন্ম বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপনের জন্য ধন্যবাদ । :)

২১ শে অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৫:১৭

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

২২| ২১ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৩১

নজিবুল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ আ শী ষ দা,

বর্ণভেদ হিন্দুধর্মের কলংক নয়, অলঙ্কার।

একটু ব্যাখ্যা করবেন কি ?

তারা যখন পূজা করে তখন তারা অবশ্যই মনে করে মূর্তিতে ভগবান থাকেন!! কারণ ভগবান সর্বদা সর্বত্র বিরাজমান বলেই তারা বিশ্বাস করেন।

যদি ভগবান সর্বত্র বিরাজমান হয়েই থাকেন তবে কেন তাকে নিদির্ষ কিছু বস্তুতেই (মুর্তি, গাছ, লিঙ্গ, সাপ, আগুন ইত্যাদি ) সসীম করে ফেলা হয় ? অসীম স্রষ্টা কি তার সৃষ্টি এ সকল তুচ্ছ বস্তুতে প্রবেশ করেন ? এটা বিশ্বাস করা কি নিজ স্রষ্টাকেই খাটো করা নয় ? আর যদি স্রষ্টা সর্বত্র বিরাজমান হয়ে থাকেন তবে সব কিছুই পূজা পাবার যোগ্য। কেন নির্দিষ্ট কতিপয় বস্তুতে স্রষ্টার উপস্থিতি কল্পনা করা হয়, বাকী সকল বস্তুকে কেন পুজা করা হয় না ?

আপনার বিশ্বাস হয় না বা করেন না বলেই আপনি হিন্দু নন।

এ বিশ্বাসের ভিত্তি কি ? এ বিশ্বাস যে স্রষ্টা প্রদত্ত্ব সঠিক বিশ্বাস তা স্রষ্টার প্রেরিত গ্রন্থ ছাড়া কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য হয় ? আপনাদের বেদ যদি স্রষ্টা প্রদত্ত্ব কিতাব হয় তবে তা কার কাছে কখন প্রেরিত হয়েছিল ? এর সঠিক ইতিহাস কি ?

বিপ্লব কান্তি ভাই বলেছেন,

সনাতন ধর্মে নিরাকার উপাসনা ও প্রচলিত আছে , নিরাকার উপাসনা তারাই করেন যারা সৃষ্টি সম্পর্কে, প্রকৃতি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞানসম্পন্ন । যারা অন্তরে ঈশ্বর জ্যোতি জাগিয়ে তুলতে পারেন ।


আপনাদের মাঝে কত পার্সেন্টিস এ জ্ঞান সম্পন্ন ধার্মীক রয়েছেন, যারা মুসলিমদের ন্যায় নিরাকার ভগবানের পুজা করেন ? আর কত পার্সেন্টিস নিম্নস্তরের ধার্মীক রয়েছেন যাদের পুজার জন্য আকারের প্রয়োজন পড়ে ? একি ধর্মে বিপরীতমুখি দু তত্ত্ব কি করে গ্রহণযোগ্য হলো ? যার নজীর অন্য কোন ধর্মেই নেই।

না, আপনি এক কথাতেই এটা বলতে পারেন না যে ইসলাম সর্বশেষ স্রষ্ঠা প্রেরিত ধর্ম। এটা আপনার বিশ্বাস। সবার নয়। এটা শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাই বিশ্বাস করেন। পৃথিবীতে আরো অনেক ধর্ম আছেন। কোন ধর্মের লোকই কিন্তু বলবে না তার ধর্ম শ্রেষ্ঠ নয়।


আপনি কি ৬৩২ খৃষ্টাব্দে আরবে প্রেরিত ইসলাম ধর্মের কিতাব কোরআনের পরে অন্য এমন কোন কিতাবের নাম আজ পর্যন্ত শুনেছেন যে কিতাবের মাঝে দাবী করা হয়েছে যে, সেটা স্রষ্টার কিতাব ? যদি শুনে না থাকেন তবে কি করে বলছেন যে, ইসলামের পড়ে ভগবান আরো কোন গ্রন্থ বা ধর্ম পাঠিয়েছেন ?

আর আমি ইসলামকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলছিনা বরং আমি বলছি ইসলামই আল্লাহ পাকের নিকট বর্তমানে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম। আর হিন্দু, ইহুদী, খৃষ্টান সহ পূর্ববর্তী সকল ধর্মও ভগবানই প্রেরণ করেছিলেন এবং সকল ধর্মের বিধানাবলী তিনি বাতিল ঘোষণা করেছেন এবং একমাত্র কোরআন কেই মান্য করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন তার এ সর্বশেষ কিতাবে। এবং তিনি কোরআন এ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন এ কোরআন আসার পরে যারা তাদের বাপ-দাদা পূর্ব পুরুষের ধর্মে অবিচল থাকবে আমার প্রেরিত সর্বশেষ ধর্ম ইসলাম এ প্রবেশ করবে না তাদেরকে আমি চির নরকবাসী করব। এটা তার সর্বশেষ প্রেরিত গ্রন্থ কোরআন এর ঘোষণা। তারপরে কেহ কি করে দাবী করে যে, অন্য ধর্ম পালন করেও মুক্তি পাওয়া যাবে। তাদের নিকট কি প্রমাণ রয়েছে। কোরআন এর পরে কি ভগবান আর কোন গ্রন্থ পাঠিয়েছেন এমন কোন প্রামণ আপনাদের কারো কাছে আছে ? থাকলে উপস্থাপন করুন আর না থাকলে কোরআন কে মেনে নিতে আপনাদের আপত্তি কেন তাও স্পষ্ট করে বর্ণনা করুন কারন আমরাও চাইনা যে কেহ ভগবানের নির্দেশ অমান্য করে চির নরকবাসী হোক। আমরা আপনাদের হিতাকাঙ্খি, শত্রু নই।

একমাত্র ইসলাম ধর্মই ভগবানের কাছে বর্তমানে গ্রহণযোগ্য ধর্ম আর তিনি তারই পাঠানো এর পূর্ববর্তী সকল ধর্ম কে বাতিল করে দিয়েছেন। কোরআনের এ দাবীর পরে আপনারা কোরআনকে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক বলে যতই গালাগালি করুন না কেন তা হবে আপনাদের যুক্তি, বিবেক ও প্রমাণ বিরুধী হাস্যকর দাবী। দাবী করতে হলে তার সাথে প্রমাণ থাকতে হবে। তাই আপনারা আপনাদের দাবীর সত্যতার পক্ষ্যে প্রমাণ উপস্থাপন করুন। আর যদি আপনারা মনে করেন কোরআন ভগবান পাঠান নি, এ রকম জ্ঞনগর্ভ একটি গ্রন্থ নিরক্ষর জাতির নিরক্ষর একজন মেষ চালক নিজেকে নবী দাবী করে নিজেই তৈরী করেছে। তাহলে ভগবানের প্রেরিত বেদ কিতাবের মাঝে এ কিতাবের স্থায়িত্ব সম্পর্কে কি কোন তথ্য রয়েছে যে, এ বেদের নির্দেশাবলী কতযুগ পর্যন্ত বলবত থাকবে ? এ বেদের আদেশ নিষেধাবলী কতকাল পর্যন্ত চলবে এমন কোন দিক নির্দেশনা কি বেদে রয়েছে ? আপনাদের এ বেদের ইতিহাস কি ? দয়াকরে গোড়ামী ত্যাগ করে আশা করি বিস্তারিত জবাব দিবেন। আমরা জানতে চাই জানাতে চাই ভগবানের দিক নির্দেশনা বলি কারণ আমরা আমাদের যৌক্তিক বিচার বুদ্ধিতে বুঝি যে, স্রষ্টা আমাদেরকে সৃষ্টি করে কোন গাইডলাইন না দিয়ে এমনি এমনিই ছেড়ে দেন নি, অন্যান্ন প্রাণীর ন্যায়, নিশ্চয়ই আমাদেরকে আমাদের কর্মফলের হিসাব দিতে হবে ও আমাদের বিবেকের যথার্থ মূল্যায়ন করা হবে যে, আমরা আমাদের বিবেককে কাজে লাগিয়েছিলাম কিনা। তাই আশা করি সত্যের খাতিরে ন্যায়ের খাতিরে আমার প্রশ্নগুলোর যু্ক্তিপূর্ণ জবাব দিবেন। ধন্যবাদ। লেখকের প্রতিও অনুরোধ দেড়শ কোটি মুসলিমের এ প্রশ্নের যথার্থ উত্তর কি হতে পারে তা কি কখনো নিরপেক্ষ দৃষ্টি কোন থেকে ভেবে দেখেছেন কিনা ! আমাদের প্রত্যেকেরই এক একটি দাবী রয়েছে কিন্তু কার দাবী কতটুকু যৌ্ক্তিক ও গ্রহণযোগ্য ? ধন্যবাদ।

২৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৬:১০

সবখানে সবাই আছে বলেছেন: পোস্ট আর তার কমেন্টের উপর একবার চোখ বুলিয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম আমার মত গাধার জন্য এই পোস্ট না। সব জ্ঞানী গুনীর মঝে একটু কমেন্ট করে গেলাম আর কি!!!

২১ শে অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৬:২৬

ইমন জুবায়ের বলেছেন: :)

২৪| ২১ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:২৭

নীলপদ্ম বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। রাখার মত।

২১ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:২৭

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

২৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৮:৪৭

অচিন্ত্য বলেছেন: মাভৈঃ আপনার লেখা আমি প্রথম যেদিন পড়েছি (মীননাথকে নিয়ে) সেদিনই আপনার বিশেষ ভক্ত হয়ে পড়েছি। আপনি বাংলা ব্লগ এর এক বিস্ময়। মাঝে মাঝে এই সাইটে আপনার লেখা আমার কাছে উলুবনের মুক্তার মত লাগে।

আপনার অন্যান্য লেখার মত এই লেখাটিতেও আমি সেই বিশেষ বিষয়টি দেখতে পাচ্ছি- ভিন্ন ভিন্ন জানলা দিয়ে একটি ছবিকে দেখা। কি অদ্ভুত সুন্দর উপায়ে পূজা ধারণাটিতে ধর্ম-দর্শন-ইতিহাস-নৃতত্ত্ব মিলে মিশে একাকার হয়েছে আপনার লেখায় ! পূজা বিষয়টি কি বিপুল ঐশ্বর্যে ধরা পড়ল আপনার কৌতূহলী পঠনে-মননে ! আমি অদ্বৈত আশ্রম থেকে প্রকাশিত স্বামী বিবেকানন্দ এর রচনা থেকে একটি কমপিলেশন ‘Meditation and its methods’ পড়ছি। তাই এই মুহূর্তে এই লেখাটির আকর্ষণ আমার কাছে অনেক বেশি।

আপনার কাছে আমি বিনয়ের প্রয়োগ শিখেছি। আপনার লেখায় কখনো কখনো নেতিবাচক, এমনকি আক্রমণাত্মক মন্তব্য দেখেছি। কিন্তু এর প্রত্যুত্তরে আপনাকে কখনো আক্রমণাত্মক দেখিনি। এই ব্লগেও দু’একটা মন্তব্যে কিছুটা আক্রমণের গন্ধ পাচ্ছি।

তর্কপ্রিয় মন্তব্যকারীগণ শুনুন। আমি ধর্ম বিষয়ে একটি সহজ কথা শিখেছি। ধর্ম বোঝার বিষয় নয়, বোঝাবার বিষয়ও নয়; অর্জনের বিষয়। তর্ক দিয়ে ধর্ম লাভ হয় না। আর যার লেখা পড়ে ধর্ম বিষয়ে আমাদের মন আগ্রহী হয়ে ওঠে, তার বিষয়ে তো তর্কের প্রশ্নই আসে না।

২২ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:১৬

ইমন জুবায়ের বলেছেন: “I do not dispute with the world, it is the world that disputes with me. A speaker of Dhamma does not dispute with anyone in the world.” A Buddhist Bhikku

ধন্যবাদ।

২৬| ২২ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:০২

অচিন্ত্য বলেছেন: correction: Meditation and its methods

২২ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:১৬

ইমন জুবায়ের বলেছেন: লেখাটা বাংলায় পড়েছি বিবেকানন্দ রচনাবলীতে।

ধন্যবাদ।

২৭| ২২ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৪৬

জুবেরী বলেছেন: "গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, কর্মের মাধ্যমে বর্ণ নির্ধারিত হবে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। ব্রাহ্মণের ছেলেই ব্রাহ্মণ থেকে যাচ্ছে। কিন্তু শুদ্রের ছেলেরও পূর্ণ অধিকার আছে পূজা অর্চনা করার বা পরিচালনা করার। কিন্তু আধিপত্যবাদীদের আচরণের জন্য তা বর্ণপ্রথা নামে কলঙ্ক হয়ে রইল।"

ইমন ভাই প্লেটোর Utopia state এর বর্ণপ্রথার কি একই ভাবনা উৎস ?

প্লেটোর Utopia state এর ভাবনা কি ভারতীয় দর্শণ দ্বারা প্রভাবিত?

২৮| ২২ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৪৬

সকাল রয় বলেছেন:
ব্যপকআলোচনা মুখর পোষ্ট
জানতে পারছি সেই ভালো

পূজোর শুভেচ্ছা রইলো
সময় পেলেইবুকটি দেখবেন
Click This Link

২২ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

২৯| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৭

ডট কম ০০৯ বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৫:৩১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩০| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:২৭

আবু সালেহ বলেছেন: পোস্ট এবং পোস্টের বিপরীতে মন্তব্য.....মোটকথা আলোচনায় ভরপুর হওয়ায় অনেক ভালো লাগা রইলো....

২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:১৩

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৬

দীপান্বিতা বলেছেন: ঈদ ও বিজয়ার শুভেচ্ছা, ইমনভাই! :)

২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:১৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: :)ধন্যবাদ।

৩২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫১

সংবাদ বলেছেন: তত্য সমৃদ্ধ পোষ্ট কিন্তু অনেক প্রশ্নের উত্তর ফেলাম না পেয়েছি এডয়ে যা্ওয়া আশা করেছিলাম হতাশ নই ভাল লাগল

৩৩| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯

প্রবাসী১২ বলেছেন: @আশীষ, আপনি নজিবুল্লাহর সর্বশেষ মন্তব্যের জবাব দেননি। আশা করি আপনি জবাব দিবেন এবং জ্ঞানভিত্তিক যুক্তিতর্ক একটি সঠিক মঞ্চ তৈরি করবে। ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে কোন ধর্ম পালনের অধিকার সবার আছে, তবে সঠিকভাবে উৎস জেনে নেয়াটা প্রথম ও প্রধান বিষয়। স্রষ্টা আছেন নিঃসন্দেহে। সন্দেহাতীতভাবে তার নির্দেশণা জেনে নেয়া আমাদের সকলের কর্তব্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.