নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন শিক্ষক, লেখালেখি, সম্পাদনা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশ কে ভালবাসি। দেশের জন্য, মানুষের জন্য সামান্য হলেও কিছু করতে চাই।

মা, মাটি ও মানুষকে ভালবাসি। ভালবাসতে চাই।

বিএইচ মাহিনী

I am a social worker.

বিএইচ মাহিনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী-পুরুষের বর্তমান পরিস্থিতিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৫

নারী-পুরুষের বর্তমান পরিস্থিতিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

মাওলানা বি.এইচ.মাহিনী, সাংবাদিক ও শিক্ষক

নারী-পুরুষের পরিচয়ঃ

নারী বলতে পৃথিবীর অন্যতম প্রাণী মানুষের স্ত্রী-বাচকতা নির্দেশক রূপটিকে বোঝানো হয়। এর বিপরীত পুরুষ, নর প্রভৃতি। ইংরেজীতে নারীর প্রতিশব্দ করা হয়েছে Female বা Woman, আর পুরুষের ইংরেজী প্রতিশব্দ হলো Male বা Man. সংস্কৃত নৃ শব্দটি থেকে নারী শব্দটির উৎপত্তি (নৃ+ঈ=নারী)। বিভিন্ন আসমানী কিতাব যেমন বাইবেল, কুরআন ইত্যাদি অনুসারে হাওয়া পৃথিবীর প্রথম নারী বা মানবী। ‘নারী’ শব্দটি সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী-মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেখানে ‘মেয়ে’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় স্ত্রী-শিশু বা কিশোরীর ক্ষেত্রে। তাছাড়া বয়সের বাধা ডিঙিয়েও ‘নারী’ শব্দটি সমগ্র স্ত্রী-জাতিকে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন: ‘নারী অধিকার’ দ্বারা সমগ্র স্ত্রী জাতির প্রাপ্য অধিকারকে বোঝানো হয়।অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে নারীর সংগায় বলা হয়েছে- ‘An adult female human’ এছাড়াও বলা হয়েছে-‘a wife or sexual partner’. অপর দিকে পুরুষের সংগায় বলা হয়েছে-‘An adult male human’ এছাড়াও বলা হয়েছে-‘a husband or sexual partner’. আরবিতে নারীর সমার্থক শব্দ ধরা হয় ‘নিসা’ বা ‘নিসাউন’ এবং পুরুষের প্রতিশব্দ হিসেবে ‘রিজালুন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

পারিভাষিক পরিচয়ঃ

নারীত্ব বলতে সে সময়টিকে বোঝায় যখন স্ত্রী-র জীবনকাল কিশোরী পেরিয়ে যায়, অন্তত পক্ষে তা হতে হবে শারীরিকভাবে, অর্থাৎ রজঃস্রাবের শুরু থেকে। অনেক দেশেই নারীত্বে পদার্পণকে বিভিন্ন সামাজিক বা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা হয়, যেমনটা খ্রিস্টান ও ইহুদি সমাজের কোনো কোনো স্থানে দেখা যায়। এছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১২ থেকে ২১ বছর মধ্যবর্তী কোনো একটি নির্দিষ্ট বয়সের জন্মদিন পালনের সময় বিশেষ অনুষ্ঠান উদযাপনের মাধ্যমেও নারীত্বে পদার্পণমূলক অনুষ্ঠান পালন করা হয়। কিছু সংষ্কৃতিতে, যেখানে কুমারীত্বের সাথে পারিবারিক সম্মান জড়িত, সেখানে 'মেয়ে' শব্দটি কখনো বিয়ে হয়নি এমন নারীকে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়। সেখানে যদি বিবাহের পূর্বেই নারী যৌনসম্পর্ক করেছে বলে প্রমাণিত হয়, তবে তা পরিবারের জন্য অসম্মানকর হিসেবে বিবেচিত। ইংরেজি ভাষায় 'মেইডেন' শব্দটি অবিবাহিত নারীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে কিশোর বয়স পেরিয়ে গেলেই পুরুষত্ব শুরু হয়। এককথায় যৌবনে পদার্পন কারী ছেলেকে পুরুষ হিসেবে গন্য করা হয়। তবে বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই পুরুষ বলতে বিবাহিত ব্যক্তিকে বুঝানো হয়ে থাকে। তবে পুরুষ বা পুংলিঙ্গ বলতে বোঝানো হয় প্রাণীর সেই লিঙ্গকে যে নিজেদের শরীরে সন্তান ধারণ করে না, বরং স্ত্রীশরীরে যৌন সঙ্গমের দ্বারা শুক্রাণু প্রবেশ করিয়ে সন্তান উত্পাদন করে।

পরিসংখ্যানে নারী-পুরুষঃ

উইকিপিডিয়া মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে জানা যায় যে, ‘সিআইএ’ এর ওয়ার্ল্ড ফ্যক্টবুক এর হিসাব অনুযায়ী বর্তমান (জুলাই-২০১৩) বিশ্বের জনসংখ্যা ৭,০৯৫,২১৭,৯৮০। যারমধ্যে নারী পুরুষের অনুপাত হলো ১০০:১০১। অর্থৎ যেখানে পুরুষের সংখ্যা ৩,৫৭১,৩৭৪,০৯৯ জন, সেখানে নারীর সংখ্যা ৩,৫২৩,৮৪৩,৮৮১ জন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত আদমশুমারীর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের নারীর সংখ্যা ৭কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার। পুরুষ ও নারীর সংখ্যার অনুপাত ১০০:১০৩। এদেশে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের গড় আয়ু ৬৩ বছর।

নারীদের বর্তমান অবস্থান

স্বাস্থ্য ও পুষ্ঠি : বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ নারী পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। যাদের প্রায় ৪৩ শতাংশের উপর গর্ভকালীন অবস্থায়। বাংলাদেশে প্রতি ঘন্টায় গর্ভ ও প্রসবজনিত জটিলতায় প্রায় ৩ জন মা মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র ১৩ শতাংশ বাংলাদেশী নারী প্রসবের সময় দক্ষ ধাত্রীর সহায়তা পায়। বাংলাদেশে গর্ভবতী নারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশের বয়স ১৯ বছরের নীচে এদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ নারী পরিপূর্ণ পুষ্টির অভাবে রক্তশূণ্যতায় ভোগে।

বিবাহ : বাংলাদেশের ৬৪ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর পূর্ণ হবার আগেই। যাদের ৯০-৯৫ শতাংশই মা হয়ে যান ১৮ বছর পূর্তির আগেই।

গর্ভপাত : ১৫ থেকে ১৯ বছরেই অন্ত:সত্ত্বা কিংবা মা হয় এক তৃতীয়াংশ। সারাবিশ্বে প্রতি মিনিটে ৩৮০ জন নারী গর্ভবতী হয়, ১৮০ জন নারী অপরিকল্পিত বা অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ করে, ১১০ জন নারী গর্ভধারণ সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগে, ৪০ জন নারী অনিরাপদ গর্ভপাত ঘটায় এবং ১ জন নারী মারা যায়।

শিক্ষা :১৫ ও এর উর্ধ্ববয়সী নারীর স্বাক্ষরতার হার ৪০.৮ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিক ও তৎপরবর্তী শিক্ষায় নারীর ভর্তি হার মাত্র ৪ শতাংশ। বাল্যবিবাহের কারণে শতকরা ৪১ ভাগ কিশোরীকে স্কুল ত্যাগ করতে হয়।

জ্ঞান-বিজ্ঞানে নারী : ঐতিহাসিকভাবেই নারীকে গৃহপ্রকোষ্ঠে আবদ্ধ রাখা হয়েছে। পরিবার থেকেই তাদেরকে বিজ্ঞান চর্চায় অংশগ্রহণ কিংবা উদ্বুদ্ধ করা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২৩ সালে সমান অধিকার আইন আকারে গৃহীত হবার পর নারীদেরকে উল্লেখযোগ্য হারে বিজ্ঞান বিষয়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। কিন্ত বিজ্ঞানে অংশগ্রহণের হার প্রকৌশল বিদ্যার তুলনায় নিম্নমুখী। বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে ডক্টরেট গ্রহণের সংখ্যা ১৯৭০ সালে ৭% থেকে ১৯৮৫ সালে ৩৪%-এ দাড়ায়। তন্মধ্যে প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রীর সংখ্যা যেখানে ছিল ১৯৭৫ সালে ছিল মাত্র ৩৮৫ জন, সেখানে ১৯৮৫ সালে ১১০০০ ছাড়িয়ে যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে আইনের মাধ্যমে নারীকে বিশেষায়িত করলেও এখনো এ পেশায় বেশ অসমতা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১৯৮৯ সালে বিজ্ঞানী হিসেবে পুরুষের অংশগ্রহণ ছিল ৬৫% এবং মাত্র ৪০% নারী উচ্চ পদে আসীন ছিলেন। যেখানে পূর্ণাঙ্গকালীন একজন বিজ্ঞানীর বার্ষিক আয় $৪৮,০০০; সেখানে নারীর আয় ছিল $৪২,০০০।

নারী নির্যাতন যুগে যুগে: ইতিহাসের দুটি পর্যায়ে নির্যাতিত হয়েছে নারীরা। একবার অন্ধকারাচ্ছন্ন অজ্ঞতার যুগে, আর একবার আমাদের এ আধুনিক যুগে। অজ্ঞতার যুগে নারীদের সীমাহীন অত্যাচার করা হতো, তাদের সঙ্গে করা হতো পশুর মতো আচরণ। ইসলাম এসে তাদেরকে তা থেকে উদ্ধার করেছিল। পরে আবার এ আধুনিক যুগে এসে নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়। আধুনিক যুগে নারী স্বাধীনতা ও নারী মুক্তির ধুয়া তুলে নারীদেরকে তাদের স্বীয় সম্মান ও উচ্চ আসন থেকে টেনে নিচে নামিয়ে আনা হয়, তাদের মর্যাদাকে ভুলন্ঠিত করা হয়’। হ্যাঁ, সমাজদেহের অর্ধাংশ এ নারীরা যুগে যুগে হয়েছেন নির্যাতিত। নারীরা এ নির্যাতন সম্পর্কে কখনো সচেতন ছিলেন আবার কখনোবা তারা নিজেরাই সমাজপতিদের কুটকৌশলে অবচেতনভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। আধুনিক এ বিশ্বেও তারা অন্য এক রূপে নির্যাতনের শিকার হয়ে চলেছেন। আজকের যুগে নারীরা একদিকে প্রকৃত ধর্মের স্বরূপ বিকৃত করে উপস্থাপন করা কুসংস্কার, অপরদিকে আধুনিকতার আড়ালে লালসার শিকারে পরিণত হচ্ছেন। আর বিশ্বকে শোষণ করার জন্য এক সুযোগ নিচ্ছে বিশ্বের পুলিশি ভূমিকায় অবতীর্ণ বৃহৎ শক্তিবর্গ। পুরো ব্যপারটি দর্জির হাতে থাকা কাঁচির সঙ্গে তুলনা করলে দাঁড়ায়, কাঁচির এক ধারে কুসংস্কার আর অপর ধারে তথাকথিত আধুনিকতা, এর হাতল বৃহৎ শক্তিবর্গের হাতে। আর এ ব্যবস্থার মাঝে বলি হচ্ছে নারী সমাজ। আজকের যুগে নারী নির্যাতনের স্বরূপ বিশ্লেষণ করার আগে অন্ধকার যুগে নারী নির্যাতন সম্পর্কে কিছু কথা তুলে ধরলে আমাদের নিকট সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, এ সভ্য যুগে নারী নির্যাতনের সাথে অসভ্য যুগে নারী নির্যাতনের পার্থক্য কতটুকু! ইসলামের আবির্ভাবের আগে নারী নির্যাতনের ইতিহাসকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে।

পৌত্তলিকতা ও বর্বরতার যুগ : এ যুগে নারীরা ছিল পন্য সদৃশ ক্রয়-বিক্রয়ের সামগ্রী। নিজ স্ত্রীকে বিক্রি করা, স্ত্রীকে অন্যের ভোগের জন্য দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা, সামান্য অপরাধে গাছের সাথে বেঁধে প্রহার করা ইত্যাদি ছিল এ যুগে নারী নির্যাতনের কুখ্যাত দিক। মিশরীয়, পারসিক, গ্রিক ও রোমান সভ্যতার যুগ ঃ এ যুগে মানব চিন্তার উৎকর্ষ সাধিত হয়ে একেশ্বরবাদী বিভিন্ন মানব সভ্যতা জন্মলাভ করেছিল। এ সময় নারীদের ব্যক্তি স্বার্থে মানুষরূপে স্বীকার করা হলেও প্রকৃত যে অধিকার ও মর্যাদা তাদের পাওয়া উচিত তা তাদের দেয়া হয়নি। তাদেরকে পুরুষের জীবন সঙ্গিনী হিসেবে মনে করা হলেও আধ্যাতিœক ও সামাজিকভাবে তাদের কোনো ভূমিকা স্বীকার করা হতো না। তারা ছিল নিছক পুরুষের প্রয়োজন মেটানোর সামগ্রী।

প্রাচীন গ্রিসে নারী নির্যাতনের ধরন:প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতার মতো অধিকাংশ প্রাচীন সভ্যতায় নারীদের কোন আইনগত ও সামাজিক অধিকার ছিল না। তাদের মনে করা হতো বাজারে ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য ব্যবসায়িক পণ্য। বিশ্বাস করা হতো যে, নারীদের মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল মানবীয় প্রতিভা নেই, তাই তার চেতনাও শাশ্বত নয়। অতএব, স্বামীর মৃত্যুর পর তার জীবনধারণের আর কোনো অধিকার নেই।

ইহুদি সমাজে নারী নির্যাতনের ধরন:ইহুদি পরিবারের একজন নারী হচ্ছে সম্পদ ও দাসীর মতো এবং তাকে পিতার উত্তরাধিকারের অংশ বিবেচনা করা হয়। ফলে নারীরা সেখানে সহায়-সম্পত্তি ও ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য দাসের মতো। ইহুদি পরিবারে যখন কোন পুত্রের জন্ম হয়, তখন সে উপলক্ষে আনন্দ উৎসব হয়। আর যখন কোন কন্যার জন্ম হয়, তখন সে পরিবারে দুঃখ ও উদ্বেগ পরিলক্ষিত হয় (জেনেসিস, অধ্যায়-৩৫, শ্লোক-১৭)।

খৃস্টান সমাজে নারী নির্যাতনের ধরন: ইটালি ও স্পেনের খৃস্টান সংগঠনগুলো ব্যাপক গবেষণা সমীক্ষার পর এই ধারণায় উপনীত হয় যে, বিশ্বের নারীদের মধ্যে কেবলমাত্র আশীর্বাদপ্রাপ্ত কুমারী মেরিই মানবিক মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। এছাড়া অন্য কোন মহিলার মধ্যে মানবিক গুণাবলি নেই। তারা মানুষ ও প্রাণীর মাঝামাঝি পর্যায়ের সৃষ্টি (হকুকে মাদানী জাওজাইন, পৃ-১১)। ভারতবর্ষে নারী নির্যাতনের ধরন:প্রাচীন হিন্দু আইনে বলা হয়েছে রোগ, মহামারি, মৃত্যু, নরক, গরল ও অগ্নি নারী অপেক্ষা উত্তম। ভারতে কোন স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রীকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে মারা হতো। আরবে নারী নির্যাতন:ইসলাম পুর্বকালে আরবে মহিলাদের অবস্থা এতই শোচনীয় ছিল যে, বিশ্বের অন্য যে কোন অঞ্চলের চেয়ে তা ছিল মারাতœক। সেখানে কন্যা শিশুদের জীবন্ত কবর দেয়া হতো।ফ্রান্সে নারী নির্যাতনের ধরন:নারীরা আদৌ মানব প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত কি না তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য ৫৮৬ খৃস্টাব্দে ফ্রান্সে কতিপয় বিশেষ কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছিল যে, নারীরা মানুষ বটে, তবে পুরুষের সেবার জন্যই তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।

পশ্চিমা বিশ্বের নারী নির্যাতন

নারী নির্যাতনের সমাধান হিসাবে পশ্চিমা বিশ্ব সমস্ত পৃথিবীব্যাপী ফ্রিডম বা স্বাধীনতার ধ্যানধারণাকে জোরের সাথে প্রচার করলেও, প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার মিথ্যা শ্লোগানে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পশ্চিমের নারীরা হয়েছে এক অভিনব দাসত্বের শিকার। বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা, সুপার হিট হলিউড মুভি, নামী-দামী ফ্যাশন ম্যাগাজিন কিংবা চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপনের সাহায্যে তারা মুসলিম বিশ্বেও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করছে তাদের মুক্ত-স্বাধীন নারীদের। তাদের ইলেক্ট্রনিক আর প্রিন্ট মিডিয়াতে আধুনিকা নারীদের দেখলে মনে হয় জীবনের সবক্ষেত্রেই তারা প্রচন্ড রকম স্বাধীন। স্বাধীন সমাজে তাদের ভূমিকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে, স্বাধীন পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে কিংবা স্বাধীন পুরুষের সাথে সম্পর্ক তৈরীর ক্ষেত্রে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাদের শরীরের ওজন, প্রতিটি অঙ্গের মাপ, পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে সাজসজ্জা পর্যন্ত সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় ফ্যাশন, ডায়েট কিংবা কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রীর দ্বারা। সমাজের নির্দেশ মানতে গিয়ে তারা নিজেকে পরিণত করে সস্তা বিনোদনের পাত্রে। আর, মুক্ত স্বাধীন হবার জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে কাঁধে তুলে নেয় জীবিকা উপার্জনের মতো কঠিন দায়িত্ব।

নারী নির্যাতনের মূল কারণ :পুঁজিবাদ হচ্ছে মানুষের তৈরী এক জীবনব্যবস্থা, যার মূলভিত্তি ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধি। এ জীবনব্যবস্থায় মানুষের নেই কারো কাছে কোন জবাবদিহিতা। বরং রয়েছে লাগামহীন ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারীতার সুযোগ। তাই, পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত সমাজে জবাবদিহিতারঅনুপস্থিতি আর চূড়ান্ত ব্যক্তি স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে মানুষ, অন্যের চাওয়া-পাওয়া, আবেগঅনুভূতি, অসহায়ত্ব এমনকি নারীকেও পরিণত করে মুনাফা হাসিলের পণ্যে।

পুঁজিবাদী সমাজ নারীকে দেখে নিরেট ভোগ্যপণ্য ও মুনাফা হাসিলের উপকরণ হিসাবে।ফলে, নারী সমাজের কোন সম্মানিত সদস্য হিসাবে বিবেচিত না হয়ে, সমাজে প্রচলিত অন্যান্য পণ্যের মতোই পরিণত হয় বিকিকিনির পণ্যে। আর হীন স্বার্থ সিদ্ধির মোহে অন্ধ মানুষ নারীর দৈহিক সৌন্দর্যকে পুঁজি করে চালায় জমজমাট ব্যবসা। বস্তুতঃ নারীর প্রতি এ জঘণ্য দৃষ্টিভঙ্গীর প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসাবে স্বেচ্ছাচারী মানুষ শুধুমাত্র লাভবান হবার জন্য শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র সকল নারীকেই করে নির্যাতিত। মুক্ত সমাজ, মুক্ত মানুষ, মুক্ত অর্থনীতি ইত্যাদি পশ্চিমা পুঁজিবাদী জীবনদর্শনের মূলমন্ত্র হলেও, মুক্ত সমাজের মুক্ত জীবনের ধারণা নারীকে মুক্তি দেয়নি বরং বহুগুনে বেড়েছে তার উপর অত্যাচার আর নির্যাতনের পরিমাণ। বাস্তবতা হলো, ফ্রিডম বা স্বাধীনতার ধারণা পশ্চিমা সমাজের মানুষকে ঠেলে দিয়েছে স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন এক জীবনের দিকে। যেখানে স্বাধীনতার অপব্যবহারে নির্যাতিত হচ্ছে নারীসহ সমাজের অগণিত মানুষ। জবাবদিহিতার অনুপস্থিতিতে এক মানুষের স্বাধীনতা হচ্ছে অন্য মানুষের দাসত্বের কারণ। আর, ব্যক্তি স্বাধীনতার চূড়ান্ত অপপ্রয়োগে তাদের সমাজে বাড়ছে খুন, ধর্ষণ, যৌন হয়রানী ও পারিবারিক সহিংসতাসহ সকল প্রকার নারী নির্যাতন। এক নজরে পশ্চিমা সমাজে নারী নির্যাতন :



১. ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির নির্যাতন: পশ্চিমা সমাজে মূলতঃ তাদের ফ্যাশন, ডায়েট আর কসমেটিকস্ ইন্ডাস্ট্রিগুলোই নির্ধারণ করে নারীর পোশাক, তার সাজ-সজ্জা, এমনকি তার দেহের প্রতিটি অঙ্গের মাপ। স্বাধীনতার মিথ্যা শোগানে নারীকে তারা বাধ্য করে জঘণ্যভাবে দেহ প্রদর্শন করতে। তারপর, অর্ধনগড়ব সেইসব নারীদেহকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। ১৯৮৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের বিউটি ইন্ডাস্ট্রিগুলো প্রতিবছর ৮.৯ বিলিয়ন পাউন্ড মুনাফা অর্জন করে থাকে। আর, সমস্ত বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিগুলো বছরে অর্জন করে মাত্র ১.৫ হাজার বিলিয়ন ডলারের মুনাফা। অপরদিকে, নামকরা মডেল বা সুপার মডেল হতে গিয়ে নারীকে কমাতে হয় আশঙ্কাজনক পর্যায়ে তার ওজন। পরিণতিতে বন্ধ্যাত্ব, ভয়াবহ নিমড়ব রক্তচাপ, অ্যানোরেক্সিয়া কিংবা বুলেমিয়ার মতো মারাত্মক রোগ হয় তার জীবনসঙ্গী। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেনটাল হেলথ এর প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ২০ জনে ১ জন নারী অ্যানোরেক্সিয়া, বুলেমিয়া কিংবা মারাত্মক ক্ষুধামন্দারশিকার হয়। আর প্রতিবছর ১০০০ জন মার্কিন নারী অ্যানোরেক্সিয়া রোগে মৃত্যুবরণ করে। (সূত্র: আমেরিকান অ্যানোরেক্সিয়া/বুলেমিয়া অ্যাসোসিয়েশন)। বস্তুতঃ ফ্যাশনইন্ডাস্ট্রিগুলোর বেঁধে দেয়া ভাইটাল স্ট্যাটিকটিকস্ অর্জন করতে গিয়েই পশ্চিমে অকালে ঝরে যায় এ সব নারীর জীবন।

২. ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি: নারী-পুরুষের লাগামহীন মেলামেশা আর প্রবৃত্তি পূরণের অবাধ স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ ফলাফল স্বরূপ পশ্চিমা সমাজের নারীরা অহরহ হয় ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার। এমনকি এই বিকৃত আচরণ থেকে সে সমাজের নিষ্পাপ শিশুরা পর্যন্ত রেহাই পায় না। নারী স্বাধীনতার অগ্রপথিক যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে ধর্ষিত হয় একজন নারী, আর বছরে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় সাড়ে সাত লক্ষে। (সূত্র : দি আগলি ট্রুথ, লেখক মাইকেল প্যারেন্টি)। আর, বৃটেনে প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন নারী ধর্ষিত হয় এবং মাত্র ১০০ জনের মধ্যে একজন ধর্ষক ধরা পড়ে।

৩. কর্মক্ষেত্রে হয়রানি: গণমাধ্যম গুলোতে নারীকে প্রতিনিয়ত সেক্স সিম্বল হিসাবেউপস্থাপন করার ফলে নারীর প্রতি সমাজের সর্বস্তরে তৈরী হয় অসম্মানজনক একবিকৃত দৃষ্টিভঙ্গী। আর বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গীর ফলাফল হিসাবে শিক্ষিত নারীরাও কর্মক্ষেত্রে তাদের পুরুষ সহকর্মীর কাছে প্রতিনিয়ত হয় যৌন হয়রানির শিকার। মিডিয়া ও সরকারী তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৪০-৬০% নারী কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হয়। আর ইউরোপিয়ান উইমেনস লবির প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাজ্যেও ৪০-৫০% নারী তার পুরুষ সহকর্মীর কাছ থেকে বিভিনড়ব ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হয়।

৪. পারিবারিক সহিংসতা: যে সমাজে নেই কারো কোন জবাবদিহিতা, নেই পরস্পরের প্রতি কোন শ্রদ্ধাবোধ আর সেই সাথে রয়েছে সীমাহীন স্বেচ্ছাচারীতার সুযোগ, সে সমাজে ভয়াবহ পারিবারিক সহিংসতা হয় নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। বস্তুতঃ জীবন সম্পর্কে এ ধরণের ভয়ঙ্কর ভ্রান্তিমূলক ধারণা থেকেই বিয়ের পূর্বে বা পরে সবসময়ই পশ্চিমের নারীরা হয় তার পুরুষসঙ্গীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১৮ সেকেন্ডে একজন নারী স্বামী কর্তৃক প্রহৃত হয়। ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এর ১৯৯৮ সালে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৯ লক্ষ ৬০ হাজার পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আর, প্রায় ৪০ লক্ষ নারী তার স্বামী অথবা বয়ফ্রেন্ডের দ্বারা শারীরিকভাবে হয় নির্যাতিত।

৫. কুমারী মায়েদের যন্ত্রনা: নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার প্রধান অসহায় শিকার হয় পশ্চিমের কুমারী অল্পবয়সী নারীরা। আনন্দের পর্ব শেষে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ সঙ্গী আর্থিক বা সামাজিক কোন দায়দায়িত্ব স্বীকার না করায় একাকী নিতে হয় তাকে অনাহুত সন্তানের দায়িত্ব। আর, অপরিণত বয়সে পর্বতসম দায়িত্ব নিয়ে গিয়েতাকে হতে হয় ভয়ঙ্কর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। যুক্তরাষ্ট্রের গুটম্যাচার ইনস্টিটিউট এর প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ১৫-১৭ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার অবিবাহিত নারী গর্ভবতী হয়। আর, সেদেশের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে বছরে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কিশোরী মেয়েগর্ভধারণকরে।

৬. কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক নির্যাতন: পশ্চিমা সভ্যতা পৃথিবীব্যাপী নারী-পুরুষের সমঅধিকারের বার্তা প্রচার করলেও তাদের নিজেদের সমাজেই নারীরা প্রচন্ড বৈষ্যমের শিকার। শুধু মাত্র নারী হবার জন্য একই কাজের জন্য তাকে পুরুষের চাইতে দেয়া হয় অনেক কম অর্থ। এখন থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে প্রেসিডেন্ট কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রে ইকুয়েল পে অ্যাক্ট আইন পাশ করলেও, এখনও ১৫ বছর ও তার উর্ধ্বে কর্মরত নারীরা একই কাজের জন্য পুরুষদের চাইতে প্রতি ডলারে ২৩ সেন্ট কম উপার্জন করে। ইউ.এস গর্ভমেন্ট অ্যাকাউন্টেবিলিটি অফিস এর জরিপ থেকে

দেখা যায়, সে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা বিভাগের মোট কর্মচারীর প্রায় ৭০ ভাগ নারী হলেও নারী ব্যবস্থাপকরা পুরুষের চাইতে অনেক কম অর্থ পেয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৫-২০০০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নারী-পুরুষের উপার্জনের এই বৈষম্য ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। বস্তুতঃ পশ্চিমের দেশগুলোতে নারীরা শুধুমাত্র দুটি পেশায় পুরুষদের চাইতে বেশী উপার্জন করে, তার একটি হচ্ছে মডেলিং আর অন্যটি হচ্ছে পতিতাবৃত্তি।

৭. পর্ণোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রির নির্যাতন: পশ্চিমা বিশ্বে নারীরা সবচাইতে জঘন্য ভাবে নির্যাতিত হয় পর্ণোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে। যেখানে, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির মতোই নগড়ব নারীদেহকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে পৃথিবী ব্যাপী বিস্তৃত মুনাফালোভী এক চক্র। আর, এর জঘন্য শিকার হচ্ছে লক্ষ কোটি অসহায় নারী ও শিশু। শুধু নারী দেহকে উপজীব্য করে এই পৃথিবীতে ৫৭ বিলিয়ন ইউ.এস ডলারের পর্ণোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর্ণোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রির বার্ষিক রাজস্ব সে দেশেরবহুল প্রচারিত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এ.বি.সি, সি.বি.এস এবং এন.বি.সি-র প্রদত্ত মোট রাজস্বের চাইতেও বেশী (৬.২ বিলিয়ন ডলার)। প্রকৃতপক্ষে, পুঁজিবাদী মন্ত্রে দীক্ষিত মানুষের সীমাহীন লোভ আর চড়ান্ত স্বেচ্ছাচারীতাই বিশ্বব্যাপী পর্ণোগ্রাফি ইন্ডা

বর্তমান মুসলিম সমাজে নারী নির্যাতন: ইসলামের আবির্ভাবের পর নারী যে মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছিল তা-ও ধর্ম সম্পর্কে অগভীর জ্ঞানের অধিকারী এক শ্রেণীর ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের অস্পষ্ট ও ভ্রান্ত ধারণার ফলে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে; নারীরা এ সমাজে পুনরায় নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। যেমন কারো কারো মতে, এ ফেতনার যুগে নারীদের গৃহবন্দি করে রাখা ধর্মীয় কাজ বলে পরিগণিত হয়। স্ত্রী শুধু স্বামীর খেদমত করে যাবে আর স্বামীর নিজ স্ত্রীর প্রতি কোন কর্তব্য নেই। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়, হিজাব বা পর্দা প্রথা এ জন্য যে নারীরা প্রয়োজনে এ ব্যবস্থা অবলম্বনের মাধ্যমে গৃহের বাইরে এসে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। ইসলামে মানবিক অধিকার যেমনঃ শিক্ষা, চিকিৎসা, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অধিকার থাকলেও নারীরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী মানুষের জন্য।

সে যা-ই হোক না কেন, একদিকে ধর্মের নামে ধর্মান্ধতা, অপরদিকে নারী স্বাধীনতার নামে কামুকতা- এ দুই অবস্থা যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে নারী। এ উভয় অবস্থায়ই নারী সমাজকে পিষ্ট করে লাভবান হচ্ছে পুঁজিবাদী ও উপনিবেশবাদীরা। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের নারী সমাজকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে; জানতে হবে মানুষ হিসেবে তাদের মর্যাদা কোথায়, কিসে তাদের সম্মান- অর্থে না মূল্যবোধে?



নারী নির্যাতনের আরও কিছু কারণ-

আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। নির্যাতিত হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যৌতুক। যদিও আমরা ঘটা করে প্রচার করছি যৌতুক একটা সামাজিক ব্যাধী। যৌতুক নেওয়া বা দেওয়া দুটোই অপরাধ। কিন্তু আমাদের প্রচার প্রচারণা ব্যার্থ হচ্ছে। অভিভাবকেরা মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দিতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। মেয়ের সুখের জন্য যৌতুক দিতে বাধ্য হচ্ছে বাবা। যৌতুকের টাকা হাতে না পেলে কিছু পশু স্বভাবের পুরুষ স্ত্রীকে বেদম ভাবে প্রহার করছে। কখনও বা হিতাহিত জ্ঞান শুণ্য হয়ে স্ত্রীর মুখে এসিড মারতেও দ্বিধা করছেনা। দ্বিতীয়ত, কারো ভালোবাসার ডাকে সাড়া না দিলেও নারীকে হতে হচ্ছে লাঞ্চিত। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে আমাদের তরুনেরা প্রতিনিয়ত ড্রাগে আসক্ত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে তাদের ভেতরের মনুষত্ব মরে গিয়ে জন্ম নিচ্ছে পশু সত্ত্বা এবং নারীকে মা, বোন কিংবা মেয়ে ভাবতে ভুলে যাচ্ছে। অন্ধকার অসভ্যতার যুগের মত নারীকে ভোগ্যপন্য মনে করে যেখানে যেভাবে পাচ্ছে অপমান করে যাচ্ছে। স্কুল কলেজগামী মেয়েরা ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে। পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে এমনটি হচ্ছে। আত্ম অসন্তুষ্টি,হতাশা, কখনোবা ক্ষোভের কারণে নারীকে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বাংলাদেশ:

বাংলাদেশে নারীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয় এ লক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে নির্যাতিত নারীদের আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদানের লক্ষে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল রয়েছে এর মাধ্যেম জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধের যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ ও সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়। জেলা এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাগণও আইনগত সহায়তা প্রদান করেন। এই কনটেন্টিতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির দায় দায়িত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

মহিলা সহায়তা কেন্দ্র: নির্যাতিত, দুস্থ, অসহায় ও আশ্রয়হীন মহিলাদের কেন্দ্রে আশ্রয় সুবিধা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে এই আশ্রয় কেন্দ্রের সুবিধা রয়েছে। এই কনটেন্টিতে আশ্রয় কেন্দ্রে নির্যাতীত নারীদের কেন্দ্র হতে যে সকল সুবিধা প্রদান করা হয় তা তুলে ধরা হয়েছে।

হেফাজতী মহিলা, শিশু ও কিশোরীদের বিচারকালীন সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা: আমাদের সামাজিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন কারণে মহিলা, শিশু ও কিশোরীদের বিচারকালীন সময়ে তাদের নিরাপদ হেফাজতে যেতে হয় । আদালতে মামলা চলাকালীন সময়ে জেলখানার বাইরে নিরাপদ আবাসন সুবিধাসহ তাৎক্ষনিক আইনগত সুবিধা প্রদান করা হয় । এই কনটেন্টিতে মহিলা, শিশু ও কিশোরীদের বিচারকালীন সময়ে যে সকল সকল সুবিধা প্রদান করা হয় তা তুলে ধরা হয়েছে

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার

নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেল অথবা আশংকা দেখা দিলে নিজস্ব জেলা/উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন অথবা নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সেবা এবং সহায়তা প্রদান নিশ্চিতকরণের জন্য “নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার” এর সাথে যোগাযোগ করুণ হট লাইন ১০৯২১ নম্বরে । এই সেন্টারটি ২৪ খোলা থাকে ।



নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পুরুষের ভূমিকা

সভ্যতার এ বিশ্বে কেবলই এগিয়ে যাওয়ার সময়। বিজ্ঞানের উন্নতিতে উন্নত হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। নিমিষেই পাড়ি জমাচ্ছে সুদুরে। ইচ্ছে হলেই সকালের নাস্তাটা সেরে আসছে বুর্জ আল আরাবের মত সাততারা হোটেলে। বিজ্ঞান মানুষকে এনে দিয়েছে সীমাহীন আনন্দ, জীবনকে করে তুলেছে সহজ ও আরামপ্রিয়। শুধু বদলাতে পারেনি আমাদের মানসিকতা ও ভিতরের পশুত্বটা। তাইতো আমাদেরই মা, বোন কিংবা আমাদেরই মেয়ে পথে-ঘাটে,অফিস-আদালতে এমনকি নিজের ঘরের চার দেয়ালের মাঝে হচ্ছে নির্যাতিত, লাঞ্চিত । ফলশ্রুতিতে কষ্ট,অপমান আর জীবনের এই ভয়ংকর পরিস্থিতি সামলে উঠতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে আমাদেরই আপন জন। যাদের মুখের হাসি একদিন আমাদের হৃদয়ে সু-বাতাস বয়ে আনতো।

নারী শুধুই নারী নয়। এই নারী সময়ের পরিবর্তনে আমাদের মা, বোন , মেয়ে এবং কখনো জীবন সঙ্গীনী। এই সম্পর্কগুলোর কোনটি কোনটা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এই নারীই যখন হয় লাঞ্চিত,অপমানিত তখন সেই অপমানের কিছুটা অংশ আমাদের অস্তিত্বেও এসে লাগে। আর যদি না লাগে তাহলে ধরে নিতে হবে আমরা আর রক্ত মাংসের শরীরে মানুষ নেই। নারী নির্যাতন বন্ধে আইন ছিল,আইন আছে এবং আরও নিত্য নতুন আইন প্রনয়ন হবে। কিন্তু তাতেকি নারী নির্যাতন বন্ধ হবে। এটা স্পষ্ট করে বলা যায় এতেই নারী নির্যাতন বন্ধ হবেনা। শুধু সরকারী উদ্যোগে এবং নারীদের নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিই নারী নির্যাতন রোধে যথেষ্ট নয়। এ জন্য মূলত এগিয়ে আসতে হবে পুরুষকে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধের মিছিলে সবার অগ্রে থাকা চাই পুরুষের । নারী নির্যাতিত হচ্ছে পুরুষের মাধ্যমে আর তাই নারী নির্যাতন রোধে পুরুষই পারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে। বিশ্বে নারী নির্যাতনের হার বেড়েই চলেছে। যার পরিমান পার্শ্ববর্তী ভারত এবং আমাদের বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি । ১৫ কোটি মানুষের এই দেশে নারী নির্যাতনকারী সংখ্যা ১ লাখও নয়। হিসাব করলে দেখা যায় এদেশে নারী সংখ্যা ৭ কোটি। বাকি ৮ কোটি পুরুষের মধ্যে হয়তো ১ লাখ পুরুষ নির্যাতনকারী। বাকি পুরুষেরা মিলে কি পারিনা এই ১ লাখ নির্যাতনকারীকে প্রতিরোধ করতে। যে কেউ জানে যে এই সামান্য সংখ্যক নির্যাতনকারীকে প্রতিরোধ করতে এই বৃহদসংখ্যক পুরুষের জন্য মামুলি ব্যাপার। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পুরুষ যে সব ভূমিকা রাখতে হবে -

• পুরুষেরা দায়িত্ব নিয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করবে।

• যৌতুক বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে হবে এবং যৌতুক দেওয়া নেওয়া দুটোই অপরাধ জনগণকে তা বুঝাতে হবে। প্রতিজ্ঞা করতে হবে যৌতুক না নেয়ার এবং না দেয়ার।

• সমঝোতা এবং আলোচনাকে প্রাধান্য দিতে হবে। পরিবারের কোন বিষয়ে একাই সিদ্ধান্তের অধীকারী এই মনোভাব পরিত্যাগ করে নারী পুরুষ মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন বিষয়ে মতের মিল না হলেই নারীকে প্রহার করার মনোভাব ত্যাগ করতে হবে।

• সমাজে ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারে কাজ করতে হবে এবং জানতে হবে নারীদের মর্যাদা এবং অধিকার কতটুকু। এতে নির্যাতনের হার কমবে।

• নির্যাতন কারীকে চিহ্নিত করে আইনের হাতে তুলে দিতে বদ্ধপরিকর হতে হবে,হোকনা সে আপনজন তাকে নির্যাতনকারী হিসেবেই চিনতে হবে। মনে রাখতে হবে নারী নির্যাতনকারী কখনো আপন জন হতে পারেনা।

• নির্যাতন কারীকে প্রথমে বুঝাতে হবে যে, সে যে কাজটা করছে তা ঠিক নয়। এতে যদি সে না বদলায় তবে আইনানুগ শাস্তির বিধান করতে হবে।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন ও শাস্তির বিধান: নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রয়েছে নির্ধারিত আইন। কিন্তু আইনের ফাক গলে সহজেই নির্যাতনকারীরা বেরিয়ে আসে । আইন থাকলেও কখনোবা সেই আইনের সঠিক প্রয়োগ হয়না। কখনোবা আইনের কঠোরতার অভাবেও নারী নির্যাতনকারীরা নির্যাতন করতে ভয় পায়না। তাই নারী নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং আইনের কঠোরোতা থাকতে হবে। যেন নির্যাতনকারী এই কঠোরতা দেখে ভয়ে নির্যাতনের চিন্তা মাথায়ও আনতে সাহস না।

ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর সম্মান : ইসলাম নারীকে সবোর্চ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করেছে। ইসলামী উত্তরাধীকার আইনে নারী পিতা, মাতা, ভাই, বোন, স্বামী, পুত্রসহ অনেকের সম্পত্তিতে অংশীদার হয়ে থাকে। নারী চাকরী, ব্যবসা-বানিজ্য, শিক্ষকতা, রাজনীতি, সমাজনীতিসহ সকল কাজ করতে পারবে। তবে শর্ত হলো তাকে আল্লাহর বিধানানুযায়ী পর্দা করে চলতে হবে। পিতা-মাতা, শ্বশুর-শাশুড়ী ও স্বামীর আনুগত্য করে চলতে হবে। ইসলাম অধিকারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে কোন পার্থক্য করে না। যেমনটি পবিত্র কোরআনের সুরা আত-তাওবার ৭১ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘মুমিন নর-নারী একে অপরের বন্ধু। তারা সৎ কাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকেই আল্লাহতায়ালা অনুগ্রহ করবেন, আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। অনুরূপ নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে যেমনি আছে তাদের ওপর পুরুষের (সূরা বাকারা, আয়াত-২২৮)। যখন পৃথিবীর কোন দেশেই নারীদের কোন সম্পত্তির অধিকার আছে বলে স্বীকার করা হতো না তখন শুধু ইসলামই দিয়েছে নারীদের সেই স্বাধীনতা। যেমন পবিত্র কোরআনে বলা হয়, পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ (সূরা নিসা, আয়াত-৩২)।

মহানবী (সাঃ) হযরত ফাতেমা যাহ্রা তাঁর নিজের কন্যা হওয়া সত্বেও তাঁর সম্মানে উঠে দাঁড়াতেন। ‘পুরুষরা নারীর আঁচল থেকে মিরাজে (উচ্চতর স্তরে) গমন করে’। প্রকৃতপক্ষে মানুষ হিসেবে নারী-পুরুষে কোন পার্থক্য নেই। কারণ মানুষের যে অন্তর্নিহিত সত্তা মানুষকে মানুষ বলে গণ্য করে তা আত্মা সংশ্লিষ্ট। আর আত্মা পুরুষও নয়, নারীও নয়। নারী-পুরুষের পার্থক্য শুধু তাদের দেহ সংশ্লিষ্ট বা শারীরবৃত্তীয় বিষয় যা মানুষের মর্যাদার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব রাখে না। যেসব মূল্যবোধ মানুষের মর্যাদাকে সমুন্নত করে সেগুলোর উদাহরণ হিসেবে আমরা সততা, নিষ্কলুষতা, জ্ঞান, শিক্ষা, সদাচরণ ইত্যাদির কথা উল্লেখ করতে পারি যার কোনটিরই ধারক বা উৎস দেহ নয়, বরং আত্মা। তাই পবিত্র কোরআনে বলা হয়, ‘তোমাদের মধ্যে যে যত বেশি খোদাভীরু সে তত বেশি মর্যাদার অধিকারী’। অর্থাৎ মর্যাদার মাপকাঠি হলো খোদাভীরুতা যা দেহ সংশ্লিষ্ট নয়।

তাহলে নারীকে পর্দা করতে বলা হয় আর পুরুষকে বলা হয় না- এটা কি তাদের প্রতি অন্যায় নয়? মূলত এ কথা অনস্বীকার্য যে, দৈহিকভাবে নারী-পুরুষে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে যদিও রূহগত দিক থেকে এ দুয়ে কোনো পার্থক্য নেই। নারী তার দৈহিক গঠনের কারণে পুরুষকে আকর্ষণ করতে সক্ষম, যা কখনো কখনো তার বিপদের কারণ হয়। নারীকে এসব বিপদ থেকে রক্ষা করা ও তার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য ইসলাম তার জন্য পর্দা প্রথার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এর ফলে তার কোন প্রকার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়নি, বরং সমাজে তার কর্মতৎপরতার পথ উন্মোচন করছে । প্রশ্ন হতে পারে, সৃষ্টিকর্তা নারীকে নারী করার কারণেই তাদের ওপর এ বাধ্যবাধকতা আরোপিত হয়েছে। মূলত বাধ্যবাধকতা কোন একটি ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। আর সেখানে বাধ্যবাধকতার ধরনে পার্থক্য থাকলেও নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। যেমন কোন রাষ্ট্রের সঠিক পরিচালনার জন্য বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকে। অপরদিকে পার্থক্য বা বৈচিত্র্য মানবিক মর্যাদার ক্ষেত্রে কোন বিরোধ সৃষ্টি করে না। বরং পৃথিবীর যে কোন ব্যবস্থায়ই পার্থক্য ও বৈচিত্র্য বিদ্যমান। আর এটাই কোন ব্যবস্থার পূর্ণতা লাভের শর্ত। যেমন একটি শব্দ ‘কলম’ লেখার জন্য ক,ল,ম যদি একই হতো তবে এ শব্দটি অস্তিত্ব লাভ করতে পারত না। আমরা এ ক্ষেত্রে ক,ল ও ম -এর অক্ষরগত মর্যাদা ক ক হওয়া, ল ল হওয়া এবং ম ম হওয়ার কারণে হানি হয়েছে বলে মনে করি না যদিও শব্দ গঠনে তাদের ভূমিকা বিভিন্ন। সেরূপ মানব সমাজ ব্যবস্থার অপরিহার্য উপাদান হলো নারী ও পুরুষ। নারী নারী হওয়ার কারণে, পুরুষ পুরুষ হওয়ার কারণে তাদের মর্যাদায় পার্থক্য হয় না যদিও সমাজে অবদান রাখার ক্ষেত্রে তাদের কর্মপদ্ধতি ভিন্ন হয়। বরং তাদের মর্যাদা নির্ভর করে সমাজে তাদের ভূমিকার ওপর।

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ইউরোপের দিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখতে পাই ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বৃটেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ও ইটালির মতো ইউরোপীয় দেশের মেয়েদের কোন সম্পত্তির অধিকার স্বীকার করা হতো না। আলবার ম্যালে তার ইতিহাস গ্রন্থের ষষ্ট খন্ডের ৩২৮ নং পৃষ্টায় লিখেন, ‘কারখানার মালিকরা নারী ও শিশু শ্রমিকদের খুবই কম পারিশ্রমিকে কাজে নিয়োগ করত। আর যেহেতু তাদের শ্রম-ঘন্টার পরিমাণ ছিল বেশি, সেহেতু সাধারণত তারা বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতো এবং কম বয়সেই মারা যেত। আর এ অবস্থা থেকে ইউরোপের নারীদের মুক্তি দেয়ার জন্য যে অবস্থার উদ্ভব হয়েছে তার উদাহরণ হলো চেপে যাওয়া ¯িপ্রংয়ের মতো যা হঠাৎ মুক্ত হওয়ায় সমাজ নামক আয়নায় যত্রতত্র আঘাত হেনেছে। আর তা অসমভাবে খন্ড-বিখন্ড হয়েছে। ইউরোপ নারী মুক্তির নামে, নারী স্স্বাবাধীনতা বলতে সেক্সকে প্রাধান্য দিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে তার প্রতিফলন হলো আধুনিক যুগে, সভ্যতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নারী নির্যাতনের নতুন পদ্ধতির উদ্ভব। আর এর ফল হলো এইডস, ধর্ষণ ও পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়া বা পরিবার একক ধ্বংস হওয়া। একটি পরিসংখ্যান অনুসারে আধুনিক পশ্চিমা বিশ্বে যৌন স্বধীনতার নামে নারী সমাজ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তা আমরা অনুধাবন করতে পারিঃ আমেরিকায় প্রতিবছর দশ লাখ অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণী অবৈধভাবে গর্ভবতী হচ্ছে, যার অর্থ প্রতিদিন সেখানে তিন হাজার তরুণী গর্ভবতী হচ্ছে। প্রতি বছর পাঁচ লাখ অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণী অবৈধ গর্ভধারণ করে সন্তান প্রসবের দায়িত্বও নেয়, অবশিষ্টরা গর্ভপাত কর দায়মুক্ত হয়। যৌন শিক্ষার ফলে কমপক্ষে পাঁচ লাখ তরুণী তাদের সহপাঠীদের যৌন আক্রমণের শিকার হচ্ছে। হেন এক জঘন্য পরিস্থিতিতে আধুনিকারা অ্যালকোহল, আফিম, গাঁজা, মদ ও হেরোইনে আসক্ত হলে মূল্যবান জীবনকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে সেখানকার স্কুলগুলো তাদের প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব হিসেবে ‘মাদকমুক্ত পরিবেশের’ কথা সানন্দে প্রচার করছে। বর্তমানে নারী স্বাধীনতার নামে পাশ্চাত্য নারীদের ঘরছাড়া করেছে। নারীদেরকে তারা হোটেল রেস্তোরার পরিচালিকা, স্টোরের সেলস গার্ল, অফিস-আদালতের টাইপিস্ট, রিসেপশনিস্ট এবং রাস্তার মহিলা পুলিশ বানিয়েছে। পাশ্চাত্যে বিবাহ বিচ্ছেদ এত বেশি প্রকট যে, প্রতি বছর সেখানে লাখ লাখ স্বামী-স্ত্রী পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং অনেক জায়গায় প্রতিটি বিবাহেই দু’বার করে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। এভাবে পারিবারিক বন্ধন ভেঙ্গে দিয়ে পাশ্চাত্যবাদীরা নারীদেরকে নিজেদের অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলে। খদ্দেরদের আকর্ষণ করার জন্য নারীদের বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করার প্রয়াস পায়। তাদেরকে পুঁজিবাদীদের খেলার পুতুল বানিয়ে তোলে। নিজেদের অবৈধ যৌন ক্ষুধা মেটাবার জন্য নারীদেরকে কলগার্ল, সোসাইটি গার্ল প্রভৃতিতে রূপান্তরিত করে। বিভিন্ন অশ্লীল পত্রপত্রিকায় নারীদের নগ্ন ছবি ছেপে, নারী বিষয়ক অবৈধ গল্প-উপন্যাস প্রকাশ করে এবং সিনেমা-ভিডিও ইত্যাদি মারফত অশ্লীল ছবি বানিয়ে পৃথিবীর চারদিকে ছড়িয়ে দেয়। এভাবে গোটা সমাজ ব্যবস্থায় অশ্লীলতার নেশা প্রকট হয়ে মানুষের মানসিক বিকৃতি ঘটাচ্ছে।রে।

উপসংহার- বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত বিষয় নারী ক্ষমতায়ন। অথচ দেখা যাচ্ছে তার বিপরীত । প্রতিনিয়ত সর্বত্রই নারীরা হচ্ছে নির্যাতিত,অপদস্থ এবং লাঞ্চিত। সভ্য সমাজে এমন অপরাধ চলতে দেয়া যায়না। নারীদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকারটুকু দিয়ে সামাজিক ভাবে আত্মসম্মান নিয়ে বেচে থাকার ব্যাবস্থা পুরুষকেই নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি নারী পুরুষ সকলে মিলে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের আন্দোলনকে বেগবান করে বুঝিয়ে দিতে হবে এ দেশে নারী নির্যাতনকারীর কোন স্থান নেই। কন্ঠ মিলিয়ে গাইতে হবে নজরুলের সেই কবিতার চরণ-

“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর

অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।”





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.