![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a social worker.
বি.এইচ.মাহিনী :
তখন রাত ঠিক ৯:৫১ মিনিট চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিরব নিস্তব্ধতার মধ্য একটি মাত্র বৈদ্যুতিক আলো পাশে চায়ের দোকান দাড়িয়ে আছে মিনা বেগম (৪৫)। মুখবাধা বোরকা পরা মহিলার হাতে একটি হাড়ি। হাড়ির ভিতর কিছু চাউল, আলু, ঝাল, লবনসহ রান্না করার মশলা এমনই অবস্থায় দৈনিক নওয়াপাড়ার এ প্রতিবেদকের সাথে দেখা হলো নওয়াপাড়া বাজার ঘাটের ডিম বিক্রয় করে সংসার চালানো মিনা বেগমের সাথে। তিনি নিরব নিস্তব্ধতার মধ্যে চাতক পাখির মত তাকিয়ে আছে গাড়ীর দিকে। কখন গাড়ী আসবে আর বাড়ী গিয়ে ছেলে সন্তানদের রান্না করে খাওয়াবে। কথা হলো মিনা বেগমের সাথে। তিনি জানালেন হৃদয় বিদারক মর্মস্পশী স্মৃতি গাথা ভয়ংকর অতীতের। ২৫ বছরের আগে মিনা বেগমের বিবাহ হয় নড়াইল সদরের ১২নং বিছালী ইউনিয়নের হত দরিদ্র পরিবারের ছেলে মান্নান মোল্যার সাথে। একে একে জন্ম হয় ৪টি সন্তানের। সন্তানদের লেখা-পড়া খরচ সংসারের খরচ মিটানো একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে মান্নান মোল্যার। অবশেষে সংসারের হাল ধরানোর জন্য প্রয়োজন ছিল ছোটখাটো কাজের। মিনা বেগম দিশেহারা হয়ে কাজের কথা জানাতে লাগলেন। পারিবারিক আত্মীয়দের কাছে কেহ কোন সাড়া শব্দ দিল না। পথহারা দিশেহারা মিনা বেগম অসহায় হয়ে নিজ ভাসুরদের কাছে গেলে তার সন্তানদের নিয়ে বিদ্রুপ করলেন। সেখান থেকে প্রতিজ্ঞা শুরু মিনা বেগমের। শুরু হয় সন্তানের জন্য সংগ্রাম। মিনা বেগম আজ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ডিম বিক্রি করে স্বামীর সাথে সংসারের হাল ধরেন এবং চারটি সন্তানের লেখা পড়া করিয়ে যাচ্ছেন। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমী এই ভদ্র মহিলার চার সন্তান। প্রথম সন্তান মইনুল ইসলাম মিন্টু (২৩) বিএল কলেজের ইতিহাস বিভাগে এম.এ অধ্যায়নরত। অর্থের অভাবে মেধাবী মেঝ ছেলে মেহেদী হাসানকে কয়েক বছর ধরে লেখা পড়া বন্ধ করে রেখেছিল কিন্তু কিছুদিন আগে লেখা পড়া শুরু করেছেন। তৃতীয় সন্তান মুসলিমা খতুন (১৯) নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্রী। ৪র্থ ছেলে রাহাদ বিছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র। অদ্ভুত মেধা, আপসহীন সাহস আর একান্ত ভাবে পিতা-মাতার অসীম ভালোবাসা নিয়ে নড়াইলের এ চার সন্তান আজ প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এমনি একজন মায়ের বৃষ্টিতে ভেজা গরমে পোড়া শরীর থেকে রক্ত ঝরা কষ্ঠে অর্জিত ডিম বিক্রয় করা টাকা বৃথা যাবে কি করে? মিনা বেগম সারাদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাড়ী থেকে ডিম কিনে ভাটপাড়া ও নওয়াপাড়ায় ডিম বিক্রি করেন। এতে যে লাভ হয় তা নিজের সংসার আর কিছু ছেলে মেয়েদের পড়াশোনায় ব্যায় করছেন ১৫ টি বছর। মিনা বেগম জানান, আর স্বপ্ন দেখছি কবে উঠবে সেই সূর্য সে আলো দেখে একটু হাসতে পারবো। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চারটি ভাই এর একটি মাত্র বোন মিনা বেগম। ভাইদের কোন কথা ভদ্রমহিলা বলতে নারাজ। তবুও জানালেন বড়ভাই মিজানুর রহমান পেশায় এম বি বি এস ডাক্তার। নাম যশের অভাব নেই তার। মেঝ ভাই আমিনুর রহমান একটি কলেজের প্রভাষক। সেজো ভাই হাবিবুর রহমান সরকারী কর্মকর্তা। ছোট ভাইয়ের কথা জানতে চাইলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে জানালেন, নাজমুল রহমান বুয়েটের প্রভাষক। তখনও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে মিনা বেগমের আধা ভাঙ্গা কন্ঠে জানালেন, ডিম বেচে আমার সব সন্তানদের এম এ পাশ করাবো। ছেলেদের চাচাদের কথা জানতে চাইলে কিছুতেই বিস্তারিত জানালেন না। শুধু বললেন তারাও সকলেই প্রতিষ্ঠিত। বলে লাভ কী! আমাদের খবর কেউ রাখেনা।
©somewhere in net ltd.