![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a social worker.
ক্যারিয়ার শব্দটির আভিধানিক অর্থ জীবনের পথে অগ্রগতি/অগ্রসারণ, জীবনায়ন, জীবনপ্রক্রম, বিকাশক্রম, বিকাশধারা ইত্যাদি। ড. আহসান হাবিব ইমরোজ ক্যারিয়ারের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ক্যারিয়ার অর্থ দ্রুতগতি, বেগ, জীবনের ধারা বা অগ্রগতি, জীবিকা অর্জনের উপায়, বৃত্তি ইত্যাদি। মূলত, জীবনের যে লক্ষ্যকে স্থির করে লক্ষ্যপানে অবিরাম ছুটে চলি তাই ক্যারিয়ার। ক্যারিয়ার শব্দটি শুনতে কতইনা ভাল লাগে! মাঝে মাঝে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার বা দেশের সর্বোচ্চ রাষ্টীয় কর্তা সেজে স্বপ্নের মধ্যে হাবুডুবু খাওয়া স্বপ্নদ্রষ্টার সংখ্যা নিতান্ত্য কম নয়। এবার আমরা জেনে নেব যুগে যুগে আমাদের এই পৃথিবীতে যারা তাদের ক্যারিয়ারে সফল হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে কতক সফল ক্যারিয়রধারীদের সম্পর্কে। বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ স. মাত্র ২৩ বছরের নবুয়্যাতি জীবনে অজ্ঞতার আধারে ঢাকা পৃথিবীটাকে আলোর মুখ দেখিয়ে বিশ্বসেরা মহামানবের স্বীকৃতি লাভ করেছেন। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ড. মরিস বুকাইলি’র মত একজন অমুসলিম মনীষীর লেখা ‘দি হানড্রেড’ নামক গ্রন্থে।
পেলে, ম্যারাডোনা, শচীন-সাকিবকে কে না চেনে? তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের ক্যারিয়ারে সফল। যার ফলে পৃথিবীতে আজ তাঁরা বরনীয় ও ভবিষ্যতে চির স্বরনীয় হয়ে থাকবেন। ঠিক তেমনি ভাবে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, নিউটন, স্টিফেন হকিংস, কম্পিউটারের জনক চালর্চ ব্যবেজ, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের ক্যারিয়াকে বিকশিত করে মর্যাদার আসনে সমাসীন। এছাড়াও দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো, ইবনে সিনা, ইবনে খালদুন, মহাকবি শেখ সাদী ও আল্লামা ইকবাল তাঁদের দার্শনিক তত্ত্বের বিকাশ ঘটিয়ে পৃথিবীতে চির অম্লান। নোবেল বিজয়ী কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল ও কথাশিল্পী, নাট্য ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ আমাদের সাহিত্যকর্মে রেখে গেছেন অসীম অবদান। আর আমাদের এ দেশ ও জাতি যাদের অবদানে সেই শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রত্যেকেই তাদের স্ব স্ব ক্যারিয়ারে সফলাতার চিহ্ন রেখে গেছেন। তাই জাতি আজও তাদের মনে রেখেছে এবং মনে রাখবে চিরদিন।
উপরোক্ত সফল ক্যারিয়ারের অধিকারীরা সকলেই তাদের ক্যারিয়ার গড়েছেন মেধা, শ্রম, নিষ্ঠা, সততা, আন্তরিকতা ও সাহসীকতার সমন্বয়ে। আমরা অনেকেই আমাদের ক্যারিয়ারে সফল হতে চাই। অনেকে সে চেষ্টায় সফল হয় তবে অধিকাংশই সফল হতে পারে না। এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিশ্বজয়ী বীর জুলিয়াস সিজার বলেছেন “অধিকাংশ মানুষ বড় হতে পারে না-কারণ সে সাহস করে আকাশের মত সুউচ্চ টার্গেট করে সেদিকে তাকাতে পারে না।” সুতরাং সফল ক্যারিয়ার গড়তে আমাদের প্রথম কাজ হলো টার্গেট ঠিক করা। আর দ্বিতীয় কাজ হলো মেধাশ্রম দেয়া। অর্থাৎ মেধাকে কাজে লাগানো। সহজ কথায় পরিশ্রমী হওয়া। কেননা আমরা জানি যে, পরিশ্রম হলো সৌভাগ্যের প্রসূতি। জাতি হিসেবে আমরা নিতান্তই অলস। যার ফলে আমরা আমাদের ক্যারিয়ারে সফল নই। অথচ আমরা যদি আজকের দুনিয়ার মোড়ল আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স বা রাশিয়ার কথা ভাবি তবে দেখব তারা কতই না পরিশ্রমী। জাপানিরা সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে আজ তারা বিশ্বসেরা। মালয়েশিয়া আমাদের খুব বেশি আগে স্বাধীনতা অর্জন করেনি। অথচ কত দ্রুত তারা বিশ্ব সভায় আসন করে নিল। আমরা কী কখনো তা একবার ভেবে দেখেছি?
মনে রাখতে হবে সফল ক্যারিয়ার গঠনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সময়ের সদ্ব্যবহার। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে- টাইম এন্ড টায়েড ওয়েট ফর নান। অর্থৎ- সময় ও ¯্রােত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। আমাদের মহান প্রভু খেলাফত বা প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব দিয়ে এ পৃথিবীতে আমাদের পাঠিয়েছেন। তাই নিজ ও জাতির ক্যারিয়ার উন্নত করার জন্য প্রতিটি মূহুর্তকেই গুরুত্ব দেয়া সময়ের অনিবার্য দাবি। এ প্রসঙ্গে ডিকেন্স বলেছিলেন-“বড় হতে হলে সর্বপ্রথম সময়ের মূল্য দিতে হবে।” সুতরাং আমাদের ক্যারিয়ার এর মূল লক্ষ্য হতে হবে গোটা বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মানবীয় গুনাবলী ও নৈতিকতার সমন্বয়ে নিজেকে গড়ে তোলা। অর্থাৎ ‘এ প্লাস’ মানুষ হওয়া। আর সেই মূল লক্ষ্য অর্জনের উপলক্ষ্য হবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বা ব্যারিস্টার হওয়া। এক কথায় ‘এ প্লাস’ ডিগ্রি অর্জন করার মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যই হবে ‘এ প্লাস’ মানুষ হওয়া। আর এটাই ক্যারিয়ার এর ভিত্তি হওয়া উচিত। তবে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য এই ‘সাব এইম’এর কোন বিকল্পই নেই। আর এ কারণেই বলা হয়, ‘তুমি যদি পৃথিবীটাকে পরিবর্তন করতে চাও, প্রথমে নিজেকে পরিবর্তন করো। সফল ক্যারিয়ার গঠনে আমাদের মূল অভাব হলো আমরা ক্যারিয়ার অর্জনে একটি সুস্পষ্ট ও সুউচ্চ টার্গেট নিয়ে দৃঢ়তার সাথে সামনে এগোতে পারি না। এরকম একটা টার্গেট নিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন বলেই কাঠুরিয়ার ছেলে হয়েও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন আব্রাহাম লিংকন। সুতরাং ক্যারিয়ার অর্জন বা মৌলিক সাফল্যের জন্য একটি সুস্পষ্ট ও সুউচ্চ টার্গেট নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি। এ কারনেই বিশ্বজয়ী বীর জুলিয়াস সিজার বলেছেন “অধিকাংশ মানুষ বড় হতে পারে না-কারণ সে সাহস করে আকাশের মত সুউচ্চ টার্গেট করে সেদিকে তাকাতে পারে না।” সর্বোপরি যে কথাটি মনে রাখতে হবে তা হলো সফল ক্যারিয়ার গঠনে কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে পরিশ্রম সফলতার চাবি। একথাটাকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করার কারণেই জাপান আজ এক নম্বর শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়েছে।
লেখক-*সাংবাদিক ও সেক্রেটারি- আঞ্চলিক পাবলিক লাইব্রেরি, সিংগাড়ী, অভয়নগর, যশোর।
©somewhere in net ltd.