![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a social worker.
ইমান আরবি শব্দ এর বাংলা অর্থ বিশ্বাস করা, আন্তরিক আস্থা অর্জন করা, মেনে নেওয়া ইত্যাদি। ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলীকে অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি দান ও কর্মে প্রদর্শন করার নাম হলো ইমান। ইমান ও ইসলাম পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। একটির সাথে অপরটির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্দ। ইমান ও ইসলাম একজন মুমিন বা মানুষের মধ্যে আল্লাহ পাকের নেয়ামত হিসেবে গ্রথিত হয়। আবার জীবনের এই সবচেয়ে প্রিয় ও মূলবান সম্পদ ইমান কারো কারো কাছ থেকে দূরে সরে যায় ব্যক্তির কতিপয় আচরণ ও কর্মে। নি¤েœ আমরা ইমান ও ইসলাম কী কী কারণে ভঙ্গ হয় সে বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনার প্রয়াস পাব। ইন-শা-আল্লাহ।
(১) ‘ইবাদত বা দাসত্বে আল্লাহর সাথে শরীক বা অংশীদার নির্ধারণ করা ঃ
ইবাদত বা দাসত্ব বা গোলামী হবে শুধু আল্লাহর জন্য। দাসত্বের ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করলে তখন ব্যক্তির মধ্য থেকে ইমান বের হয়ে যায়। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন-
‘এবং তারা উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্তুর, যা না তাদের কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে না লাভ এবং বলে ‘এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী’। আপনি বলুন! তোমরা কি আছমান ও যমীনের এমন বিষয়ে আল্লাহকে অবহিত করছ, যে সম্পর্কে তিনি অবহিত নন? তিনি পুতঃপবিত্র ও মহান সে সমস্ত থেকে, যা তোমরা শরীক করছো। সুতরাং যে ব্যক্তি ‘ইবাদাতে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করবে, তার ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এবং কাফির-মুশরিক বলে গণ্য হবে।
(২) নিজের ও আল্লাহর মধ্যে কাউকে মাধ্যম নির্ধারণ করা ঃ
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কারো নিকট সুপারিশ প্রার্থনা করা, আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে সাহায্যের জন্য আহবান করা, তার উপর ভরসা করা ইত্যাদি। কুরাইশের কাফির-মুশরিকরা এ জাতীয় শিরকেই লিপ্ত ছিল বলে তারা মুমিন না হয়ে মুশরিক ও কাফিরে পরিণত হয়েছিল। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য তারা কতক মাধ্যম ও সুপারিশকারী সাব্যস্ত করেছিল। অথচ তারা রুবুবিয়াত বা পালনককার্তৃত্বে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী ছিল। তারা আল্লাহকে রব (পালনকর্তা) মানতো। কিন্তু আল্লাহ ছাড়া আরও কিছু দেব-দেবীর পূজা অর্চনা করতো। এবং তাদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য প্রার্থনা করতো। তাদের এহেন শিরক সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
‘জেনে রাখুন, নিষ্ঠপূর্ণ ‘ইবাদাত আল্লাহরই জন্যে। যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে এবং বলে যে, আমরা তাদের ‘ইবাদাত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়, নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তারা যে বিষয়ে মতবিরোধ করছে সে ব্যাপারে ফায়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফিরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’
বর্তমান যুগেও নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবিদার এমন কতক লোক রয়েছে, যারা জীবিত কিংবা মৃত বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ, পীর, বুজুর্গ সম্পর্কে, কিংবা কোন তারকা, নক্ষত্র, গাছ, পাথর ইত্যদি সম্পর্কে, কিংবা আল্লাহ ভিন্ন তাদের কোন উপাস্যের আদলে (আকৃতিতে) গড়া মূর্তি, প্রতিমা ও ছবি সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করে যে, এগুলো তাদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশকারী, কিংবা জগত পরিচালনায় এদেরও কিছু ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব রয়েছে, এগুলো তাদের সমস্যার সমাধান করে দিতে বা প্রয়োজন পূরণ করে দিতে, কিংবা বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধার করতে সমর্থ ও সক্ষম। এসব কাজ যারা করে, তারা যদিও নিজেকে ঈমানদার ও মুহাম্মাদ (স.) এর অনুসারী বলে দাবি করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা হলো ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফির-মুশরিক হয়ে গেছে। মহানবী স. এ জাতীয় শিরক থেকে মাক্কার কাফির-মুশরিকসহ গোঁটা মানবজাতিকে এ ধরনের শিরক সম্পূর্ণরূপে পরিহার ও বর্জন করার আহবান জানিয়েছেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘বলুন! (হে মুহাম্মদ স.) তোমরা তাদেরকে আহবান করো, যাদেরকে উপাস্য মনে করতে আল্লাহ ব্যতীত, তারা নভোমন্ডল ও ভু-মন্ডলের অণু পরিমাণ কোনকিছুর মালিক নয়, এ দু’য়ের মাঝে তাদের কোন অংশও নেই এবং তাদের কেউ আল্লাহর সহায়কও নয়। যার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়, তার জন্যে ব্যতীত আল্লাহর কাছে কারও সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না।
অন্য আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন- ‘যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আছমান ও যমীন কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে- আল্লাহ। বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি আল্লাহ আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তবে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকো, তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি রাহ্মাত করার ইচ্ছা করলে তারা কি সে রাহ্মাত রোধ করতে (ঠেকাতে) পারবে? বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে।
অনেকে মুসলমান বলে দাবি করে আবার তারাও মুশরিকদের অনুসরণ ও অনুকরণে কবর বা মাযারকে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও পূজা করছে। কবর ও মাযারবাসীর উদ্দেশ্যে পশু জবাই ও বিভিন্ন প্রকার নযর-মানত পেশ করছে। তাদের নিকট নিজের সমস্যা সমাধান করে দেয়ার বা প্রয়োজন পূরণ করে দেয়ার জন্য প্রার্থনা করছে এবং তাদেরকে নিজেদের ও আল্লাহর মধ্যে মাধ্যম বলে বিবেচনা করছে। প্রকৃতপক্ষে এসব কাজই হলো সুস্পষ্ট কুফর ও শিরক। তাই যে ব্যক্তি এ ধরনের কোন কাজ করবে, তার ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফির-মুশরিক বলে গণ্য হবে।
(৩) ধর্মত্যাগী মুরতাদ ও মুশরিকদেরকে কাফির-মুশরিক বলে মনে না করা ঃ
অর্থাৎ ধর্মত্যাগী মুরতাদ ও মুশরিকরা যে কাফির ও মুশরিক, সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা অথবা তাদের পথ ও মতকে সঠিক বলে বিশ্বাস করা। এমনিভাবে এ ধরনের কোন কথা বলা যে, ইয়াহুদী, খ্রিষ্ট, ইসলাম, সব ধর্মই সঠিক ও সত্য এবং এসকল প্রতিটি ধর্মই তার অনুসারীকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। তাই যার যে ধর্ম ইচ্ছা ও পছন্দ হয়, সে তা গ্রহণ করতে পারে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। এ ধরনের কথাবার্তা ও আক্বীদাহ-বিশ্বাস হলো ইসলাম বিনষ্টকারী, সুস্পষ্ট শিরক ও কুফরি। কেননা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস তথা তাওহীদের অপরিহার্য দাবি ও শর্ত দু’টি হলো-
(এক) সকল প্রকার তাগুতকে (খোদাদ্রোহী শক্তি) অস্বীকার করা। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সব উপাস্য ও তাদের উপাসনাকারীদের অস্বীকার করা এবং তাদের থেকে নিরাপদ দূরে অবস্থান করা।
(দুই) এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এ দু’টি শর্ত বা দাবির কথাই মূলত পবিত্র কালিমায় বলা হয়েছে।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নিঃসন্দেহে হিদায়াত গুমরাহী (ভ্রষ্টতা ও বিপথগামীতা) থেকে পৃথক হয়ে গেছে। সুতরাং যে তাগুতদেরকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিবে সুদৃঢ় হাতল যা ভাঙ্গবার নয়। আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।
এ ব্যাপারে মহানবি হযরত মুহাম্মদ স. বলেছেন- যে ব্যক্তি ‘আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মা‘বুদ নেই’ একথা স্বীকার করে এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য যা কিছুর উপাসনা করা হয়, সে সবগুলিকে অস্বীকার করে, তাঁর সম্পদ ও প্রাণ নিরাপদ এবং তার হিসাব আল্লাহর নিকট।
বিশ্বের সকল মুসলিম উম্মাহ এ বিষয়ে একমত, যে ব্যক্তি আল্লাহকে, তাঁর কিতাবকে ও তাঁর রাসুল মুহম্মাদকে (স.) এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য রাসুলের রিসালাতের সামগ্রিকতা ও সর্বব্যাপীতাকে অস্বীকার ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, সে আর মুসলমান থাকে না, বরং সে কাফির-মুশরিকে পরিণত হয়। তাই আমাদের সর্ব প্রথম ইমান টিকিয়ে রাখতে উপরোক্ত বিষয়াবলী ভালোভাবে আয়ত্ব করে তদনুযায়ী আমল করতে হবে।
©somewhere in net ltd.