![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a social worker.
ইমান ভঙ্গের ১০টি মৌলিক কারণের মধ্যে সপ্তম হলো-
(৭) যাদু : যাদু বলা হয় এমন প্রতিটি ক্রিয়াকলাপকে যার কারণ গোপন ও অস্পষ্ট থাকে, কিন্তু এর প্রভাব-প্রতিক্রিয়া দেখা বা বুঝা যায়। আর এ যাদু হলো ঈমান ও ইসলাম বিনষ্টকারী এবং মুসলমানকে কাফিরে পরিণতকারী কাজ। শারী‘য়াতের পরিভাষায় যাদু হলো- এমন কিছু গিরা, কবচ, ঝাড়-ফুঁক, তেলেসমাতী ও তন্ত্র-মন্ত্রের নাম, যদ্বারা জিন বা শয়তানকে ব্যবহারের মাধ্যমে কারো ক্ষতি করার অপচেষ্টা করা হয়। সাধারণত যাদু মানুষের অন্তরে, মস্তিষ্কে কিংবা দেহের ভিতরে কাজ করে। তবে দেহের বাইরেও এর প্রভাব পড়ে থাকে। যাদু দু’টি কারণে শিরকের পর্যায়ভুক্ত।
প্রথমত : এতে (যাদুর মধ্যে) অধিকাংশ ক্ষেত্রে হারাম ও নিকৃষ্ট কাজের মাধ্যমে জিন ও শয়তানের সন্তুষ্টি, নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করা হয়। অথচ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নৈকট্য বা সাহায্য কামনা করা হলো সুস্পষ্ট শিরক। এ ছাড়া যাদু হলো শয়তানের শিক্ষা এবং শয়তানী শিক্ষা। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন-‘সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত, তারা তাই অনুসরণ করল । সুলাইমান কুফর করেননি; বরং শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিত।’ (সুরা বাকারা ১০২)
দ্বিতীয়তঃ- এতে গায়িবের (অদৃশ্য বিষয়াদীর) ‘ইলম দাবি করা হয়। যাদুকর বা তার সাহায্যকারী জিন ও শয়তানরা নিজেকে গায়িব সম্পর্কে অবগত বলে দাবি করে। অথচ প্রকৃতপক্ষে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কেউই গায়িবের জ্ঞান রাখে না এবং আল্লাহ ব্যতীত আর কেউই গায়িব সম্পর্কে অবগত নয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আকাশে ও জমীনে যারা আছে তারা কেউই গায়িব জানে না।’ (সুরা নামল-৬৫) আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন- ‘যে ব্যক্তি গিট বেঁধে এর উপর ফুঁক দিল সে যাদু করল। আর যে যাদু করল, সে র্শিক করল।’ (সুনানুন নাসায়ী)
ইমাম আবু হানীফাহ, ইমাম মালিক ও ইমাম আহ্মাদ ইবনু হাম্বাল (র.) যাদু করাকে এবং যাদু শিক্ষাকে কুফরি বলে অভিহিত করেছেন।
(৮) মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদেরকে সাহায্য, সহযোগিতা করা :
মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদেরকে সাহায্য, সহযোগিতা করা ঈমান ও ইসলাম বিনষ্টের অন্যতম কারণ। কেননা ঈমানদারগণকে আল্লাহ কাফির-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব না রাখার এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা না করার জন্য অত্যন্ত কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। কাফির-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব পোষণকারীগণ তাদেরই দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। এ বিষয়ে ক্বোরআনে কারীমে বহু আয়াত বর্ণিত রয়েছে। ‘হে মু’মিনগণ, তোমরা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ যালিমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।’ (সুরা মায়িদা-৫১) আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘অতএব (হে রাসুল!) আপনি কোন অবস্থাতেই কাফিরদের সাহায্যকারী হবেন না।’ (সুরা আল কাসাস-৮৬)
আল্লাহ তায়ালা অনত্র বলেন- ‘আপনি তাদের অনেককে দেখবেন, তারা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা নিজেদের জন্যে যা পাঠিয়েছে তা অবশ্যই অতিশয় মন্দ। আর তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্নিত হয়েছেন এবং তারা চিরকাল শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যদি তারা আল্লাহ ও নাবীর প্রতি এবং তাঁর (নাবীর) প্রতি নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করত, তবে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই দুরাচারী (ফাসিক)।’ (সুরা মায়িদা-৮০, ৮১)
(৯) ব্যক্তি বিশেষকে ইসলামী বিধি-বিধানের উর্দ্ধে বলে মনে করা :
ঈমান ও ইসলাম বিনষ্টের আরেকটি কারণ হলো- ব্যক্তি বিশেষের জন্য ইসলামী বিধান থেকে বের হয়ে যাওয়া বৈধ বলে মনে করা, অথবা, ব্যক্তি বিশেষকে ইসলামী বিধি-বিধানের উর্দ্ধে বলে মনে করা। অর্থাৎ- যদি কেউ এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, কোন লোকের জন্য আল্লাহর প্রবর্তিত এবং রাসুলের (স.) নির্দেশিত বিধান থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া তথা শারী‘য়াতে ইসলামের অনুসরণ না করা জায়িয, কিংবা এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, এমন কতক ব্যক্তিবর্গ আছেন যাদের জন্য আল্লাহর বিধান প্রযোজ্য নয়, তাহলে তার ঈমান ও ইসলাম বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে কাফির হয়ে যাবে। যেমনটি অনেক ভন্ড সূফী-সাধক ও বাত্বিল মা‘রিফাতপন্থী লোক মনে করে। এ জাতীয় ‘আক্বীদাহ পোষণের অর্থ হলো যে, ইছলাম সমগ্র মানবজাতির জন্য তথা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত আগত প্রতিটি বনী আদমের জন্য আল্লাহর মনোনীত ধর্ম নয় এবং শারী‘য়াতে ইসলামের অনুসরণ ও অনুশীলন সকলের জন্য আবশ্যকীয় নয়, কিংবা মুহাম্মাদ (স.) এর রিসালাত সর্ব সাধারণের জন্য সর্বজনীন রিছালাত নয়। এ ধরণের ‘আক্বীদাহ-বিশ্বাস পোষণ করা কুরআন ও সুন্নাহতে বর্ণিত সুস্পষ্ট প্রমাণাদী অস্বীকার করারই নামান্তর।
অথচ কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা অকাট্য ও সুস্পষ্টরূপে একথা প্রমাণিত যে, ইসলামই হলো আল্লাহর মনোনীত একমাত্র সর্বজনীন দ্বীন এবং মুহাম্মাদ (স.) হলেন সমগ্র জগতের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ রাসুল। আল্লাহ তায়ালঅ পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন-“আল্লাহর নিকট একমাত্র ধর্ম হলো ইসলাম।” (সুরা আলে ইমরান-১৯) আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি।’ (সুরা সাবা -২৮) আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুলকে (স.) যে দ্বীন বা শারী‘য়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন, তা যথাযথভাবে গ্রহণ ও পালন করা এবং সর্বক্ষেত্রে রাসুলের (স.) আনুগত্য ও অনুসরণ করা প্রতিটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য। কেননা ইসলামের বিধি-বিধান সর্বতোভাবে গ্রহণ ও পালন করা ব্যতীত এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসুলের (স.) আনুগত্য ও অনুসরণ ব্যতীত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং ইহ-পরকালীন মুক্তি লাভের অন্য কোন উপায় নেই। কেউ যদি দ্বীনে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন পথ অনুসরণ করে তাহলে তা আল্লাহর নিকট আদৌ গ্রহণযোগ্য হবে না, বরং তা হবে প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম তালাশ করবে, তবে সেটা তার থেকে গৃহীত হবে না। আর সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আলে ইমরান-৮৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলর আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল।’ (সুরা আহযাব-৭১) তাই কেউ যদি এ ধরনের কোন বিশ্বাস পোষণ করে যে, রাসুলের স. আনুগত্য ও অনুসরণ ছাড়া অন্য কোন পন্থায় আল্লাহর পথে চলা বা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব, কিংবা এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, কোন লোক চেষ্টা-সাধনা বা আরাধনা করে অসাধারণ মর্যাদার আসনে পৌঁছে গেলে তার জন্য নাবী মুহাম্মাদ স. ও শারী‘য়াতে ইসলামের অনুসরণ করা জরুরী নয়, বরং এ ধরনের লোকের জন্য রাসুলের (স.) দ্বীন অনুসরণ না করা, বিভিন্ন র্ফায কাজ ছেড়ে দেয়া এবং নানারকম পাপ কাজ করা জায়িয তথা বৈধ, যদি কেউ এরূপ কোন ধারণা-বিশ্বাস পোষণ করে, তাহলে তার ঈমান ও ইসলাম বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে ব্যক্তি কাফির বলে গণ্য হবে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ র. বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস পোষণ করবে যে, মুহাম্মাদ এর শারী‘য়াতের অনুসরণ হতে মুক্ত হওয়া কারো জন্য বৈধ, সে কাফির এবং তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। তিনি আরো বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, আল্লাহর কিছু খাস বান্দাহ আছেন যাদের জন্য রাসুলের অনুসরণের কোন প্রয়োজন নেই, সে ব্যক্তি ইসলাম ত্যাগকারী; মুরতাদ ও কাফির, এ বিষয়ে সকল ইমাম ঐকমত্য পোষণ করেছে।
(১০) ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া :
ঈমান ও ইসলাম বিনষ্টের অন্যতম আরেকটি কারণ হলো, ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া তথা দ্বীনে ইসলামকে উপেক্ষা ও বর্জন করা। আর তা হলো, ‘ইসলামের মৌলিক ও অপরিহার্য বিষয়াদীর জ্ঞান অর্জন থেকে বিরত থাকা। ইসলামী শারী‘য়াত অনুযায়ী ‘আমাল বা অনুশীলন না করা। ইসলাম যে সব বিষয় অবশ্য পালনীয় বলে নির্দেশ দিয়েছে সেগুলো পালন না করা এবং যে সব বিষয় অবশ্য বর্জনীয় ও হারাম ঘোষণা করেছে সে সবকে বর্জন না করা। সঠিকভাবে দ্বীনে ইসলাম সম্পর্কে কিংবা ইসলামের মৌলিক বিষয়াদি সম্পর্কে জানার জন্য কোনরূপ প্রচেষ্টা না করা, কিংবা ধর্মীয় মৌলিক শিক্ষা অর্জন করার প্রতি কোনরূপ প্রয়োজন ও আগ্রহবোধ না করা। বরং শারী‘য়াতে ইসলামের চর্চা ও অনুশীলন থেকে দূরে থাকা এবং দ্বীন তথা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ বা জাহিল হয়ে থাকাতে খুশি ও সন্তুষ্টি বোধ করা। এসব কার্যকলাপ স্পষ্টতো এটাই প্রমাণ করে যে, এ রকম লোক মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ বললেও মনে-প্রাণে সে এ শাহাদাতাইনকে (কালিমাহ্কে) স্বীকার করছে না, বরং সে আল্লাহর দ্বীনকে উপেক্ষা ও বর্জন করছে এবং কার্যত: আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আর যারা আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় বা ধর্ম বিমুখতা অবলম্বন করে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘এবং সেই ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক অনাচারী কে, যাকে তার পালনকর্তার আয়াত সমূহ স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, অতঃপর সে উহা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? আমি এরূপ অপরাধীদের হতে প্রতিশোধ নিব।’ (সুরা আস সিজদাহ-২২)
আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তারা বলে, আমরা আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং আমরা আনুগত্য করি, কিন্তু অতঃপর তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তারা ঈমানদার নয়।’ (সুরা আন নূর-৪৭)
অতএব যে ব্যক্তি শারী‘য়াতের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কোন ‘ওযর (কারণ) ব্যতীত দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদীর জ্ঞান অর্জন থেকে এবং তদনুযায়ী ‘আমল করা থেকে বিরত থাকবে, তার ঈমান ও ইসলাম বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং সে কাফির (অবাধ্য বা অস্বীকারকারী) বলে গণ্য হবে।
©somewhere in net ltd.